কবর পাকা করা এবং ইমারত নির্মাণ করা

কবর পাকা করা এবং কবরের উপর  ইমারত নির্মাণ করা
জাবের রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
نهى رسول الله صلى الله عليه و سلم أن يجصص القبر وأن يقعد عليه وأن يبنى عليه
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরকে পাকা করতে, কবরের উপর বসতে এবং কবরের উপর ইমারত নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। মুসলিম, হাদীস নং ৯৭০, শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত।

ইমাম নববী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন-
وأما البناء عليه فإن كان في ملك الباني فمكروه وإن كان في مقبرة مسبلة فحرام نص عليه الشافعي والأصحاب،
অর্থাৎ যদি মালিকানাধীন জায়গায় কবরের উপর কোনো কিছু নির্মাণ করা হয়, তাহলে সেটা মাকরুহে তাহরীমী। আর যদি জানসাধারণের মাকবারায় হয়,তাহলে সেটা হারাম। ইমাম শাফেয়ী এবং তাঁর আরো শিষ্যদের এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে। আল মিনহাজ শরহু মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ, ৭/ ২৭ দারু ইহয়ায়িত তুরাছিল আরাবী, বায়রুত।

ইমাম মুহাম্মাদ রহ. বলেন-
ولا نرى أن يزاد على ما خرج منه ، ونكره أن يجصص أو يطين ،……
أخبرنا أبو حنيفة ، قال حدثنا شيخ لنا يرفع إلى النبي صلى الله عليه وسلم أنه ্র نهى عن تربيع القبور وتجصيصها  ، قال محمد : وبه نأخذ ، وهو قول أبي حنيفة رضي الله عنه
অর্থাৎ কবর খুড়তে যে সমস্ত মাটি সরানো হয়েছে, এরচেয়ে বেশি মাটি কবরে দেওয়াকে আমরা সঠিক মনে করিনা। কবরকে পাকা করতে এবং প্রলেপ দেওয়াকে আমরা মাকরুহ মনে করি।
এরপর তিনি ইমাম আবু হানিফার সূত্রে হাদীস উল্লেখ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করতে এবং কবরের উপর কোন কিছু নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। ইমাম মুহাম্মাদ বলেন: এটা হলো আমাদের মাযহাব এবং ইমাম আবু হানিফা রহ. এর কথা। কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদের রেওয়ায়াতকৃত। হাদীস নং ২৫৪-২৫৫, মাকাতাবতুশ শামেলা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ হাদীসে এবং ইমাম আবু হানিফা রহ. থেকে সঠিক সূত্রে প্রমাণিত হওয়ার পর আর কোন দলীলের প্রয়োজন নেই। কিন্তু পরিপূর্ণতার জন্য হানাফী মযাযহাবের কয়েকজন বিখ্যাত ফকীহদের বক্তব্য এখানে উল্লেখ করছি।
ইমাম হালাবী বলেন-
“ويكره تجصيص القبور وتطيينها وبه قالت الأئمة الثلاثة…
وعن أبي حنيفة أنه يكره أن يبني عليه بناء من بيت أو قبة أو نحو ذلك لما مر من الحديث أنفا.
অর্থাৎ কবরকে পাকা করা, কবরে প্রলেপ লাগানো মাকরুহ। তিন ইমামই এমনটা বলেছেন। আবু হানিফা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি কবরে ঘর বানানো, মিনার বানানো ইত্যাদিকে মাকরুহ বলেছেন।

ইমাম কাজীখান রহ. বলেন-
“ولا يجصص القبور لما روي عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه نهى أن يجصص القبر وأن يقعد عليه وأن يبنى عليه
অর্থাৎ কবরকে পাকা করা যাবেনা। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরকে পাকা করতে, কবরের উপর বসতে এবং কবরের উপর কোন কিছু নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। ফতোয়া কাযীখান, ১/১২১, মাকতাবাতুল ইত্তেহাদ।

আল্লামা ইবনুল হুমাম রহ. বলেন-
أَيْ لَا يُرَبَّعُ أَنَّهُ نَهَى عَنْ تَرْبِيعِ الْقُبُورِ وَتَجْصِيصِهَا }
অর্থাৎ কবরকে পাকা করতে এবং তার উপর কিছু নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। ফাতহুল কাদীর, ৩/৪২৩

‘ফতোয়া আলমগীরী’তে আছে-
وَيُسْنَمُ الْقَبْرُ قَدْرَ الشِّبْرِ وَلَا يُرَبَّعُ وَلَا يُجَصَّصُ وَيُكْرَهُ أَنْ يُبْنَى عَلَى الْقَبْرِ أَوْ يُقْعَدَ أَوْ يُنَامَ عَلَيْهِ
অর্থাৎ কবরকে এক বিঘত পরিমাণ উঁচু করতে পারবে। তবে কবরকে চার কোনা করতে পারবেনা। পাকা করতে পারবেনা। কবরের উপর কোন কিছু নির্মাণ করা, কবরের উপর বসা এবং ঘুমানো মাকরুহ।. ফতোয়া আলমগীরী, ৪/ ৪৭৯,

মোল্লা আলী কারী রহ. বলেন-
ومن ابتدع بدعة ضلالة يروى بالإضافة ويجوز أن ينصب نعتا ومنعوتا وهي ما أنكره أئمة المسلمين كالبناء على القبور وتجصيصها
অর্থাৎ যে কোন ভ্রষ্ট বেদয়াতের সূচনা করলো, অতপর তিনি বলেন, আর ভ্রষ্ট বেদয়াত হলো: যা মুসলমানদের ইমামগণ অস্বীকার করেন। যেমন কবরে কোন কিছু নির্মাণ করা। কবরকে পাকা করা। মিরকাত, ২/৫৪ মাকতাবাতুশ শামেলা

নোট: ফুকাহাদের নিকট মুতলাকভাবে মাকরুহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাকরুহে তাহরীমী। ‘হাশিয়ায়ে তালওয়ীহ’ এবং ‘মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ’ এর মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট বলা হয়েছে। আর এমনটা ইমাম আবু হানিফা এবং মুহাম্মাদ রহ. থেকে বর্ণিত।
একটু চিন্তা করুন, এতগুলো নুসূস থাকার পরও কোন আলেমের পক্ষে বলা সম্ভব যে, এগুলো জায়েয? আর স্পষ্ট কথা হলো: কবরে কোন কিছু নির্মাণ করা এবং গুম্বুজের বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযার উপর কিয়াস করা সহীহ নয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাফন-দাফনে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট ছিলো, যা অন্যের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়না। ‘মুয়াত্তা মালেক’-এ রয়েছে: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর তাঁর কাফন-দাফন নিয়ে লোকদের মাঝে মতানৈক্য হয়েছিলো-
فقال ناس يدفن عند المنبر وقال آخرون يدفن بالبقيع فجاء أبو بكر الصديق فقال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول ما دفن نبي قط إلا في مكانه الذي توفي فيه فحفر له
অর্থাৎ কেউ কেউ বললেন: তাকে দাফন করা হবে মিম্বরের পাশে। আবার কেউ কেউ বলেন: জান্নাতুল বাকীতে। তখন আবু বকর রা. এসে বললেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, প্রত্যেক নবী যেখানেই মারা গেছেন, সেখানেই তাকে দাফন করা হয়েছে। তখন তাঁর জন্য ওখানে কবর খোড়া হলো। মুয়াত্তা মালেক, হাদীস নং ৫৪৫, শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল হয়েছিলো আয়েশা রা. এর কামরায়। সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। এমনটা নয় যে, তাঁর কবরে মূল থেকে এগুলো ছিলো। পরে বানানো হয়েছে। শাহ আবদুয আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. এর তাহকীক অনুসারে ৫৫৭ হিজরীতে সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গী রহ. বিশেষ কারণে কবরে তাশরীফ নেন এবং চতুর্পাশে শীশার দেয়াল নির্মাণ করেন। এতপর ৫৭৫ হিজরীতে সুলতান কালায়িন সালেহী এই সবুজ গুম্বুজ নির্মাণ করেন। আবু বকর এবং উমর রা. অনুমতিক্রমে এখানে সমাহিত হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছেন। যদি তারা এখানে ছাড়া অন্য কোথাও সমাহিত হতেন, তাহলে সাহাবীরা কখনো তাঁদের কবরে কোন কিছু নির্মাণ করতেননা। যেমনভাবে উসমান, আলী, ইবনে আব্বাস রা. সহ হাজার হাজার সাহাবীর কবরে কোন কিছু নির্মাণ করেননি। কয়েকশত বছর তুর্কী বাদশাহ বিভিন্ন কবরের উপর গুম্বুজ বানিয়েছেন। কিন্তু সউদী সরকার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের উপর আমল করতে গিয়ে সেগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়।

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *