আপনি দেখবেন দু পক্ষের সমর্থকরাই কিন্তু শেষে এসে বলবে – আমরা জিতসি। ফলাফল কিন্তু বলতে গেলে শূণ্য। তারপরও এসব ডিবেটের কিছুটা প্রয়োজনীয়তা এখন আছে কারণ অনলাইনে গুগল ফতোয়া গ্রহণ করে হালাল হারামের ফয়সালা দেয়ার পাবলিকের অভাব নেই এখন।
অনলাইনে ফিকহী ডিবেট বা মাসয়ালাগত বিতর্ক যদিও খুব একটা ফায়দা দেয় না কিন্তু বর্তমান সময়ে অনলাইন ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর যে ট্রেন্ড শুরু হয়েছে তাতে এসব ডিবেট ছাড়া উপায়ও থাকে না কোন! মূলত অনলাইনে কোন বিতর্কেরই আল্টিমেট ফায়দা নেই কোন। রাজনৈতিক চর্চার ছোট্ট একটু লাভ যা আছে তা হলো আলোচনা হওয়া। এর দ্বারা বিভিন্ন রহস্য, ইতিহাস এসবের জানালা খোলে। ভেতরগত অনেক কিছু বের হয়ে আসে। যা দ্বারা আগামির রাজনীতির পথ তৈরি হয় কিছুটা। যেমন ধরেন মাসখানেক আগে শ্রদ্ধেয় গাজী আতাউর রহমান সাহেব হেফাজত নিয়ে একটা সিরিজ লেখা শুরু করেছিলেন। যে সিরিজের মাধ্যমে ইতিহাসের কিছু পয়েন্ট পরিস্কার হচ্ছিলো। যদিও সিরিজটি তিনি ধারাবাহিক করেননি আর। তবে করা উচিত বলেই মনে হয়। এর দ্বারা বিতর্ক চর্চা হলেও আল্টিমেট একটা লাভ আছে কিন্তু অনলাইনে ফিকহী বিতর্কে তেমন কোন লাভ নেই।
আজকে প্রিয় মুফতী রেজাউল করীম ভাই এবং মোয়াজ্জেম হোসেন সাইফী নামের একজনের সাথে তাবিজ শিরক হওয়া না হওয়া নিয়ে একটা ডিবেট হয়েছে। এ প্রোগ্রামের আগে আমি এই সাইফী সাহেবকে কোনদিন দেখিওনি, চিনতামও না। তাছাড়া উনাকে কেউ কেউ মাদখালি বলে, কেউ কেউ আহলে হাদিস বলে। আসলে উনি কোন মতের, কোন পথের তা আমার জানা নেই। আমি ফিকহী বিষয়ে দেওবন্দিয়াতের ধারায় হানাফি মাযহাবগতভাবে যা পড়েছি ও জেনেছি তা আমার জীবনের জন্য কাফি (যথেষ্ট) মনে করি। এর বেশি চর্চা ও লড়াই আমার নেই তেমন। এসব নিয়ে কারো সাথেও তর্ক তো দূরের কথা। আলাপই বাড়াই না। তবে এই ডিবেটটা আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনেছি এবং স্বভাবতই আবরার ভাইর পক্ষেই আমি ছিলাম। যদিও আমি নিজে জীবনে কোনদিন তাবিজ ব্যবহার করিনি এবং করার প্রয়োজন হবে বলেও মনে করি না। কিন্তু কুরআনের আয়াত, হাদিসে বর্ণিত দোয়া, বা আরবিতে লিখিত সঠিক অর্থবোধক কোন কিছুর মাধ্যমে লিখিত হয়ে তা দ্বারা ব্যবহারিত তাবিজ সম্পূর্ণ জায়েজ এবং এটা জায়েজ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। আপনার ভালো না লাগলে আপনি ব্যবহার কইরেন না। এখন কেউ যদি নিজ মনগড়া তাবিজ তৈয়ার করে, শিরকি কথা লিখে রাখে, মানুষ বা পশুর চিত্র অংকন করে তাবিজ হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে সেগুলো না জায়েজ হবে, হারাম হবে প্রয়োজনে শিরক হবে। এজন্য মুতলাকান তাবিজকে তো শিরক বলা যাবে না।
এই ডিবেটে আবরার ভাই যতটা নিরুদ্বীগ্নভাবে সহজ সরলতার সাথে বিষয়গুলোর দালিলিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন সে তুলনায় মোয়াজ্জেম সাহেব শিশুবাচ্চা ছিলেন। উনি ইলমের গভীরতায় আবরার ভাইর কাছে অল্প কিছুক্ষণও দাড়িয়ে থাকতে পারবেন না তা গতকালের ডিবেট থেকেই বুঝা গেছে। কিন্তু আপনি দেখেন দু পক্ষের সমর্থকরাই কিন্তু শেষে এসে বলবে – আমরা জিতসি। ফলাফল কিন্তু বলতে গেলে শূণ্য। তারপরও এসব ডিবেটের কিছুটা প্রয়োজনীয়তা এখন আছে কারণ অনলাইনে গুগল ফতোয়া গ্রহণ করে হালাল হারামের ফয়সালা দেয়ার পাবলিকের অভাব নেই এখন।
লাইভের বিভিন্ন পয়েন্টে মোয়াজ্জেম সাহেব বারবার যেভাবে প্রসঙ্গ পাল্টাচ্ছিলেন, হাদিসের ইবারত পড়তে গিয়ে বারবার আটকে যাচ্ছিলেন, কিছু কিছু জায়গায় ভুলও পড়ছিলের তা বেশ হাস্যকর ছিলো। আরও বিরক্তিকর ছিলো উনার অমনোযোগী স্বভাব। উনাকে দেখলাম পড়াশোনা লাইভে এসে করছেন। এদিক ওদিক করছেন, বারবার টুপি নাড়াচ্ছেন। এসব একটি লাইভ ডিবেটের ক্ষেত্রে মানানসই নয়। তাছাড়া তিনি ‘খাইরুল কুরুন’সহ তাবেয়ীদের মতামতকে যেভাবে অবজ্ঞা করছিলেন এটা শরিয়তে ইসলামের জন্য বিশেষ করে ফিকহে ইসলামের জন্য ভয়ংকর আত্মঘাতী একটি বিষয়। এটা উনারা কেন করেন আমি জানি না।
তাবিজ ব্যবহার করা শরিয়তে জায়েজ আছে। এটাকে শিরক বলা তাবিজ বিষয়ে পড়াশোনারই অভাব। যেই শিরকের ভয় উনারা করেন এবং যে শিরকের বর্ণনা উনারা দেন সেই শিরক মেডিসিন খাওয়ার মধ্যেও বের করা যাবে। সিলসিলাগত ইলম ও দরস ছাড়া বিগত ১৪শ বছরে যত দল মত ফিরকা আবির্ভাব হয়েছে সবাই-ই ইসলামের মধ্যে ক্ষতিকর বিষয় সংযুক্ত করেছে। ফিকহী নিয়ম না বুঝে, উসূলে ফিকহকে অবজ্ঞা করে যে হারে এসব দল মত ফিরকাগুলো মাসয়ালা বয়ান করেছে তাতে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ছাড়া কিছুই তৈরি হয়নি। বাকি টুপি, দাড়ি, পাঞ্জাবিসহ শি’য়ারে ইসলামকে যেভাবে বিতর্কের বিষয়বস্তু বানিয়ে রাখা হয় এবং এটা রাখতে তারাই বাধ্য করে তাতে ভবিষ্যতে আরও বিপদ আমাদের আছে এতে কোন সন্দেহ নাই। এবং এই বিপদের দায় বড়ভাবে তারাই নিতে হবে যারা গভীর পড়াশোনা ছাড়া আকাবিরিনে উলামাদের সাইড করে দিয়ে যে কোন কিছুতে বিদয়াত, শিরক আর না জায়েজের ফতোয়া কপচায়। এসব দল মত ফিরকাগুলোই ইসলামকে কঠিন থেকে কঠিনতর বানিয়ে ফেলেছে। তৈরি করেছে বিভেদ আর অনৈক্যের হাজারো অনুসঙ্গ।
ইলম, অধ্যয়ন, হক্কানিয়াত ও চিন্তার গভীরতায় মুফতী রেজাউল করীম আবরার উম্মাহর সম্পদ। আমি প্রাউডলি নিজে নিজে প্রায়ই চিন্তা করি যে উনার সাথে আমার হৃদয়টানা সম্পর্ক আছে। আমরা একে অপরকে মুহাব্বাত করি। আমার জীবনচলার প্রতিটি ফিকহী সন্দেহ নিরসনে আমি উনার কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করার চেষ্টা করি। আবরার ভাইর মেধা আর ইলমি দক্ষতার তূলনা উনার সমসাময়িক কাউকে আমি পাইনি এখনও। অনেক মেধাবী ও কিতাবী আলেমদের সাথে উঠাবসা করেই এ দাবি আমি করতে পারি।
তাই উম্মাহর মূলবান সম্পদ আবরার ভাইর প্রতি সদা সর্বদাই ভালোবাসা থাকবে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো কি জানেন? ইলমে, দালিলিক আলোচনায় না পেরে কেউ কেউ দেখি কটাক্ষ আর ব্যাঙ্গ বিদ্রুপে নামে। এদের আসলে কে বুঝাবে কিভাবে, বুঝাবে আমি জানি না। শরিয়তে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে থাকা একটি বয়ান বিষয়ে উনি জানানোর পরও অনেককে দেখা যায় উনার বিষয়ে নেতিবাচক কটাক্ষমূলক আক্রমন করেন। হয়ত সওয়াব হচ্ছে ভেবেই করেন তারা এটা। অথচ এ বিষয়টি স্পষ্ট গুনাহ ও স্পষ্টতর অপরাধের কাজ। এ কাজটা থেকে তো বিরত থাকা যায় এখন। মাসয়ালাগত মতপর্থক্যের বিষয়গুলো না বুঝলে জানার চেষ্টা করুন। সে চেষ্টা না করতে মন চাইলে চুপ থাকুন। কেন অযথা কাউকে কটাক্ষ করে গুনাহের ভাগিদার হতে হবে বলেন। ফিকহি ডিবেটে এসব করার সুযোগ নেই কোন এটুকু অন্তত মনে রাখবেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করুক।