কুরআন অনুধাবনের গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা আপনাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করবেন না যে কোন পদ অর্জন করেছিলে কি না? কিন্তু কুরআনের হক আদায় করে পড়েছেন কি না? সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেন। বিশুদ্ধভাবে কুরআন পড়ার পাশাপাশি আরেকটি খেদমত হল,অর্থ বুঝা। এজন্য বিশুদ্ধভাবে কুরআন পড়া শেখার পর অর্থ বুঝার প্রতি মনোনিবেশ করা চাই। আজকাল কেউ কেউ ভালবাসার কারণে শুধুমাত্র কুরআন তেলাওয়াত শেখার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে।

আবার কারও অনুবাদ পড়ার আগ্রহ তৈরী হলে সে নিজের মত করে অনুবাদ তালাশ করতে থাকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে অনুবাদকারীর অবস্থাও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, প্রত্যেক শাস্ত্রের জন্য আলাদা অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। কৃষক কৃষি কাজ করবে। কামার লোহার কাজ করবে। তহশিলদার আপন কাজ করবে। একে অপরের কাজে কখনো নাক গলায় না। এজন্য ডেপুটি সাহেব এবং তহশিলদার কোন সাহসে কুরআন অনুবাদের কাজে হাত দেন? দেখা যায় তারা কুরআন অনুবাদ করতে গিয়ে মারাত্মক ভুল করে বসেন। এজন্য আগে দেখতে হবে যে এ অনুবাদ কোন অভিজ্ঞ আলেম করেছেন কি না? কুরআন অনুবাদ করতে গিয়ে অনেকগুলো বিষয় খেয়াল করতে হয়। সেগুলো খেয়াল না করলে ‘যাহাবনা নাসতাবিক্বু’ এর অনুবাদ করবেন আমরা কাবাডি খেলতে গিয়েছিলাম!

এজন্য শুধু অভিধান দেখে শাব্দিক অর্থ দিয়ে আপনি কখনো কুরআনের অনুবাদ করতে পারবেন না। কুরআনের অনুবাদ করতে হলে অনেকগুলো ইমল সম্পর্কে আপনি অভিজ্ঞ হতে হবে। আজকাল লোকেরা ভাল ছাপা হলেই মনে করে অনুবাদ এটা ভাল! অনুবাদের মান যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। দেখা যায় সে নিজেও বিচ্যূত হয়, অন্যকেও বিচ্যূত করে। যারা নিজেদের সন্তানদের কুরআন পড়ান, তাদের অধিকাংশ শুধুমাত্র শব্দ পড়িয়ে দেন। তারা সুর এবং পড়ার পদ্ধতি শুনে মুগ্ধ হয়ে তোতা পাখির মত পড়তে থাকেন। মনে রাখবেন তাহলে আপনার সন্তান

সারা জীবন তোতা পাখি থাকবে। কখনো মানুষ হতে পারবে না। মানুষ হবে সে ইলম দ্বারা। ইমল শুধুমাত্র শব্দের নাম নয়।
এজন্য সন্তানদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। এজন্য তাদের কুরআন অনুধাবন করানোর ব্যবস্থা করুন। বিশুদ্ধ এবং ভুল অনুবাদের মাঝ পার্থক্য করুন। বিচ‚্যতি থেকে নিজে বাঁচুন এবং আপনার পরিবারকেও বাঁচান। কিন্তু আজকাল মানুষ এগুলোকে প্রয়োজনীয় বিষয় মনে করে না। মানুষ বলাবলি করে, পুরো জীবন এগুলোর পিছনে ব্যয় করে দিলে দুনিয়ার কাজ কীভাবে করব? জবাব হল, আমরা সকলকে ইলমের গভীরতা অর্জনের নির্দেশ দিচ্ছি না। প্রত্যেকে নিজের প্রয়োজনমাফিক আহকামাদি শিখে নিন। আরবিতে সম্ভব না হলে ছোট ছোট উর্দূ পুস্তিকা পড়ে নিন।

এজন্য আমাদের একটি সংক্ষিপ্ত নেসাব করতে হবে। দশ বছরের জায়গায় যেখানে লাগবে আড়াই বছর। নতুন কথা মনে করে নাক সিটকাবেন না। বলতে পারেন আড়াই বছরে ১০ বছরের কাজ হলে পূর্বের উলামায়ে কেরাম কী সময় নষ্ট করার জন্য ১০ বছরের নেসাব নির্ধারণ করেছেন? মনে রাখবেন এটা কোনভাবে সম্ভব না। তবে আড়াই বছরে আপনি নির্বাচন করে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নির্ধারণ করবেন। দেখা যাবে এর দ্বারা কেউ পূর্ণ আলেম হতে না পারলেও তার মাঝে এক ধরণের যোগ্যতা চলে আসবে।

এটি হল এমন লোকদের জন্য, যারা অবসর কম পান। তারা পুরাতন নেসাব পূর্ণ করতে চাইলে এ নেসাব শেষ করার পর ধীরে ধীরে পড়তে থাকুক। এটা তার জন্য অনেক উপকারী হবে। আমি এক যুগ পর্যন্ত আমার সুহৃদদের মাধ্যমে বিষয়টি পরীক্ষা করেছি। পুরোপুরি প্রশান্তি লাভ করার পর আমি বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশ করেছি। এটা প্রকাশ করার দ্বারা আমার এ উদ্দেশ্য নয় যে পুরাতন নেসাব অহেতুক। এটা ছেড়ে দিতে হবে। বরং যাদের সময় এবং সুযোগ আছে, তারা অবশ্যই পুরাতন নেসাব পূর্ণ করবেন। এটা মূলত তাদের জন্য, যারা অবসর সময় বের করতে পারেন না। কাজ চালানোর জন্য তাদের এ সংক্ষিপ্ত নেসাব যথেষ্ট। আজকাল মানুষের মাঝে এ অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে যে ইলমে দীন অর্জন করলে আপনি অন্য কোন কাজ করতে পারবেন না! এজন্য কারও কারও মতে অন্য কাজের সুযোগ দেওয়ার জন্য নতুন নেসাব অনুযায়ী তাদের পড়া উচিত। এজন্য প্রত্যেক শহরে নতুন নেসাবের একটি মাদরাসা করা চাই। এছাড়া প্রত্যেক মাদরাসায় আলাদা একটি সংক্ষিপ্ত নেসাবের শাখা থাকা চাই। এবার আপনি ইলমে দীন না শেখার ব্যাপারে আর কোন অভিযোগ করার সুযোগ নেই। আপনার অন্তরে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করলে শত সহ¯্র ওজর বের করবেন। কিন্তু কথা হল, এ ব্যাপারটির প্রয়োজনীয়তা কখনো এড়িয়ে যেতে পারবেন না। কোন বুদ্ধিমান মানুষ এটা অস্বীকার করতে পারে না। প্রয়োজন মনে করার পর সেটা পূর্ণ না করা সেটা হল গাফলতি। এর ফলাফল হবে লজ্জিত হওয়া।

প্রিয়ভাই! লজ্জিত হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে দীনের প্রয়োজন দুনিয়া অনেক বেশি। এ হিসেবে দুনিয়ার জন্য আপনি যতুটুকু সময় ব্যয় করবেন, দীনের ব্যাপারে এরচেয়ে বেশি সময় দেওয়া উচিত। আপনি অন্যান্য ইলমের জন্য সময় বের করতে পারলেও দেখা যায় দীনী ইলমের জন্য সময় বের করতে পারেন না! আপনি প্রথমে ইলমে দীন শিক্ষা করুন। এটা শেষ করে নিজের ইচ্ছেমত কোন শাস্ত্র নির্ধারণ করুন। দেখবেন দীনের ক্ষেত্রে আর কোন সমস্যা হবে না। ডাক্তার যদি কোন বাচ্চাকে বলে তিন বছর তাকে ইংরেজি পড়ানো যাবে না। তাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। অন্যথায় তার মাথা বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আপনি তো তখন বাচ্চাকে পড়াশুনা করাবেন না। ছেলে সুস্ত না থাকলে বড় হয়ে সে চাকরি করবে কীভাবে?
মনে করুন আপনি আড়াই বছরের জন্য বিশ্রামে যাচ্ছেন। প্রথমে তার আত্মা ঠিক করুন। এরপর শারীরিক অবস্থা ঠিক করুন। এ আড়াই বছরে তার দুনিয়াবি কোন ক্ষতি হবে না। এর চেয়ে বেশি সময় আপনি অহেতুক খেল তামাশায় ব্যয় করেন । দুনিয়াবি দিক থেকে সামান্য ক্ষতি হয়ে গেলেও মুসলমানরা দীনকে অগ্রগামী করবে। আল্লাহর বিধানের সামনে দুনিয়ার কোন মূল্য নেই। আগে আপনাকে দীন শিখতে হবে। এজন্য শুধু শব্দ পড়ার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবেন না। বরং অর্থ বুঝানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

মূল হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রাহি.।

অনুবাদ: রেজাউল কারীম আবরার

 

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *