স্বাগতম ২০২৪
আজ সূর্যাস্তের সাথে সাথে কালের গর্ভে হারিয়ে গেল ২০২৩। জীবন পঞ্জিকা থেকে ঝরে পড়ল আরও একটি বছর। কিছু প্রাপ্তি কিছু হারানো এবং নতুন কর্ম জীবনের অভিজ্ঞতা, সব মিলিয়ে ভালো মন্দের মিশেলে কেটেছে এ বছরটি। ব্যক্তিগত ভাবে অনেক প্রাপ্তি অর্জন হয়েছে এ বছর ।যদিও আফসোস রয়েছে অনেক। কারণ, সময়ের যদি সঠিক মূল্যায়ন করতাম, তাহলে এখন যখন পিছনে ফিরে থাকাতাম, অর্জনের খাতাটা আরো সমৃদ্ধ হত। তারপরও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি যে, ক্ষুদ্র জীবনে যতটুকু অর্জন,সবটুকুই তার অপার করুণায়।
মুমিনের জন্য করণীয় হলো, অতীতের ভুল ত্রুটি শুধরে নিরন্তর সামনে এগিয়ে যাওয়া। অতীতের ব্যর্থতাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হিসাবে গ্রহণ করা। আমার আজ যেন হয় গতকালের চেয়ে ফলপ্রসু,অহর্নিশ সে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এজন্য হাদীসের ভাষ্য হল, মুমিনের জন্য জরুরী হল প্রতিদিনের মুহাসাবা করা। অতীতেই যারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তাদের জীবনী অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, মুহাসাবা চিল তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময়ের প্রতিটি কণাকে কাজে লাগিয়েছেন মেপে মেপে। এক মূহুর্ত নষ্ট হলে মনে হত, তারা জীবনের অনেক বড় কিছু হারিয়ে ফেলেছেন। অনেক বড়দের জীবনীতে পাওয়া যায় যে, অহেতুক সময় নষ্ট করাকে তারা আত্মহত্যার নামান্তর মনে করতেন। এজন্য তাদের জীবনী নামক বৃক্ষটি পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয়েছে। মানুষের জন্য হয়েছেন ছায়াদার বৃক্ষ। মরেও তারা অমর। মৃত্যুর হাজার পরেও মানুষ তাদের থেকে উপকৃত হচ্ছে। অনেকে এমন ছিল যে, হায়াত পেয়েছিলেন চল্লিশের কম। কিন্তু এত কাজ করেছেন যে, আমরা পুরো জীবনে সেগুলো পড়ে শেষ করতে পারিনা!
দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সম্পদ হল সময়। আর আমরা সবচেযে বেশি নষ্ট করি সময়কে। প্রতিনিয়ত কত সময় হেলায় খেলায় নষ্ট করি, তার হিসাব করলে হয়ত জ্ঞানীদের অন্তরাত্বা কেঁপে উঠবে। এজন্য যখন একটি নতুন বছর শুরু হয়, তখন আমাদের জন্য জরুরী হলো, অতীতের হিসাব নেওয়া। অতীতের ব্যর্থতার জন্য অনুতপ্ত হওয়া। সামনের দিনগুলোকে কিভাবে আরো ফলপ্রসু করা যায়,সে চেষ্টা করা।
কিন্তু আমরা! ভালো-মন্দ যা দেখি, ভেসে যাই তাতে গড্ডালিকা প্রবাহের ন্যায়। ইউরোপের কোন লোক যদি গোঁফ কাটে বানরের মত,আমরাও বানর সাজতে হুমড়ি খেয়ে পড়ি। ইউরোপীয় কালচার মনে হয় সবচেয়ে বেশি গ্রোগাসে গিলে বাঙালীরা। অন্যরা হয়ত একটু ভাবে, নিজস্ব সংস্কৃতি ,তাহজীব ,তামাদ্দুন এবং জাতীয়তা বিসর্জন দিয়ে অন্য কারও কালচার গ্রহণ করতে ইতস্তত বোধ করে। হোক সে অমুসলিম। তারপরও নিজের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দেয় না। আর আমরা বাঙালীরা, নিজেদের সব কিছু বিসর্জনতো দেই! এমনকি পোষাক-আষাক এবং মাথার চুল কাটতেও তাদের সংস্কৃতির অনুসরণ করি।
নতুন বছরের প্রথম প্রহরটা দেখুন। আমাদের করণীয় ছিল,অতীতের প্রাপ্তি এবং ব্যর্থতার হিসাব মিলানো। কিন্তু আমরা সব কিছু বাদ দিয়ে চতুষ্পদ জন্তুর মত রাস্তা ঘাটে মদ,গাঁজা আধুনিক নামধারী পতিতা নিয়ে মেতে উঠি। পটকার মুহুর্মুহু আওয়াজ শুনলে মনে হয়, বাংলাদেশের আধুনিক নামীয় কুকুর শুনি নমরুদের মত খোদার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে! আপনি ঢাকা শহরে একটি আরবী বই হাতে নিয়ে হাটলে পুলিশ চেক করে। কিন্তু এ চরম বর্বরদের পুলিশ কিছুই করে না।বরং তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আজ বিকাল থেকে টি,এস,সির সবগুলো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ!
বুদ্ধিজীবি নামক পক্ককেশি শয়তানদের জুতা-পেটা করতে মন চায়। কোথাও কোরআনের কোন আয়াত দেখলে তারা চিৎকার শুরু করে যে, কেন বাংলা ভাষা বাদ দিয়ে অন্যের ভাষা চর্চা করা হচ্ছ। ইসলামী অনুষ্ঠান দিয়ে তাদের গাত্রদাহ তো পরিস্কার।অযুহাত হল হুজুররা দেশিয় সংস্কৃতি চর্চা করেনা! কিন্তু নতুন বছরের প্রথম প্রহরে যেভাবে বাঙালী সংস্কৃতির বুকে ছুরি চালানো হয়, তখন কেন তারা মুখে টয়লেট পেপার সেঁটে নীরব থাকে???