“আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বান. ওয়া বাল্লিগ না রামাযান” দোয়াটি পড়া যাবে?
রজব মাস আসলেই আমরা একটি দোয়া পড়ি। মসজিদে মসজিদে আলোচনা হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব থেকে রমযানের প্রস্তুতি শুরু করতেন এবং এ দোয়াটি পড়তেন-
” اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان “.
হে আল্লাহ, আপনি রজব এবং শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমযানে পেঁৗছিয়ে দিন।
হাদীসটি আনাছ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كان رسول الله صلى الله عليه و سلم اذا دخل رجب قال اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان
অর্থাৎ যখন রজব মাস প্রবেশ করতো, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়াটি পড়তেন: হে আল্লাহ আপনি রজব এবং শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমযানে পৌঁছিয়ে দিন। মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৩৪৬, শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত। আল মু’যামুল আওসাত, হাদীস নং ৩৯৩৯, দারুল হারামাইন, কাহেরা। মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ৬৪৯৪,
ইমাম তাবারানী হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন-
لا يروى هذا الحديث عن النبي صلى الله عليه و سلم إلا بهذا الإسناد تفرد به زائدة بن أبي الرقاد
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই সনদ ছাড়া অন্য কোনো সনদে বর্ণিত হয়নি। যায়িদা বিন আবির রাক্কাদ ছাড়া তাঁর শায়খ থেকে অন্য কেউ বর্ণনা করেননি।
ইমাম হাইছামী রহ. হাদীস সম্পর্কে বলেন,
رواه البزار وفيه زائدة بن أبي الرقاد قال البخاري : منكر الحديث وجهله جماعة
অর্থাৎ হাদীসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা করেছেন। হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হলো যায়ীদা ইবনে আবি রাক্কাদ। ইমাম বুখারী তাকে ‘মুনকারুল হাদীস’ বলেছেন। এছাড়া আরো অনেকে তাকে ‘মাজহুল’ বলেছেন। যমাউয যাওয়ায়িদ, হাদীস নং ৩০০৬, দারুল ফিকর, বায়রুত।
হাইছামী রহ. অন্যত্র বলেন,
رواه البزار والطبراني في الأوسط وفيه زائدة بن أبي الرقاد وفيه كلام وقد وثق
অর্থাৎ বর্ণনাটি ইমাম তাবারানী এবং বাযযার বর্ণনা করেছেন। হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হলেন যায়ীদ বিন আবু রাক্কাদ। তাঁর ব্যাপারে নেতিবাচক কথা রয়েছে। তবে কেউ কেউ তাকে ছিকাহ বলেছেন। মাযমাউয যাওয়ায়িদ, ৪৭৭৪, দারুল ফিকর, বায়রুত।
ইমাম বায়হাকী রহ. ‘ফাযায়িলুল আওকাত’ এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন,
تفرد به زائدة، عن زياد، وهو حديث ليس بالقوي.
অর্থাৎ হাদীসটি যিয়াদ থেকে যায়িদা এককভাবে বর্ণনা করেছেন। তবে হাদীসটি শক্তিশালী নয়।৩০৬. ফাযায়িলুল আওকাত, হাদীস নং ১৪, মাকতাবাতুল মানারাহ, মক্কা, প্রথম সংস্করণ।
হাদীসের বর্ণনাকারী যায়িদা এর ব্যাপারে অনেক ইমাম নেতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। ইমাম আবু হাতিম বলেন,
حديثه منكر
অর্থাৎ তাঁর বর্ণিত হাদীস আপত্তিকর।
ইমাম বুখারী রহ. বলেন,
منكر الحديث
অর্থাৎ সে চরম আপত্তিকর বর্ণনাকারী।
ইমাম নাসায়ী রহ. বলেন,
لا أدرى ما هو
অর্থাৎ আমি জানিনা সে কে? মিজানুল এতেদাল, ৪/৪২
ইমাম নাসায়ী অন্যত্র বলেন,
منكر الحديث
অর্থাৎ সে চরম আপত্তিকর বর্ণনাকারী।
ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন,
لا يحتج بخبره
অর্থাৎ তার বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল দেওয়া যাবেনা। তাবয়িনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফি শাহরি রজব, পৃষ্ঠা নং, ৫ মাকতাবাতুশ শামেলা।
মোটকথা হলো: হাদীসের একজন বর্ণনাকারী ছিকাহ নয়। এর কারণে মুহাদ্দিসগণ হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন। ইমাম নববী রহ. বলেন,
وروينا في ” حلية الأولياء ” بإسناد فيه ضعف ، عن زيادالنميري ، عن أنس رضي الله عنه ، قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل رجب قال : ” اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان ” .
অর্থাৎ আবু নুয়াইম আাসফাহানী রহ. ‘হিলোয়াতুল আউলিয়া’—তে দুর্বল সনদে যিয়াদ থেকে, তিনি আনাছ রা. থেকে বর্ণনা করেন, যখন রজব মাস আসতো, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোয়াটি করতেন, হে আল্লাহ, আপনি রজব এবং শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমযানে পেঁৗছিয়ে দিন। আল আযকার, পৃষ্ঠা নং ৪১৪, দারুল ফিকর, বায়রুত।
আল্লামা তাহের পাঠনী রহ. বলেন-
نعم روي بإسناد ضعيف “أنه صلى الله عليه وسلم كان إذا دخل رجب قال اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان” ويجوز العمل في الفضائل بالضعيف.
অর্থাৎ পূর্বোক্ত দোয়াটি যয়ীফ তথা দুর্বল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আর ফাযায়েল এর ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা যায়। তাযকিরাতুল মাওযুয়াত, পৃষ্ঠা নং. ৫১, মাকতাবাতুশ শামেলা।
মোটকথা হলো: আমাদের দেশের অনেকেই দোয়াটি সহীহ মনে করে বেশ গুরুত্ব দিয়ে পড়ে থাকেন। কিন্তু এ বিশেষ দোয়াটিকে কোনো ইমাম সহীহ বলেননি। সর্বসম্মতক্রমে হাদীসটি যয়ীফ তথা দুর্বল। যদিও দুর্বল হাদীস ফাযায়েলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। এজন্য কেউ চাইলে রজব মাসে এ দোয়াটি পড়তে পারে।
আসসালামুআলাইকুম! কেমন আছেন? হযরত!
আমার জানার বিষয় হচ্ছে, এই হাদীসের সনদটা যয়ীফ শদীদ না?