বাজনা সর্বসম্মতক্রমে হারাম। উম্মাহর মহান ইমামদের ঐক্যমতে হারাম। উম্মাহর ইমামদের ঐক্যমতের বিপরিত যদি এক দুইজনের বিচ্ছিন্ন মতামত পাওয়া যায়, তিনি মুজতাহিদ পর্যায়ের কেউ হোন, সেটাকে ইলমি পরিভাষায় ‘যাল্লাত’ বলা হয়। আর যাল্লাত এর অনুসরণ করা হারাম। মতামতপ্রদানকারী ব্যক্তি মুজতাহিদ পর্যায়ের না হলে তার মতামতকে “ফাইজলামি” বলা হয়।
বাজনার আধুনিক নাম হলো মিউজিক। এটা সর্বকালে সবার মতে হারাম ছিল। এ ব্যাপারে এত অধিক পরিমাণে নস বর্ণিত হয়েছে যে, জমা করে স্বতন্ত্র একটি পুস্তিকা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। নস উল্লেখ না করে আমি কয়েকজন ইমামের বক্তব্য আপনাদের সামনে পেশ করছি।
ইমাম সারাখসি রাহি. বলেন:
ولا تجوز الإجارة على شيء من الغنا والنوح والمزامير والطبل وشيء من اللهو لأنه معصية والاستئجار على المعاصي باطل
অর্থাৎ গান, মৃতের বাড়িতে মাতম, বাজনা, তবলা এবং লাহও জাতীয় কোন কিছু ভাড়াপ্রদান জায়েজ নেই। কারণ, এগুলো গুনাহের কাজ। আর গুনাহের কাজের ভাড়া হারাম।– আল মাবসুত: ১৮/৩৯৬।
ইমাম আলাউদ্দিন কাসানী রাহি. বলেন:
فأما إذا كان الدخول لتغيير المنكر بأن سمع في دار صوت المزامير والمعازف فليدخل عليهم بغير اذنهم لان تغيير المنكر فرض
অর্থাৎ কারও ঘরে শরীয়া বিরোধী কোন কাজ বন্ধ করার জন্য প্রবেশ করতে চাইলে অনুমতির প্রয়োজন নেই। উদাহরণস্বরুপ কারও ঘর থেকে গান বাজনার আওয়াজ আসছে, তাহলে সেটা বন্ধ করার জন্য প্রবেশ করতে চাইলে অনুমতির প্রয়োজন নেই। কারণ, শরীয়াবিরোধী কাজ বন্ধ করা ফরজ।– বাদায়িউস সানায়ী: ৭/৩৬৭।
ইমাম ইবনে হাজার হাইতামি শাফেয়ী রাহি. বলেন:
” الأوتار والمعازف ، كالطُّنْبُور والعُود والصَّنْج .. وغير ذلك من الآلات المشهورة عند أهل اللهو والسَّفاهة والفُسوق ، وهذه كلُّها محرَّمة بلا خِلاف ، ومَن حكى فيه خلافًا فقد غلط أو غلب عليه هَواه ، حتى أصمَّه وأعماه ، ومنعه هداه ، وزلَّ به عن سنن تَقواه .
وممَّن حكَى الإجماع على تحريم ذلك كلِّه : الإمام أبو العباس القرطبي ، وهو الثقة العدل ، فإنَّه قال كما نقَلَه عن أئمَّتنا وأقرُّوه : أمَّا َالمَزَامِير والكُوبَة فلا يُختَلف فِي تحريم سماعها ، ولم أسمعْ عن أحدٍ ممَّن يُعتَبر قوله من السلف ، وأئمَّة الخلف مَن يبيح ذلك ، وكيف لا يُحرَّم وهو شعار أهل الخمور والفسوق ، ومهيج للشهوات والفساد والمجون ، وما كان كذلك لم يُشَكَّ فِي تحريمه ولا فِي تفسيق فاعله وتأثيمه .
অর্থাৎ বাদ্যযন্ত্র জাতীয় যা কিছু আছে, কোন ধরণের মতানৈক্য ছাড়া সব হারাম। এ মাসআলায় যারা বিরোধীতা করেছেন, তারা হয়ত ভুল করেছেন অথবা কূপ্রবৃত্তির কাছে পরাজিত হয়েছেন। কূপ্রবৃত্তি তাদের অন্ধ করে দিয়েছে, হেদায়াত থেকে বঞ্চিত করেছেন। বাদ্যযন্ত্র হারাম হওয়া ঐক্যমতের ব্যাপারটি ইমাম কুরতুবি রাহি.ও নকল করেছেন। তিনি বলেন, এগুলো শুনা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই। সালাফে সালেহিন এর গ্রহণযোগ্য কেউই ভিন্নমত পোষণ করেন নি। পরবর্তী কেউ কেউ এটাকে হালাল বলেছেন! কিন্তু এটা কেন হারাম হবে না? এটা তো মদপানকারী এবং ফাসিকদের শিআর। আর এ জাতীয় বিষয় হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে কোন সন্দেহ নেই।– কাফফুর রিআ আন মুহাররামাতিল লাহওয়ি ওয়াস সিমা: ১১৮।
এ ব্যাপারে ইমাম বাগাবি রাহি. বলেন:
واتفقوا على تحريم المزامير والملاهي والمعازف
অর্থাৎ বাদ্যযন্ত্র হারাম হওয়ার ব্যাপারে উম্মাহর সকল ইমামগণ একমত।– শারহুস সুন্নাহ: ১২/৩৮৩।
এখানে নস বা ইমামদের বক্তব্য উল্লেখ করা উদ্দেশ্য না। অসংখ্য নস দ্বারা বাজনা হারাম প্রমাণিত। এমনভাবে উম্মাহর মহান ইমামদের সর্বসম্মতমত হলো সেটা হারাম।
আমাদের যুগের বড় দুটির ফিতনার একটি হলো, নিজের বুঝকে চূড়ান্ত মনে করা। আরেকটি হলো, তালাশ করে করে যাল্লাত দিয়ে দলিল পেশ করা। বাজনা হারাম, এটাই চূড়ান্ত কথা! প্রয়োজন কোন পর্যায়ে উপনীত হলে শরিয়তের হারাম সাময়িক সময়ের জন্য হালাল হয়, এগুলোরও নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। আজে কেউ এগুলো জানার প্রয়োজন অনুভব করে না। যার যার মতো করে হারামকে হালাল বানিয়ে দিচ্ছে! আল্লাহ আমাদের সুমতি দান করুন।
মাশাআল্লাহ। আল্লাহু আকবার। এভাবেই সুন্নি নামধারী মুশরিকদেরকে জবাব দিতে হবে ।