কাফের ফতোয়া, বেদয়াতিদের কাছে ডালভাত

কাফের ফতোয়া, বেদয়াতিদের কাছে ডালভাত
              রেজাউল কারীম আবরার
পৃথিবীর সবচেয়ে স্পর্শকাতর মাসআলা হল কুফরের মাসআলা। কাউকে কাফের ফতোয়া দেয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সতর্কতা কাম্য। কারণ প্রকৃতপক্ষে যদি কেউ কাফের না হয়, কিন্তু তুমি তাকে কাফের ফতোয়া দিয়ে দিলে, তাহলে একজন মুসলমানকে তুমি কাফের ফতোয়া দিলে। যেটা মারাত্মক গুনাহের কাজ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ما أكفر رجل رجلا إلا باء أحدهما بها إن كان كافرا وإلا كفر بتكفيره
কোনো মানুষ অন্য মানুষকে কাফের বললে যে কোনো একজন কাফের হয়। যদি ওই লোক বাস্তবে কাফের হয়, তাহলেতো কথা নেই। অন্যথায় কুফরের ফতোয়া বক্তার দিকে ফিরে আসবে। (সহীহ ইবনে হিব্বান, ২৪৮ শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকিককৃত। আত তারগীব ওয়াত তারহীব, ৪২১০ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বায়রুত।)
ফুকাহায়ে কেরাম এ বিষয়ে এতটুকু সতর্কতা অবলম্ভন করেছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি অস্পষ্ট কোন কথা বলে, যার নিরানব্বইটি ব্যাখ্যা হল কুফর। কিন্তু একটি ব্যাখ্যা এমন রয়েছে, যা সঠিক। তাহলে মুফতির জন্য জরুরী হল নিরানব্বইটি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ওই একটি ব্যাখ্যা গ্রহণ করে তাকে কাফের ফতোয়া প্রদান থেকে বিরত থাকা। তবে শর্ত হল, ওই ব্যক্তি তার কোন কথা বা কাজ দ্বারা যদি কোনো ব্যাখ্যা নির্ধারণ না করে দেয়। “ফতোয়া আলমগীরী” তে বিষয়টি এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
إذَا كَانَ فِي الْمَسْأَلَةِ وُجُوهٌ تُوجِبُ الْكُفْرَ ، وَوَجْهٌ وَاحِدٌ يَمْنَعُ ، فَعَلَى الْمُفْتِي أَنْ يَمِيلَ إلَى ذَلِكَ الْوَجْهِ كَذَا فِي الْخُلَاصَةِ فِي الْبَزَّازِيَّةِ إلَّا إذَا صَرَّحَ بِإِرَادَةٍ تُوجِبُ الْكُفْرَ ، فَلَا يَنْفَعُهُ التَّأْوِيلُ حِينَئِذٍ كَذَا فِي الْبَحْرِ الرَّائِقِ ،
অর্থাৎ যদি কোনো মাসআলায় একাধিক ব্যাখ্যা এমন থাকে, যা কুফরকে ওয়াজিব করে, শুধু একটি ব্যাখ্যা কুফর হয় না, তাহলে মুফতি সে একটি ব্যাখ্যা গ্রহণ করে তাকে মুসলমান বলবেন।(. ফতোয়া আমলগীরী, ৩/৩১২ )
এছাড়া কোন কাফেরকে মুসলমান বলে দেওয়া শুধু শাব্দিক দৃষ্টতা নয়। বরং পুরো মুসলিম উম্মাহর উপর অত্যাচারের শামিল। পুরো মুসলিম সামাজিক জীবনে এর প্রভাব পড়বে। বিবাহ, বংশ, মিরাছ, জবেহকৃত প্রাণী, ইমামতি, নামাজ, সম্মিলিত এবং রাজনৈতিক সর্ব বিষয়ে এর প্রভাব পড়বে। এজন্য কুফরের যে সূরতকে ইলহাদ বা জিনদিক বলা হয়, তার বিষয়টি খুবই মারাত্মক। এখানে সামান্য অসতর্কতার কারণে একজন মুসলমানকে কাফের বানিয়ে দেওয়া হবে।
.
বর্তমানে বাংলাদেশে যারা নিজেদের সুন্নী দাবি করেন, তাদের কাছে সবচেয়ে সহজ ফতোয়া হলো কাফের। আপনি বলবেন ঈদে মিলাদুন্নবী, জশনে জুলুস পালন করা বেদয়াত, সরাসরি ফতোয়া আসবে আপনি কাফের! আপনি বলবেন কিয়াম করা বেদয়াত, সরাসরি ফতোয়া আসবে কুফরের! দেওবন্দিরা কাফের এ ফতোয়া শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আহলে কিবলাদের কাফের বলতে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। যদি আহলে কিবলা থেকে পরিস্কার কুফরি কোনো বিষয় প্রকাশ না পায়, তাহলে তাকে কাফের বলতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে শুধুমাত্র এখানে আল্লামা ইবনুল হুমাম রহ. এর বক্তব্য উল্লেখ করছি। তিনি বলেন-
هو الموافق على ماهو من ضروريات الإسلام كحدود العالم وحشر الأجساد من غير أن يصدر عنه شيئ من موجبات الكفر قطعا من اعتقاد راجع الى وجود إله غير الله تعالى أو حلوله في بعض أشخاص الناس أو إنكار نبوة محمد أو ذمه أو استخفافه ونحوذلك المخالف في الأصول سواها
(إلى أن قال. وقد ظهر من هذا أن عدم تكفير أهل القبلة بذنب ليس على عمومه إلا أن يحمل الذنب على ما ليس بكفر.فيخرج الكفر به كما أسار إليه السبكي.
অর্থাৎ আহলে কিবলা হল যে দ্বীনের অত্যাবশ্যকীয় সকল বিষয়কে মানে। যেমন পৃথিবী সৃষ্টি, হাশর। এমনভাবে তার থেকে কুফরকে আবশ্যক করে এমন কোনো আমল প্রকাশ পায় না। যেমন এমন আকীদা, যা আল্লাহর সাথে অন্য আরেকজনকে শামিল করে ফেলে। অথবা আল্লাহ কারো মধ্যে হুলুল করেছেন। অথবা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করল। অথবা তার নিন্দা করা বা তাকে খাটো করা। এধরণের আরো কথাবার্তা।
এর থেকে স্পষ্ট হল যে, আহলে কিবলাকে কোন গোনাহের কারণে কাফের না বলার হাদিস ব্যাপক নয়। হ্যাঁ, গোনাহ দ্বারা যদি কুফর ছাড়া অন্যান্য গোনাহ উদ্দেশ্য হয়, যে মনটা ইশারা করেছেন ইমাম সুবকী, তাহলে ব্যাপক উদ্দেশ্য।
একজন মুসলমানকে কাফের বলতে কি তাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে না? আসলে মানুষ যখন সিরাতে মুস্তাকিম থেকে বিচ্যূত হয়ে যায়, তখন সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে দুনিয়ার সকলের পিছনে কাফের ট্যাগ লাগিয়ে দেয়! আল্লাহ তাদেরকে হেদয়াত দান করুন।

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *