জুমার দিনের বিশেষ সময়, যখন দোয়া কবুল হয়
রেজাউল কারীম আবরার
জুমার দিনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো ঐ দিনে এমন একটা সময় রয়েছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যে দোয়া করে, আল্লাহ কবুল করেন। প্রথমে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস দেখুন।
আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন—
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ —صلى الله عليه وسلم— ذَكَرَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَالَ ্র فِيهِ سَاعَةٌ لاَ يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ وَهُوَ يُصَلِّى يَسْأَلُ اللَّهَ شَيْئًا إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ
. زَادَ قُتَيْبَةُ فِى رِوَايَتِهِ وَأَشَارَ بِيَدِهِ يُقَلِّلُهَا
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিনের কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেন, সেদিন এমন এক সময় রয়েছে, যে সময়ে কোনো মুসলমান নামায পড়ে আল্লাহর নিকট যা কিছু চাইবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তা দান করবেন। মুয়াত্তা মালেক ২৪০, শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত। বুখারী ৯৩৫ শায়খ যুহাইর বিন নাসের তাহকীককৃত। মুসলিম ৮৫১২,
আবু হুরায়রা রা. হইতে বর্ণিত অপর আরেকটি হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
إِنَّ فِى الْجُمُعَةِ لَسَاعَةً لا يُوَافِقُهَا مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ فِيهَا خَيْرًا إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ গ্ধ. قَالَ وَهِىَ سَاعَةٌ خَفِيفَةٌ.
অর্থাৎ জুমার দিন এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়ে মুসলমান আল্লাহর কাছে যে কল্যাণ চাইবে, আল্লাহ তাকে সে কল্যাণ দান করেন। তিনি বলেন, সে সময়টা হলো অস্পষ্ট। মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৮১০২, শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত।
আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন—
قيل للنبي صلى الله عليه و سلم : أي شيء يوم الجمعة ؟ قال : لأن فيه طبعت طينة أبيك آدم وفيها الصعقة والبعثة وفيها البطشة وفي آخر ثلاث ساعات منها ساعة من دعا الله فيها استجيب له
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, জুমার দিনের বিশেষ কি বৈশিষ্ট রয়েছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি বৈশিষ্ট উল্লেখ করার পর বলেন, জুমার দিনের শেষ তিন ঘন্টায় এমন কিছু সময় রয়েছে, সে সময় বান্দা আল্লাহর নিকট যে দোয়া করে, আল্লাহ সে দোয়া কবুল করেন। মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৮১০২, শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত।
কখন সে সময়?
পূর্বে আলোচনা হয়েছে যে, জুমার দিনে একটি বিশেষ সময় এমন রয়েছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যে দোয়া করে, আল্লাহ কবুল করেন। এখন প্রশ্ন হলো সে সময় কখন? উত্তর জানবো হাদীস থেকে।
আবু বুরদা বিন আবু মূসা আশাআরী রা. বর্ণনা করেন
قَالَ لِى عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ أَسَمِعْتَ أَبَاكَ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ —صلى الله عليه وسلم— فِى شَأْنِ سَاعَةِ الْجُمُعَةِ قَالَ قُلْتُ نَعَمْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ —صلى الله عليه وسلم— يَقُولُ ্র هِىَ مَا بَيْنَ أَنْ يَجْلِسَ الإِمَامُ إِلَى أَنْ تُقْضَى الصَّلاَةُ
আমাকে আবদুল্লাহ বিন উমর জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কি তোমার পিতা থেকে জুমার দিনের বিশেষ সময় কোনো হাদীস শুনেছো যা তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি তাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন— ‘সে সময় হলো ইমাম খুৎবা দেওয়ার জন্য বসার পর থেকে নিয়ে নামায শেষ করার পর্যন্ত’।. মুসলিম, হাদীস নং ৮৫৩, শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত। আবু দাউদ ১০৪৯, শায়খ মুহি উদ্দীন আবদুল হামীদ তাহকীককৃত। সহীহ ইবনে খুযাইমা ১৭৩৯, শায়খ মুসতাফা আযমী তাহকীককৃত।
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, দোয়া কবুলের সে মুহূর্ত হলো ইমাম সাহেব খুৎবা শুরু করার পর থেকে নিয়ে নামায শেষ করা পর্যন্ত।
আমর বিন আউফ তিনি তার পিতার সূত্রে দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
إن في الجمعة ساعة لا يسأل الله العبد فيها شيئا إلا آتاه إياه قالوا يا رسول الله أية ساعة هي ؟ قال حين تقام الصلاة إلى الانصراف منها
অর্থাৎ জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রযেছে, সে সময়ে বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তায়ালা তা দান করেন।
আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, সে সময় কোনটি?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নামাযের জন্য দাড়ানোর পর থেকে শেষ করে ফিরা পর্যন্ত। তিরমিযী, ৪৮৯, শায়খ আহমদ শাকের তাহকীককৃত। আত তারগীব ওয়াত তারহীব ১০৪৯, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ।
এ হাদীসটি যদিও অনেকের মতে যয়ীফ, কিন্তু তা আগের হাদীসের প্রামাণিকতাকে শক্তিশালী করে।
আবার কিছু হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, দোয়া কবুলের সে সময়টা হলো আছরের পর থেকে সূর্যাস্থ পর্যন্ত।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
خير يوم طلعت فيه الشمس يوم الجمعة فيه خلق آدم وفيه أدخل الجنة وفيه أهبط منها وفيه ساعة لا يوافقها عبد مسلم فيسأل الله فيها شيئا إل اأعطاه إياه قال أبو هريرة فلقيت عبد الله بن سلام فذكرت له هذا الحديث فقال أنا أعلم بتلك الساعة فقلت أخبرني بها ولا تضنن بها علي ؟ قال هي بعد العصر إلى أن تغرب الشمس فقلت كيف تكون بعد العصر وقد قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يوافقها عبد مسلم وهو يصلي وتلك الساعة لا يصلى فيها ؟ فقال عبد الله بن سلام أليس قد قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من جلس [ مجلسا ] ينتظر الصلاة فهو في صلاة ؟ قلت بلي قال فهو ذاك
অর্থাৎ সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন। জুমার দিন সৃষ্টি করা হয়েছে আদমকে। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে শুক্রবারে। সে দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তা দান করেন।
আবু হুরায়রা রা. বলেন— আমি আবদুল্লাহ বিন সালাম রা. এর সাথে সাক্ষাৎ করে এ হাদীস উল্লেখ করলাম।
তিনি বললেন, আমি সে সময় সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানি।
আমি বললাম, আমাকে সে সময় সম্পর্কে অবগত করেন।
তিনি বললেন সে সময় হলো আসর পর থেকে নিয়ে সূর্যাস্থ পর্যন্ত।
আমি বললাম, আছরের পর কীভাবে হবে? অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন নামায পড়া অবস্থয় যা চাইবে? আবদুল্লাহ বিন সালম বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেননি যে, যে ব্যক্তি নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকলো, সে যেনো নামায পড়ছে? আমি বললাম, হ্যঁা। তিনি বললেন, বিষয়টি এমনই। তিরমিযী, হাদীস নং, ৪৯১. শায়খ আহমদ শাকের তাহকীককৃত।
ইমাম তিরমিযী রহ. হাদীসকে ‘হাসান সহীহ’ বলেছেন।
আবু সাইদ খুদরী এবং আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
إن في الجمعة ساعة لا يوافقها عبد مسلم يسأل الله عز و جل فيها خيرا إلا أعطاه إياه وهي بعد العصر
অর্থাৎ জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তা দান করেন। সে সময় হলো আছরের পর। মুসনাদে আহমদ, ৭৬৮৮. শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত। মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, ৫৫৮৪. আল্লামা হাবীবুর রহমান আযমী তাহকীককৃত।
হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম হাইছামীর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য পাঠকের সামনে তুলে ধরছি। তিনি বলেন
رواه أحمد وفيه محمد بن أبي مسلمة الأنصاري قال الذهبي : روى عنه عباس ولا يعرفان قلت : أما عباس فهو عباس بن عبد الرحمن بن ميناء روى عنه ابن جريج كما روى عنه في المسند وجماعة وروى له ابن ماجة وأبو داود في المراسيل ووثقه ابن حبان ولم يضعفه أحد والله أعلم
অর্থাৎ হাদীসটি ইমাম আহমদ ‘মুসনাদে আহমদ’ এ বর্ণনা করেছেন। হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হলেন মুহাম্মাদ বিন আবি মাসলামা আল আনসারী। তার থেকে বর্ণনা করেছেন আব্বাস। তাদের উভয়কে চেনা যায়নি।
হাইছামী বলেন, আব্বাস দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হলেন আব্বাস বিন আবদুর রহমান। তার থেকে ইবনে জুরাইজ সহ একটি বড় দল বর্ণনা করেন। ইবনে মাজাহ এবং ইমাম আবু দাউদ ‘কিতাবুল মারাসিল’ এর মধ্যে তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে ছিকাহ বলেছেন। কেউ তাকে যয়ীফ বলেননি। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। মাযমাউয যাওয়ায়িদ, হাদীস নং, ৩০০৯ দারুল ফিকর, বায়রুত।
এহাদীসের একজন রাবী যদিও মাজহুল, কিন্তু হাদীসটি পূর্বের হাদীসের প্রমাণিকতাকে শক্তিশালী করে।
আনাছ বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
التمسوا الساعة التي ترجى في يوم الجمعة بعد العصر إلى غيبوبة الشمس
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের প্রত্যাশিত সে সময়কে জুমার দিন আছরের পর থেকে সূর্যাস্থ পর্যন্ত তালাশ করো। তিরমিযী, হাদীস নং, ৪৮৯ শায়খ আহমদ শাকের তাহকীককৃত।
হাদীসটি বর্ণনার পর ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন—
هذا حديث غريب من هذا الوجه . وقد روى هذاالحديث عن انس عن النبي صلى الله عليه وسلم من غير هذا الوجه . ومحمد بن أبى حميديضعف ، ضعفه بعض اهل العلم من قبل حفظه ويقال له حماد بن ابى حميد، ويقال هو ابو إبراهيم الانصاري ، وهو منكر الحديث . وراى بعض اهل العلم من اصحاب النبي صلى الله عليه وسلم وغيرهم أن الساعة التى ترجى بعد العصر إلى ان تغرب الشمس وبه يقول احمد وإسحاق . وقال احمد : اكثر الحديث في الساعة التى ترجى فيها إجابة الدعوة أنهابعد صلاة العصر ، وترجى بعد زوال الشمس
অর্থাৎ হাদীসটি এই সনদে গরীব। হাদীসের বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ বিন আবু হুমায়দকে কেউ কেউ স্মৃতি শক্তির দিক দিয়ে দুর্বল বলেছেন। বলা হয়, হাম্মাদ বিন আবু হুমায়দ হলেন আবু ইবরাহীম আনসারী। তিনি হাদীস বর্ণনায় ভুলকারী।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিছু সাহাবী এবং আরো কিছু ইমামদের মতে সে সময়টা হলো আছরের পর থেকে নিয়ে সূর্যাস্থ পর্যন্ত। এমনটি হলো আহমদ এবং ইসহাকের মত।
ইমাম আহমদ বলেন, অধিকাংশ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, জুমার দিনের যে সময়ে দোয়া কবুল হয়, সে সময় হলো আসরের পর থেকে সূযাস্ত পর্যন্ত।
আবদুল্লাহ বিন সালাম বর্ণনা করেন—
قلت ورسول الله صلى الله عليه و سلم جالس إنا لنجد في كتاب الله في يوم الجمعة ساعة لا يوافقها عبد مؤمن يصلي يسال الله فيها شيئا إلا قضى له حاجته قال عبد الله فأشار إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم أو بعض ساعة . فقلت صدقت أو بعض ساعة . قلت أي ساعة هي ؟ قال هي آخر ساعات النهار . قلت إنها ليست ساعة صلاة قال بلى . إن العبد المؤمن إذا صلى ثم جلس لا يحبسه إلا الصلاة فهو في الصلاة
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা ছিলেন, এমতাবস্থায় আমি বললাম, আমরা জানি যে, জুমার দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়ে বান্দা নামায পড়া অবস্থায় আল্লাহর নিকট যা চাইবে, আল্লাহ তার চাওয়া পূর্ণ করবেন।
আমি বললাম, সে সময় কোনোটি?
তিনি বললেন, দিনের শেষ মুহূর্তগুলো। আমি বললাম, সে সময়তো নামায পড়ার নয়। তিনি বললেন, বান্দা যখন নামায পড়ে নামাযের অবস্থায় বসে থাকে, সে বসে থাকাটা নামায পড়ার নামান্তর। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১১৩৯ শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত।
জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
” يوم الجمعة ثنتا عشرة ” يريد ساعة ” لايوجد مسلم يسأل الله عزوجل شيئا إلا آتاه الله عزوجل فالتمسوها آخر ساعة بعد العصر ”
জুমার দিনে আল্লাহর কাছে বান্দা যা চাইবে, তিনি তাকে তা দান করবেন। তোমরা সে সময়টি আছরের পর তালাশ করো। নাসায়ী ১৩৮৯, শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ তাহকীককৃত। আবু দাউদ ১০৪৮, মুহি উদ্দীন আবদুল হামিদ তাহকীককৃত।
এ সমস্ত হাদীস থেকে জানা গেলো যে, জুমার দিনের সেই বিশেষ মুহূর্তটি হলো আছরের পর থেকে নিয়ে সূর্যাস্থ পর্যন্ত। ইমাম আহমদের পূর্বোক্ত বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, অধিকাংশ হাদীস থেকে এ মতটি প্রমাণিত হয়।
আবার কোনো রেওয়ায়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা প্রথমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবগত করিয়েছিলেন। পরে শবে কদরের মতো ভুলিয়ে দিয়েছেন।
আবু সালামা বলেন—
و الله لو جئت أبا سعيد فسألته عن هذه الساعة أن يكون عنده منها علم فأتيته فذكر حديثا طويلا و قال قلت : يا أبا سعيد إن أبا هريرة حدثنا عن الساعة التي في الجمعة فهل عندك منها علم ؟ فقال : سألنا النبي صلى الله عليه و سلم عنها فقال : إني قد كنت أعلمتها ثم أنسيتها كما أنسيت ليلة القدر ثم خرجت من عنده فدخلت على عبد الله بن سلام فذكر الحديث بطوله
অর্থাৎ যদি আমি আবু সাঈদের কাছে যাই, তাহলে আমি তাকে সে সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব, এবিষয়ে তার নিকট কোনো ইলম রয়েছে কিনা? এরপর লম্বা কিসসা উল্লেখ করার পর বলেন, হে আবু সাঈদ, আবু হুরায়রা জুমার বিশেষ সময় সে সম্পর্কে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, এ বিষয়ে কি আপনার নিকট কোনো ইলম রয়েছে?
তিনি বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি প্রথমে জানতাম। পরে আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে যেমনভাবে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে। মুসনাদে আহমদ ১১৬২৪, শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত। সহীহ ইবনে খুযাইমা ১৭৪১, শায়খ মুসতাফা আযমী তাহকীককৃত।
আসলে জুমার সে বিশেষ সময় নিয়ে বেশ মতবিরোধ রয়েছে। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন—
وَقَدْ اِخْتُلَفَ فِيهَا عَلَى أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ قَوْلًا
অর্থাৎ এ বিষয়ে চল্লিশের অধিক মত রয়েছে। বুলুগুল মারাম, ৪৬৬ নং হাদীসের অধীনের আলোচনা।
জুমার দিনে একটি সময় রয়েছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তা দান করেন, বিষয়টি নিশ্চিত। কিন্তু সময় নির্ধারণ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এজন্য আমাদের জন্য উচিৎ হলো জুমার পুরো দিন আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে পার করা। বিশেষত আছরের পর থেকে সূর্যাস্থ পর্যন্ত। খুৎবা চলা থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন।