আল্লাহর আসমা তথা নাম , আকিদার সঠিক পাঠ

আল্লাহর আসমা তথা নাম , আকিদার সঠিক পাঠ

আল্লাহ আমাদের রব। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাঁর নাম সমূহের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলেন:
وَلِلّهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُواْ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَآئِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
অর্থ, এবং আল্লাহর জন্য রয়েছে উত্তম নামসমূহ। সে নাম ধরেই তাঁকে ডাকো। যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বক্রপথে চলে, তাদের তোমারা ছেড়ে দাও। অতিশীঘ্রই তারা তাদের কৃতকর্মের ফল পাবে। সূরা আরাফ: ১৮০
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
قُلِ ادْعُواْ اللّهَ أَوِ ادْعُواْ الرَّحْمَنَ أَيًّا مَّا تَدْعُواْ فَلَهُ الأَسْمَاء الْحُسْنَى
অর্থ, হে নবী, আপনি বলে দিন তোমরা আল্লাহ কিংবা রহমান নামে ডাকো, যে নামেই তাকে ডাকো, তাঁর অনেকগুলো সুন্দর নাম রয়েছে।
সূরা বনী ঈসরাইল: ১১০।
কুরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থ, তিনি হলেন আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবক, রুপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁর জন্যে। আসমান, জমিনে যা কিছু আছে, সব তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে। তিনি পরাক্রমশালী এবং প্রজ্ঞাবান।
সূরা হাশর: ২৮।
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
اللَّهُ لا إِلَهَ إِلا هُوَ لَهُ الأسْمَاء الْحُسْنَى
অর্থ, আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। উত্তম নাম সমূহ তাঁর জন্য।
সূরা তাহা: ৮।

কুরআনের চারটি আয়াত আমরা পড়লাম। এ তিন আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর ব্যাপারে বলেছেন যে, তাঁর অনেকগুলো নাম রয়েছে। নাম কতটি? এ ব্যাপারে কুরআনে নির্ধারিত কোন সংখ্যা বলা হয় নি। কিন্তু আল্লাহ ছাড়াও আরও অসংখ্য নামের বর্ণনা পবিত্র কুরআনে পাওয়া যায়।

হাদিসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ৯৯ টি নামের কথা পাওয়া যায়। এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো আমরা পেশ করছি।
عَنِ الأَعْرَجِ عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ لِلَّهِ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ اسْمًا مَنْ حَفِظَهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَإِنَّ اللَّهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ .
আবু হুরায়ারা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে এগুলো মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ বেজোড়, তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন।
বুখারি: ৬৪১০, মুসলিম: ৬৯৮৫।

এ হাদিসে আমরা জানতে পারলাম যে, আল্লাহ তাআলার নাম হলো ৯৯ টি।

আল্লাহর নাম কী ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ?

এখন প্রশ্ন হলো যে, আল্লাহর নাম কি ৯৯ এর মাঝেই সীমাবদ্ধ? এ ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম বাদরুদ্দীন আইনী রাহি. লিখেন:
وقال المهلب فذهب قوم إلى أن ظاهره يقتضي أن لا اسم لله غير ما ذكر إذ لو كان له غيرها لم يكن لتخصيص هذه المدة معنى وقال آخرون يجوز أن يكون له زيادة على ذلك إذ لا يجوز أن تتناهى أسماؤه لأن مدائحه وفواضله غير متناهية وقيل ليس فيه حصر لأسمائه إذ ليس معناه أنه ليس له اسم غيرها بل معناه أن هذه الأسماء من أحصاها دخل الجنة إذ المراد الإخبار عن دخول الجنة بإحصائها لا الإخبار بحصر الأسماء فيها وقيل أسماء الله وإن كانت أكثر منها لكن معاني جميعها محصورة فيها فلذلك حصرها فيها
অর্থাৎ মুহাল্লাব বলেন, এ দলের মত হলো, এ ৯৯ টি নাম ছাড়া আল্লাহর আর কোন নাম নেই। যদি থাকত, তাহলে ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ করার কোন অর্থ থাকে না।
আবার কারও মতে বৃদ্ধি করা জায়েজ আছে। আল্লাহর নাম সীমাবদ্ধ করা অসম্ভব। কারণ, আল্লাহর প্রসংসা এবং মর্যাদার শেষ নেই।
কারও মতে এ হাদিসে ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ করা হয় নি। আর হাদিসের মর্ম এটা নয় যে এ ৯৯ নাম ছাড়া আল্লাহর আর কোন নাম নেই। হাদিসের উদ্দেশ্য হলো, যে এ নামগুলো মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ হাদিসের উদ্দেশ্য হলো, এগুলো মুখস্থ করার দ্বারা জান্নাতে যাওয়ার সংবাদপ্রদান করা। এগুলোর মাঝেই সীমাবদ্ধ, এটি বুঝানো উদ্দেশ্য নয়।
কারও মতে আল্লাহর নাম যদিও ৯৯ এর বেশি, কিন্তু সবগুলোর মর্ম ৯৯ এর মাঝে চলে এসেছে। এজন্য ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
উমদাতুল কারী: ৩৩/১৬৮।

আল্লাহর নাম ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ কি না? এ ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম ইবনে কাছির রাহি. লিখেন:
ثم ليعلم أن الأسماء الحسنى غير منحصرة في تسعة وتسعين بدليل ما رواه الإمام أحمد في مسنده عن يزيد بن هارون عن فضيل بن مرزوق عن أبي سلمة الجهني عن القاسم عن عبد الرحمن عن أبيه, عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال ্রما أصاب أحداً قط هم ولا حزن فقال: اللهم إني عبدك ابن أمتك, ناصيتي بيدك ماض في حكمك, عدل في قضاؤك, أسألك بكل اسم هو لك سميت به نفسك أو أنزلته في كتابك أو علمته أحداً من خلقك أو استأثرت به في علم الغيب عندك أن تجعل القرآن العظيم ربيع قلبي, ونور صدري, وجلاء حزني, وذهاب همي, إلا أذهب الله حزنه وهمه وأبدل مكانه فرحاًগ্ধ فقيل يا رسول الله: أفلا نتعلمها ؟ فقال ্রبلى ينبغي لكل من سمعها أن يتعلمها وقد أخرجه الإمام أبو حاتم بن حبان البستي في صحيحه بمثله, وذكر الفقيه الإمام أبو بكر العربي أحد أئمة المالكية في كتابه الأحوذي في شرح الترمذي أن بعضهم جمع من الكتاب والسنة من أسماء الله ألف اسم, فالله أعلم.
অর্থাৎ জেনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ তাআলার নাম ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। দলিল হলো, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহি. সনদসহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেউ চিন্তা কিংবা পেরেশানিতে পড়লে সে যেন এ দোয়া করে:
“ হে আল্লাহ, আমি আপনার বান্দা। আপনার বাদির ছেলে। আমার সবকিছু আপনার কুদরতি হাতে। সবকিছু পরিচালিত হয় আপনার নির্দেশে। আপনার সিদ্ধান্তে আমি সন্তুষ্ট। আমি প্রত্যেক ওই নাম দিয়ে আপনার কাছে চাচ্ছি, যে নাম আপনি নিজে উল্লেখ করেছেন। অথবা কিতাবে উল্লেখ করেছেন। অথবা কোন সৃষ্টিকে জানিয়েছেন। অথবা অদৃশ্য জ্ঞানে আপনার কাছে রেখেছেন। কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত, চোখের জ্যোতি, চিন্তা এবং পেরেশানি দূর করার ঔষধ বানিয়ে দাও। এ দোয়া করলে আল্লাহ চিন্তা এবং পেরেশানি দূর করে সেগুলোকে আনন্দে রুপান্তর করে দিবেন।
বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি এটা শিখবো? তিনি বললেন, যারাই শুনবে, তারা এটি শিখবে।”
ইমাম ইবনে হিব্বান রাহি. “সহিহ ইবনে হিব্বান” এ হাদিসটি তাখরিজ করেছেন। মালিকি মাজহাবের ইমাম ইবনুল আরাবি রাহি. বলেন, কেউ কেউ কুরআন, সুন্নাহ থেকে আল্লাহর হাজারের অধিক না একত্রিত করেছেন।
তাফসিরে ইবনে কাসির: ৮/১৯১।

ইমাম ইবনে কাসির রাহি. যে হাদীস উল্লেখ করেছেন, সে হাদীসে আল্লাহর নামের ক্ষেত্রে এ দোয়াও করা হয়েছে যে, কিছু নাম আল্লাহর ইলমে রয়েছে। এর থেকে সহজেই প্রতিভাত যে, ৯৯ নামের মাঝে আসলে আল্লাহর নাম সীমাবদ্ধ নয়।

ইমাম বায়হাকী রাহি. আল্লাহর ৯৯ টি নাম সংক্রান্ত হাদীস বর্ণনা করার পর একটি পরিচ্ছেদ প্রতিষ্ঠা করেছেন এ নামে:
باب بيان أن لله جل ثناؤه أسماء أخرى
অর্থাৎ ৯৯ টি নাম ছাড়াও আল্লাহর অন্যান্য নাম সংক্রান্ত পরি”েদ।
এরপর ইমাম বায়হাকী রাহি. রাহি. বলেন:
وليس في قول النبي صلى الله عليه وسلم : ্র لله تسعة وتسعون اسما  نفي غيرها وإنما وقع التخصيص بذكرها لأنها أشهر الأسماء وأبينها معاني وفيها ورد الخبر أن من أحصاها دخل الجنة ،
অর্থাৎ যে হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহর ৯৯ টি নাম রয়েছে, সে হাদীস দ্বারা এ উদ্দেশ্য নয় যে আর কোনো নাম নেই। এখানে বিশেষভাবে ৯৯ টি নাম উল্লেখ করার কারণ হলো, এগুলো প্রসিদ্ধ নাম এবং অর্থের দিক থেকে সুস্পষ্ট। এগুলোর ক্ষেত্রে হাদীসে এসেছে, যে এ নাম মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আল আসমা ওয়াস সিফাত: ১/১১।

এরপর ইবনে কাসির রাহি. এর বর্ণিত ইবনে মাসউদ রাযি. এর হাদীস বর্ণনা করে ইমাম বায়হাকী রাহি. বলেন:
في هذا الحديث دلالة على صحة ما وقعت عليه ترجمة هذا الباب
অর্থাৎ ইমাম বায়হাকি রাহি. যে পরিচ্ছেদ প্রতিষ্ঠা করেছেন, এ হাদীস সে বিষয়টি প্রমাণ করছে।
আল আসমা ওয়াস সিফাত: ১/১৩।

আল্লাহর নাম যে ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, এর পক্ষে ইমাম বায়হাকী রাহি. আরেকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। আম্মাজান আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন:
أنها قالت : يا رسول الله علمني اسم الله الذي إذا دعي به أجاب قال لها صلى الله عليه وسلم : ্র قومي فتوضئي وادخلي المسجد فصلي ركعتين ، ثم ادعي حتى أسمع গ্ধ ففعلت ، فلما جلست للدعاء قال النبي صلى الله عليه وسلم : ্র اللهم وفقها গ্ধ فقالت : اللهم إني أسألك بجميع أسمائك الحسنى كلها ، ما علمنا منها وما لم نعلم ، وأسألك باسمك العظيم الأعظم ، الكبير الأكبر ، والذي من دعاك به أجبته ، ومن سألك به أعطيته قال : يقول النبي صلى الله عليه وسلم : ্র أصبته أصبته গ্ধ
অর্থাৎ তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে আল্লাহর এমন নাম শিখিয়ে দিন, যে নাম দিয়ে দোয়া করলে তিনি কবুল করবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তুমি ওজু করে মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছো দোয়া করো, যাতে আমি শুনতে পাই।”
আয়েশা রাযি. যখন নামাজ পড়ে দোয়ার জন্য বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাকে তাওফিক দাও। আয়েশা রাযি. বললেন, “হে আল্লাহ, আামি আপনার কাছে সকল আসমাউল হুসনা তথা সুন্দরতম নাম দিয়ে চাচ্ছি। চাই সে নাম আপনি আমাদের জানান অথবা না জানান। আপনি আপনার কাছে সুমহান এবং সর্বোচ্চ নাম দিয়ে চাচ্ছি, যে নাম ধরে দোয়া করলে কবুল করেন। চাইলে আমি দান করেন।”
দোয়া শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি সঠিক দোয়া করেছো।”
আল আসমা ওয়াস সিফাত: ১/১৪।

আল্লাহর নামের কথা বলতে যেয়ে আম্মাজান আয়েশা রাযি. একটি শর্তযুক্ত করেছেন। সেটা হলো, কিছু নাম এমন আছে, যেগুলো আমাদের জানানো হয় নি। দোয়া শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বললেন যে, তুমি সঠিক দোয়া করেছো। এর থেকে সহজেই অনুমেয় যে, আল্লাহর নাম ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ নয়।

আল্লাহর নাম ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ কি না? এ ব্যাপারে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রাহি. দুটি মত উল্লেখ করেছেন। কারও মতে সীমাবদ্ধ হলেও অধিকাংশ ইমামদের মতে এ সংখ্যার মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। ইবনে হাজার বলেন:
وقد اختلف في هذا العدد هل المراد به حصر الأسماء الحسنى في هذه العدة أو انها أكثر من ذلك ولكن اختصت هذه بأن من أحصاها دخل الجنة فذهب الجمهور إلى الثاني ونقل النووي اتفاق العلماء عليه فقال ليس في الحديث حصر أسماء الله تعالى وليس معناه انه ليس له اسم غير هذه التسعة والتسعين وانما مقصود الحديث ان هذه الأسماء من أحصاها دخل الجنة فالمراد الاخبار عن دخول الجنة باحصائها لا الاخبار بحصر الأسماء ويؤيده قوله صلى الله عليه و سلم في حديث بن مسعود الذي أخرجه احمد وصححه بن حبان
অর্থাৎ নামের সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে , নাম এ সংখ্যার মাঝে সীমাবদ্ধ নাকি এর চেয়ে বেশি? অধিকাংশ ইমামের মত হলো, ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। ইমাম নববী রাহি. এ ব্যাপারে ইমামদের ঐক্যমত নকল করেছেন। তিনি বলেন:
“এ হাদীসে আল্লাহর নাম ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ করা হয় নি। এ হাদীসের এ অর্থ নয় যে ৯৯ নাম ছাড়া আল্লাহর আর কোনো নাম নেই। এ হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, যারা এগুলো মুখস্থ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ হাদীসে উদ্দেশ্য হলো এ কথা জানানো যে, এগুলো মুখস্থ করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ৯৯ এর মাঝে সীমাবদ্ধ করা উদ্দেশ্য নয়। এরপর তিনি এর পক্ষে পূর্বোল্লিখিত ইবনে মাসউদ রাযি. এবং আয়েশা রাযি. এর বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।
ফাতহুল বারী: ১১/২২০।

আরেকটি বিষয় হলো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে বলেছেন, “মান আহসাহা দাখালাল জান্নাহ”, শাব্দিক অর্থ করলে অর্থ হবে, যে মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এখানে ইহসা দ্বারা কী উদ্দেশ্য? এ ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রাহি. বলেন:
وقال بن بطال الإحصاء يقع بالقول ويقع بالعمل فالذي بالعمل أن لله أسماء يختص بها كالأحد والمتعال والقدير ونحوها فيجب الإقرار بها والخضوع عندها وله أسماء يستحب الاقتداء بها في معانيها كالرحيم والكريم والعفو ونحوها فيستحب للعبد ان يتحلى بمعانيها ليؤدي حق العمل بها فبهذا يحصل الإحصاء العملي وأما الإحصاء القولي فيحصل بجمعها وحفظها والسؤال بها ولو شارك المؤمن غيره في العد والحفظ فان المؤمن يمتاز عنه بالإيمان والعمل به
অর্থাৎ ইবনে বাত্তাল রাহি. বলেন, হাদীসে বর্ণিত “ইহসা” কথা এবং কর্ম উভয়ভাবে হয়। আমল তথা কর্মগতভাবে “ইহসা” করার অর্থ হলো, আল্লাহর কিছু নাম এমন রয়েছে, যেগুলো তার জন্য নির্ধারিত। যেমন, আহাদ, মুতাআল, ক্বাদীর এবং অন্যান্য নাম। এগুলো স্বীকার করা ওয়াজিব, তাঁর সামনে নিজেকে নত করা আবশ্যক। আল্লাহর কিছু নাম এমন রয়েছে, অর্থগত দিক থেকে যেগুলোর অনুসরণ করার প্রয়োজন পড়ে। যেমন, রাহমান, রাহীম, আফওউ এবং অন্যান্য নাম। এজন্য বান্দার জন্য আবশ্যক হলো, এগুলোর অর্থে নিজেকে সুসজ্জিত করা যাতে আমলের হক আদায় হয়। এটাকে বলে কর্মের মাধ্যমে মুখস্থ করা।
আর কথার মাধ্যমে “ইহসা” এর অর্থ হলো, নামগুলো জমা করা, মুখস্থ করা এবং সেগুলোর মাধ্যমে চাওয়া। গণনা এবং মুখস্থের ক্ষেত্রে মুমিন যদি অন্যকে শরীক করে, তাহলে ঈমান এবং আমলের মাধ্যমে তার থেকে পৃথক হয়।
ফাতহুল বারী: ১৩/৩৭৮।

পূর্বের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম যে, আল্লাহ এর ৯৯ টি নাম রয়েছে। মুহাদ্দিসদের বক্তব্য থেকে এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, আল্লাহর নাম এ ৯৯ নামের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। বিশেষ ফজিলত বা মর্যাদার কারণে এটি বলা হয়েছে।

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *