জামায়াতে ইসলামীর চেয়ারে নামাজ আদায়

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বৃহৎ ইসলামিক সংগঠন। বলতে গেলে বাংলাদেশের তৃণমূলে ছড়িয়ে আছে যে কয়েকটি ইসলামী সংগঠন, তাদের মাঝে অন্যতম হল জামায়াতে ইসলামী।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, মাসলাক যার যার জায়গায় রেখে যে ইস্যূ নিয়ে কারও মাঝে কোন মতবিরোধ নেই, সে সকল ক্ষেত্রে একসাথে কাজ করা যেতে পারে।
গতকালের ভাইরাল নামাজ নিয়ে আমরা এজন্যই আলোচনা করেছি যে, যেহেতু নামাজ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত, সেজন্য দেশের বৃহত ইসলামিক সংগঠন থেকে ভুল কোন মেসেজ না যাক।
বিষয়টি যেহেতু ইলমি পর্যালোচনা, এজন্য কিছু কিছু ভাই দেখছি একটি হাদিস পেশ করে গতকালের আলোচিত নামাজের পক্ষে দলিল দিচ্ছেন। আমি খুব সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করছি সে হাদিস নিয়ে।
আমর বিন উসমান তিনি তার পিতার সূত্রে দাদা থেকে বর্ণনা করেন:
أنهم كانوا مع النبي صلى الله عليه وسلم في مسير فانتهوا إلى مضيق وحضرت الصلاة فمطروا السماء من فوقهم والبلة من أسفل منهم فأذن رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو على راحلته وأقام أو أقام فتقدم على راحلته فصلى بهم يومئ إيماء يجعل السجود أخفض من الركوع
এক সফরে তারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলেন। একটি সংকীর্ণ স্থান গিয়ে পৌঁছালে নামাযের ওয়াক্ত হল। উপর থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল এবং নীচে ছিল কাদা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহন থেকে আযান দিলেন এবং ইক্বামাত বললেন অথবা শুধু ইক্বামাত দিলেন। তিনি আপন বাহনসহ সামনে আগালেন এবং তাদের নামাজ পড়ালেন। তিনি ইশারায় রুকু করলেন এবং রুকুর তুলনায় সিজদায় বেশি ঝুকালেন।
উনারা এ হাদিসের রেফারেন্স দিয়েছেন দেখলাম তিরমিজি এবং বায়হাকির! বায়হাকির রেফারেন্স দেওয়া এ হাদিস বর্ণনা করার পর ইমাম বায়হাকি বলেন :
وَفِى إِسْنَادِهِ ضَعْفٌ ، وَلَمْ يَثْبُتُ مِنْ عَدَالَةِ بَعْضِ رُوَاتِهِ مَا يُوجِبُ قَبُولَ خَبْرِهِ وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ فِى شِدَّةِ الْخَوْفِ.
অর্থাৎ এ হাদিসের সনদে দুর্বলতা রয়েছে। সনদের কিছু বর্ণনাকারীর আদালত প্রমাণিত না হওয়ার কারণে এ হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। অথবা হতে পারে অত্যাধিক ভয় থাকার কারণে এমনটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনে নামাজ পড়েছেন।. আস সুনানুল কুবরা: হাদিস নং ২৩২৪।
ইমাম ইবনে হাজার, ইমাম নববি সনদকে ‘জায়্যিদ’ বলার কারণে সেটা শক্তভাবে খণ্ডন করেছেন শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানি রাহি.। তিনি বলেন:
ضعيف . أخرجه الترمذي (2/79/411) – والسياق له – ، والدارقطني (1/380 381) – والرواية الأخرى له مع الزيادة – ، والبيهقي (2/7) ، وأحمد (4/173 -) من طريق عُمَر بْن ميمون بن الرَّمَّاحِ الْبَلْخِيّ [ عَنْ ] كَثِيرِ بْنِ زِيَادٍ عَنْ عَمْرِو بْنِ عُثْمَانَ ابْنِ يَعْلَى بْنِ مُرَّةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ : أَنَّهُمْ كانوا … الحديث . وضعفه الترمذي بقوله :” هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ “
وصرح بذلك البيهقي فقال : “وفي إسناده ضعف ، ولم يثبت من عدالة بعض رواته ما يوجب قبول خبره”.
قلت : ويشير – فيما أظن – إلى عثمان بن يعلى ، فإنه لم يوثقه أحد ، حتى ولا ابن حبان ، ولم يذكروا راوياً عنه غير ابنه هذا ، ولهذا قال فيه ابن القطان : “مجهول” . وتبعه الحافظ في “التقريب” . وفي “الجرح والتعديل” (3/1/174) : “عثمان أبو عمرو المؤذن كوفي روى عن … (بياض) سمعت أبي يقول :هومجهول” .ولا أستبعد أن يكون هو هذا .
ثم إنه يحتمل أن يكون البيهقي أشار إلى عمر بن عثمان أيضاً ، فإنه ليس
بالمشهور ، ولم يوثقه غير ابن حبان (7/220) ، ولم يرو عنه غير اثنين أحدهما :كثير بن زياد هذا ، ويكنى بـ (أبي سهل البرماني) ، والآخر : خلف بن مهران ،فقال ابن القطان :
“لا يعرف حاله ” . وأشار الذهبي إلى تضعيف توثيق ابن حبان بقوله :
“وثِّق” ! وقال الحافظ : “مستور” . على هذا فمن التساهل البين ، أو الخطأ الظاهر ، تقوية مثل هذا الإسناد من بعضهم . فقال النووي في “المجموع” (3/106) :
“وإسناده جيد” !
ومن الغريب أن الحافظ سكت عن هذه التقوية في “الفتح” (2/79) ، مع أنه ببَّن علته في “التلخيص” (1/212) فقال : “وقال عبد الحق : إسناده صحيح (!) ، والنووي : إسناده حسن . وضعفه البيتهقي وابن العربي وابن القطان ، لحال عمر بن عثمان “.
فأقول : ومع أن هذا الإعلال قوي وارد ، إلا أن إعلاله بحال أبيه عثمان أولى ،ا تقدم بيانه : أن عمر بن عثمان مستور ،وأباه عثمان مجهول . فتنبه .ثم تكشفت لي علة أخرى : وهي الاختلاف في إسناده ، فأخرجه البزار في
“مسنده” (1/330/684) ، وأبو نعيم في “معرفة الصحابة” (2/90/2) من طريق مهران بن أبي عمر : ثنا علي بن عبدالأعلى [عن أبيه عبدالأعلى ] (1) عن أبي سهل الأسدي (وفي “المعرفة” : الأزدي) عن عمرو بن دينار : أنه حدثه عمرو بن
يعلى قال : حضرت الصلاة صلاة المكتوبة ، ونحن مع رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فتقدم بنا ، ثم أمَّنَا ، فصلينا على ركابنا .
وهذا اختلاف شديد ، فالمتن مختصر جداً ، والسند مختلف عن الأول اختلافاً ظاهراً لا يحتاج إلى بيان ، ولست أدري ممن هو ؟ ولكنه يدور بين هؤلاء الثلاثة : – مهران بن أبي عمر .
2 – علي بن عبدالأعلى .
3 – أبوه عبدالأعلى .
فالأول قال فيه الذهبي في “المغني” :”وثقه ابن معين ، وقال البخاري : فِي حَدِيثِه اضطراب “. ولذلك قال في”الكاشف” :”فيه لين” . وقال الحافظ :
“صدوق سيئ الحفظ” .والثاني : قال في “المغني” :
“صويلح ، قال أبو حاتم : ليس بقوي” . ونحوه في “الكاشف” . وقال الحافظ : “صدوق ربما وهم “.
والثالث : عبدالأعلى – وهو ابن عامر الثعلبي – . قال في “المغني” :
“ضعفه أحمد وأبو زرعة ” . وقال في “الكاشف” :
“ليِّن ، ضعفه احمد ” . وقال الحافظ :”صدوق يهم”.
ومن تراجم هؤلاء الثلاثة – على إيجازها – يتبين أن ثالثهم ألينهم ، فيكون هو الأولى بتعصيب الاختلاف به ، وذلك إن كان ذكره في الإسناد محفوظاً ، فقد
علمت عدم وروده في بعض المصادر ، وإلا فالعلة من الأول : مهران بن أبي عمر ، فهو
بها أولى من شيخه علي بن عبدالأعلى ، وبخاصة أنه قد وصف البخاري حديثه بالاضطراب – كما تقدم – ، ولا أستبعد أن يكون هذا الحديث مما عناه . واله أعلم .
وإذا عرفت ضعف هذا الحديث ، وعدم ثبوته ، تبين وهاء استدلال النووي به على صحة أذان القاعد ، وأوهى منه الاستدلال به على أن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ باشر الأذان بنفسه ، فإن هذا يبطله الأخرى – كما هو ظاهر لا يخفى – .
লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে বলে অনুবাদ করলাম না। মূলকথা হলো, নাসির উদ্দিন আলবানি রাহি. লম্বা পর্যালোচনা করে দেখিয়েছেন এ বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়।.সিলসিলাতুল আহাদিসিস জায়িফাহ: হাদিস নং ৬৪৩৪।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আবদিল বার মালেকি রাহি. এর বক্তব্য হলো মৌলিক। তিনি বলেন:
وأما إذا كان الطين والوحل والماء الكثير قد أحاط بالمسجون أو المسافر الذي لا يرجو الانفكاك منه ولا الخروج منه قبل خروج الوقت وكان ماء معينا غرقا وطينا قبيحا وحلا فجائز لمن كان في هذه الحال أن يصلي بالإيماء على ما جاء في ذلك عن العلماء من الصحابة والتابعين
অর্থাৎ যদি অধিক কাদা কিংবা মাত্রারিতিক্ত পানি যদি আটকে পড়াদের চারপাশে থাকে, অথবা মুসাফির সে জায়গা থেকে বের হতে না পারে, অথবা ওয়াক্ত থাকতে থাকতে এ জায়গা থেকে বের হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, এ ধরণের বেশি পানি কিংবা প্রচণ্ড কাদায় বাহনে ইশারা করে নামাজ পড়া জায়েজ হওয়ার কথা সাহাবি এবং তাবেয়িন থেকে বর্ণিত হয়েছে।.. আত তামহিদ: ২৩/৬৯।
প্রশ্ন হলো, সোহরাওয়ার্দিতে কে সিরাত মাহফিলে আগত শ্রোতাদের কেউ আটকে রেখেছিল?
এ জায়গায় থেকে ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে কী বের হওয়া সম্ভব ছিল না?
বাহনের হাদিস দিয়ে চেয়ারে নামাজ পড়ার ইসতেদলাল করা যাবে?
ইমাম জহির উদ্দিন ওয়ালওয়ালিজি রাহি. এ মাসআলা আলোচনা করতে গিয়ে বলেন:
رجل كان في موضع طين ورذعة فأن كانت الارض ندية ومبتلية ولم تكن طينا يغيب وجهه صلى هناك . وان كان طينا ورزعة لا يصلى ثمة فبعد ذلك ينظر إن كان يجد موضعا أخر لا طين فيه يذهب إلى ذلك الموضع ويصلي”
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি কাদামাটি তে থাকে, মাটি যদি এতটা ভেজা না হয় যে, সিজদা করলে চেহারা কাদায় হারিয়ে যাবে, তাহলে সে এভাবে নামাজ পড়বে। আর যদি কাদার কারণে কোনভাবে সিজদা করতে না পারে, দেখতে হবে আশেপাশে কোন জায়গা আছে কি না, সেখানে কাদা নেই। যদি জায়গায় পেয়ে যায়, তাহলে সেখানে গিয়ে নামাজ আদায় করবে।.. ফতোয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ: ১/১০৫।
গতকাল সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের আশেপাশে অসংখ্য জায়গা ছিল শুকনো। ছিল অসংখ্য মসজিদ। আয়োজকরা একটু আগে ছেড়ে দিলে এ ধরণের পরিস্থিতি তৈরী হত না।
জামাত যেহেতু দেশের বৃহৎ সংগঠন, এজন্য শরিয়ার মাসআলার ক্ষেত্রে খামখেয়ালির কারণে যেন কোন বিতর্ক তৈরী না হয়, এ ব্যাপারে আশা করি সামনে তারা সতর্ক থাকবেন। আল্লাহ সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *