বেরলবিদের হাজির নাজির আকিদার অন্তরালে (পর্ব ২)

বেরলবিদের হাজির নাজির আকিদার অন্তরালে (পর্ব ২)

গত পর্বে আমরা বেরলবি ঘরণার আলেমদের লিখিত কিতাব থেকে হাজির নাজির আকিদার সংজ্ঞা জেনেছিলাম। সংজ্ঞাতে আমরা দেখেছিলাম যে, কুরআন, সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক বেশ কিছু বিষয় রয়েছে।

আমরা বলেছিলাম যে, তাদের অনেকেই হাজির নাজিরের পক্ষে দলিল দিতে গিয়ে এ কথা সুস্পষ্ঠভাবে লিখেছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর সব জায়গায় হাজির রয়েছেন। কুরআনের আয়াত টেনে ইনিয়ে-বিনিয়ে তারা সেটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।

আহমদ রেজা খান বেরলবি রাহি. এর পর বেরলবি ঘরণার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দুই একজন আলেমের মাঝে অন্যতম হলেন আহমদ ইয়ান খান নঈমী । “জাআল হক” নামে তার লিখিত বই বেরলবি ঘরাণায় বিপুল সমাদৃত। আসুন এ ব্যাপারে তার কিছু বক্তব্য শুনে আসি। তিনি বলেন:

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ৭..

হে মাহবুব! এটা আল্লাহর অভিপ্রেত নয় যে আপনি তাদের মধ্যে থাকাকালে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন।
অর্থাৎ আজাব এ জন্য আসে নি যে আপনি তথা রাসূল সা. সেখানে বিদ্যমান রয়েছেন। আর সর্বব্যাপী আজাব তো কিয়ামত পর্যন্ত কোন জায়গায় আসবে না। এর থেকে বুঝা যায় যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যক জায়গায় বিদ্যমান রয়েছেন। তাফসিরে রুহুল বয়ানে বলা হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ভাগ্যবান এবং দূর্ভাগার সাথে রয়েছেন। এর বিশদ বিবরণ এ অধ্যায়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদে করা হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ
তোমরা জেনে রাখো তোমাদের মাঝে রাসূল রয়েছেন। এ আয়াতে সমস্ত সাহাবায়ে কেরামকে সম্বোধন করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম তো বিভিন্ন জায়গায় থাকতেন। বুঝা গেল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব জায়গায় তাদের পাশে আছেন।” জাআল হক: ১১৮, এক ছবির স্ক্রীণ সর্ট দেখুন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসার নামে এমন জগণ্য কথাবার্তাই বেরলবিদের কাছে অহরহ পাবেন। যারা উর্দূ পারেন, তারা আহমদ ইয়ার খান নঈমীর শব্দের প্রতি খেয়াল করুন। তিনি বলেছেন, “উস সে মা’লুম হুওয়া কে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত তক হর জায়গা মওজুদ হায়।” অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান! আল ইয়াযু বিল্লাহ!

হাজির- নাজির এর পক্ষে দলিল দিতে গিয়ে আহমদ ইয়ারখান নঈমী বলেন:
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّاباً رَحِيماً
এবং যখন ওরা নিজেদের আত্মার প্রতি অবিচার করে, তখন তারা যদি আপনার সমীপে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর আপনিও তাদের জন্য সুপারিশ করেন, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহকে তওবা কবুলকারী, করুণাময় হিসেবে পাবে।)
এ আয়াত থেকে বোঝা গেল যে, পাপীদের মাগফিরাত বা ক্ষমাপ্রাপ্তির একমাত্র পথ হচ্ছে হুজুর আলাইহি সালামের মহান দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁর শাফাফাত প্রার্থনা করা এবং হুযুর মেহেরবানী করে তাদের জন্য শাফায়াত করা। এর অর্থ এই নয় যে আমাদের মাগফিরাতের জন্য পবিত্র মদীনাতে উপস্থিত হতে হবে; কেননা তাহলে আমাদের মতো দরিদ্র বিদেশী পাপীদের ক্ষমাপ্রাপ্তির কি উপায় হবে? ধনাঢ্য ব্যক্তিগণও তো জীবনে একবার কি দু’বার সে মহান দরবারে যাবার সামর্থ রাখেন, অথচ দিনরাত পাপ পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত রয়েছেন। তাই, এতে মানুষের কষ্ট হবে। কাজেই আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে, তিনি তোমাদের পাশেই বিদ্যমান রয়েছেন।” (জাআল হক: ১১৮)

প্রিয় পাঠক, যারা উর্দূ পারেন, তারা আহমদ ইয়ার খান নঈমীর ইবারত দেখুন, তিনি বলেছেন, “ওহ তোমহারে পাছ মওজুদ হে” অর্থাৎ তিনি তোমাদের পাশে বিদ্যমান রয়েছেন! আল ইয়াযু বিল্লাহ!

খণ্ডনের দিকে আমরা আপাতো যাচ্ছি না। বেরলবিরা হাজির নাযিরের আড়ালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বদা সব জায়গায় বিদ্যমান মনে করে, সে ব্যাপারে তাদের বক্তব্য তুলে ধরছি।

আহমদ ইয়ারখান নঈমী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাজির নাজির প্রমাণ করতে গিয়ে আরেক জায়গায় লিখেন:

لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ
নিশ্চয় তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে রাসুল এসেছেন।
এ আয়াত থেকে তিনভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাযির-নাযির হওয়া প্রমাণিত হয়। প্রথমত, جَاءكُمْ আয়াতে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের মুসলমানদের সম্বোধন করা হয়েছে। বলা হয়েছে তোমাদের সকলের কাছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরিফ এনেছেন। এর থেকে বুঝা যায় যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেকের পাশে আছেন। মুসলমান যেহেতু পৃথিবীর প্রত্যেক জায়গায় রয়েছে, সুতরাং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান রয়েছেন। (জাআল হক: ১১৭, ৩য় ছবির স্ক্রীণ সর্ট দেখুন)

এখানে আহমদ ইয়ারখান নঈমীর উর্দূ ইবরাত খেয়াল করুন। তিনি বলছেন, “মুসলমান তো আলমমে হর জায়গা হে, তো রাসূল সা. ভী হর জায়গা মওজুদ হে।! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ! আল ইয়াযু বিল্লাহ!

প্রিয় পাঠক, এ বক্তব্যগুলো এ জন্য আপনাদের সামনে পেশ করছি যে, যাতে হাযির-নাযির এর বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারেন। যেহেতু এ আকিদা লালন করে বেরলবিরা, এজন্য আমাদের দেখতে হবে যে, তারা প্রকৃতপক্ষে হাযির নাযির বলতে কী বুঝে? আমরা স্পষ্ট দেখতে পেলাম যে, আহমদ ইয়ারখান স্পষ্টভাবে তিনি জায়গায় লিখেছেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর সব জায়গায় বিদ্যমান রয়েছেন! এটি স্পষ্ট কুফরি আকিদা!

বলতে পারেন যে, শুধু ইয়ার খান নঈমীর কিতাব দিয়ে তো একটি ঘরণার আকিদা প্রমাণ হয় না! আর কেউ কী এ ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন? উত্তর হলো, এর চেয়ে ভয়াবহ বক্তব্য বাংলদেশি বেরলবি ভাইদের বইয়ের পাতায় পাতায় বিদ্যমান রয়েছে। সামনের পর্বে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।
চলবে।

 

 

 

 

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *