কুরবানী ও আকিকা : একসাথে করার শরয়ি হুকুম

কুরবানির সাথে আকিকা করা যাবে কিনা? ব্যাপারটি নিয়ে কুরবানি আসলেই আমাদের দেশে তুমুল আলোচনা হয়৷ আমরা আলাদাভাবে করা উত্তম মনে করি৷ কিন্তু একসাথে করলে জায়েজ মনে করি৷ অনলাইনে বিপুল পরিচিত একজন শ্রদ্ধেয় আলিমের এ সংক্রান্ত একটি ছোট আলোচনা শুনলাম৷ সেখানে তিনি ফিকহে হানাফিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন৷
তিনি বলেছেন: “আমাদের দেশের আলেমরা কুরবানির সাথে আকিকাকে জায়েজ মনে করেন৷ অথচ হানাফি মাজহাবের অনেক আলেম এটাকে নাজায়েজ বলেছেন৷”
এরপর তিনি “আহসানুল ফতোয়া” এর হাওয়ালা দিয়ে বলেছেন, সেখানে বলা হয়েছে কুরবানির সাথে আকিকা জায়েজ নেই”!
শ্রদ্ধেয় আলিম বাংলাদেশের জনপ্রিয় একজন আলোচক৷ তাহকিক না করে তিনি এভাবে কথা বললে এর ক্ষতি অনেক ভয়াবহ৷
প্রথমত, কুরবানির সাথে আকিকা করা যাবে এটা আমাদের দেশের আলেমদের কথা নয়৷ এটা হানাফি মাজহাবের স্বীকৃত ফতোয়া৷ দ্বিতীয়ত “আহসানুল ফতোয়া” তে স্পষ্টভাবে ফতোয়া শামীর রেফারেন্সে লেখা হয়েছে যে, কুরবানির সাথে আকিকা করা জায়েজ! এ বিষয়ে প্রথমে আমরা হানাফি মাজহাবের ইমামদের বক্তব্য দেখে আসি৷
ইমাম আবু বকর জাসসাস রহঃ (৩৭০হিঃ) লিখেন:
“وإذا كانت كلها للله تعالى وأرادوها من وجوه مختلفة من هدي وقران وأضحية وغيرها أجزأهم جميعا.وذلك لأنها قد خرجت مخرج القربة إلى الله لاحق فيها لأدمي”
অর্থাৎ:কুরবানিতে যখন প্রত্যেকের উদ্দেশ্য হবে আল্রাহর নৈকট্য অর্জন করা,কিন্তু কারণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারেঅ। একজনের উদ্দেশ্য হাদি,অপরজনের হজ্বে কেরানের দম,অপরজনের উদ্দেশ্য কুরবানি বা অন্য কিছু, এক সা্থে সকলেরটা আদায় হবে।(শরহু মুখতাসারিত তাহাবী,৭/৩৫২.দারুল বাশায়িরিল ইসলামিয়া)
ইমাম সারাখসি রহ. (মৃত্যু ৪৮৩ হি.) বলেন:
ويستوي إن كان قصدهم جميعا التضحية أو قصد بعضهم قربة أخرى عندنا
অর্থাৎ যদি সবার উদ্দেশ্য হয় কুরবানি,অথবা কারো উদ্দেশ্য হয় অন্য কোন ইবাদত,তাহলে সকলেরটা একসাথে আদায় হয়ে যাবে।(আল-মাবসুত,১১/১৫.মাকতাবারশিদিয়্যাহ)
ইমাম মালিকুল উলামা কাসানী রহ. (মৃত্যু ৫৮৭ হি. ) বলেন:
وكذلك ان أراد بعضهم العقيقة عن ولد ولد له من قبل لان ذلك جهة التقرب إلى الله تعالى عز شأنه بالشكر على ما انعم عليه من الولد كذا ذكر محمد رحمه الله في نوادر الضحايا
অর্থাৎ যদি কেউ কুরবানির সাথে আকিকার নিয়ত করে,তাহলে আদায় হয়ে যাবে। কেননা আকিকার দ্বারা উদ্দেশ্য হল আল্রাহর সন্তুষ্টি অর্জন। সন্তান দানের মাধ্যমে আল্লাহ তার উপর যে অনুগ্রহ করেছেন,সেটার শুকরিয়া আদায়ের জন্য আকিকা করা হয়। এমনটা বলেছেন ইমাম মুহাম্মদ রহঃ।(বাদায়িউস সানায়ি’,৬/২৯১.দারুল হাদীস ক্বাহেরা।)
“ফতোয়া আলমগীরিতে” আছে:
“وكذا إذا أرادت بعضهم العقيقة عن ولد من قبل”
যদি কেউ কুরবানির সাথে আকীকার ইচ্ছা করে,তাহলে তা আদায় হয়ে যাবে।(ফতোয়া আলমগীরি,৫/৩৫১.মাকতাবাতুল ইত্তেহাদ)
ইবনে আবেদীন শামি রহ. লিখেন:
وكذا لو أراد بعضهم العقيقة عن ولد قد ولد له من قبل لأن ذلك جهة التقرب بالشكر على نعمة الولد ذكره محمد ولم يذكر الوليمة .
এমনিভাবে যদি কেউ কুরবানির সাথে আকিকার ইচ্ছে করে,তাহলে আদায় হয়ে যাবে। কারণ, আকিকাও আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি ইবাদত।(হাশিয়াতু আবনে আবেদীন,৬/৩৩৬.এইচ,এম সাইদ)
এ বিষয়ে আরো নিম্নোক্ত কিতাবাদি দেখা যেতে পারে।
• “ফতোয়া কাজিখান” ৩/২৪৬.মাকতাবাতুল ইত্তেহাদ।
• “ফতোয়া বাযযাযিয়া” ৩/১৫৭.মাকতাবাতুল ইত্তেহাদ।
• “ফাতহু বাবিল ইনায়াহ” ৩/৭৭.এইচ,এম সাইদ কোম্পানি।
*“আল মুহিতুল বুরহানী” ৮/৪৭৭.ইদারাতুল কুরআন।
*“তাবয়িনুল হাকায়িক” ৬/৪৮৪.দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ.
*“আল জাওহিরাতুন নায়্যিরাহ” ২/৪৫১. আল মাকতাবাতুল হাক্কানিয়াহ।
শ্রদ্ধেয় আলিম এতো জন ফক্বিহ ইমামের বক্তব্য এড়িয়ে বলেছেন এটি আমাদের দেশের আলেমদের মতামত! দ্বিতীয়ত মাজহাবের স্বীকৃত ফতোয়ার বিপরীতে “আহসানুল ফতোয়া” কে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন৷ অথচ একজন ফিকহের তালিবুল ইলমমাত্রই জানেন যে, আহসানুল ফতোয়ার যেকোনো ফতোয়া চোখ বুঝে গ্রহণ করার সুযোগ নেই৷
উপরন্তু “আহসানুল ফতোয়া” তে স্পষ্ট লেখা আছে যে, কুরবানির সাথে আকিকা করা যাবে৷
আমরা শ্রদ্ধেয় আলিমকে ভালবাসি৷ বেশ কিছু মাসআলায় জনসাধারণের । সামনে তিনি ফিকহে হানাফিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন৷ আমরা চাই তার মতো জনপ্রিয় মানুষ থেকে এ ধরণের ভুল না হোক৷ আল্লাহ শায়খকে নেক হায়াত দান করুন।”

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *