কুরবানির সাথে কি আকিকা আদায় করা যাবে?

কুরবানির সাথে কি আকিকা আদায় করা যাবে?
মাসাআলা সর্বসম্মত। সম্প্রতি অনেক ভাই এ মাসআলা নিয়ে বিতর্ক করছেন। ফেইসবুকের উসিলায় আল্লাহ কত মুজতাহিদকে দেখার সুযোগ করে দিলেন! এ ধরণের অনেকে ফেবুতে দলীল ছাড়া ফতোয়া দিচ্ছেন যে, কুরবানির সাথে আকিকা আদায় হয় না। নামধারী আহলে হাদীস ভাইরা এ কথাটি খুব জোরেশোরে প্রচার করছেন। বাস্তবে মাসআলা কি?এ বিষয় নিয়ে নিম্নে আ্লোচনা করা হল।
প্রথম কথা হল:কুরবানি এবং আকিকা স্বতন্ত্র দুটি ইবাদত। তাই দুটিকে আলাদাভাবে করাই উত্তম। বাকি কেউ যদি এক সাথে করে,তাহলেও আদায় হবে। কেননা উভয় ইবাদতের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ। এজন্য হাদীস শরীফে দুই ইবাদতকে একই শব্দ “نسك”তথা কুরবানি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন, কুরবানির পশুতে আকীকার নিয়তে অন্য কেউ অথবা নিজে অংশ গ্রহণ করতে পারবে।
প্রথমে হাদীসটি দেখুন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আ’স রাঃ থেকে বর্ণিত:
سئل النبي صلى الله عليه وسلم عن العقيقة ، قال : ” لا أحب العقوق ، من ولد له منكم مولود فأحب أن ينسك عنه فليفعل ، عن الغلام شاتان ، وعن الجارية شاة “
অর্থাৎ:রাসূল সাঃ কে প্রশ্ন করা হল আকীকা সম্পর্কে। তিনি বললেন, তোমাদের যার সন্তান,হবে, সে যদি চায় তার সন্তানের পক্ষ থকে কুরবানি করবে, তাহলে যেন করে ফেলে। ছেলের জন্য দুটি বকরী এবং মেয়ের জন্য একটি বকরী। (আবু দাউদ,২৮৪২.মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা,২৮৪২.মুসনাদে আহমদ,৬৮২২.)
এখানে লক্ষনীয় বিষয় হল,রাসূল সাঃ আকীকাকে কুরবানি বলেছেন। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, উভয়টির লক্ষ এক ও অভিন্ন।এজন্য উভয়টি এক সাথে হতে পারে।
এ বিষয়ে ফুকাহারা একমত যে, যদি কেউ কুরবানির সাথে আকীকা আদায় করে, তাহলে উভয়টি সহীহ হবে। ফুকাহাদের বক্তব্য উল্লেখ করলে কলেবর অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। উদারহণস্বরুপ কয়েকজনের বক্তব্য তিুলে ধরলাম।
 আল্লামা আবু বকর জাসসাস রহঃ (৩৭০হিঃ) লিখেন:
“وإذا كانت كلها للله تعالى وأرادوها من وجوه مختلفة من هدي وقران وأضحية وغيرها أجزأهم جميعا.وذلك لأنها قد خرجت مخرج القربة إلى الله لاحق فيها لأدمي”
অর্থাৎ:কুরবানিতে যখন প্রত্যেকের উদ্দেশ্য হবে আল্রাহর নৈকট্য অর্জন করা,কিন্তু কারণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারেঅ।যেমন:েএকজনের উদ্দেশ্য হাদি,অপরজনের হজ্বে কেরানের দম,অপরজনের উদ্দেশ্য কুরবানি বা অন্য কিছু,এক সা্থে সকলেরটা আদায় হবে।(শরহু মুখতাসারিত তাহাবী,৭/৩৫২.দারুল বাশায়িরিল েইসলামিয়া)
ইমাম সারাখসী রহঃ বলেন:
ويستوي إن كان قصدهم جميعا التضحية أو قصد بعضهم قربة أخرى عندنا
অর্থাৎ:যদি সবার উদ্দেশ্য হয় কুরবানি,অথবা কারো উদ্দেশ্য হয় অন্য কোন ইবাদত,তাহলে সকলেরটা একসাথে আদায় হয়ে যাবে।(আল-মাবসুত,১১/১৫.মাকতাবারশিদিয়্যাহ)
ইমাম মালিকুল উলামা কাসানী রহঃ বলেন:
وكذلك ان أراد بعضهم العقيقة عن ولد ولد له من قبل لان ذلك جهة التقرب إلى الله تعالى عز شأنه بالشكر على ما انعم عليه من الولد كذا ذكر محمد رحمه الله في نوادر الضحايا
অর্থাৎ:যদি কেউ কুরবানির সাথে আকীকার নিয়ত করে, তাহলে আদায় হয়ে যাবে। কেননা আকিকার দ্বারা উদ্দেশ্য হল আল্রাহর সন্তুষ্টি অর্জন। সন্তান দানের মাধ্যমে আল্রাহ তার উপর যে অনুগ্রহ করেছেন,সেটার শুকরিয়া আদায়ের জন্য আকিকা করা হয়। এমনটা বলেচেন ইমাম মুহাম্মদ রহঃ।(বাদায়িউস সানায়ি’,৬/২৯১.দারুল হাদীস ক্বাহেরা।)
ইমাম ইবনে ক্বুদামা মাকদেসী রহঃ বলেন:
إذا ثبت هذا فسواء كان المشتركون من أهل بيت أو لم يكونوا مفترضين أو متطوعين أو كان بعضهم يريد القربة وبعضهم يريد اللحم لأن كل إنسان منهم إنما يجزىء عنه نصيبه فلا تضره نية غيره في عشرة
অর্থাৎ:অংশগ্রহণকারি চাই ফরজ কুরবানি আদায়কারি হোক,অথবা অন্য কোন ইবাদতের নিয়তে কুরবানিতে শরীক হোক,সকলেরটা আদায় হবে।(আল মুগনী,১৩/১২৪.দারুল হাদীস ক্বাহেরা)
“ফতোয়া আলমগীরিতে” আছে:
“وكذا إذا أرادت بعضهم العقيقة عن ولد من قبل…………………….”
অর্থাৎ:যদি কেউ কুরবানির সাথে আকীকার ইচ্ছা করে,তাহলে তা আদায় হয়ে যাবে।(ফতোয়া আলমগীরি,৫/৩৫১.মাকতাবাতুল ইত্তেহাদ)
*
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ লিখেন:
وكذا لو أراد بعضهم العقيقة عن ولد قد ولد له من قبل لأن ذلك جهة التقرب بالشكر على نعمة الولد ذكره محمد ولم يذكر الوليمة .
অর্থাৎ:এমনিভাবে যদি কেউ কুরবানির সাথে আকিকার্ ইচছা করে,তাহলে আদায় হয়ে যাবে।কেননা আকিকাও আল্রাহর নৈকট্য লাভের একটি ইবাদত।(হাশিয়াতু আবনে আবেদীন,৬/৩৩৬.এইচ,এম সাইদ)
এ বিষয়ে আরো নিম্নোক্ত কিতাবাদি দেখা যেতে পারে।
*“ফতোয়া কাজিখান” ৩/২৪৬.মাকতাবাতুল ইত্তেহাদ।
*“ফতোয়া বাযযাযিয়া” ৩/১৫৭.মাকতাবাতুল ইত্তেহাদ।
*“ফাতহু বাবিল ইনায়াহ” ৩/৭৭.এইচ,এম সাইদ কোম্পানি।
*“আল মুহিতুল বুরহানী” ৮/৪৭৭.ইদারাতুল কুরআন।
*“তাবয়িনুল হাকায়িক” ৬/৪৮৪.দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ.
*“আল জাওহিরাতুন নায়্যিরাহ” ২/৪৫১. আল মাকতাবাতুল হাক্কানিয়াহ।
.
উম্মতের এতজন বরেণ্য ফক্বীহ বলেছেন,কুরবানির সাথে আকীকা আদায় হবে। এখন যারা বলেন,আদায় হবে না,তাদেরকে অবশ্যই সহীহ সুস্পষ্ট দলীল দেখাতে হবে যেখানে বলা হয়েছে যে,কুরবাণির সাথে আকীকা আদায় হবেনা। নাকি হাদীসে কোন বিষয় না সুস্পষ্ট না থাকলেই সেটার উপর আমল করা যাবেনা? যদি এমন কেউ মনে কেরেন, তাহলে জানলে খুশি হব। আমি তার সমীপে এক হাজার মাসআলা পেশ করব্ যেগুলোর সমাধান তিনি হাদীস থেকে পেশ করবেন।

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *