রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এমনকি ঋতুবতি মহিলাদেরও ঈদগাহে যাওয়ার কথা বলেছেন৷
ইমাম বুখারি রাহি. এ সংক্রান্ত একটি অধ্যায় প্রতিষ্ঠা করেছেন বুখারি শরিফে৷ প্রশ্ন হলো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন ঋতুবতি মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়ার কথা বললেন? হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহি. বলেন,
لِأَنَّ مِنْ جُمْلَةِ مَنْ أُمِرَ بِذَلِكَ مَنْ لَيْسَ بِمُكَلَّفٍ فَظَهَرَ أَنَّ الْقَصْدَ مِنْهُ إِظْهَارُ شِعَارِ الْإِسْلَامِ بِالْمُبَالَغَةِ فِي الِاجْتِمَاعِ وَلِتَعُمَّ الْجَمِيعَ الْبَرَكَةُ
অর্থাৎ যারা ঈদের নামাজের অাদিষ্ট নয়, তাদেরও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, এর দ্বারা স্পষ্ট যে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বেশি লোকের উপস্থিতি দ্বারা ইসলামের শেআর প্রকাশ করা এবং সকলে যেন বরকতস্নাত হয়৷ (ফাতহুল বারি: ২/৪৭০)
ইবনে হাজার আসকালানি রাহি. এর আলোচনা থেকে দুটি বিষয় আমাদের সামনে এসেছে৷ প্রথমত, মদিনায় তখন মুসলামানদের সংখ্যা ছিল কম৷ ইয়াহূদিরা বিভিন্নভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং প্রোপাগান্ডা চালাত৷ মুসলামানদের সংখাধিক্যতা বুঝানোর জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋতুবতি মহিলাদেরও ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷
দ্বিতীয়ত, ঈদগাহে উপস্থিত থাকতেন স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম৷ তাঁর সাথে একটি মুহূর্তের সংসর্গ সবারই জন্য কল্যাণের কারণ৷ এজন্য তিনি মহিলাদেরও ঈদগাহে মহিলাদের এমনকি ঋতুবতি মহিলাদেরও উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর উভয় কারণের কোন কারণ বিদ্যমান ছিল না, এজন্য আমরা দেখি অনেক ফুকাহায়ে কেরাম মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়ার কথা বলেননি৷
ইমাম শাফেয়ি রাহি. ইন্তেকাল করেছেন ২০৪ হিজরিতে৷ তিনি বলেন,
وَلَا أُرَخِّصُ لِأَحَدٍ فِي تَرْكِ حُضُورِ الْعِيدَيْنِ مِمَّنْ تَلْزَمُهُ الْجُمُعَةُ، وَأَحَبُّ إلَيَّ أَنْ يُصَلَّى الْعِيدَانِ وَالْكُسُوفُ بِالْبَادِيَةِ الَّتِي لَا جُمُعَةَ فِيهَا، وَتُصَلِّيهَا الْمَرْأَةُ فِي بَيْتِهَا،
অর্থাৎ যাদের উপর জুমআ ওয়াজিব, তাদের কারও জন্য ঈদের নামাজ পরিত্যাগ করার সুযোগ নেই৷ তবে যে গ্রামে জুমআ নেই, সেখানে ঈদের নামাজ এবং সালাতুল কুসুফ পড়াকে আমি পছন্দ করি৷ আর ঈদের নামাজ মহিলারা তাদের ঘরে পড়বে৷ (কিতাবুল উম্ম: ১/২৭৪)
ইমাম কাস্তাল্লানি রাহি. (৯২৩ হি.) বুখারি শরিফের বিখ্যাত ভাষ্যকার৷ তিনি বলেন,
واستحباب خروجهن مطلقًا إنما كان في ذلك الزمن حيث كان الأمن من فسادهن.
نعم، يستحب حضور العجائز، وغير ذوات الهيئات بإذن أزواجهن، وعليه حمل حديث الباب، وليلبسن ثياب الخدمة، ويتنظفن بالماء من غير تطييب ولا زينة، إذ يكره لهن ذلك. أما ذوات الهيئات والجمال فيكره لهن الحضور، وليصلّين العيد في بيوتهن.
অর্থাৎ ব্যাপকভাবে সে যুগে মহিলারা ঈদগাহে যাওয়া মুস্তাহাব ছিল, কারণ সে যুগ ফিতনামুক্ত ছিল৷ হঁা, বর্তমানযুগে বয়োবৃদ্ধ এবং সুন্দর নন এমন মহিলারা তাদের স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে ঈদগাহে যেতে পারবে৷ আর এ হাদিসটি তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷ তারা ঈদগাহে যেতে স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং সাজসজ্জা করবে না৷ এগুলো করে যাওয়া মাকরুহ৷ সুন্দরি মহিলাদের জন্য ঈগাহে যাওয়া মাকরুহ৷ তারা ঈদের নামাজ তাদের ঘরে পড়বে৷ (ইরশাদুস সারি: ২/২২০)
ইমাম ইবনে রাজাব হাম্বলি রাহি. (৭৯৫ হি.) বলেন,
الثالث: أنه مكروه بعد النبي – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -، وهو قول النخعي ويحيى الأنصاري والثوري وابن المبارك.
وأحمد –في رواية حرب -، قال: لايعجبني في زماننا؛ لانه فتنةٌ واستدل هؤلاء بأن الحال تغير بعد النَّبيّ – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -.
وقد قالت عائشة: لو أدرك رسول الله – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – ما أحدث النساء بعده لمنعهن المساجد، وقد سبق
অর্থাৎ মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া সংক্রান্ত তৃতীয় মত হলো, ঈদের নামাজের জন্য মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া মাকরুহ৷ এটা হলো ইবরাহিম নাখায়ি, ইয়াহইয়া আনসারি, সুফিয়ান ছাওরি, আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক, হারবের রেওয়ায়াত অনুযায়ী ইমাম আহমদের মত৷ তাদের দলিল হলো, বর্তমান যুগ হলো ফিতনার যুগ৷ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে৷ আয়েশা রাযি. বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি মহিলাদের এ অবস্থা দেখতেন, তাহলে তিনি মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন৷ (ফাতহুল বারি, ইবনে রাজাব: ২/৩৯)
ইবরাহিম নাখাই ইন্তেকাল করেছেন ৯৪ হিজরিতে, সুফিয়ান ছাওরি ইন্তেকাল করেছেন ১৬১ হিজরিতে, ইবনে মুবারক ইন্তেকাল করেছেন ১৮১ হিজরিতে এবং ইমাম আহমদ ইন্তেকাল করেছেন ২৪১ হিজরিতে৷ হাজার বছর আগেও তারা এ হাদিস পড়েছিলেন৷ কিন্তু অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কারণে তারা মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া মাকরুহ বলেছেন৷
ইবনে রাজাব হাম্বলি রাহি. ইমাম শাফেয়ির মত নকল করতে গিয়ে বলেন,
قول الشافعي -: يستحب الخروج للعجائز ومن ليست من ذوات الهيئات.
وفسرأصحابه ذوات الهيئات بذوات الحسن والجمال، ومن تميل النفوس إليها، فيكره لهن الخروج؛ لما فيهِ من الفتنة.
অর্থাৎ ইমাম শাফেয়ির মতে বয়োবৃদ্ধ এবং যারা সুন্দর চেহারার অধিকারী নয়, তারা ঈদগাহে যেতে পারবে৷ সুন্দরী এবং যাদের দিকে মানুষের অন্তর ধাবিত হয়, তাদের জন্য ঈদগাহে যাওয়া মাকরুহ৷ কারণ, এতে ফিতনার আশংকা রয়েছে৷ (ফাতহুল বারি: ২/৪৯)
লেখা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার ভয়ে হানাফি কোন স্কলারের বক্তব্য আমি ইচ্ছে করেই উল্লেখ করিনি৷ প্রশ্ন হলো, এরা কেউ কী বুখারির এ হাদিসের মর্ম অনুধাবন করতে পারেননি? অবশ্যই পেরেছেন এবং সঠিক ব্যাখ্যা করেছেন৷ এজন্য হাদিসের উপর আমল করতে হলে সালাফরা হাদিসের কী মর্ম বুঝেছেন? সেটাও খেয়াল করা জরুরী। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন।