প্রতিশ্রুত মাসিহ বনাম গোলাম আহমদ কাদিয়ানি

প্রতিশ্রুত মাসিহ বনাম গোলাম আহমদ কাদিয়ানি

উম্মতে মুহাম্মাদীর শেষ যুগে আল্লাহর হেকমতে বড় দাজ্জাল বের হবে। যার ভয়াবহ ফিতনা সম্পর্কে অতীতের সকল নবী উম্মতকে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। ‘হাদীসে মুতাওয়াতির’ দ্বারা প্রমাণিত যে, অতীতের সকল ফিতনা থেকে ভয়াবহ ফিতনা হবে দাজ্জালের ফিতনা। তার সাথে অনেকগুলো আশ্চর্যজনক বস্তু থাকবে।

এর সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের এই শান যে, যেমনভাবে তাদের নিকট দাজ্জাল আবির্ভাব করবে, ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা উম্মাতকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচানোর জন্য ঈসা আ.কে দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে পাঠাবেন। তিনি দাজ্জালকে ধ্বংশ করে দিবেন।

দাজ্জাল বের হওয়া এবং ঈসা আ. পূণরায় অবতীর্ণ হওয়া পৃথিবীতে পূর্বে গঠিত সকল গঠনা থেকে গুরুত্ববহ। এজন্য উম্মতের প্রতি দয়ালু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের চুল চেরা বিশ্লেষণ এবং ঈসা আ. নিদর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত করে গেছেন। এবিষয়ের শতাধিক হাদীসে ঈসা আ. এর অবতর্ণি হওয়ার সময় পৃথিবীর অবস্থা কি হবে? বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এ সমস্ত হাদীস মুতাওয়াতির পর্যায়ের। মুহাদ্দিসগণ সেগুলোকে মুতাওয়াতির বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর সকলেই একমত যে, মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা যে বিষয় প্রমাণিত হয়, সেটা অকাট্য।

এ বিষয়ে বর্ণিত সকল গওহণযোগ্য হাদীসকে আমি আরবী পুস্তিকা “আত তাসরীহ” এর মধ্যে একত্রিত করেছি। প্রত্যেক হাদীসের শুরুতে নাম্বার দিয়েছি। সেখানে শুধু হাদীসের নাম্বার এবং হাওয়ালা উল্লেখ করা হয়েছে। সময় সুযোগ হলে সামনে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করব ইনশাআল্লাহ।

কুরআনে ঈসা আ. এর যতটুকু আলামত বা নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে, অন্য কোন নবীর ততটুকু করা হয়নি। এমনকি যা উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরও শারিরিক নিদর্শনাবলি কুরআনে এত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়নি। সমস্ত নবীদের থেকে শুধুমাত্র ঈসা আ. এরে ব্যাপারে কুরআনে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে এত বিস্তারিত আলোচনার উদ্দেশ্য হল, তিনি শেষ যামানায় আবার দুনিয়াতে আসবেন। এজন্য জরুরী হল তার নিদর্শনাবলি উম্মতকে এমন স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা, যাতে কোন সন্দেহের সামান্য পরিমাণও অবকাশ না থাকে। এ পুস্তিকায় একত্রিত তার আলামত দেখার পর যে কে্ ুবলবে যে, কোন মানুষকে নির্দিষ্ট করার জন্য এত বেশি আলামত বর্ণনার প্রয়োজন ছিলনা।
সমস্ত নবীদের থেকে দাজ্জালকে ধ্বংশ করার জন্য ঈসা আ.কে নির্দিষ্ট করার হিকমত এটাও হতে পারে যে, তার জন্ম, লালন পালন সমস্ত নবীদের থেকে ভিন্ন ছিল। সেটা আল্লাহর মুজিযা। তার অবস্থা অন্য কোন মানুষের সাথে মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

মোটকথা হল কুরআন এবং হাদীসে শেষ জামানায় ঈসা আ. এর পরিচয় এবং তার আগমণের সকল সন্দেহ দুর করার জন্য বিষয়টিকে এতটা গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যে, সাধারণত এরচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা সম্ভব নয়। যাতে করে কোন মিথ্যুক নিজেকে ঈসা আ. দাবী করে উম্মতকে গোমরাহ করতে না পারে।
শাবাস গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। তিনি কুরআন এবং হাদীসের বর্ণি সকল নিদর্শনে পানি ঢেলে নিজে প্রতিশ্রæত মাসীহ বনে বসে রয়েছেন! এর চেয়ে বেশি আফসোস সে সমস্ত লোকদের জন্য, যারা কুরআন, হাদীসে ঈসা আ. এর সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকার পরও তাকে প্রতিশ্রæত মাসীহ মেনে নিয়েছেন! কিন্তু নতুন ধর্ম আবিস্কার করা ব্যতিত কুরআন, হাদীস দ্বারা কোন মানুষ প্রতিশ্রুত মাসীহ হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, এজন্য মির্জা সাহেব কি করলেন?
১.. উম্মতের ইজমা এবং কুরআন, হাদীসের বিপরীতে তিনি বললেন: ঈসা আ. মারা গেছেন। তার কবর কাশ্মীরে!
২.. এরপর দাবী করলেন ঈসা আ. দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে আসবেন না। বরং তার মত কেউ আসবেন।
৩.. এরপর ঈসার মত সেই লোক তিনি নিজে হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন!
৪.. এছাড়া কুরআন, হাদীস এবং উম্মতের ঐক্যমতে নবুওয়তের দরজা চির দিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরে কোন নবী আসবেনা। ঈসা আ. পূর্বে নবী ছিলেন। এজন্য তার আসা খতমে নবুওয়তের জন্য বাধা নয়। যদি তার মত কেউ আসেন, তাহলে খতমে নবওয়তের মতে ঐক্যমতের মাসআলায় বিকৃতি সাধন করতে হবে। নবুওতের বিভিন্ন প্রকার কার ধারা চালু হয়ে যাবে।
৫.. শেষ পর্যন্ত গোলাম আহমদ নিজেই নবী এবং রাসুল হয়ে গেলেন!
৬.. নবী দাবি করার ফলাফল এই দাড়ালো যে, তাকে যারা মানবেনা, তারা সকলেই কাফের। যার কারণে মুষ্টিমেয় একটি দল ছাড়া বাকী সকলেই কাফের সাব্যস্থ করা হল!
৭.. আর একথা স্পষ্ট যে, নবী দাবীদারদের অনুসারী এবং অস্বীকারকারী কখনো এক জাতি হতে পারেনা। কেননা এটা সম্ভন নয় যে, নবীকে অনুসারণকারী মুসলমান। আবার অস্বীকারকারীরাও মুসলমান। এভাবে ইসলামকে টুকরো টুকরো করে একটি আলাদা মিল্লাত গঠন করা হয়েছে। এ সমস্ত কুফরী কথার মূলে একটি সমস্যা। কুরআন এবং হাদীসের স্পষ্ট নসের বিপরীতে নিজেকে প্রতিশ্রæত মাসীহ দাবি করা।
এজন্য অধম এ সংক্ষিপ্ত রিসালায় শেষ জমানায় ঈসা আ. এর সকল সমস্ত নিদর্শন কুরআন এবং হাদীসের আলোকে একত্রি করেছি। যাতে পাঠক দেখতে পারেন যে, আল্লাহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সমস্ত নিদর্শন বর্ণনা করেছেন, মির্জা কাদিয়ানির মধ্যে সেগুলোর একটাও নেই।
আমি সহজেই সে সমস্ত নিদর্শন উল্লেখ করেছি। সাথে সাথে কুরআন,হাদীসের দলীল উল্লেখ করেছি। হাদীসের মতন লম্বা। তাই কিতাবের শেষে পরিশিষ্ট আকারে অনুবাদসহ উল্লেখ করে দিয়েছি। হাদীসের নাম্বারও দেওয়া হয়েছে। তাই এখানে শুধু হাদীসের নাম্বার উল্লেখ করে দিয়েছি। এরপর নিদর্শনের সাথে মির্জা সাহেবের তুলনা করে দেখিয়েছি।
কিন্তু আমার নিদর্শনে কোথাও মির্জা সাহেবের সাথে মিল পাইনি। বরং পরিস্কার তার উল্টো পেয়েছি। আল্লাহ এটাকে তাদের হেদায়াতের ওসীলা বানিয়ে দেন, এদোয়া করি।
প্রতিশ্রæত মাসীহের নাম, কুনিয়ত এবং উপাধী।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তিনি হলেন ঈসা বিন মরিয়ম।
পূর্বোক্ত আয়াত।

إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ
’’
’’ ১..তার নাম ঈসা আ.।

২..তার কুনিয়তও হল ঈসা বিন মরিয়ম।
৩. তার লকব বা উপাধী হল মাসীহ।
৪. কালিমাতুল্লাহ।
৫. রুহুল্লাহ।

প্রতিশ্রুত মাসীহের বংশের পূর্ণ পরিচয়।
৬. তার মাতার নাম ঈসা বিন মরিয়ম। তিনি আল্লাহর কুদরতে পিতা ছাড়া পৃথিবীতে এসেছেন।
৭. শুধু মা থেকে তিনি সৃষ্টি হয়েছেন। তার নানা ছিলেন ইমরান আ.।
৮. তার নানী ইমরানের স্ত্রী।
৯. তার মামা হলেন হারুন ।
১০. তার নানী এ শপৎ করেছিলেন যে, গর্ভ থেকে যে বাচ্চা পয়দা হবে, তাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের জন্য ওয়াকফ করে দিবেন।
১১. এরপর মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করল।
১২. এরপর তিনি ওজর পেশ করলেন যে, মেয়ে হওয়ার কারণে সে ওয়াকফ করার যোগ্য নয়।
১৩. মেয়ের নাম রাখা হল মরিয়ম।

ذَلِكَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ

أَنَّى يَكُونُ لِي غُلامٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ وَلَمْ أَكُ بَغِيًّا
وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِي
يَا أُخْتَ هَارُونَ
إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّراً

 

فَلَمَّا وَضَعَتْهَا

وَقَالَتْ رَبِّ إنّي وَضَعْتُها أنْثَى

وَإِنِّي سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ

ঈসা আ. এর মাতার কিছু অবস্থা।
১৪. শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তাকে হেফাজত করেছেন।
১৫. তার বেড়ে উঠা সাধারণ অভ্যাসের বিপরীতে একদিন এক বছরের সমান হত।
১৬. বায়তুল মুকাদ্দাসের প্রতিবেশিরা তার অভিভাকত্ব নিয়ে ঝগড়া করে। শেষে যাকারিয়া আ. অভিভাবক হোন।
১৭. মেহরাবের নিকট তার অবস্থান এবং অদৃশ্য থেকে খাবার আসা।
১৮. যাকারিয়ার প্রশ্ন এবং মরিয়মের উত্তর, এ খাবার আল্লাহর পক্ষ থেকে।
১৯. তার সাথে ফিরিশতাদের কথা বলা।
২০. আল্লাহর নিকট তিনি মাকবুল হওয়া এবং হায়েয থেকে পবিত্র হওয়া। সমস্ত দুনিয়ার মহিলাদের থেকে উত্তম হওয়া। وَإِنِّي أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
وَأَنْبَتَهَا نَبَاتاً حَسَناً

إِذْ يَخْتَصِمُونَ

 

كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًا
قَالَتْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ

وَإِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ

إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلَى نِسَاءِ الْعَالَمِينَ

২২. পূর্ব দিকের এক জনবিচ্ছিন্ন জায়গায় মরিয়মের চলে যাওয়া।
২৩. মানুষের আকৃতি ধারণ করে তার নিকট ফেরেশতা আসা। মরিয়মের আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া।
২৪. আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তান ঈসা আ. এর জন্মের সংবাদ।
২৫. মরিয়মের আশ্চর্য প্রকাশ! পুরুষের সান্নিধ্য ছাড়া সন্তান কিভাবে সম্ভব!
২৬. আল্লাহর পক্ষ থেকে ফিরিশতাদের সংবাদ প্রদান যে, আল্লাহর পক্ষে সবকিছু সম্ভব!
২৭. আল্লাহর হুকুমে কোন পুরুষের সান্নিধ্য ছাড়া মরিয়ম গর্ভবতি হওয়া।
২৮. সন্তান প্রসবের সময় খেজুর বৃক্ষের নিচে যাওয়া। إِذِ انْتَبَذَتْ مِنْ أَهْلِهَا مَكَانًا شَرْقِيًّا

فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا قَالَتْ إِنِّي أَعُوذُ بِالرَّحْمَنِ مِنْكَ إِنْ كُنْتَ تَقِيًّا

قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا
قَالَتْ أَنَّى يَكُونُ لِي غُلَامٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ

قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ

فَحَمَلَتْهُ

فَأَجَاءَهَا الْمَخَاضُ إِلَى جِذْعِ النَّخْلَةِ
সন্তান প্রসবের জায়গা এবং কিভাবে হল?
২৯. জনবসতি থেকে দুরে একটি বাগানে সন্তান প্রসব।
৩০.মরিয়ম আ. একটি খেজুর বৃক্ষে হেলান দেওয়া অবস্থথায় ছিলেন।
৩১. সন্তান প্রসবের পর লজ্জায় মরিয়ম পেরেশানী হওয়া। মানুষের অপবাদ দেওয়ার ভয় করা।
৩২. বৃক্ষের নিচ থেকে ফিরিশতার আওয়াজ। পেরেশান হয়োনা । আল্লাহ তোমাকে একজন সর্দার দান করেছেন।
৩৩. সন্তান ভূমিষ্টের পর মরিয়মের খবার তাজা খেজুর।
৩৪. ঈসা আ.কে কোলে নিয়ে সম্প্রদায়ের নিকট মরিয়মের আগমণ।
৩৫. সম্প্রদায় তাকে অপবাদ দেওয়া।
৩৬. মরিয়ম আ. অপবাদকে দুর করার জন্য ঈসা আ. এর কথা বলা। আমি নবী।
فَانْتَبَذَتْ بِهِ مَكَانًا قَصِيًّا

إِلَى جِذْعِ النَّخْلَةِ

قَالَتْ يَا لَيْتَنِي مِتُّ قَبْلَ هَذَا وَكُنْتُ نَسْيًا مَنْسِيًّا

فَنَادَاهَا مِنْ تَحْتِهَا أَلَّا تَحْزَنِي قَدْ جَعَلَ رَبُّكِ تَحْتَكِ سَرِيًّا

تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا

فَأَتَتْ بِهِ قَوْمَهَا تَحْمِلُهُ

قَالُوا يَا مَرْيَمُ لَقَدْ جِئْتِ شَيْئًا فَرِيًّا

قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا

ঈসা আঃ এর বৈশিষ্ট।
৩৭. আল্লাহর হুকুমে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারতে তিনি।
৩৮. কুষ্টরোগী এবং বধিরকে সুস্থ করা।
৩৯. মাটির পাখিকে আল্লাহর হুকুমে প্রাণ দেওয়া।
৪০. মানুষের খাবারের সময় বলে দিতেন, সে কি খাবার খাবে? মানুষের ঘরে লুকায়িত বস্তুর কথাও বলে দিতেন।
৪১. বনী ইসরাইলের কাফেরগণ ঈসা আ.কে হত্যার চেষ্টা। আল্লাহ তাকে হেফাজত করা।
৪২. কাফেরদের থেকে আল্লাহ তাকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া।                                                                                وَأُحْيِي الْمَوْتَى

وَأُبْرِئُ الأَكْمَهَ وَالأَبْرَصَ

                                            فَأَنْفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْراً بِإِذْنِ اللَّهِ

وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ

وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ

وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ

ঈসা আ. এর অবয়ব।
৪৩. দুনিয়া এবং আখেরাতে ……
৪৪. মধ্য আসমানে তার অবস্থান।

৪৫. গায়ের সুন্দর, চুল দুই কাধ বরাবর।
৪৬. চুলের রং কুচকুচে কালো।
৪৭. চুল কুকড়ানো হবে।

৪৮. সাহাবাদের মধ্যে তার চেহারার সাথে সাদৃশ্যতা ছিল উরওয়া বিন মাসউদ রা. এর।
৪৯. তার খাবার ছিল ‘লূবিয়া’ নামক প্রকার খাবার এবং সে সমস্ত বস্তু, যা আগুন দ্বারা পাকানো হয়না।
وَجِيهًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ

শেষ জামানায় তার দ্বিতীয়বার অবতরণ।
৫০. কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে আসমান থেকে অবতরণ।
৫১. অবতরণের সময়ে তার পরণে হলদে রঙের দুটি দুটি কাপড় পরিহিত থাকবে।
৫২. তার মাথায় লম্বা টুপি থাকবে।
৫৩. তার পরণে থাকবে লৌহ বর্ম। হাদীস নং, ৭৫

অবতরণের সময় তার কিছু অবস্থা।
৫৪. দুই হাত দুই ফিরিশতার কাধে রেখে অবতরণ করবেন। তার হাতে থাকবে একটি বর্শা।
৫৫. যে বর্শা দ্বারা তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন।
৫৬. যে কাফেরের নিকট তার শ^াস পৌছে যাবে, সে মারা যাবে।
৫৭. তার দৃষ্টি যতদুর যায়, শ^াস ততদুর যাবে। হাদীস নং, ৫, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ।

অবতরণের স্থান এবং অতরণের সময়ের বিস্তারিত আলোচনা।
৫৮. তিনি অবতরণ করবেন দিমাশকে।
৫৯. দিমাশকের জামে মসজিদে অবতরণ করবেন।
৬০. ফজরের নামাযের তিনি অবতরণ করবেন।
৬১. ইমাম মাহদী সহ মুসলমানদের একটি দল মসজিদে থাকবেন। যারা দাজ্জালের সাথে লড়াই করার জন্য একত্রিত হয়েছেন।
৬২. তাদের সংখ্যা হবে আটশত পুরুষ এবং চারশত মহিলা।
৬৩. ঈসা আ. এর অবতরণের সময় ঐ সমস্ত লোক নামাযের জন্য কাতার সোজা করতে থাকবে।
৬৪. তখন পর্যন্ত ঐ জামাতের ইমাম থাকবেন মাহদী।
৬৫. মাহদীকে ইমামতির জন্য ডাকা হবে। তিনি অস্বীকার করবেন।
৬৫. মাহদী আ. পিছনের দিকে সরতে থাকবেন। ঈসা আ. তার কাধে হাত রেখে তাকে ইমাম বনিয়ে দিবেন।
৬৬. এরপর মাহদী আ. নামায পড়াবেন।
৬৭. অবতরণের পর তিনি চল্লিশ বছর দুনিয়াতে অবস্থান করবেন।

৬৮. ঈসা আ. শুয়াইব আ. এর গোত্রে বিবাহ করবেন।
৬৯. অবতরণের পর তার সন্তান-সন্ততি হবে। হাদীস নং, ১৩, ৪৩.

অবতরণের পর তার কার্যাবলি।
৭০. তিনি মূর্তিপূজাকে তুলে দিবেন।
৭১. শুকর হত্যা করবেন। অর্থাৎ খৃষ্টবাদকে মিটিয়ে দিবেন।
৭২. তিনি নামায শেষ করে মসজিদের দরজা খুলাবেন। এর পিছনে দাজ্জাল থাকবে।
৭৩. দাজ্জাল এবং তার সঙ্গীদের সাথে জিহাদ করবেন।
৭৪. দাজ্জালকে হত্যা করবেন।
৭৫. দাজ্জালকে ফিলিস্তিনের বাবে লুদ নামক স্থানে হত্যা করবেন।
৭৬. এরপর সমস্ত দুনিয়া মুসলমান হয়ে যাবে।
৭৭. যে সমস্ত ইয়াহুদী বাকী থাকবে, তাদেরকে চিনে চিনে হত্যা করবে।
৭৮. কোন ইয়াহুদীকে কোন জিনিস মুক্তি দিতে পারবেনা।
৭৯. এমনকি গাছ এবং পাথর বলে উঠবে যে, আমার পিছনে ইয়াহুদী লুকিয়ে আছে।
৮০. তখন ইসলাম ছাড়া সকল ধর্ম মিটে যাবে।
৮১. জিহাদ মাওকুফ হয়ে যাবে। কেননা তখন দুনিয়াতে কাফের থাকবেনা।
৮২. জিযিয়া তথা ট্যাক্সের হুকুম বাকি থাকবেনা।
৮৩. মানুষের মাঝে সম্পদ এত পরিমাণ হবে যে, জাকাত গ্রহণের মত কেউ থাকবেনা।
৮৪. ঈসা আ. লোকদের ইমামতি করবেন।
৮৫. ঈসা আ. ‘নাজ্জুর রাওযা’ নামক স্থানে তাশরীফ নিয়ে যাবেন।
৮৬. হজ অথবা উমারা, অথবা উভয়টা করবেন।
৮৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওযায় তাশরীফ নিয়ে যাবেন।
৮৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের জবাব দিবন। উপস্তিত সকলেই শুনতে পারবে। হাদীস নং, ১. বুখারী, মুসলিম।

ঈসা আ. লোকদেরকে কোন মাযহাব অনুযায়ী চালাবেন? এবং তার যুগের বরকত সমূহ।
৮৯. তিনি নিজে কুরআন, হাদীসের উপর আমল করবেন এবং লোকদেরকে এর উপর চালাবেন।
৯০. আসমান, জমীনের সর্বপ্রকারের বরকত নাজিল হবে।
৯১. সবার অন্তর থেকে , হিংসা, বিদ্ধেষ এবং ক্রোধ উঠিয়ে দেওয়া হবে।
৯২. একেকটি আনার এত বড় হবে যে, একটি দলের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।
৯৩. দুগ্ধদানকারী একটি উট একটি দলের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।
৯৪. দুগ্ধদানকারী একটি বকরী একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।
৯৫. প্রত্যেক বিষাক্ত প্রাণীর বিষাক্ত দাত তুলে ফেলা হবে।
৯৬. এমনকি যদি কোন বালিকা সাপের মুখে হাত রাখে, তাহলেও তার কোন ক্ষতি হবেনা।
৯৭. একজন বালিকা বাঘকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। বাঘ তার কোন ক্ষতি করবেনা।
৯৮. ভেড়া, বকরীর সাথে বাঘ এমনভাবে থাকবে, যেমনটা কুকুর ভেড়ার পালের নিরাপত্তার জন্য থাকে।
৯৯. পুরো পৃথিবী মুসলমান দ্বারা এমনভাবে ভরে যাবে, যেমনভাবে পানি দ্বারা খাবারের প্লেট ভরে উঠে।
১০০. জাকাত আদায় করা ছেড়ে দেওয়া হবে।
১০২. এ বরকত সাত মাস পর্যন্ত বাকী থাকবে।

ঈসা আ. এর সময় লোকদের বিভিন্ন অবস্থা।
১০৩. রুম বাহিনী আ’মাক অথবা ওয়াবিক নামক স্থানে অবতরণ করবে।
১০৪. তাদের সাথে জিহাদ করার জন্য মদীনা থেকে একটি বাহিনী যাবে।
১০৫. সে বাহিনীতে ঐ যুগের উত্তম মানুষেরা থাকবে।
১০৬. জিহাদে লোকেরা তিনভাগে বিভক্ত হবে ।
১০৭. এক দল লোক পরাজিত হবে। এক দল শহীদ হবে। আরেক দল বিজয়ী হবে।
১০৮. কনষ্টান্টিনোপল বিজয় করবে।

১০৯. যখন তারা গণীমতের সম্পদ ভাগ করতে থাকবে, তখন দাজ্জাল বের হওয়ার খবর ভুল সংবাদ রটে যাবে।
১১০. ঐ সমস্ত লোক যখন শাম দেশে ফিরে আসবে, তখন দাজ্জাল বের হবে।
১১১. সে যুগে আরবে লোক সংখ্যা খুবই অল্প হবে। বেশিরভাগ মানুষ বায়তুল মাকদিসে থাকবে।
১১৩. মুসলমানরা দাজ্জাল থেকে বাঁচার জন্য উফুক পাহাড়ে সমবেত হবে।
১১৪. মুসলমানরা তখন কঠিন দারিদ্রতায় দিনাতিপাত করবে। এমনকি কিছু লোক তাদের কামানের তার জ¦ালিয়ে ভক্ষণ করবে।
১১৫. তখন হঠাৎ করে একজন ঘোষণা করবে যে, তোমাদের সাহায্যকারী চলে এসেছেন।
১১৬. লোকেরা আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলবে: এটাতো এমন মানুষের আওয়ায, যার পেট ভরা। হাদীস নং, ৭. মুসলিম।

গাযওয়ায়ে হিন্দের উল্লেখ
১১৭. মুসলমানদের একটি বাহিনী হিন্দুস্তানে জিহাদ করবে। হিন্দুস্থানের বাদশাহকে আটক করবে।
১১৮. সে বাহিনী আল্লাহর নিকট মাকবুল এবং ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে।
১১৯. যে সময় সে বাহিনী ফিরে আসবে, শামে এসে তারা ঈসা আ.কে পেয়ে যাবে।
১২০. বনী আব্বাস সে সময়ে গ্রামে থাকবে।
১২১. তারা কালো কাপড় পরে থাকবে।
১২২. তাদের অনুসারীরা খুরাসানের অধিবাসী হবে।
১২৩. এই লোকেরা ঈসা আ. এর উপর বিশ্বাস করার ব্যাপারে পুরো পৃথিবী থেকে ভিন্ন হবে।

ঈসা আ. এর যুগের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি
১২৪. ঈসা আ. এর অবতরণের পূর্বে শাম এবং ইরাকের মধ্যবর্তী জায়গায় দাজ্জাল বের হবে।
১২৫. তার কপালে কাফের লেখা থাকবে।
১২৬. তার বাম চোখ কানা থাকবে ।
১২৭. ডান চোখ খুব গোলাকৃতির হবে।
১২৮. সমস্ত দুনিয়া সে বিজয় করবে। তবে মক্কা, মদীনা তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ থাকবে।
১২৮. মক্কা, মদিনার প্রতিটি রাস্তায় ফিরিশতাদের পাহারা থাকবে। তারা দাজ্জালকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিবেনা।
১২৯. যখন মক্কা, মদীনা থেকে তাকে দুর করে দেওয় হবে, তখন সে সবুজ ঘাস বিশিষ্ট জমীনের শেষ প্রান্তে গিয়ে অবস্থান করবে।
১৩০. সে সময়ে পৃথিবীতে তিনটি ভূমিকম্প হবে। যা মুনাফিকদের মদীনা থেকে বের করে দিবে । আর সমস্ত মুনাফিক পুরুষ এবং মহিলা দাজ্জালের সঙ্গী হবে।
১৩১. তার সাথে বাহ্যিকভাবে জান্নাত এবং জাহান্নাম থাকবে, কিন্তু বাস্তবে তার জান্নাত হবে দোযখ এবং তার দোযখ হবে জান্নাত।
১৩২. সে যুগের একদিন এক বছরের সমান হবে। দ্বিতীয়দিন এক মাসের সমান হবে। ৩য় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। আর বাকী দিনগুলো অন্যান্ন সাধারণ দিনের মত হবে।
১৩৩. দাজ্জাল একটি গাধার উপর আরোহন করবে। যার দুই হাতের মধ্যখানের দুরত্ব হবে চল্লিশ হাত।
১৩৪. তার সাথে শয়তান থাকবে, যারা মানুষের সাথে কথা বলবে।
১৩৫. যখন সে বৃষ্টিকে বলবে, সাথে সাথে বৃষ্টি হবে।
১৩৬. যখন সে চাইবে, দুর্ভিক্ষ শুরু হবে।
১৩৭. সে জন্মান্ধ এবং কুষ্টরোগিকে ভালো করে দিবে।
১৩৮. জমীনের গুপ্ত ধনরাজিকে সে আদেশ করবে, ধনরাজি বের হয়ে যাবে।
১৩৯. দাজ্জাল একজন যুবককে ডাকবে, তাতে দরবারী দ্বারা দুই টুকরো করবে। এরপর তাকে ডাকবে। সে ভালো হয়ে হেসে হেসে সামনে চলে আসবে।
১৪০. তার সাথে সত্তর হাজার ইয়াহুদী তাদের সাথে জোড়া তলোয়ার এবং শিরস্ত্রাণ থাকবে।
১৪১. লোকেরা তিন দলে বিভক্ত হবে। একদল দাজ্জালের অনুসরণ করবে। আরেকদল নিজের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্থ থাকবে। আরেকদল ফুরাত নদীর তীরে তাদের সাথে যুদ্ধ করবে।
১৪২. মুসলমানরা শাম দেশের বস্তিতে একত্রিত হবে। এবং দাজ্জালের নিকট একটি প্রাথমিক বাহিনী পাঠাবে।
১৪৩. সে বাহিনীর একজন লোক লাল রঙের ঘোড়ার উপর আরোহণ করবে। পুরো বাহিনী শহীদ হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে একজনও ফিরে আসবেনা।
১৪৪. দাজ্জাল যখন ঈসা আ.কে দেখবে, তখন এমনভাবে গলতে শুরু করবে, যেমনভাবে লবণ পানিতে মিশে।
১৪৫. সে সময় পুরো ইয়াহুদীরা পরাজিত হবে।

ইয়াজুজ, মাজুজ বের হওয়া এবং তাদের কিছু অবস্থা
১৪৬. আল্লাহ তায়ালা ইয়াজুজ, মাজুজকে বের করে দিবেন। তারা পুরো পৃথিবীকে ঘিরে নিবে।
১৪৭. তখন ঈসা আ. সমস্ত মুসলমানকে তুর পাহাড়ের উপর একত্রিত করবেন।
১৪৮. ইয়াজুজ, মাজুজের কিছু প্রথম অংশ যখন তাবারিয়া সমুদ্র পার হবে, তখন পুরো দরিয়ার পানি খেয়ে শুকিয়ে ফেলবে!
১৪৯. সে সময় দুর্ভিক্ষের কারণে(অথবা দুনিয়ার প্রতি আগ্রহ কম হওয়ার কারণে) একটি ষাড় মানুষের নিকট একশত দিরহাম থেকে উত্তম হবে।
১৫০. এরপর ঈসা আ. ইয়াজুজ, মাজুজের জন্য বদদোয়া করবেন।
১৫১. আল্লাহ তায়ালা তাদের কন্ঠনালীতে একটি ফোঁড়া সৃষ্টি করে দিবেন, যার কারণে তারা সকলেই মরে যাবে।
১৫২. এরপর ঈসা আ. মুসলমানদের নিয়ে তুর পাহাড় থেকে অবতরণ করবেন।
১৫৩. কিন্তু পুরো জমীন ইয়াজুজ, মাজুজের মৃত দেহের দুর্গন্ধে ভরে বিষিয়ে উঠবে।
১৫৪. ঈসা আ. আল্লাহর নিকট দোয়া করবেন যাতে দুর্গন্ধ দুর হয়ে যায়।
১৫৫. আল্লাহ তায়ালা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। যা পুরো জমীনকে ধোয়ে মুছে দিবে।
১৫৬. এরপর জমীন আগের মত ফুলে, ফলে ভরে উঠবে। ঈসা আ. এর মৃত্যু। তার মৃত্যুর আগে পরে পৃথিবীর অবস্থা।
১৫৭. ঈসা আ. লোকদেরকে বলবেন: তোমরা আমার পরে একজন লোককে খলীফা বানাবে। যার নাম হবে মুকয়ী’দ।
১৫৮. এরপর তিনি মৃত্যুবরণ করবেন।
১৫৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রযার পাশে চতুর্থ কবর তার হবে।
১৬০. কাজ, কর্ম আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মুকয়ী’দকে খলীফা বানানো হবে। তিনিও মৃত্যু বরণ করবেন।
১৬১. এরপর মানুষের অন্তর থেকে কুরআন উঠিয়ে নেওয়া হবে।
১৬২. মুকয়ী’দের ইন্তেকালের তিন বছর পর এমনটা হবে।
১৬৩. এরপর কিয়ামতের অবস্থা এমন হবে যে, নয় মাসের গর্ভবতীও বুঝবেনা যে, কখন তার সন্তান প্রসব হয়েছে।
এরপর কিয়ামতের একেবারে নিকটবর্তী আলামত প্রকাশ পাবে।

প্রতিশ্রুত মাসীহের বিস্তারিত জীবনী এবং পুরো জীবনের কারগুজারী, তার বাসস্থান এবং দাফনের জায়গার অবস্থান যেমনভাবে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে কুরআন এবং হাদীসে, সেগুলো যখন কেনি জ্ঞানী লোকের সামনে আসবে, তখন এমনিতেই এই প্রশ্ন উঁকি মারবে যে, লাখো রাসূলদের মধ্যে কেন শুধু ঈসা আ. এর বি বৈশিষ্ট, যার কারণে আলোচনা কুরআন এবং হাধেিস এতটা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে? অন্যান্ন নবীদের এর দশভাগের এক ভাগ আলোচনা করা হয়নি। এনমকি দু জাহানের সর্দার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এতটা বিস্তারিতভাবে কুরআন এবং হাদীসে আসেনি। অথচ সমস্ত নবীদের উপর তার শ্রেষ্টত্ব সুস্পষ্ট। এর থেকে বুঝা যায় যে, ঈসা আ. এর এমন আলোচনার ব্যাপারে নিশ্চয় কোন কারণ রয়েছে।
এরপর যখন সামান্য চিন্তা করবে, তখন স্পষ্ট প্রতিভাত হবে যে, এ বিশেষ গুরুত্বও আল্লাহর বিশেষ কাজের ফলাফল, যা তিনি আদিকাল থেকে উম্মী উম্মতের ভাগ্যে রেখেছেন। এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানের বহিঃপ্রকাশ। যিনি উম্মতের জন্য পথ এতটা বাতলিয়ে দিয়েছেন যে, রাত একং দিনের ন্যায়। পথের কদমে কদমে এতটা নিদর্শন বলে দিয়েছেন যে, পথিকের কখনো সন্দেহ হওয়ার কোন অবকাশ নেই।
অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত অনুসরণীয় যত মানুষ সৃষ্টি হবে, তাদের অধিকাংশের নাম উল্লেখ করে তাদের পুরো অবস্থা সম্পর্কে উম্মতকে অবগত করেছেন। যখন এ সমস্ত লোক আত্বপ্রকাশ করবেন, তখন উম্মত তাদের কথা একং কাজকে নিজেদের আদর্শ বানাবে।
যেহেতু ঈসা আ. নবী, এজন্য তার আলোচনা আলাদা গুরুত্ব দিয়ে করা হয়েছে। কেননা নবীদের শান সমস্ত দুনিয়া থেকে বেশি। তাদের সামান্য সম্মানহানি করা পরিস্কার কুফরী। দুনিয়ার সমস্ত বুযুর্গদের ব্যাপারে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করলে সে ঈমান হারানোর ভয় নেই। যদিও বরকত থেকে মাহরুম হবে। কিন্তু যদি প্রতিশ্রæত মাসীহের ব্যাপারে কোর ধরণের সন্দেহ থাকে, আর উম্মত তাকে না চিনে, তাহলে কুফর এবং ইসলামের মাসআলা চলে আসবে। ঈমান হারানোর সম্ভবনা থাকবে। এ সম্ভাবনা রয়েছে, উম্মত তাকে না চিনার কারণে তার সম্মানহানি করে ঈমান থেকে হাত ধুয়ে ফেলবে, এরপর দাজ্জাল এবং ইয়াজুজ, মাজুজের ফিতনায় পতিত হবে।
এর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য জরুরী ছিল যে, প্রতিশ্রæত মাসীহের পরিচয় এমন স্পষ্ট করে দিবেন যে, যাতে তাকে পরিচয় করতে কোন ধরণের স্পষ্টতা না থাকে। একটি কার্ডে যখন দু, তিনটি নিশানা লাগিয়ে দেওয়া হয়, তখন পূর্ব, পশ্চিমে যেখানেই হোক, প্রেরকের নিকট পৌছে যাবে। অন্য কারো নিকট পৌছানোর সম্ভাবনা নেই। অথবা কেউ ধোকা দিয়ে বলতে পারবেনা যে, টিচিটি আমার নিকট এসেছে।
কিন্তু আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু শুধু এতটুকু নিশানা বর্ণনা যথেষ্ট মনে করেননি, বরং প্রতিশ্রæত মাসীহের নামের সাথে তার সমস্ত জীবনি, তার গঠন আকৃতি, গায়ের রং, পোষাক, এবং ইলমী অবস্থানও বর্ণনা করেছেন। তার অবতরণের জায়গা, কোথায় অবস্থান করবেন? কোথায় দাফন হবেন? সব কিছ’ স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। আরো সামনে বেড়ে তার বংশ নামা, তার অনুসারীদের অবস্থাও বিস্তারিত বর্ণনা করেছন।

কাদিয়ানীদের কিছু প্রশ্ন
যারা ভুলে অথবা না বুঝে কাদিয়ানীদের পাতানো জালে পা দিয়েছেন, আমি তাদেরকে আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোহাই দিয়ে বিনয়ের সাথে বলছি, এটি হল দ্বীন এবং আখেরাতের বিষয়। প্রত্যেক লোক তার কবরে একা যেতে হবে এবং দিতে হবে। কোন দল সেখানে কাজে আসবেনা। আল্লাহর ওয়াস্তে হুশে আসেন। আল্লাহ প্রদত্ত আকলকে কাজে লাগিয়ে বুঝেন যে, মির্জা গোলাম আহমদের মধ্যে কি সে সমস্ত গুনাহবলি ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাতানো প্রতিশ্রুত মাসীহের গুনাবলি কি মির্জা গোলাম আহমদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল।
মির্জার নাম গোলাম আহমদ নাকি ঈসা?
তার মাতার নাম চেরাগ বিবি, নাকি মরিয়ম?
তার পিতা কি গোলাম মরতুজা, নাকি তিনি বাবা ছাড়া পুথিবীতে জন্মলাভ করেছেন?
মির্জা সাহেবের জন্ম কাদিয়ানে হয়েছে নাকি দিমাশকে? কাদিয়ান কি দিমাশকের কোন জেলা?
তার দাফন কাদিয়ানে হয়েছে? নাকি মদীনায়?
তার নানা কি ইমরান? মামা কি হারুণ? নানী কি হান্না?
মির্জা সাহেবের মাতার তরবিয়ত কি মরিয়মের মত হয়েছে?
তার বেড়ে উঠা কি এমনভাবে হয়েছে যে, একদিনে এক বছরের মত হয়েছে? তার নিকট কি গায়েব থেকে খাবার এসেছিল? ফিরিশতা কি তার সাথে কথা বলেছিলেন?
মির্জা সাহেবের জন্ম কি জঙ্গলে খেজুর গাছের নিচে হয়েছে?
তার মা কি জন্মের পর খেজুর পেড়ে খাইয়েছিলেন?
মির্জা সাহেব কি কোন মৃত মানুষকে জীবিত করেছেন?
তিনি কি মাটির তৈরী চড়–ই পাখিতে প্রাণ দিতে পেরেছিলেন?
তিনি কি আসামানে উঠে তারপর আবার অবতরণ করেছেন?
তার নিঃশ্বাসে কি কাফেররা মরে যেত?
মির্জা সাহেবের নিঃশ্বাস কি এতদুর যেত, যতদুর তার চোখ যেত?
তিনি কি দামেশকের জামে মসজিদে গিয়েছিলেন?
তার বিবাহ কি শুয়াইব আ. এর গোত্রের সাথে হয়েছে? মির্জা সাহেব কি দুনিয়া থেকে মুর্তিপূজা এবং খৃষ্টবাদকে উঠিয়ে দিয়েছেন?
তার যুগে কি সেই দাজ্জাল বের হয়েছে, তার গুনাবলি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে?
মির্জা সাহেব কি দাজ্জালকে যুদ্ধ করে হত্যা করেছেন? তিনি এবং তার জামাত কি ইয়াহুদীদের হত্যা করেছেন? তার যুগে কি কেউ পাথর এবং গাছকে কথা বলতে দেখেছে?
তিনি কি সম্পদকে এত ব্যাপক করে দিয়েছিলেন যে, যাকাত গ্রহিতা কেউ নেই? আসমানী বরকত কি এনভাবে প্রকাশ পেয়েছে যে, একটি আনার একটি দলের জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছে? একটি কবরীর দুধ একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছে?
তিনি কি মানুষের অন্তরে একতা সৃষ্টি করেছেন? বিরোধিতা এবং মুনাফিকীকে উঠিয়ে দিেেছন?
হিংসা, বিদ্ধেষ লোকদের অন্তর থেকে উঠে গেছে নাকি বৃদ্ধি পেয়েছে?
সাপ, বিচ্ছুদের বিষ কি এখন নেই?
মির্জা সাহেব কি হজ অথবা উমারা, বা উভয়টা করার তাওফীক হয়েছে? তিনি কি মুসলমানদের নিয়ে কখনো তুর পর্বতে আরোহণ করেছেন?
তার যুগে কি ইয়াজুজ, মাজুজ বের হয়েছে? তার দুর্গন্ধে কি পুরো পৃথিবী বিষিয়ে উঠেছে/ মির্জা সাহেবের দোয়ায় কি আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হয়ে সবকিছু পরিস্কার করে দিয়েছে?
মির্জা সাহেব কি মুকয়ীদ নামের কোন ব্যক্তিকে খলীফা বানিয়েছেন?
মির্জা সাহেব কি মদীনায় সমাহিত হয়েছেন?

মোটকথা হল, প্রতিশ্রুত মাসীহের সমস্ত অবস্থা নকশা আকারে কুরআন এবং হাদীসের হাওয়ালায় আমি পেশ করেছি। চোখ খুলে একেকটি নিদর্শন মির্জা সাহেবের মঝে অনুসন্ধান করেন। ভালো করে অনুভব করেন যে, আপনি আল্লাহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাতলানো নিদর্শনাবলি কার উপর সোপর্দ করছেন? যদি আপনি গোলাম আহমদ দ্বারা ঈসা, চেরাগ বিবি দ্বারা মরিয়ম, দিমাশক আর মদীনা দ্বারা কাদিয়ান, খৃষ্টবাদকে মিটিয়ে ফেলার দ্বারা তাদের উন্নতি উদ্দেশ্য নেন, তাহলে কুরআন এবং হাদীসে এমন হাস্যকর বিকৃতি কি তোমার আকল কবুল করবে?দুনিয়ার কোন মানুষ কি এর উপর সন্তুষ্ট হবে? যদি বিকৃতি এবং ব্যাখ্যার এমন গরম বাজার চালু করা হয়, তাহলে কি দুনিয়ার কোন কাজ ঠিক থাকবে?
আমরা যখন জানি যে, মির্জা সাহেব অথবা তার কোন উম্মত দিমাশকের কোন লোকের চিটি এই বলে গ্রহণ করে যে, আসমানে কাদিয়ান এলাকার নাম হল দিমাশক, আমার নাম ঈসা এবং চেরাগ বিবির নাম মরিয়ম! তখন একটু ভেবে দেখ যে, এমন কথা পুরো পৃথিবী গ্রহণ করবে কি না?

কিন্তু স্বরণ রাখা ভালো যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সে ওয়ারিছ এখনো পৃথিবীতে রয়েছে, যারা রাসূলের আদর্শে অবিচল। তারা রাসূলের আদর্শের জন্য নিজের জান কুরবানী করাকে উভয় জাহানের সফলতা মনে করে।
এজন্য আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করে বলি যে, কাদিয়ানির অনুসারীরা যতই প্রচারণা করুক, কিন্তু লিখিত এমন ডকুমেন্ট মিলে যাবে, যা আজ থেকে তেরশত বছর পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লিখে গেছেন এবং আবু হুরায়রা রা. এর মাধ্যমে সালাম পাঠিয়েছেন।
আল্লাহর শপৎ, মির্যা সাহেবের সাথে আমাদের কোন শত্রæতা নেই। কে চাইবে যে ঘরে আসা মাসীহকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে! বিশেষত এমন সময়ে, যখন যখন মাসীহের বড্ড প্রয়োজন। কিন্তু কথা হল, আমরা মাসীহ মানার জন্য প্রস্তুত! কিন্তু মাসীহের কিছু নিদর্শনতো দেখাতে হবে!
মুসলমান, তোমার ধর্মীয় চেতনাবোধ এবঙ বিবেকের কি হল যে, তোমাকে চাক্ষুসভাবে বাস্তবতা বহির্ভূত জিনিসের দিকে আহবান করা হচ্ছে আর তুমি সাড়া দিচ্ছো!
আল্লাহরওয়াস্তে হুশে ফিরে আসুন এবং এ ফিতনার উপর দৃষ্টি দেন। যদি মির্যা সাহেবের কথা এবং ব্যাখ্যাবলি মেনে নেওয়া হয়ে হয়, তাহলে সারা দুনিয়ার নেযাম পাল্টে যাবে। যদি কোন ব্যক্তি যায়দের ঘরে দাড়িয়ে বলে: ঘরটি আমার। এরপর মির্যা সাহেবের মত বলে: আসমানে আমার নাম যায়দ লিখা হয়েছে! মালিকের জায়গায় যত সরকারী এবং অন্যান্ন নিদর্শনাবলি রয়েছে, সবগুলোর মালিক ব্যাখ্যা সাপেক্ষে আমি! আপনার নিকট এ বক্তব্যের কি জবাব? এমনভাবে যদি কোন পুরুষ মির্যা সাহেবের মত ব্যাখ্যা করে অবিবাহিত কোন মহিলাকে নিজের স্ত্রী দাবি করে! অথবা কোন মহিলা কোন পুরুষকে নিজের স্বামী বলে দাবী করে! অথবা কোন চাকুরজীবি অন্য আরেকজনের বেতন উসূল করে। অথচা ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যা করে তার দোষ অন্য আরেকজন গরীব লোকের উপর এই বলে চাপিয়ে দেয় যে, আসমানের দফতরে ঐ গরীর লোকের নাম হল তার নাম! তাহলে আপনি বলুন, মির্যা সাহেবের এমন ব্যাখ্যা এবং দর্শনের পর কি দুনিয়া ঠিক মত চলবে?
মোটকথা হল: দুনিয়ার সমস্ত মুয়ামালা এবং ক্রয়- বিক্রয়, বিবাহ, তালাক এবং শাস্তিসহ অন্য বিধানাবলিতে যখন নাম, বাড়ী, আবাস্থলসহ আরো দু একটি গুণ উল্লেখ করা হয়, তখন সে ব্যক্তি এমন দৃঢ়ভাবে নির্ধারণ হয় যেম তাতে কোন ধরণের সন্দেহ থাকেনা এবং অন্য কেহ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকেনা। তার কথা এবং কাজকে তার দিকেই সম্মন্ধ করা হয়। সেই তার মালিকানাধীন সম্পদ ভোগ করে। সেখানে কোন ধরণের ব্যাখ্যা এবং দর্শন চলেনা!
রাগের কথা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার দু চারটি নয়, দশ বিশটি নয়, একশত আশিটি নিদর্শন বলে গেছেন, উম্মত কি এখনো সেই প্রতিশ্রুত মাসীহকে নির্ধারণ করতে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং দর্শনের মুখাপেক্ষী?

মূল: মুফতীয়ে  আযম মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহি.।

অনুবাদ: রেজাউল কারীম আবরার

 

 

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *