রেজাউল কারীম আবরার

কাবলাল জুমআ নিয়ে কামাল উদ্দিন জাফরি সাহেবের অসম্পূর্ণ তাহকিক

জুমআর পূর্বের চার রাকআত সুন্নাত কী হাদিসে নেই? উম্মাহর অধিকাংশ ইমামদের মতে জুমআর পূর্বের সুন্নত হলো সুন্নতে মুআক্কাদা৷

আজকের পর্বে আমরা ইবনে মাজাহ এর হাদীস নিয়ে পর্যালোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

সনদসহ ইবনে মাজার বর্ণনা হলো:

حدثنا محمد بن يحيى . حدثنا يزيد بن عبد الله . حدثنا بقية عن مبشر بن عبيد عن حجاج بن أرطاة عن عطية العوفي عن ابن عباس قال كان النبي صلى الله عليه و سلم يركع قبل الجمعة أربعا . لا يفصل في شيء منهما

ইবনে আব্বাস রাযি. বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে চার রাকআত পড়তেন। মধ্যখানে সালাম ফিরাতেন না। (ইবনে মাজাহ: ১১২৯)

এবার দেখুন, এ হাদিসের ইবনে মাজার সনদ ছাড়া ভিন্ন সনদ আছে। ইমাম তাবারানী রাহি. এবং ইমাম আবুল হাসান খিলায়ী রাহি. আলি রাযি. থেকে একই হাদীস উল্লেখ করেছেন।

ইমাম তাবারানী রাহি. এর বর্ণিত হাদীস হলো:

حدثنا أحمد قال حدثنا شباب العصفري قال حدثنا محمد بن عبد الرحمن السهمي قال حدثنا حصين بن عبد الرحمن السلمي عن أبي إسحاق عن عاصم بن ضمرة عن علي قال كان رسول الله يصلي قبل الجمعة أربعا وبعدها أربعا يجعل التسليم في آخرهن ركعة

ইমাম তাবারানি রাহি. হাদিস বর্ণনা করেছেন আহমদ থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন শাবাব আল আসফারি থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন হুসাইন বিন আবদুর রহমান থেকে, তিনি আবু ইসহাক থেকে, তিনি আসিম বিন যামুরা থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন আলি রাযি. থেকে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে এবং পরে চার রাকআত নামাজ পড়তেন। (আল মু’যামুল আওসাত: ১৬১৭) একই সনদে ইমাম খিলায়ি রাহি. “আল ফাওয়াইদ”

এ হাদিসটি বর্ণনার কথা বলেছেন ইমাম ইরাকী রাহি.। তিনি প্রথমে ইবনে মাজায় বর্ণিত ইবনে আব্বাস রাযি. এর হাদিস নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। তিনি বলেন:

ويستأنس بحديث سنن ابن ماجه أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يصلي قبلها أربعا وإسناده ضعيف جدا

অর্থাৎ কেউ কেউ সুনানে ইবনে মাজাহ এর বর্ণনা পেশ করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে এবং পরে চার রাকআত পড়েছেন। তবে এ হাদিসের সনদ অত্যধিক দুর্বল। এরপর এর কারণ বর্ণনা করে ইমাম ইরাকী রাহি. বলেন:

والمتن المذكور رواه أبو الحسن الخلعي في فوائده بإسناد جيد من طريق أبي إسحاق عن عاصم بن ضمرة عن علي رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم

তবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে এবং পরে চার রাকআত পড়ার ব্যাপারে ইমাম আবুল হাসান খিলায়ী রাহি. “আল ফাওয়াইদ” নামক কিতাবে সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন। আবুল হাসান খিলায়ী রাহি. আবু ইসহাকের সূত্রে, আসিম বিন যামুরা থেকে, তিনি আলি রাযি. থেকে, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। (তারহুত ত্বাছরীব: ৩/৩৬, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ বায়রুত থেকে প্রকাশিত) জাফরি সাহেব এবং লা মাজহাবিদের ভাইদের বরণীয় মুনাবী রাহি. এর বক্তব্য আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

তিনি ইবনে আব্বাস রাযি. এর হাদীস পর্যালোচনা করে পরে বলেন:

وروده من طريق مقبول فقد رواه الخلعي في فوائده من حديث علي كرم الله وجهه قال الحافظ الزين العراقي : وإسناده جيد

অর্থাৎ এ হাদিসটি আরেকটি গ্রহণযোগ্য সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম খিলায়ি রাহি. “আল ফাওয়াইদ” আলি রাযি. এর সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। সে হাদিস সম্পর্কে ইমাম যাইনুদ্দিন ইরাকি রাহি. বলেন, হাদিসের সনদ হলো উত্তম। (ফাইযুল কাদির: ৫/২১৬)

ইমাম শিহাব উদ্দিন বুসিরী রাহি. আলি রাযি. এর হাদিস সম্পর্কে বলেন:

رواه أبو الحسن الخلعي في فوائده بإسناد جيد من طريق أبي إسحاق عن عاصم بن ضمرة عن علي عن النبي

অর্থাৎ আবুল হাসান খিলায়ি রাহি. তার “ফাওয়াইদ” এ উত্তম সনদে আবু ইসহাক এর সূত্রে আসিম বিন যামুরা থেকে, তিনি আলি রাযি. থেকে, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। (মিসবাহুয যুজাজাহ: ১/১৬৯) মজার কথা হলো, আবুল হাসান খিলায়ি রাহি. এর সনদের কথা নাসির উদ্দিন আলবানি রাহি.ও সিলসিলাতে লিখেছেন।

তিনি বলেন:

رواه أبو الحسن الخلعي في ” فوائده ” بإسناد جيد , من طريق أبي إسحاق عن عاصم عن علي عن النبي صلى الله عليه وسلم , و هكذا قال أبو زرعة في ” شرح التقريب ” ( 3/42 ) , و الظاهر أن البوصيري نقله عنه

অর্থাৎ আবুল হাসান খিলায়ি ফাওয়াইদ নামক কিতাবে উত্তম সনদে আবু ইসহাকের সূত্রে তিনি আসিম বিন যামুরা থেকে, তিনি আলি রাযি. থেকে বর্ণনা করেছেন। আবু যুরআ “শারহুত তাকরীব” এ এমনটি বলেছেন। ইমাম বুসিরি সেখান থেকে নকল করেছেন। (সিলসিলা জয়িফা: ২/৫০০) আমরা দেখলাম তাবারানি রাহি. এবং আবুল হাসান খিলায়ী রাহি. একই সনদে আলি রাযি. থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে এবং পরে চার রাকআত পড়েছেন। আসমাউর রিজাল এর কিতাব শাস্ত্রীয়ভাবে পড়ার যোগ্যতা থাকলে সনদ যাচাই করলেই ইমামদের বক্তব্যের সত্যতা আপনি দেখতে পারবেন। তাবারানি এবং খিলায়ি রাহি. এর সনদ সহিহ। এ সহিহ হাদিসে পেলাম যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে এব পরে চার রাকআত পড়তেন।

জাফরি সাহেবরা ইবনে মাজাহর হাদিস নিয়ে মুখে ফেনা তুললেও অদৃশ্য কারণে তাবারানি এবং আল ফাওয়াইদ এর হাদিস এড়িয়ে যান। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

আরও পড়ুন : জুমার আগের চার রাকাত সুন্নত ও হাদিসের বর্ণনা

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *