আল্লাহ কোথায়? দাসির হাদিস, একটি পর্যালোচনা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ব্যাপারে অবস্থান সংক্রান্ত ব্যাপারে আমাদের আকিদা বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম আবু হানিফা রাহি. বলেন:
أَرَأَيْت لَو قيل أَيْن الله تَعَالَى فَقَالَ يُقَال لَهُ كَانَ الله تَعَالَى وَلَا مَكَان قبل ان يخلق الْخلق وَكَانَ الله تَعَالَى وَلم يكن أَيْن وَلَا خلق كل شَيْء وَهُوَ خَالق كل شَيْء
এখান থেকে আমরা স্পষ্ট জানতে পারলাম যে, যখন আই না তথা প্রশ্ন করার মতো কোন জায়গা ছিল না, তখনও আল্লাহ ছিলেন। এজন্য তিনি জায়গা, দিক, সীমা, পরিসীমা এগুলোর উর্ধ্বে। এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা ইমাম তাহাবি রাহি. বর্ণনা করেছেন এভাবে:
تعالى عن الحدود والغايات ، والأركان والأعضاء والأدوات ، لا تحويه الجهات الست كسائر المبتدعات
এবার আমরা যাব আলোচিত দাসির হাদিসের দিকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসিকে “আইনা আল্লাহ” তথা সরল অর্থে আল্লাহ কোথায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন। জবাবে দাসি বলেছিল, তিনি আসমানের মধ্যে। পুরো ঘটনা ঘটনা উল্লেখ না করে আমরা হাদিসের আলোচিত অংশ আপনাদের সামনে পেশ করছি।
فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَظَّمَ ذَلِكَ عَلَيَّ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَفَلَا أُعْتِقُهَا؟ قَالَ: ্রائْتِنِي بِهَا فَأَتَيْتُهُ بِهَا، فَقَالَ لَهَا:أَيْنَ اللهُ؟ قَالَتْ: فِي السَّمَاءِ، قَالَ: ্র
مَنْ أَنَا؟ قَالَتْ: أَنْتَ رَسُولُ اللهِ، قَالَ: ্রأَعْتِقْهَا، فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ
অর্থাৎ আমি দাসি নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললাম, আমি কি তাকে আজাদ করব? তিনি বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। আমি নিয়ে আসলাম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, “আল্লাহ কোথায়?” সে বলল: আসমানের মধ্যে। জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কে? সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। তিনি বললেন, তাকে আজাদ করে দাও। কারণ, সে মুমিন। মুসলিম: ৫৩৭।
সনদের দিক থেকে এ বর্ণনা সহিহ। এখানে তো আমরা দেখতে পেলাম যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আল্লাহ কোথায় এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছেন!
এ হাদিস নিয়ে পর্যালোচনা করার আগে মোটাদাগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন। এখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, দাসির ঈমান আছে কি না? সেটা পরীক্ষা করা। আর ঈমান পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহর তাওহীদের সাক্ষী দেওয়া শর্ত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসী ছাড়াও আরও বিভিন্ন মানুষের ঈমান আছে কিনা? যাচাই করেছিলেন। কিন্তু কাউকে আল্লাহ কোথায় এ প্রশ্ন করেন নি।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসীকে কী প্রশ্ন করেছিলেন? ব্যাপারটি বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্নভাবে এসেছে। আমরা কয়েকটি বর্ণনা আপনাদের সামনে পেশ করছি।
একই ঘটনা ইমাম আবদুর রাযযাক আস সানআনি রাহি. স্বীয় মুসান্নাফ এ বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণনার শব্দ হলো:
أَنَّ رَجُلًا كَانَتْ لَهُ جَارِيَةٌ فِي غَنَمٍ تَرْعَاهَا، وَكَانَتْ شَاةَ صَفِيٍّ – يَعْنِي غَزِيرَةً – فِي غَنَمِهِ تِلْكَ فَأَرَادَ أَنْ يُعْطِيَهَا نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَ السَّبُعُ فَانْتَزَعَ ضِرْعَهَا فَغَضِبَ الرَّجُلُ فَصَكَّ وَجْهَ جَارِيَتِهِ فَجَاءَ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ وَذَكَرَ أَنَّهَا كَانَتْ عَلَيْهِ رَقَبَةٌ مُؤْمِنَةٌ وَافِيَةٌ قَدْ هَمَّ أَنْ يَجْعَلَهَا إِيَّاهَا حِينَ صَكَّهَا فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:ائْتِنِي بِهَا فَسَأَلَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রأَتَشْهَدِينَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ؟ ” قَالَتْ: نَعَمْ…….
অর্থৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, দাসিকে আমার কাছে নিয়ে আসো। আসার পর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কি সাক্ষী দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই?
সে বলল, হ্যাঁ।
এরপর আবার জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কি সাক্ষী দাও যে মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল?
