ইমাম আবু হানিফা রাহি. কে নিয়ে এলার্জি নতুন কিছুই না৷ ইতিহাসে অনেক মহান ব্যক্তি ইমাম আবু হানিফাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন, কিন্তু এতে ইমাম আবু হানিফার মর্যাদা একটু কমে যায় নি৷ তিনি অমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন৷
নাসির উদ্দিন আলবানি মরহুমও আবু হানিফা রাহি. কে খুঁচিয়েছেন৷ তিনি সিস্টেমে ইমাম আবু হানিফাকে হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে দুর্বল প্রমাণ করার অনর্থক চেষ্টা করেছেন৷
একজন প্রসিদ্ধ ইমামের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে তিনি হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানির ‘তাকরিব’ নির্ভর ছিলেন। আলবানি মরহুম এক হাদিসের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-
” ضعيف .
أخرجه الإمام محمد بن الحسن في ” كتاب الآثار ” : أخبرنا أبو حنيفة قال : حدثنا عطاء بن أبي رباح عن أبي هريرة مرفوعا ، ومن طريق أبي حنيفة أخرجه الثقفي في ” الفوائد ” وكذا الطبراني في ” المعجم الصغير ” وفي ” الأوسط ” وعنه أبو نعيم في ” أخبار أصبهان
” وقال : والنجم : هو الثريا .
وهذا إسناد رجاله ثقات إلا أن أبا حنيفة رحمه الله على جلالته في الفقه قد ضعفه من جهة حفظه البخاري ، ومسلم ، والنسائي ، وابن عدي ، وغيرهم من أئمة الحديث ، ولذلك لم يزد الحافظ ابن حجر في ” التقريب ” على قوله في ترجمته : فقيه مشهور ! .
অর্থাৎ হাদিসটি যয়িফ তথা দুর্বল। এরপর তাখরিজ করে সনদ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ইমাম আবু হানিফা ব্যতিত সকল বর্ণনাকারি ছিকাহ। আবু হানিফার ফিকাহ শাস্ত্রে উঁচু মাকাম থাকা সত্ত্বেও তাঁর স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে ইমাম বুখারি, মুসলিম, নাসায়ি এবং ইবদে আদি সহ অন্যান্য ইমামরা তাঁকে দুর্বল বলেছেন। এজন্য হাফেয ইবনে হাজার ‘তাকরিবুত তাহযিব’ এ তাঁর জীবনীতে শুধুমাত্র ‘প্রসিদ্ধ ফকীহ’ বলেছেন। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহিহা, ১/৭৭-৭৮ হাদিস নং ৩৯৭)
দেখুন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা যদি আপনাদের মতো হতাম, তাহলে বলতাম আলবানি মরহুম এখানে চরম খেয়ানত করেছেন। হাফিজ ইবনে হাজারের নামে মিথ্যাচার করেছেন। দেখুন, আলবানি মরহুম একজন ইমামের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে শুধুমাত্র ‘তাকরিব’ এর হাওয়ালা দিয়েছেন! এছাড়া তিনি এমন কিছু বিষয়ের অবতারণা করেছেন যেগুলো সমাধানকৃত।
প্রথম কথা হাদিসের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা গ্রহণযোগ্য এটা স্বীকৃত কথা। ইবনে আবদিল বার মালেকি রহ. ৬৭ জন ইমাম থেকে ইমাম আবু হানিফার ব্যাপারে তাওসিক নকল করেছেন।
আমরা আশ্চর্য হই আলবানি সাহেবের উপর। ইমাম আবু হানিফার ক্ষেত্রে তিনি হাফেজ ইবনে হাজারের ‘তাকরিব’ দেখেই হুকুম লাগিয়ে দিলেন! কষ্ট করে আল্লাহর বান্দা যদি ইবনে হাজারের ‘তাহযিবুত তাহযিব’ পর্যন্ত যেতেন, তাহলে এমন হাস্যকর কথা বলতেন না!
দেখুন ‘তাহযিব’- এ ইমাম আবু হানিফার ব্যাপারে কি বলেন হাফেজ ইবনে হাজার?
وقال محمد بن سعد العوفي سمعت بن معين يقول كان أبو حنيفة ثقة لا يحدث بالحديث إلا بما يحفظه ولا يحدث بما لا يحفظ وقال صالح بن محمد الأسدي عن بن معين كان أبو حنيفة ثقة في الحديث وقال أبو وهب ومحمد بن مزاحم سمعت بن المبارك يقول أفقه الناس أبو حنيفة ما رأيت في الفقه مثله وقال أيضا لولا أن الله تعالى أغاثني بأبي حنيفة وسفيان كنت كسائر الناس وقال بن أبي خيثمة ثنا سليمان بن أبي شيخ قال كان أبو حنيفة ورعا سخيا وعن بن عيسى بن الطباع سمعت روح بن عبادة يقول كنت عند بن جريج سنة خمسين ومائة فأتاه موت أبي حنيفة فاسترجع وتوجع وقال أي علم ذهب قال وفيها مات بن جريج وقال أبو نعيم كان أبو حنيفة صاحب غوص في المسائل وقال أحمد بن علي بن سعيد القاضي سمعت يحيى بن معين يقول سمعت يحيى بن سعيد القطان يقول لا تكذب الله ما سمعنا أحسن من رأى أبي حنيفة وقد أخذنا بأكثر اقواله وقال الربيع وحرملة سمعنا الشافعي يقول الناس عيال في الفقه على أبي حنيفة
অর্থাৎ মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন, আমি ইয়াহইয়া বিন মায়ীনকে বলতে শুনেছি ইমাম আবু হানিফা হলেন ছিকাহ। তিনি শুধুমাত্র সে হাদিসগুলো বর্ণনা করেন যেগুলো শায়খরা মুখস্থ বর্ণনা করেন। যেগুলো মুখস্থ বর্ণনা করেননা, সেগুলো তিনি বর্ণনা করেন না। মুহাম্মাদ আসাদি বলেন, ইবনে মায়ীন রহ. বলেন, হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা হলেন ছিকাহ।
আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, তিনি হলেন সবচয়ে বড় ফকিহ। ফিকহে তার সমান কাউকে আমি দেখিনি। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ যদি আমাকে আবু হানিফা এবং সুফিয়ান ছাওরি দ্বারা সাহায্য না করতো, তাহলে আমি অন্যান্য সাধারণ মানুষের মত হতাম।
এরপর ইমাম আবু হানিফার ব্যাপারে তিনি আরো অনেক ইমামের বক্তব্য নকল করেছেন। শেষে ইমাম শাফেয়ির বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, ফিকহে সকল মানুষ ইমাম আবু হানিফার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। (তাহযিবুত তাহযিব, ৯/৩২১)
এ সমস্ত ইমামদের বক্তব্য উল্লেখ করার পর ইবনে হাজার ইমাম আবু হানিফার ব্যাপারে আরো কিছু মানাকিব লিখে শেষ বলেন-
ومناقب الإمام أبي حنيفة كثيرة جدا فرضي الله تعلى عنه واسكنه الفردوس آمين
এছাড়াও ইমাম আবু হানিফার আরো অনেক মানাকিব রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তার ঠিকানা জান্নাত বানিয়ে দিন। (তাহযিব, ৯/৩৩২)
আলবানি সাহেব কী করলেন? ইমাম আবু হানিফাকে দুর্বল প্রমাণিত করতে গিয়ে হাফেজ ইবনে হাজারের ‘তাকরিব’ নির্ভর হয়ে একজন ইমামের ব্যাপারে এমন জগণ্য কথা বললেন? অথচ আল্লাহ বান্দা একটু কষ্টে করে ‘তাহযিব’টা খুললে বুঝতে পারতেন হাফেজ ইবনে হাজার ইমাম আবু হানিফার ব্যাপারে কি ধারণা পোষণ করতেন!
সবচেয়ে দুঃখজনক কথা হলো আলবানি মরহুম ‘তাকরিব’ থেকে হাফেজ ইবনে হাজারের বক্তব্য পুরোপুরি উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেন, হাফেয ইবনে হাজার ‘তাকরিবুত তাহযিব’ এ তাঁর জীবনীতে শুধুমাত্র ‘প্রসিদ্ধ ফকীহ’ বলেছেন।
আলবানি মরহুমের কথাটি সঠিক নয়। দেখুন হাফেজ ইবনে হাজার ‘তাকরিব’-এ ইমাম আবু হানিফার ব্যাপারে কি বলেন?
النعمان ابن ثابت الكوفي أبو حنيفة الإمام يقال أصلهم من فارس ويقال مولى بني تيم فقيه مشهور من السادسة مات سنة خمسين [ومائة] على الصحيح وله سبعون سنة ت س
অর্থাৎ নুমান বিন ছাবিত, আবু হানিফা, তিনি হলেন ইমাম। প্রসিদ্ধ ফকিহ। (তাকরিবুত তাহযিব, পৃষ্ঠা নং ৬৩৫, তরজমা নং ৮০৬৮)
আপনি দেখুন, আলবানি সাহেব বললেন হাফেয ইবনে হাজার তাকে শুধুমাত্র প্রসিদ্ধ ফকিহ বলেছেন। অথচ আমরা দেখি তিনি শুধুমাত্র প্রসিদ্ধ ফকিহ বলেননি, সাথে সাথে ইমামও বলেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার তাকে ‘ইমাম’ ও বলেছেন! কিন্তু আলবানি মরহুম সেটা উল্লেখ করেননি।
এছাড়া ‘বাবুল কুনা’তে তিনি আবার ইমাম আবু হানিফার কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি বলেন-
أبو حنيفة النعمان ابن ثابت الإمام المشهور
অর্থাৎ আবু হানিফা হলেন প্রসিদ্ধ ইমাম। (তাকরিব, তরজমা নং ৬৪২৫)
আশ্চর্য হলেও সত্য যে, আমরা বুঝতে পারি না যে, কীভাবে হাফেয ইবনে হাজারের এ বক্তবগুলো আলবানি মরহুমের চোখ ফাঁকি দিল!
আবু বকর জাকারিয়া সাহেবকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই৷ সহিহ আকিদার ইমামদের তালিকায় তিনি আবু হানিফা রাহি. এর নাম উল্লেখ করেননি৷
চামচিকা সূর্যের বিরোধিতা করলে সূর্যের কিছুই হয় না৷ চামচিকা চামচিকাই থাকবে৷ কত হাতি ঘোড়া গত হলো, এখন কোথাকার কোন ইরজাগ্রস্থ শায়খ বের হলো?