প্রচলিত মিলাদ , কিয়াম খাইরুল কুরুনে ছিলো না, এটাই হলো চির বাস্তব কথা। খায়রুল কুরুনে মিলাদ প্রমাণিত করতে গিয়ে যে সকল রেওয়ায়াত পেশ করা হয়, সেগুলো বেশিরভাগ জাল! এক দুটো সহিহ হাদীস হলেও সেগুলো নির্লজা বিকৃতি। কোনোভাবেই এ সমস্ত হাদীস থেকে মিলাদ, কিয়াম প্রমাণিত হয় না।
বাংলাদেশের কিছু মানুষ প্রচলিত মিলাদ কিয়ামকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসার মাপকাঠি বানিয়ে ফেলেছেন! এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খতমে নবুওয়াতের উপর হামলা করলে তারা চুপ থাকেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে নাস্তিকরা কটূক্তি করলেও তারা চুপ থাকেন! কিন্তু মিলাদ বেদআত বললেই তারা তেড়ে আসেন! মিলাদের পক্ষে সবকিছু বিসর্জন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন!
প্রিয়ভাই! একটু থামুন! আপনার সাথে আমার কথা আছে! যে সকল আলেমদের দলিল হিসেবে পেশ করে আপনি মিলাদ, কিয়াম প্রমাণের চেষ্টা করেন, তারাও কিন্তু স্বীকার করেছেন এটা খাইরুল কুরুনে ছিলো না। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. কে চিনেন? মিলাদ কে মুস্তাহসান বলার ক্ষেত্রে উনার ফতোয়াকে খুব প্রচার করেন! কিন্তু উনার কেয়াসের প্রথম অংশ পড়েছেন? কি বলেছেন তিনি? একটু দেখে আসি-
“أصل عمل المولد بدعة لم ينقل عن أحد من السلف الصالح من القرون الثلاثة”
অর্থাৎ, মিলাদের মূল আমলটি বেদআত। প্রথম তিন যুগের কোনো আলেম থেকে মিলাদের কথা বর্ণিত হয়নি। (হুসনুল মাকসিদ: ৬৩।)
হাফেজ ইবনে হাজার এরপর আশুরার রোজার উপর কিয়াস করে মিলাদকে মুসতাহসান বলেছেন, সে সম্পর্কে পরবর্তীতে আলোচনা করব।
ইবনে আমির আলহাজ আস সানআনি রহ. বক্তব্যটি একটু দেখুন ভাই! তিনি বলেন-
إذْ أَنَّ ذَلِكَ زِيَادَةٌ فِي الدِّينِ وَلَيْسَ مِنْ عَمَلِ السَّلَفِ الْمَاضِينَ وَاتِّبَاعُ السَّلَفِ أَوْلَى بَلْ أَوْجَبُ مِنْ أَنْ يَزِيدَ نِيَّةً مُخَالِفَةً لِمَا كَانُوا عَلَيْهِ لِأَنَّهُمْ أَشَدُّ النَّاسِ اتِّبَاعًا لِسُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَعْظِيمًا لَهُ وَلِسُنَّتِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَهُمْ قَدَمُ السَّبْقِ فِي الْمُبَادَرَةِ إلَى ذَلِكَ وَلَمْ يُنْقَلْ عَنْ أَحَدٍ مِنْهُمْ أَنَّهُ نَوَى الْمَوْلِدَ وَنَحْنُ لَهُمْ تَبَعٌ فَيَسَعُنَا مَا وَسِعَهُمْ .
মিলাদ এটা দ্বারা দ্বীনের মধ্যে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তা পূর্ববর্তীরা আমল করেন নি। পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করা হলো উত্তম। কেননা তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অধিক অনুসরণ করতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিক ভালোবাসতেন। তাঁদের কারো থেকে বর্ণিত হয়নি যে, তারা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেছেন। আমরা হলাম তাঁদের অনুসারী। (আল মাদখাল: ১/৪৮২, দারুল ফিকর, বায়রুত।)
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন-
فإن هذا لم يفعله السلف ، مع قيام المقتضي له وعدم المانع منه لو كان خيرًا . ولو كان هذا خيرًا محضا ، أو راجحًا لكان السلف رضي الله عنهم أحق به منا ، فإنهم كانوا أشد محبة لرسول الله صلى الله عليه وسلم وتعظيمًا له منا ، وهم على الخير أحرص .
পূর্ববর্তী কেউ এ ধরণের মিলাদ পালন করেন নি। যদি তা পূণ্য কাজ হত এবং করা সঠিক হত, তাহলে পূর্ববর্তিরা অবশ্যই ঈদ পালন করতেন। কেননা তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামকে অধিক ভালোবাসতেন এবং সম্মান করতেন। আর পূণ্যকাজের ব্যাপারে তারা অতি আগ্রহী ছিলেন। (ইকতিযাউস সিরাতিল মুসিতাকিম ২/৮৪, দারু আলামিল কুতুব, বায়রুত, সপ্তম সংস্করণ।)
আল্লামা আহমদ বিন আব্দুর রহমান আদ দুয়াইশ বলেন-
إقامة احتفال بمناسبة مولده صلى الله عليه وسلم لا يجوز؛ لكونه بدعة محدثة لم يفعلها رسول الله صلى الله عليه وسلم، ولا خلفاؤه الراشدون، ولا غيرهم من العلماء في القرون الثلاثة المفضلة
অর্থাৎ, রাসূলের জন্ম উপলক্ষে মিলাদের মাহফিল করা জায়েয নয়। কেননা এটি হলো নব আবিষ্কৃত বেদয়াত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খোলাফায়ে রাশেদীন এবং খাইরূল কুরুনের কোন লোকই করেননি। (ফতোয়া আল লাজনাতুত দায়িমা ৩/২১৪)
বুঝলেন ভাই? প্রচলিত মিলাদ খাইরুল কুরূনে ছিলো না। এরপর অনেকপর শুরু হয়েছে।
মোটাদাগে প্রশ্ন করি, ৬০০ হিজরির আগ পর্যন্ততো মিলাদ ছিলো না। খোদ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ও সেটা স্বীকার করেছেন। তাহলে প্রশ্ন হলো সে যুগের মানুষের অন্তরে কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালোবাসা ছিলো না? তারা মিলাদ, কিয়াম না করে কীভাবে আল্লাহ এবং রাসূলকে পেলেন?