সে বলল, হ্যাঁ। …মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক: ১৬৮১৫।
এ বর্ণনায় পেলাম যে, তিনি আল্লাহ কোথায় এটা জিজ্ঞাসা করেন নি। বরং জিজ্ঞাসা করেছেন যে, তুমি কি সাক্ষী দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আর কেউ যদি আল্লাহকে একমাত্র রব মানে, তাহলেই সে ঈমানদার। আল্লাহকে একমাত্র রব না মেনে যদি বিশ্বাস করে, আল্লাহ আসমানে আছেন, তবুও তাকে ঈমানদার বলা যাবে না।
আকিদা প্রমাণের জন্য “ক্বাতয়িয়ুদ দালালাহ” তথা আপনি যে বিষয়টি প্রমাণের জন্য দলিল পেশ করছেন, সে ব্যাপারে অকাট্য হওয়া শর্ত। এমন যেন না হয় যে, ভিন্ন অর্থেও সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা দেখেছি যে, এ হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “আল্লাহ কোথায়” এ প্রশ্ন করেছেন, এটা অকাট্যভাবে বলার সুযোগ নেই। কারণ, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকের বর্ণনায় ভিন্ন প্রশ্নের কথা এসেছে। মূল বিষয়ের সাথে মুসান্নাফের প্রশ্ন বেশি প্রাসঙ্গিক।
দাসিকে প্রশ্ন করার ভিন্ন আরেকটি হাদিস ইমাম মালিক রাহি. বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণনা
مَالِكٌ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ بْنِ مَسْعُودٍ؛ أَنَّ رَجُلاً مِنَ الْأَنْصَارِ جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِجَارِيَةٍ لَهُ سَوْدَاءَ. فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ عَلَيَّ رَقَبَةً مُؤْمِنَةً. فَإِنْ كُنْتَ تَرَاهَا مُؤْمِنَةً أَعْتَقْتُهَا.
فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَتَشْهَدِينَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ؟.
فَقَالَتْ: نَعَمْ.قَالَ: أَفَتَشْهَدِينَ أَنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ؟.
قَالَتْ: نَعَمْ.قَالَ: أَتُوقِنِينَ بِالْبَعْثِ بَعْدَ الْمَوْتِ؟
قَالَتْ: نَعَمْ.قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسأَعْتِقْهَا
অর্থাৎ আনসারী জনৈক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একজন দাসি নিয়ে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমার উপর একজন মুমিন দাসি আজাদ করা ওয়াজিব। আপনি যদি তাকে মুমিন মনে করেন, আমি স্বাধীন করে দিবো।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কি সাক্ষী দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই? সে বলল, হ্যাঁ।
তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কি সাক্ষী দাও মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল?
সে বলল, হ্যাঁ।
তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কি মৃত্যুর পর পূণরায় উত্থিত হওয়া বিশ্বাস করো?
সে বলল, হ্যাঁ।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে স্বাধীন করে দাও। মুয়াত্তা মালেক: ৬১৬।
এখানে ভালভাবে খেয়াল করুন। ওই ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসেছিলেন দাসি ঈমানদার কি না? সেটা যাচাইয়ের জন্য। ঈমান যাচাইয়ের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি সাক্ষী দাও যে আল্লাহ ছাড়া কোন রব নেই? এটা জিজ্ঞাসা করেন নি যে, আল্লাহ কোথায়?
দাসীকে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আরেকটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন ইমাম দারেমী রাহি.। সে ঘটনা হলো:
أَخْبَرَنَا أَبُو الْوَلِيدِ الطَّيَالِسِيُّ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ الشَّرِيدِ، قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: إِنَّ عَلَى أُمِّي رَقَبَةً، وَإِنَّ عِنْدِي جَارِيَةً سَوْدَاءَ نُوبِيَّةً، أَفَتُجْزِئُ عَنْهَا، قَالَ:ادْعُ بِهَا فَقَالَ: أَتَشْهَدِينَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ: أَعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ
অর্থাৎ শারীদ বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললাম, আমার উপর একটি দাসি আজাদ করা ওয়াজিব। আমার কাছে একটি কালো দাসি রয়েছে। সেটা কি যথেষ্ঠ হবে? তিনি বললেন, তাকে ডেকে নিয়ে আসো। আসার পর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কি সাক্ষী দাও যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই?
সে বলল, হ্যাঁ।
তিনি বললেন, তাকে আজাদ করে দাও। কারণ, সে মুমিন।-সুনানে দারেমি: ২৩৯৩।
এ হাদিসেও আমরা দেখলাম দাসির ঈমান আছে কি না? সেটা পরীক্ষা করার জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওহিদের কথা জিজ্ঞাসা করেছেন। এ থেকে এ ধারণা প্রবল হয় যে, দাসিকে মূলত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাই জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আল্লাহ কোথায় এটাই জিজ্ঞাসা করেছেন দৃঢ়ভাবে বলার সুযোগ নেই। আর সন্দেহ চলে আসলে এমন হাদিস দিয়ে আকিদার ক্ষেত্রে দলিল দেওয়া যায় না।
আমাদের আলোচিত হাদিসেও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদ্দেশ্য ছিল দাসির ঈমান আছে কিনা? সেটা পরীক্ষা করা। এ কারণে এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি রাহি. বলেন:
هَذَا الْحَدِيثُ مِنْ أحَادِيثِ الصِّفَاتِ وَفِيهَا مَذْهَبَانِ تَقَدَّمَ ذِكْرُهُمَا مَرَّاتٍ فِي كِتَابِ الْإِيمَانِ أَحَدُهُمَا الْإِيمَانُ بِهِ مِنْ غَيْرِ خَوْضٍ فِي مَعْنَاهُ مَعَ اعْتِقَادِ أَنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَتَنْزِيهِهِ عَنْ سِمَاتِ الْمَخْلُوقَاتِ وَالثَّانِي تَأْوِيلُهُ بِمَا يَلِيقُ بِهِ فَمَنْ قَالَ بِهَذَا قَالَ كَانَ الْمُرَادُ امْتِحَانَهَا هَلْ هِيَ مُوَحِّدَةٌ تُقِرُّ بِأَنَّ الْخَالِقَ الْمُدَبِّرَ الْفَعَّالَ هُوَ اللَّهُ وَحْدَهُ وَهُوَ الَّذِي إِذَا دَعَاهُ الدَّاعِي اسْتَقْبَلَ السَّمَاءَ كَمَا إِذَا صَلَّى الْمُصَلِّي اسْتَقْبَلَ الْكَعْبَةَ وَلَيْسَ ذَلِكَ لِأَنَّهُ مُنْحَصِرٌ فِي السَّمَاءِ كَمَا أَنَّهُ لَيْسَ مُنْحَصِرًا فِي جِهَةِ الْكَعْبَةِ بَلْ ذَلِكَ لِأَنَّ السَّمَاءَ قِبْلَةُ الدَّاعِينَ كَمَا أَنَّ الْكَعْبَةَ قِبْلَةُ الْمُصَلِّينَ أَوْ هِيَ مِنْ عَبَدَةِ الْأَوْثَانِ الْعَابِدِينَ لِلْأَوْثَانِ الَّتِي بَيْنَ أَيْدِيهِمْ فَلَمَّا قَالَتْ فِي السَّمَاءِ عَلِمَ أَنَّهَا مُوَحِّدَةٌ وَلَيْسَتْ عَابِدَةً لِلْأَوْثَانِ
অর্থাৎ এ হাদিস সিফাত সংক্রান্ত হাদিসের অন্তর্ভূক্ত। সিফাতের ব্যাপারে দুটি মাজহাব রয়েছে, কিতাবুল ঈমানের একাধিক জায়গায় এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। একটি হলো, কোনো ধরণের অর্থ সাব্যস্ত করা ছাড়া সেগুলো বিশ^াস করা। সাথে এ দৃঢ় বিশ^াস থাকতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা কোন কিছুর মতো নয়। তিনি মাখলুকের সব ধরণের সাদৃশ্য থেকে পবিত্র।
দ্বিতীয় মত হলো, আল্লাহর সত্তার শান অনুযায়ী কোন ব্যাখ্যা করা। এখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদ্দেশ্য ছিল, দাসি আল্লাহর একত্ববাদীতে বিশ্বাসী কিনা? সেটা পরীক্ষা করা। সেটা এটা বিশ্বাস করে কি না যে, সৃষ্টিকর্তা, পরিকল্পনাকারী, কর্ম সম্পাদনকারী একমাত্র আল্লাহ। কেউ তার কাছে দোয়া করলে আসমানের দিকে মনোনিবেশ করে, যেমনভাবে নামাজে কিবলার দিকে মনোনিবেশ করে। আসমানের দিকে মনোনিবেশ করার অর্থ এই নয় যে, তিনি আকাশেই সীমাবদ্ধ, এমনভাবে তিনি কাবা ঘরেও সীমাবদ্ধ নয়। বরং উদ্দেশ্য হলো, দোয়ার কিবলা হলো আসমান, যেমনভাবে নামাজের কিবলা হলো কাবা।
আরেকটি ব্যাখ্যা হলো, আগত দাসি মূর্তির ইবাতকারী ছিল। যখন সে আসমানের কথা বলল, তিনি জানতে পারলেন যে, সে এক আল্লাহতে বিশ্বাসী। মূর্তিপূজক নয়। আল মিনহাজ: ৫/২৪।
ইমাম নববি রাহি. মূলত সিফাতের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদার মৌলিক দুটি ধারার কথা বলেছেন। প্রথমটিকে আকিদার পরিভাষায় বলা হয় “তাফওয়িয”। দ্বিতীয়টিকে আকিদার পরিভাষায় বলা হয় “তাবিল”। এখানে তিনি স্পষ্ট বলেছেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রশ্ন করার দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল সে একত্ববাদে বিশ্বাসী কিনা? সেটা পরীক্ষা করা। আর এর জন্য মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকসহ হাদিসের অন্যান্য কিতাবে যে প্রশ্ন এসেছে, সেটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ, এ ঘটনা ছাড়া অন্যান্য ঘটনায়ও দেখেছি তিনি ওই প্রশ্ন করেছেন। যেহেতু প্রশ্ন কী করেছেন, সে ব্যাপারে একাধিক মত চলে এসেছে, এজন্য আকিদার ক্ষেত্রে এমন বর্ণনা দ্বারা দলিল পেশ করা যায় না। আল্লাহ সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন।