আমরা কী হুলুল তথা সর্বেস্বরবাদিতায় বিশ্বাসী? দেওবন্দিদের আকীদা নিয়ে মুহতারাম আব্বাসী হাফি. এর এ ধরণের বক্তব্য কেন?
মুহতারাম এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী হাফি. তার পেইজে আমাদের উদ্দেশ্য করে সর্বশেষ যে ভিডিও তার অফিসিয়াল পেইজে আপলোড করেছেন, সেখানে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শান মানের ব্যাপারের প্রসঙ্গ আসলে কেন জাল হাদিসের দুরবীন লাগাই? সেটা জানতে চেয়েছেন?
সেটা তিনি জানতেই পারেন। কিন্তু তিনি আমাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, “ যে বেদআতের কারণে চিরদিন মানুষ জাহান্নামে জ্বলবে, সে বেদআত হচ্ছে আকীদার বেদআত। তোমরা আমলের বেদআত খুজতেছো, সেটা তো মাফ পাবে। কিন্তু আকীদার বেদআতের তো মাফ নাই। তোমরা যারা আমাদের দিকে আমলের বেদআত খুঁজতেছো, আমরা তোমাদের মধ্যে আকীদাগত বেদআত দেখতেছি। সেটা হচ্ছে আকীদাতুল হুলুলিয়্যাহ। তোমরা সর্বেস্বরবাদিতায় বিশ্বাসী। এটা একটি শিরকি আকীদা। তারপরও তোমরা যে বেদআতের বিরোধীতা করো, দেখা যায় তোমাদের ইলম নাই, তাহকিক নাই।”
আকীদার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে শায়খ হাফি. এর এ ধরণের বক্তব্যে খুবই হতাশ হয়েছি। তিনি দেওবন্দি আলেমদের ব্যাপারে একটি বড় অভিযোগ করেছেন যে, আমাদের আকীদা হলো হুলুল তথা সর্বেস্বরবাদিতা। প্রিয় পাঠক, হুলুল বলা হয় এক বস্তু অপর বস্তুর মাঝে প্রবেশ করার পর উভয়ে আপন সত্ত্বা বজায় রেখে বিদ্যমান থাকাকে। যেমন চিনি এবং বালু এক সাথে একত্রিত করলে দুটোই আপন সত্ত্বা নিয়ে বাকী থাকে।
আল্লাহর ব্যাপারে হুলুল আকীদার মূলকথা হলো, ¯্রষ্ঠা এবং সৃষ্টিকে একাকার করে ফেলা। কিছু কিছু ভ্রান্ত সুফী ওয়াহদাতুল ওজুদ নামে সেটা প্রচার করেছেন। কষ্টের জায়গা হলো, উলামায়ে দেওবন্দ স্পষ্টভাবে এ ধরণের আকীদাকে শিরক বলেছেন। কিন্তু মুহতারাম আব্বাসী হাফি. সেটাকেই আমাদের আকীদা বানিয়ে দিলেন! আমি কয়েকজন আকাবিরে দেওবন্দের বক্তব্য আপনাদের সামনে পেশ করছি।
ফকীহুন নফস আল্লামা রশিদ আহমদ গাংগুহী রাহি.। তিনি ‘ইমদাদুদ সুলক’ নামক গ্রন্থে এ হুলুল এর অসারতা তুলে ধরেছেন। শেষের দিকে তিনি বলেন,
حق تعالی سب سے جدا ہے مخلوق اس سے مباین ہے پس مخلوق کا اس میہ حلول کرنا یا اس کا مخلوق میی حلول کرنا دونوں ہی محال ہی اور تمام انبیاء اور اولیاء و علماء حلول کے خلاف متفق ہے
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সবকিছু থেকে পৃথক। মাখলুক তথা সৃষ্টি তার থেকে ভিন্ন এবং পৃথক। মাখলুক তাঁর মাঝে হুলুল করা বা তিনি মাখলুকের মাঝে হুলুল করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। হুলুলের আকীদার বিরুদ্ধে সকল নবী, ওলী এবং আলেমরা একমত। ইমদাদুস সুলুক: পৃষ্ঠা নং ১৯৪।
গাংগুহী রাহি. অন্য জায়গায় বলেন,
وحدة الوجود کا یہ مطلب جملہ موجودات جلیہ کو اصلیہ حقیقیہ اعتقاد کر کے سب موجودات عدمیہ فانیہ کو موجود حقیقی عین ذات حق تعالی قرار دے معاذ اللہ یہ سخت شرک ہے
অর্থাৎ যদি কেউ ওয়াহদাতুল ওজুদ এর এ ব্যাখ্যা করে যে, পৃথিবীতে অস্তিত্বশীল সবকিছুকে আল্লাহর সত্তা সাব্যস্থ করা। নাউযুবিল্লাহ, এ ধরণের আকীদা কঠিন শিরকী আকীদা। বাকিয়াতে ফতোয়া রশিদিয়্যাহ: পৃষ্ঠা নং ৪২৩।
দারুল উলূম দেওবন্দে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রশ্নটি ছিল:
অৎঃরপষব ও. وحدت الوجود ایک صوفیانہ عقیدہ ہے جس کی رو سے جو کچھ اس دنیا میں نظر آتا ہے وہ خالق حقیقی کی ہی مختلف شکلیں ہیں اور خالق حقیقی کے وجود کا ایک حصہ ہے ۔اس بارے میں علماء دیوبند کیا کہتے ہیں،کیا علماء دیوبند اس عقیدے کی یہی تشریح کرتے ہیں نیز کسی اور کو خالق کے وجود کا حصہ ماننا کیا کفر نہیں؟
প্রশ্ন, ওয়াহদাতুল ওজুদ একটি সুফিয়ানা আকীদা, বলা হয় যে পৃথিবীতে যা কিছুই নজরে আসে, সেটা আল্লাহ তাআলার বিভিন্ন অংশ, এ ব্যাপারে উলামায়ে দেওবন্দ কী বলেন? ব্যাখ্যা করবেন। অন্য কাউকে আল্লাহর অস্তিত্বের অংশ মনে করা শিরক নয় কী?
দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে এ ব্যাপারে উত্তর প্রদান করা হয় এভাবে:
وحدة الوجود ایک اصطلاح ہے ،اس کا مطلب یہ ہے کہ اس کائنات میں حقیقی اور مکمل وجود صرف ذات باری تعالی کا ہے ، اس کے سوا ہر وجود بے ثبات، فانی اور نامکمل ہے ،ایک تو اس لیے کہ وہ ایک نہ ایک دن فنا ہوجائے گا، دوسرے اس لیے کہ ہر شئی اپنے وجود میں ذات باری تعالی کی محتاج ہے ، لہذا جتنی اشیاء ہمیں اس کائنات میں نظر آتی ہیں، انھیں اگرچہ وجود حاصل ہے ؛ لیکن اللہ کے وجود کے سامنے اس وجود کی کوئی حقیقت نہیں، اس لیے وہ کالعدم ہے ۔ وحدة الوجود کا یہ مطلب صاف ، واضح اور صحیح ہے ، اس سے آگے اس کی جو تشریحات کی گئی ہیں، وہ خطرناک ہیں، بعض تعبیرات تو کفر کی حد تک پہنچتی ہیں،سوال میں وحدة الوجود کی جو تشریح کی گئی ہے ، وہ بھی اسی قبیل سے ہے ،یعنی ایسا عقیدہ رکھنا کفر ہے ، ایک مسلمان کو بس سیدھا سادا یہ عقیدہ رکھنا چاہیے کہ کائنات میں حقیقی اور مکمل وجود اللہ تعالی کا ہے ، باقی ہر وجود نامکمل اور فانی ہے
অর্থাৎ ওয়াহদাতুল ওজুদ একটি পারিভাষা। মূলত এর দ্বারা বুঝানো হয় যে এ পৃথিবীতে বাস্তবিক এবং পরিপূর্ণ অস্তিত্ব একমাত্র আল্লাহ তাআলার। আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য সকল অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে এবং অপরিপূর্ণ। কারণ হলো, একদিন না একদিন আল্লাহ ব্যতীত সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি হওয়ার পেছনে আল্লাহ তাআলার মুখাপেক্ষী। সুতরাং পৃথিবীতে যা কিছু অস্তিত্ব লাভ করেছে, যদিও তাদের অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু আল্লাহর অস্তিত্বের সামনে সেগুলোর কোন মূল্যই নেই। একেবারে যেন না থাকার মতোই। ওয়াহদাতুল ওজুদ এর এ ব্যাখ্যাটি একেবারে স্পষ্ট এবং বিশুদ্ধ।
এরচেয়ে সামনে অগ্রসর হয়ে এর যে ব্যাখ্যাগুলো করা হয়, সেগুলো খুবই স্পর্শকাতর। কোন কোন সংজ্ঞা কুফর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। প্রশ্নে আপনি ওয়াহদাতুল ওজুদ এর যে ব্যাখ্যা করেছেন, সেটাও কুফরের অন্তর্ভূক্ত। মুসলমানরা এ সহজ আকীদা লালন করবে যে, পৃথিবীতে বাস্তবিক এবং পরিপূর্ণ অস্তিত্ব একমাত্র আল্লাহ তাআলার। বাকি সবকিছু অপূর্ণ এবং ধ্বংসশীল।দারুল উলূম দেওবন্দের ওয়েবসাইট, ফতোয়া নং ১৫৩৫৬৬।
মুহতারাম আব্বাসী হাফি. তো দাবী করেন যে, শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী হাফি. এর কাছে সরাসরি পড়েছেন। এ ব্যাপারে তার আপন শায়খের “ফতোয়া উসমানী” তে স্পষ্ট লেখা হয়েছে যে, হুলুল এর আকীদা হলো, শিরক। এছাড়া আশরাফ আলী থানভী রাহি. ও হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রাহি.ও এটাকে শিরক বলেছেন।
মুহতারাম আব্বাসী হাফি. আমাদের বিরোধীতা করতেই পারেন। ইলমি মুনাকাশাও হতে পারে। কিন্তু একটি মাসলাকের আকীদার ব্যাপারে এভাবে বক্তব্য দেওয়ার আগে আসা করি সত্যতা যাচাই করবেন। কারণ, এভাবে তার একটি বক্তব্যে দেওবন্দিদের আকীদার ব্যাপারে অসংখ্য মানুষের কাছে খারাপ বার্তা যাচ্ছে। আল্লাহ সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।