‘লা সালাতা ইল্লা বি ফাতিহাতিল কিতাব’ এর ব্যাখ্যা

‘লা সালাতা ইল্লা বি ফাতিহাতিল কিতাব’ এর ব্যাখ্যা
রেজাউল কারীম আবরার

যারা ইমামের পেছনে সূরা ফাতেহা পড়াকে ফরজ বলেন, তারা একটি হাদীস দ্বারা দলিল পেশ করে থাকেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
অর্থাৎ সূরা ফাতেহা না পড়লে নামাজ হবে না। বুখারি: ৭৫৬।

এ হাদীসে বলা হয়েছে সূরা ফাতেহা পড়তে। কিন্তু এটা একাকী নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, নাকি ইমামের পেছনেও পড়তে হবে এ ব্যাপারে এ হাদীসে কিছু বলা হয় নি। আমরা দেখি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রসিদ্ধ সাহাবি জাবির রাযি. এ হাদীসের চমৎকার ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন:
من صلى ركعة لم يقرأ فيها بأم القرآن فلم يصل إلا أن يكون وراء الإمام
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নামাজের কোন রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়ল না, সে যেন নামাজই পড়ল না। তবে সে যদি ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে, তাহলে তার হুকুম ভিন্ন। তিরমিজি: হাদীস নং ৩১৩।
এ হাদীস বর্ণনা করার পর ইমাম তিরমিজি রাহি. বলেন:
[ قال أبو عيسى ] هذا حديث حسن صحيح
অর্থাৎ হাদীসটি হাসান এবং সহিহ।

আজকে যারা আমাদের ব্যাপারে বলেন যে, আমরা সহিহ হাদীসের বিপরিত আমল করছি, তারা আশা করি জাবির রাযি. এর বক্তব্য থেকে বাস্তবতা অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন। এ হাদীস যে একাকী নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহি. সেটা স্পষ্টভাবে বলেছেন। ইমাম তিরমিজি রাহি. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহি. এর মতামত আলোচনা করতে গিয়ে বলেন:
وأما أحمد بن حنبل فقال معنى قول النبي صلى الله عليه و سلم لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب إذا كان وحده
واحتج بحديث جابر بن عبد الله حيث قال من صلى ركعة لم يقرأ فيها بأم القرآن قلم يصل إلا أن يكون وراء الإمام
قال أحمد [ بن حنبل ] فهذا رجل من أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم تأول قول النبي صلى الله عليه و سلم لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب أن هذا إذا كان وحده
অর্থাৎ সূরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ নেই এ হাদীস দ্বারা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহি. উদ্দেশ্য নিয়েছেন যখন একাকী নামাজ পড়বে। এ মতের পক্ষে তিনি জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলিল পেশ করেন। জাবের রাযি. বলেন, যে ব্যক্তি নামাজের কোন রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়ল না, সে যেন নামাজই পড়ল না। তবে সে যদি ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে, তাহলে তার হুকুম ভিন্ন।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহি. বলেন, জাবের রাযি. একজন সাহাবি হওয়ার পরও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, এ হাদীসটি একাকী নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিরমিজি: ৩১৩।

ইমাম বুখারি রাহি. উস্তাদ ইমাম সুফিয়ান বিন উয়াইনা রাহি.ও এ ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন। ইমাম আবু দাউদ রাহি. এ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন:
قَالَ سُفْيَانُ لِمَنْ يُصَلِّى وَحْدَهُ
অর্থাৎ এ হাদীসটি একাকী নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আবু দাউদ: ৮২২।
মুহাম্মাদ বিন ইসহাকের বর্ণনা

ইমামের পেছনে সূরা ফাতেহা পড়াকে যারা ফরজ বলেন, তারা মুহাম্মাদ বিন ইসহাকের সূত্রে বর্ণিত উবাদা বিন সামিত রাযি. এর হাদীস দ্বারাও দলিল পেশ করে থাকেন। তিনি বলেন:
كُنَّا خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فِى صَلاَةِ الْفَجْرِ فَقَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَثَقُلَتْ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةُ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ ্র لَعَلَّكُمْ تَقْرَءُونَ خَلْفَ إِمَامِكُمْ . قُلْنَا نَعَمْ هَذَا يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ ্র لاَ تَفْعَلُوا إِلاَّ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهُ لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا
অর্থাৎ আমরা ফজরের নামাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেরাত পড়ার সময় কেরাত পড়া তার জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল। নামাজ শেষ করে তিনি বললেন, সম্ভবত তোমরা তোমাদের ইমামের পেছনে কেরাত পড়েছো?
আমরা বললাম, হ্যাঁ, পড়েছি হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, সূরা ফাতেহা ছাড়া আর কোন কিছু পড়বে না। কারণ, সূরা ফাতেহা ছাড়া কোন নামাজ নেই।

এ হাদীস নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই না। আমাদের সালাফি ভাইদের বরণীয় দুইজন আলেমের বক্তব্য আপনাদের সামনে পেশ করতে চাই। নাসির উদ্দিন আলবানি রাহি. এ হাদীসের ব্যাপারে বলেন:
عن عبادة بن الصامت لعلكم تقرءون خلف إمامكم ؟ لا تفعلوا إلا بفاتحة الكتاب فإنه لا صلاة لمن لم يقرأ بها ( ضعيف)
অর্থাৎ উবাদা বিন সামিত রাযি. থেকে বর্ণিত এ হাদীসটি হলো জয়িফ তথা দুর্বল। জয়িফুল জামি: ৪৬৮১।

সালাফি ভাইরা যেহেতু জয়িফ আর জালকে এক মনে করেন, আর এ হাদীসকে আলবানি জয়িফ বলেছেন, এজন্য আশা করি আর কখনও তারা এ হাদীস দ্বারা দলিল দিবেন না।

এবার আসুন এ হাদীস সম্পর্কে সালাফীদের বরণীয় আরেকজন ইমাম শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহি. এর বক্তব্য জেনে আসি। এ হাদীসের ব্যাপারে তিনি বলেন:
وَهَذَا الْحَدِيثُ مُعَلَّلٌ عِنْدَ أَئِمَّةِ الْحَدِيثِ بِأُمُورٍ كَثِيرَةٍ , ضَعَّفَهُ أَحْمَدُ وَغَيْرُهُ مِنْ الْأَئِمَّةِ وَقَدْ بَسَطَ الْكَلَامَ عَلَى ضَعْفِهِ فِي غَيْرِ هَذَا الْمَوْضِعِ , وَبَيَّنَ أَنَّ الْحَدِيثَ الصَّحِيحَ قَوْلُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : { لَا صَلَاةَ إلَّا بِأُمِّ الْقُرْآنِ } فَهَذَا هُوَ الَّذِي أَخْرَجَاهُ فِي الصَّحِيحَيْنِ وَرَوَاهُ الزُّهْرِيُّ عَنْ مَحْمُودِ بْنِ الرَّبِيعِ عَنْ عُبَادَةَ وَأَمَّا هَذَا الْحَدِيثُ فَغَلِطَ فِيهِ بَعْضُ الشَّامِيِّينَ وَأَصْلُهُ أَنَّ عُبَادَةَ كَانَ يَؤُمُّ بِبَيْتِ الْمَقْدِسِ , فَقَالَ هَذَا فَاشْتَبَهَ عَلَيْهِمْ الْمَرْفُوعُ بِالْمَوْقُوفِ عَلَى عُبَادَةَ
এ হাদীসটি অনেকগুলো কারণে হাদীস শাস্ত্রের ইমামদের কাছে ত্রæটিযুক্ত। ইমাম আহমদ সহ অনেক ইমাম এটাকে জয়িফ তথা দুর্বল বলেছেন। তারা স্পষ্ট করেছেন যে, বিশুদ্ধ বর্ণনা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নামাজ নেই ফাতেহা ছাড়া’। এ হাদীস ইমাম বুখারি এবং মুসলিম বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের শব্দে সিরিয়ার কিছু বর্ণনাকারী ভুল করেছেন। মূল হলো, উবাদা বিন সামিত বায়তুল মাকদিসে ইমামদি করেছিলেন। তিনি এটা বলেছিলেন। তারা সন্দেহের কারণে মাওকুফ বর্ণনাকে মারফু’ বানিয়ে ফেলেছে। মাজমুউল ফতোয়া: ২৩/২৮৬।

আশা করি নিজেদের অনুসৃত ইমামদের মতামতকে সালাফি ভাইয়েরা মূল্যায়ন করবেন। এ হাদীস দ্বারা তারা আর দলিল পেশ করবেন না।

 

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *