ইয়াযীদ, মুয়াবিয়া রা. এবং কারবালা প্রসঙ্গ

ইয়াযীদ বললেই বর্তমানের সাধারণ মানুষের চোখে ভেসে উঠে একজন হিংস্র মানুষের ছবি! অনেকেই আগ বেড়ে বলে ফেলেন ইয়াযীদ হলো নরকের কীট! গালিগালাজের বন্যা থেকে বাদ পড়েন না ইয়াযীদের পিতা মুআবিয়া রা.। কারণ তিনি ইন্তেকালের সময় ইয়াযীদকে খলীফা বানিয়ে গিয়েছিলেন। এবিষয়ে আমি কথা দীর্ঘ না করে শায়খুল ইসলাম জাষ্টিস মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দা.বা.-এর বক্তব্য পেশ করছি। তিনি এ বিষয়ে চমৎকার আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেন-
“ইয়াযীদের যে ঘৃণ্য চিত্র সাধারণত: আমাদের সবার চিন্তায় বদ্ধমূল হয়ে আছে, তার বুনিয়াদ হলো কারবালার মর্মন্তুদ ঘটনা। বস্ততঃ রাসূল-দৌহিত্রের মর্মান্তিক শাহাদাতের সাথে কিঞ্চিত পরিমাণে হলেও যে নরাধম জড়িত, ইসলামী খিলাফতের পবিত্র আসনে মর্তের জন্যও তাকে কল্পনা করা কোন মুসলমানের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু ঘটনার নিরপেক্ষ পর্যালোচনাই যদি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে একথা আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে, ইয়াযীদকে যখন মনোনয়ন দেয়া হচ্ছিলো, তখন কিন্তু কারবালা-ট্রাজেডীর অস্বিত্ব ছিল না। এমনকি পরবর্তীকালে দোষ-ত্রুটিও যদিও ইয়াযীদ চরিত্রে তখন বিদ্যমান ছিল না। তখন তো সে আমীরুল মুমিনের প্রিয় পুত্র ও ছাহাবীযাদা হিসাবে সকলের বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র ছিল এবং তার নৈতিকতা, ধার্মিকতা, পারিবারিক সম্ভ্রান্তি, প্রশাসনিক দক্ষতা ও সমর নৈপূন্যের বিচারে তাকে খিলাফতের যোগ্য বিচার করার যথেষ্ট অবকাশও ছিল। তদুপরি ইয়াযীদের এ যোগ্যতা শুধু যে পিতা মুআবিয়ার (রা.)-র চোখেই ধরা পড়েছিল তা নয়। বহু নেতৃস্থানীয় ছাহাবা ও তাবেয়ীনও অনুরপ মত পোষণ করতেন। হিজরী দ্বিতীয় শতকের সুপ্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক আল্লামা বালাযারী, মাদাইনীর সূত্রে ইমামুল মুফাস্সিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস সম্পর্কে বর্ণনা করেন-
‘পানাহারের এক মজলিসে হযরত মুআবিয়ার মৃত্যুসংবাদ শুনে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। পরে বললেন, হে আল্লাহ! মুআবিয়াকে করুণা করো, পূর্ববর্তীদের তুলনায় তিনি উত্তম ছিলেননা বটে, তবে পরবর্তীরাও তাঁর তলনায় উত্তম হবেনা। ইয়াযীদ অবশ্যই তাঁর খান্দানের যোগ্য উত্তরসূরী। সুতরাং স্ব-স্ব স্থানে থেকে তাকে আনুগত্য ও বাইআত দান করো।
হযরত আলীর পুত্র হযরত মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়া সম্পর্কে আল্লামা ইবনে কাছীর বর্ণনা করেন।
‘হাররাহ’র গোলযোগকালে আব্দুল্লাহ বিন মুতী’ মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়াকে জানালেন যে, ইয়াযীদ তো মদ্য পান, বেনামাযী এবং কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধচরণকারী। উত্তরে মুহাম্মদ বিন হানাফিয়া বলেন-
‘কিছুদিন আমি তার সংস্পর্শে ছিলাম, তখন তো তাকে নামাযের অনুবর্তী এবং কোরআন-সুন্নাহর অনুগত দেখেছি। এমনকি ফিকাহশাস্ত্র নিয়েও তাকে আলোচনা করতে দেখেছি।’
আব্দুল্লাহ বিন মুতী’ বলেন, ‘সম্ভবতঃ আপনার সামনে সে কৃত্রিম আচরণ করেছে।’ হযরত মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়া বললেন, ‘কিন্তু কিসের ভয়ে কিংবা প্রত্যাশায় সে তা করবে? আর সে কি নিজে এ গোপন কথা তোমাকে বলেছে? তাহলে তো তুমি তার দোসর, আর না বলে থাকলে তো তুমি না জেনে সাক্ষী দেয়ার অপরাধ করলে।’
আব্দুল্লাহ বললেন,, ‘আমি নিজে দেখি নি বটে, তবে সত্য বলেই মনে হয়।’ হযরত মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়া বলেন, ‘আল্লাহ কিন্তু সাক্ষীদের এ ধরণের কথা বলার অনুমতি দেন নি। কেননা কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
“তবে যারা নিশ্চিতরুপে সত্য সাক্ষ দান করে”। সুতরাং তোমার ব্যাপারে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।’
আব্দুল্লাহ বিন মুতী’ বলেন, ‘সম্ভবতঃ এ ব্যাপারে (ইয়াযীদ বিরোধী অভ্যুত্থানে) অন্য কারো নেতৃত্ব আপনার পছন্দ নয়। আচ্ছা আসুন, আপনাকেই আমরা নেতৃত্বপদে বরণ করি।’ হযরত মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়া চূড়ান্ত জবাব দিয়ে বললেন, ‘অধীনস্থ বা অধিনায়ক কোনো অবস্থান থেকেই আমি রক্তপাত পছন্দ করিনা।’ (আল বিদায়াহ ৮/২২৩)
মোটকথা, অন্তত বাহ্যিক দৃষ্টিতে ইয়াযীদের চরিত্র ও নৈতিকতা এমন সম্মাননজনক পর্যায়ে ছিল যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের মত বিশিষ্ট ছাহাবীও ইয়াযীদের খেলাফতের অনুকূলে মত পোষণ করতেন। এমনকি অন্যদেরও তিনি তার বাইআত গ্রহণের উপদেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে সমাজ ও পরিবেশের বিচারে তাকে খিলাফতের অনুপযুক্ত বিবেচনা করারও অবকাশ ছিল। কেননা সেটা ছিল ছাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ। গোটা পরিবেশ ছিল কল্যাণ ও পবিত্রতা এবং পূণ্য ও সততার নূরে নূরান্বিত। ইমাম হুসাইন, ইবনে আব্বাস, ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ বিন যোবায়র ও আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.)-এর মত মহান ব্যক্তিগণ তখনো ছিলেন বর্তমান। ধার্মিকতার ক্ষেত্রে যেমন তেমনি প্রশাসনিক যোগ্যতার ক্ষেত্রেও ইয়াযীদের বহু উর্ধ্বে ছিল তাঁদের অবস্থান। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাহাবা ইয়াযীদকে মনোনয়ন দানের প্রকাশ্য বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
ছাহাবাদের জামা’তে তৃতীয় একটি মতও বিদ্যমান ছিল। ইয়াযীদকে তাঁরা যোগ্যতম ভাবতেননা বটে, তবে সর্বনাশা বিভেদ ও রক্তপাত এড়ানোর জন্য খিলাফতের পদে বরদাশত করে নিতে তাঁরা রাজী ছিলেন।
ছাহাবী হযরত বসীরের (রা.) খিদমতে ইয়াযীদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘সবাই বলে ইয়াযীদ উম্মাহর যোগ্যতম ব্যক্তি নয়। আমিও তাই বলি। তবে পূণরায় উম্মাহর ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার চেয়ে সে অধিক সহনীয়।’
মোটকথা, ইয়াযীদের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ছাহাবা কেরামের মধ্যে যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল, তা ছিল সর্বাংশে ইজতিহাদ নির্ভর। সুতরাং সকল ছাহাবার ব্যাপারেই আমাদের ‘আচরণ ও উচ্চারণ’ সংযত হতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে, আন্তরিকভাবেই হযরত মুআবিয়া ইয়াযীদকে খিলাফতের যোগ্য বিবেচণা করতেন। তাঁর ধারণায় উম্মাহর সামগ্রিক কল্যাণও এতে নিহিত ছিল। ছাহাবায়ে কেরামের এক বিরাট অংশ নিঃস্বার্থ আন্তরিকতার সাথে তাঁর এ পদক্ষেপ সমর্থনও করেছিলেন। পক্ষান্তরে যে পাঁচজন বিশিষ্ট ছাহাবা প্রকাশ্য বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তাঁদের মনেও ব্যক্তি আক্রোশ কিংবা ক্ষমতার মোহ ছিল না। আন্তরিকভাবেই ইয়াযীদকে তাঁরা অযোগ্য মনে করতেন। তাই খিলাফতের পবিত্রতা রক্ষার মহান দ্বীনী দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন প্রকাশ্য বিরোধিতায়। এ মহান দায়িত্ববোধ এমনকি মুহূর্তের জন্যও তাঁদেরকে নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা ভেবে দেখার ফুরসত দেয়নি।
আবার বলছি হযরত মুগীরা ও মুআবিয়া (রা.)-এর সিদ্ধান্ত নির্ভুল ও যথার্থ ছিল এটা আমাদের দাবী নয়। আমরা শুধু বলতে চাই, দুই ছাহাবার এ সিদ্ধান্ত ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থের ফসল নয়। তাঁরা যা করেছেন, উম্মাহর সামগ্রিক কল্যাণ ও ঐক্য রক্ষার তাগিদেই করেছেন এবং সীমারেখার ভিতরে থেকেই করেছেন। তবে যুক্তি ও পরিণতি বলে, যাঁরা মনোনয়নের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তাঁদের সিদ্ধান্তই ছিল নির্ভুল ও বাস্তবানুগ এবং এতেই নিহিত ছিল উম্মাহর সামগ্রীক কল্যাণ। কেননা-
১.হযরত মুআবিয়া (রা.) -এর সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা সত্ত্বেও পরবর্তী শাসকগণ তাঁর এ সিদ্ধান্তের নজীর টেনে অন্যায় স্বার্থ হাসিল করেছে এবং শুরা ভিত্তিক কল্যাণময় ইসলামী কিলাফত ব্যবস্থাকে দাফন করে উত্তরাধিকার ভিত্তিক রাজতন্ত্রের জন্ম দিয়েছে।
২. হযরত মুআবিয়া (রা.)-এর জীবদ্দশায় যেহেতু ইয়াযীদের বিরুদ্ধে পাপাচার ও অধার্মিকতার সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছিল না, অন্যদিকে তার প্রশাসনিক দক্ষতা ও সমরনৈপুন্য ছিল প্রশ্নাতীত; সেহেতু তাকে খিলাফতের যোগ্য বিবেচনা করার অবকাশ অবশ্যই ছিল। কিন্তু এমন বহু ছাহাবা তখনও বেঁচে ছিলেন, যাঁরা প্রশাসনিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বিচারেও ইয়াযীদের তুলনায় অনেক বেশি যোগ্যতার প্রমাণ তাঁরা দিতে পারতেন। অবশ্য এ কথা সত্য যে, যোগ্যতরের বর্তমানে যোগ্যকে খলীফা মনোনিত করার বৈধতা ইসলামে রয়েছে। তবু উম্মাহর সর্বোত্তম ব্যক্তির হাতেই খিলাফতের পবিত্র আমানত সোপর্দ হওয়া কল্যাণজনক।
৩. যোগ্যতার শর্তে পুত্রকে খলীফা মনোনিত করার বৈধতা সত্ত্বেও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় বিধায় তা পরিহার করে চলাই উত্তম। অপরিহার্য প্রয়োজন ছাড়া এ পথে অগ্রসর হওয়ার মানে হলো নিজেকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করা। বিশেষতঃ হযরত উমর ও হযরত আলী (রা.) সুযোগ্য পুত্রদের বেলায় অব্যাহত অনুরোধের মুখেও সে নীতিতে অটল ছিলেন। (তারীখে ইবনে জারীর তাবারী, ৩/২৯২,৪/১১২-১১৩)
আল্লামা কাযী আবু বকর ইবনুল আরাবী লিখেছেন যে, কোনো নিকটাত্মীয়কে বিশেষতঃ পুত্রকে খলীফা মনোনিত না করে বিষয়টি শুরার হাতে ছেড়ে দেয়াই হযরত মুআবিয়ার জন্য উত্তম ছিল। আগাম মনোনয়ন দেয়া না দেয়ার ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র তাকে যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেটা মেনে নিলেই তিনি ভালো করতেন। কিন্তু সে উত্তম কাজটি তাঁর করা হয়নি। (আল আওয়াসিম ওয়াল কাওয়াসিম, পৃষ্ঠা নং, ২২২)
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. লিখেছেন-
‘শান্তিচুক্তিতে পরবর্তী খলীফা হিসাবে হযরত হাসানের নাম ছিল কিন্তু তাঁর মৃত্যুর ফলে ইয়াযীদের প্রতি হযরত মুআবিয়ার দৃষ্টি পড়ে। তাঁর ধারণায় খিলাফতের যোগ্যতাও তার ছিল। এ মত তিনি পোষণ করতেন পিতার সহজাত ভালোবাসার কারণে এবং এ কারণেও যে, তিনি তার মাঝে আভিজাত্য, শাহজাদাসুলভ গুণাবলি, সমরনৈপুণ্য এবং শাসন ও রাজ্য পরিচালনার দক্ষতা দেখতে পেয়েছিলেন, আর তাঁর ধারণায় ছাহাবাতনয়দের মাঝে অন্য কেউ এ মানদন্ডে উত্তীর্ণ ছিলেন না। এজন্যই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমরকে সম্বোধন করে তিনি বলেছিলেন- ‘জনসাধারণকে আমি রাখালবিহীন বকরীপালের মত ছেড়ে যেতে চাই না।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮/৮০)
এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে খালদুন তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে লিখেছেন-
‘হযরত মুআবিয়া (রা.)-এর অন্তরে অন্যদের ডিঙ্গিয়ে ইয়াযীদকে খলীফা মনোনীত করার যে তাগাদা সৃষ্টি হয়েছিল, তার কারণ ছিল উম্মাহর ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থ। কেননা বনু উমাইয়ার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ইয়াযীদের ব্যাপারে সংঘবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্বগোত্র ছাড়া অন্য কারো নেতৃত্ব তারা মেনে নিতে রাজী ছিল না। আর উমাইয়ারাই ছিল তখন কুরাইশদের প্রধান শক্তি। তাছাড়া উম্মাহর গরিষ্ট অংশ ছিল তাদের অনুবর্তী। এসব দিক বিবেচনা করেই যোগ্যতার পরিবর্তে যোগ্যকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছেন। হযরত মুআবিয়া (রা.)-এর ন্যায়পরায়ণতা ও ছাহাবিত্ব এ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে আমাদের বারণ করে।’
বস্তুতঃ ছাহাবা কেরাম সম্পর্কে উম্মাহর গরিষ্ট অংশের নির্দ্ধিধ সিদ্ধান্ত এই যে, তাঁদের আচরণ ও উচ্চারণের এমন বাস্তবানুগ ব্যাখ্যা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, যা তাঁদের জীবনচরিত্র ও ছাহাবাসূলভ পবিত্রতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। পক্ষান্তরে এমন কোনো ব্যাখ্যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, যা তাঁদের ছাহাবাসূলভ পবিত্রতার সাথে সংঘর্ষপূর্ণ। (ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া, পৃষ্ঠা নং- ১১১-১১৬. শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী, অনুবাদ মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ)
য়াযীদের খলীফা হওয়া সংক্রান্ত এ দীর্ঘ আলোচনাটি আমি শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী দা.বা. এর লিখিত ‘ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া’ নামক গ্রন্থ থেকে উল্লেখ করেছি। এ দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা উদ্দেশ্য এই নয় যে, হুসাইন রা. এর হত্যার সাথে ইয়াযীদের কোনো হাত নেই! বা তিনি ছিলেন খলীফা হওয়ার অধিক হকদার! মূলত উদ্দেশ্য হলো ইয়াযীদের মনোনয়ন নিয়ে তাঁর পিতা ওহী লেখক মুয়াবিয়া রা. এর বিরুদ্ধে গালিগালাজের যে ঝড় বইয়ে দেওয়া হয়, খেলাফত ধ্বংস করে রাজতন্ত্র প্রতিষ্টা করেছেন তিনি তাঁর ব্যক্তি স্বার্থে, সেগুলোর জবাব দেওয়া। এছাড়া আমাদের সমাজে অনেকেই বলে থাকেন যে, ইয়াযীদ খেলাফতের যোগ্য ছিল না। সে মদপান করতো! নারী নিয়ে ফূর্তি করতো! বানর নাচাতো! এতদঃসত্ত্বেও মুয়াবিয়া রা. তাকে নিজ পূত্র হওয়ার কারণে পরবর্তী খলীফা বানিয়েছেন। বিষয়টি যে ডাহা মিথ্যা, আশা করি শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী দা.বা. এর আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে। এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী দা.বা. এর গ্রন্থটি পড়তে পারেন।
কারবালার ইতিহাস অবশ্যই নির্মম। মুসলমানদের হৃদয় রক্তক্ষরণ হয়! কিন্তু বাড়াবড়ি কাম্য নয়। মুআবিয়া রা. এর মত মহান, ওহীর লেখক সাহাবীকে গালিগালাজ করার প্রশ্নই আসে না। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *