আল্লাহর নাম কী তাওক্বীফী, নাকি কিয়াস করা যাবে?
এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, আল্লাহর নাম কুরআন, সুন্নাহ, কিংবা উম্মাহর ঈজমা তথা ঐক্যমত দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। কিয়াস করে যুক্তি দিয়ে কোন নাম সাব্যস্ত করা যাবে না।
এ ব্যাপারে ইমাম আবু মানসুর বাগদাদি রাহি. বলেন:
إنَّ مأخَذَ أسماءِ اللهِ تعالى التوقيفُ عليها؛ إمَّا بالقُرآنِ، وإمَّا بالسُّنَّةِ الصَّحيحةِ، وإمَّا بإجماعِ الأمَّةِ عليه، ولا يجوزُ إطلاقُ اسمٍ عليه من طريقِ القياسِ
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নামের ব্যাপারে মূলকথা হলো তাওক্বিফ। অর্থাৎ নাম হয়ত কুরআন, অথবা বিশুদ্ধ সুন্নাহ, অথবা উম্মাহর ঐক্যমত দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। কিয়াস বা যুক্তি দিয়ে কোন নাম সাব্যস্থ করা জায়েজ নেই।
আল ফারকু বাইনাল ফিরাক ওয়া বায়ানিল ফিরকাতিন নাজিয়া: ১/৩৩৬।
এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম বাগাবি রাহি. বলেন:
وجملته: أن أسماء الله تعالى على التوقيف ১৪১/ب فإنه يسمى جوادا ولا يسمى سخيا، وإن كان في معنى الجواد، ويسمى رحيما ولا يسمى رفيقا، ويسمى عالما ولا يسمى عاقلا وقال تعالى: “يخادعون الله وهو خادعهم”(النساء ১৪২) وقال عز من قائل: “ومكروا ومكر الله”(آل عمران-৫৪)، ولا يقال في الدعاء: يا مخادع، يا مكار، بل يدعى بأسمائه التي ورد بها التوقيف على وجه التعظيم، فيقال: يا الله، يا رحمن، يا رحيم، يا عزيز، يا كريم ونحو ذلك
অর্থাৎ এ ব্যাপারে মূলকথা হলো, আল্লাহ তাআলার নাম হলো তাওক্বিফী। উদাহরণস্বরুপ আল্লাহকে জাওয়াদ নামে নামকরণ করা যাবে। (অর্থ দানশীল। এর আরেকটি রুপক শব্দ আছে সাখী) সাখী নামে নামরকণ করা যাবে না। রাহীম নামে নামরকণ যাবে। (একই অর্থের আরেক শব্দ) রফিক নামে নামকরণ করা যাবে না। তাকে আলিম নামে নামকরণ করা যাবে। আকিল নামে নামকরণ করা যাবে না।
এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তারা আল্লাহকে ধোকা দেয়, তিনি তাদের ধোকাদানকারী।” আরেক আয়াতে বলেন, “তারা ষড়যন্ত্র করে, আল্লাহও করেন।” এ আয়াতগুলোর আলোকে ইয়া মুখাদি’ বা ইয়া মাক্কার বলে দোয়া করা যাবে না। বরং কুরআন, সুন্নাহ তে সম্মান হিসেবে যে নামগুলো এসেছে, সেগুলো দিয়ে দোয়া করতে হবে। বলা হবে, ইয়া আল্লাহ!“ ইয়া রাহমান, ইয়া রাহীম, ইয়া আজিজ, ইয়া কারীম ইত্যাদি।
তাফসিরে বাগাবী: ৩/৩০৭।
হাফিজ জালাল উদ্দিন সুয়ুতী রাহি. বলেন:
اعلم ان أسماء الله تعالى توقيفية بمعنى انه لا يجوز ان يطلق اسم ما لم يأذن له الشرع وإنكان الشرع قد ورد بإطلاق ما يرادفه واليه ذهب الأشعري وقالت المعتزلة والقاضي أبو بكر الباقلاني ان ذلك جائز بطريق العقل
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নামের ক্ষেত্রে শরীয়ার মূলনীতি হলো, তাওক্বিফ। শরীয়ার অনুমোদন ছাড়া নিজের পক্ষ থেকে কোন নাম ব্যবহার জায়েজ নেই। যদিও যে নাম ব্যবহার করতে চাওয়া হচ্ছে, সে নামের প্রতিশব্দ পাওয়া পায়। এটি হলো আশআরিদের মত। মু’তাজিলা এবং কাজি আবু বকর বাকিল্লানি এর মতে আকল যুক্তি দিয়ে আল্লাহর নাম সাব্যস্ত করা জায়েজ আছে।
শারহু সুনানি ইবনে মাজাহ: ১/২৭৫।
এখানে আরেকটি বিষয় হলো, আল্লাহর নামের অনুবাদ করা আর যুক্তি দিয়ে নাম সাব্যস্ত করা এক নয়। আমরা আল্লাহকে ক্ষমাশীল, দয়ালু বলি। এগুলো আল্লাহর একেকটি নামের অনুবাদ। আর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, যে কোন ভাষায় আল্লাহর কুরআন, সুন্নাহয় বর্ণিত নাম দিয়ে আল্লাহকে ডাকা যাবে।