বুখারীর টিকায় বিশ রাকাতের হাদীসকে জাল প্রমাণিত করতে যেয়ে কথিত শায়খদের চরম জালিয়াতি! (১)

বুখারীর টিকায় বিশ রাকাতের হাদীসকে জাল প্রমাণিত করতে যেয়ে কথিত শায়খদের চরম জালিয়াতি! (১)
তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত বুখারী শরীফ থেকে তারাবীর রাকাত সংখ্যা নিয়ে আলোচনা কৌতুহল নিয়ে পড়লাম।দেখে রীতিমত চোখে পানি এসে গেল! সহীহ হাদীসকে কিভাবে কথিত শায়খরা জাল বানিয়ে দিয়েছেন! তাও আবার কয়েক লাইনের ভিকর অনেকগুলো জালিয়াতি এবং হাস্যকর ভুল করে! অথচ যারা টিকা লিখেছেন, তাদের অধিকাংশই মদীনা থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসেছেন! ইন্নালিল্লাহ! আজকে তাদের জালিয়াতি নিয়ে আলোচনা করব।
তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত বুখারী শরীফের ২য় খন্ডের ৩৪৩ নং পৃষ্টায় রয়েছে: “সায়িব বিন ইয়াযীদ বলেন: আমরা উমর বিন খাত্তাব রাঃ এর সময় বিশ রাকাত তারাবীহ ও বিতর পড়তাম।নাসবুর রায়াহ, ২/৯৯. হাদীসটির সনদ যইফ।(১) হাদীসের সনদে আবু উসমান বসরী রয়েছে। সে হাদীসের ক্ষেত্রে অস্বীকৃত।(২) খালিদ বিন মুখাল্লাদ রয়েছে। সে যঈফ। তার বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত। তার কোন বর্ণনা দলীল হিসাবে গণ্য নয়। তদুপরী সে ছিল শিয়া ও মিথ্যাবাদী।তাহযীব, ২য় খন্ড। (৩) ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা রয়েছে, তার সকল বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত। মিযানুল এতেদাল, তাহযীবুত তাহযীব, ২য় খন্ড”।
প্রিয় পাঠক, এ কয়েকটি লাইনের ছত্রে ছত্রে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করা হয়েছে। প্রথমত হাদীসের সনদে আবু উসমান বসরী রয়েছে। তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে অস্বীকৃত। কথাটা কে বলেছেন? হাওয়ালা উল্লেখ করেননি শায়খরা! অথচ আমরা দেখি, হাদীসের একাধিক সনদ রয়েছে, যে সনদে আবু উসমান বসরী নেই। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনুল যা’দ রহঃ এর মুসনাদের সনদ দেখুন:
حدثنا علي أنا بن أبي ذئب عن يزيد بن خصيفة عن السائب بن يزيد قال كانوا يقومون على عهد عمر في شهر رمضان بعشرين ركعة وإن كانوا ليقرءون بالمئين من القرآن
অর্থাৎ, ইবনুল যা’দ বর্ণনা করেন আলী থেকে, তিনি বর্ণনা করেন ইবনু আবি যি’ব থেকে, তিনি বর্ণনা করেন ইয়াযিদ বিন খুসাইফা থেকে, তিনি বর্ণনা করেন সায়িব ইবনে ইয়াযিদ রাঃ থেকে। (মুসনাদু ইবনুল যা’দ, ২৮২৫. মুআসসিসা নাদের, বায়রুত)
এ সনদে আমরা দেখলাম, আবু উসমান বসরী নেই! শায়খদের চোখে কি পোকা পড়েছিল যে, তারা এ সনদটি দেখেননি?!
দিত্বীয়ত খালিদ বিন খালিদ বিন মুখাল্লাদ রয়েছে। সে যঈফ। তার বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত। তার কোন বর্ণনা দলীল হিসাবে গণ্য নয়। তদুপরী সে ছিল শিয়া ও মিথ্যাবাদী!
আহারে মূর্খের দল! লিখেছে খালেদ বিন মুখাল্লাদ! অথচ শুদ্ধ হল খালেদ বিন মাখলাদ। এটাও শুদ্ধ করে লিখতে পারেনা, অথচ তারা আসে আমাদেরকে হাদীস শিখাতে!
খালেদ বিন মাখলাদ শিয়া, মিথ্যাবাদী! অথচ আমরা দেখি, ইমাম বুখারী এবং মুসলিম তার সূত্রে বর্ণিত হাদীস বুখারী শরীফ এবং মুসলিম শরীফে উল্লেখ করেছেন! উদাহরণ স্বরুপ শায়খ যুহাইর বিন নাসের তাহকীককৃত বুখারী শরীফের ৬২, ১৯৯, ২১৫, ৭০৮, ১৬৭৪, ১৭২০, ১৮৩৬, ১৮৭২, ১৮৯৬, ২৫৭১ নং হাদীস দেখা যেতে পারে। ইমাম বুখারী খালিদ বিন মাখলাদ এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেছেন! এমনিভাবে শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত মুসলিম শরীফের ২৩৫, ২৪৬, ৮৫৮, ৮৬৭, ৯১৬, ১০১০, ১০১৪, ১১৫২, ১২২৯, ১৩৬০ নং হাদীস দেখা যেতে পারে। তিনিও খালিদ বিন মাখলাদের সূত্রে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেছেন। আচ্ছা, শায়খরা ইমাম বুখারী এবং মুসলিম তাহলে শিয়া এবং মিথ্যুক বর্ণনাকারী থেকে হাদীস উল্লেখ করেছেন! যদিও খালেদ বিন মাখলাদের কারণে বিশ রাকাত তারাবীর হাদীস জাল হয়, তাহলে বুখারী, মুসলিমের উল্লেখিত হাদীসগুলোও জাল! একথা বলার আগে পাবনা পাগলা গারদের টিকেট কনফার্ম করেন!
শায়খরা কথার পিছনে তাহযীবের হাওয়ালা জুড়ে দিয়েছেন আসুন আমরা তাহীবের পুরো ইবারত দেখি। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন:
قال عبد الله بن أحمد عن أبيه له أحاديث مناكير وقال أبو حاتم يكتب حديثه وقال الآجري عن أبي داود صدوق ولكنه يتشيع وقال عثمان الدارمي عن بن معين ما به بأس وقال بن عدي هو من المكثرين وهو عندي إن شاء الله لا بأس به قال مطين مات سنة قلت وكذا أرخه بن سعد وقال بن قانع سنة وذكره البخاري في الأوسط من مات فيما بين سنة إلى وقال بن عدي بعد أن ساق له أحاديث لم أجد في حديثه أنكر مما ذكرته ولعلها توهم منه أو حملا على حفظه وقال بن سعد كان متشيعا منكر الحديث مفرطا في التشيع وكتبوا عنه للضرورة وقال العجلي ثقة فيه قليل تشيع وكان كثير الحديث وقال صالح بن محمد جزرة ثقة في الحديث إلا أنه كان متهما بالغلو وقال الجوزجاني كان شتاما معلنا لسوء مذهبه وقال الأعين قلت له عندك أحاديث في مناقب الصحابة قال قل في المثالب أو المثاقب يعني بالمثلثة لا بالنون وحكى أبو الوليد الباجي في رجال البخاري عن أبي حاتم أنه قال لخالد بن مخلد أحاديث مناكير ويكتب حديثه وفي الميزان للذهبي قال أبو أحمد يكتب حديثه ولا يحتج به وقال الأزدي في حديثه بعض المناكير وهو عندنا في عداد أهل الصدق وقال بن شاهين في الثقات قال عثمان بن أبي شيبة هو ثقة صدوق وذكره الساجي والعقيلي في الضعفاء وذكره بن حبان في الثقات
অর্থাৎ, ইমাম আবু হাতেম, আবু দাউদ, ইবনে মায়ীন, ইবনে আদী, ইবনে সা’দ, ঈজলী, সালেহ বিন মুহাম্মাদ বিন জাযারাহ, ইবনে শাহীন, উসমান বিন আবি শায়বা এবং ইবনে হিব্বান রহঃ তাকে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য বলেছেন। ইমাম আহমদ বলেন, তার বর্ণনায় কিছু আপত্তিকর বিষয় রয়েছে। কিন্তু ইবনে আদী তার অনেকগুলো বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, তার বর্ণনায় আমি আপত্তিকর কিছুই পাইনি। এমিনিভঅবে ঈজলী বলেন, তিনি শিয়াদের দিকে কিছুটা ধাবিত ছিলেন।( তাহযীবুত তাহযীব, ২/৭৮. শামেলা)
তাহযীবের পুরো আলোচনার সারাংশ বের করেছেন হাফেজ ইবনে হাজার “তাকরীবে”। সেখানে তিনি বলেন:
خالد بن مخلد القطواني بفتح القاف والطاء أبو الهيثم البجلي مولاهم الكوفي صدوق يتشيع وله أفراد من كبار العاشرة مات سنة ثلاث عشرة وقيل بعدها
অর্থাৎ, তিসি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সত্যবাদী। যদিও তিনি শিয়া। (তাকরীব, তরজমা নং, ১৬৮১)
এজন্য আমরা দেখতে পাই, ইমাম বুখারী এবং মুসলিম তার সূত্রে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেছেন।
.
৩য় কারণ হিসাবে শায়খরা লিখেছেন: ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা রয়েছে, তার সকল বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত। এরপর হাওয়ালা দিয়েছেন মিযানুল এতেদাল এবং তাহযীবুত তাহযীবের। কিন্তু ইবারত উল্লেখ করেননি। আসুন আমরা দুই কিতাবের পুরো ইবারতটা দেখি। হাফেজ ইবনে হাজার বলেন:
يزيد بن عبد الله بن خصيفة بن عبد الله بن يزيد الكندي المدني روى عن أبيه والسائب بن يزيد ويزيد بن عبد الله بن قسيط ومحمد بن عبد الرحمن بن ثوبان وعمرو بن عبد الله بن كعب وبسر بن سعيد وعبد الله بن عبد القاري وغيرهم وعنه الجعيد بن عبد الرحمن ومالك وأبو علقمة الفروي وسليمان بن بلال وإسماعيل بن جعفر والسفيانان والداروردي وآخرون قال الأثرم عن أحمد وابو حاتم والنسائي ثقة وقال الآجري عن أبي داود قال أحمد منكر الحديث وقال بن أبي مريم عن بن معين ثقة حجة وقال بن سعد كان عابدا ناسكا كثير الحديث ثبتا وذكره بن حبان في الثقات
অর্থাৎ, আছরাম ইমাম আহমদ থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম আহমদ তাকে ‘ছিকাহ’ বলেছেন। এমনিভাবে ইমাম আবু হাতিম এবং নাসায়ীও তাকে ‘ছিকাহ’ বলেছেন। আবুদাউদ ইমাম আহমদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। ইমাম ইবনে মায়ীন তাকে ‘ছিকাহ, হুজ্জত’ তথঅ চুড়ান্ত পর্যায়ের গ্রহণযোগ্য রাবী বলেছেন। ইবনে সা’দ বলেন, তিনি বেশি ইবাদাত গুজার এবং হজ পালনকারী। হাদীসের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য। ইবনে হিব্বান রহঃ ছিকাহ বর্ণনাকারীদের জীবনিগ্রন্থ “কিতাবুছ ছিকাতে” তার জীবনি উল্লেখ করেছেন”।(তাহযীবুত তাহযীব, ৯/৩৫৫.৩৫৬. দারুল ফিকর, বায়রুত)
ইমাম যাহাবী রহঃ “মিযানুল এ’তেদালে” বলেন:
يزيد بن عبدالله بن خصيفة . وقد ينسب إلى جده فيقال : يزيد بن خصيفة . عن السائب بن يزيد ، وعروة ، ويزيد بن عبدالله بن قسيط . وعنه مالك ، وطائفة . وثقه أحمد من رواية الاثرم عنه ، وأبو حاتم ، وابن معين ، والنسائي . وروى أبو داود أن أحمد قال : منكر الحديث
অর্থাৎ, ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা,আছরামের বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম আহমদ তাকে ছিকাহ বলেছেন। এমনিভাবে আবু হাতিম, ইবনে মায়ীন, নাসায়ী রহঃ তাকে ছিকাহ বলেছেন। আবু দাউদের বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম আহমদ তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন।(মিযানুল ই’তেদাল, তরজমা নং, ৯৭১৫)
পনি বলুন, দুই কিতাবে আছে কি? আর শায়খরা লিখলেন কি? একাধিক ইমাম যাকে ছিকাহ বলেছেন, তার ব্যাপারে শায়খরা বলছেন যে, তার সকল বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত! ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা যদি প্রত্যাখ্যাত হোন, তাহলে তার রেওয়ায়াতকৃত হাদীস ইমাম বুখারী এবং মুসলিম উল্লেখ করেছন? উদাহরণ স্বরুপ শায়খ যুহাইর নাসের তাহকীককৃত বুখারীর ৪৭০. ১০৭২. ২৩২৩. ২৩২৫ নংহাদীস দেখা যেতে পারে। ইমাম বুখারী রহঃ ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার সুত্রে বর্ণিত হাদীস রেওয়ায়াত করেছেন। এমনিভাবে শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী দাঃবাঃ তাহকীককৃত মুসলিম শরীফের ৫৭৭. ১৫৭৬. ২১৫৩. ২৫৭২ নং হাদীস দেখ যেতে পারে। ইমাম মুসলিম রহঃও ইয়যীদ ইবনে খুসাইফার সূত্রে বর্ণিত হাদীস রেওয়ায়াত করেছেন। তাহলে কি ইমাম বুখারী এবং মুসলিম প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তির হাদীস নিয়ে এসেছন?’
এ সমস্ত শায়খরা নাকি অর্ধশত বছর থেকে বুখারী পড়াচ্ছেন! অথচ তাদের এই বেহাল দশা! তারা নাকি মদীনা থেকে ইলমের জাহাজ নিয়ে এসেছেন? অথচ শব্দে শব্দে চুরি চামারী করেন? আল্লাহ এ সমস্ত মূর্খ শায়খদের থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করুন।

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *