মূলত বরযাত্রী আবিষ্কার করেছে হিন্দুরা। প্রথম যুগে নিরাপত্তা ছিলোনা। এজন্য নববধুর নিরাপত্তার জন্য একদল লোকের প্রয়োজন হতো। এজন্য স্বামী একদল লোক নিয়ে যেতো। হঠাৎ যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে মাত্র একজন মহিলা থাকবে? বর্তমানেতো নিরাপত্তার যুগ। এখন এই দলের কি প্রয়োজন? যদি ভয় হয়ে থাকে, তাহলে এতো ছেলে- মেয়ে এবং মহিলা সাথে কেনো নাও? এছাড়া যাওয়ার সময় একসাথে যাও, আসার সময় বিক্ষিপ্তভাবে আসো। অধিকাংশ বর এবং কনে একাকী থেকে যায়। এর থেকে বুঝা গেলো যে, নিরাপত্তা এখানে কোনো বিষয় নয়। শুধু রুসম পালন করা এবং নিজের নাম প্রচার করা উদ্দেশ্য।
ভায়েরা, যখন মানুষ দ্বীন ছেড়ে দেয়, তখন আকলও লোপ পায়। লোকদের ধারণা হলো যে, কুমারী মেয়ের নিরাপত্তা অধিক জরুরী। বিবাহের রক্ষণাবেক্ষণের তেমন প্রয়োজন নেই। আর এ ধারণা এসেছে হিন্দুদের থেকে। তাদের ধারণা হলো, যদি কুমারী মেয়ের সাথে কারো কথা হয়ে যায়, তাহলে মেয়ের বদনাম হয়ে যাবে! যদি মহিলা বিবাহিত তাহলে তার সম্বন্ধ করা হয় স্বামীর দিকে। কিন্তু এই ধারণা একেবারে মূর্খতা প্রসূত। যদি একটু বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে হয়, তাহলে জানা যাবে যে, কুমারী মেয়ে সুরক্ষার এতটা প্রয়োজন নেই, যতটা বিবাহিত মহিলার প্রয়োজন হয়। আর রহস্য হলো কুমারী মেয়ের সৃষ্টিগতভাবে লজ্জা অনেক বেশি থাকে। এজন্য স্বভাবগত তার একটি বাধা থাকে। এর থেকে বেশি দৃষ্টি রাখার প্রয়োজন নেই। আর বিবাহিত পর্দা যেহেতু কম থাকে, এজন্য তার স্বভাব অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। এজন্য তার ইজ্জত, আব্রæ নিরাপত্তার বেশি প্রয়োজন হয়। কুমারী মেয়ে নিজের স্বভাব এবং রুচি নিয়ে চিন্তিত থাকে। কিন্তু বিবাহিত তেমর চিন্তা করেনা। কুমারীর মেয়ের কোনো দেয়াল থাকেনা। কিন্তু বিবাহিত মহিলার স্বামী নামের দেয়াল থাকে। বিবাহিত মহিলার কাজকে তার স্বামীর দিকে সম্বন্ধ করা হয়। এজন্য খারাপ কাজে কুমারী মেয়ের চেয়ে বিবাহিত মহিলা বেশি ধাবিত হয়ে থাকে। তার সুরক্ষার বেশি প্রয়োজন।
ইজ্জত আব্রæর হেফাজতের বিষয় মানুষ আজকে পরওয়া করে না। শুধু নিজের মান সম্মানের পরওয়া করে। আর কুমারী মহিলার যেহেতু কোনো ঢাল নেই, এজন্য পুরো সম্প্রদায়ের বদনাম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য তার প্রতি দৃষ্টি রাখা হয়। আর বিবাহিত মহিলার একটি ঢাল থাকে। এজন্য বদনামের সম্ভাবনা কম থাকে। এজন্য তার সুরক্ষা কম হয়। এজন্য মেয়ে স্বামীর বাড়ী যাওয়ার সময় কিছু খেয়াল করেনা যে, এই সময় যাওয়া মুনাসিব কিনা? যখন ইচ্ছা, বরযাত্রীদের সাথে দিয়ে দেয়। কেননা তাদের মতে বিবাহের আগ পর্যন্ত সুরক্ষার দায়িত্ব ছিলো। এখন সেটা শেষ হয়ে গেছে! রাস্তায় যদি ডাকাত দলের কবলে পড়ে, ছেলের পক্ষের লোকদের এ বিষয়টি খেয়াল করার প্রয়োজন পড়েনা। মেয়ে পক্ষের লোকদের চিন্তা-ফিকির করে মেয়েকে বিদায় দেওয়া উচিৎ।
এ সমস্ত খারাপ দিকের কারণে বরযাত্রীকে নিষেধ করা হয়েছে। যতদিন আমার কাছে এর খারাপ দিক স্পষ্ট হয়নি, আমি বরযাত্রীতে যেতাম। এখন আমি এ রুসমকে সম্পূর্ণ হারাম মনে করি। যদি বিষয়টি তোমার বুঝে না আসে, তাহলে আমার লেখা “ইসলাহুর রুসম” কিতাবটি অধ্যয়ন করো। এ সমস্ত রুসম থেকে বাধা প্রদান করার কারণে একজন গ্রাম্য লোক আমাকে বললো যে, আপনার মাসআলাগুলো অনেক কঠিন হয়ে যায়। আমি বললাম, মাসআলায় সেদিক গ্রহণ করি, যেদিকে সতর্কতা বেশি থাকে। বাস্তবে আমার মাসআলা কঠিন নয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমার কলমের মাধ্যমে সমাজের কিছু খারাপ কাজ তুলে ধরেছেন। যা অন্যের কলমে হয়নি। এজন্য লোকেরা আমাকে কঠিন মনে করে।
যদি মেয়ের হেফাজতের জন্য বরযাত্রীর প্রয়োজন হয়, তাহলে পৃথক পৃথক হয়ে বরযাত্রীরা কেনো ফিরে আসে? এমনকি কখনো কখনো একাকী থেকে যায়। যদি কেউ বলে জামাইতো রয়েছে স্ত্রীর সাথে, তাহলে এই ধরণের লোকেরা কোন পর্যায়ের বাহাদুর। কেননা আজকাল রায় হলো যে, বিবাহ দ্রæত হতে হবে। কেননা আগের সেই দিয়ানত এবং পবিত্রতা মানুষের স্বভাবে নেই। মোটকথা হলো আজকালতো অনেক সময় বরের হেফাজতের প্রয়োজন হয়। যদি বলা হয় চোর অথবা ডাকাত দল আসছে, তাহলে প্রথমে বর নিজে পালকীতে উল্টে পড়বেন! কোনো এক সময় বর, নববধু এবং তাদের সাথে দু চারজন বরযাত্রী এক গ্রামে অবস্থান করলো। বরযাত্রী আগে চলে গিয়েছিলো। এ সমস্ত লোকেরা নিরাপত্তার জন্য ছিলো। এজন্য তারা বরযাত্রীকে ছেড়ে দিয়েছে!