নিজেদেরকে দাবি করেন তারা সহিহ হাদিসের দাবিদার। অর্থাৎ সহিহ হাদিসে যা পাবেন, তার উপর আমল করবেন, এর বাহিরে কারো কোন কথা, কিয়াস তারা মানেন না! কিন্তু দেখা যায় যে, তারা এমন কিছু অমার্জনীয় কথা বলেন, যার পক্ষে কোন সহিহ হাদিস থাকা দূরের কথা, একটি জয়িফ বা দুর্বল হাদিসও নেই! শুধুমাত্র নিজেদের যুক্তি দ্বারা অথবা কুরআনের কোন আয়াত বা হাদিসের বিকৃতি করে জনসমক্ষে গলাবাজি করেন! এমন বহু মাসআলা আছে, চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসে সর্বসম্মতভাবে যার উপর আমল রয়েছে, যে বিষয়ের উপর সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে শুরু করে অদ্যবদি সকলের ইজমা তথা এক্যমত রয়েছে, এমন মাসআলায় এসে সকলের বিপরিতে দলিলবিহিন আরেকটি মত প্রতিষ্ঠা করে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছেন।
পুরো চৌদ্দশত বছরের ‘আমলে মুতাওয়ারাছ’- এর বিপরিতে আরেকটি মত কায়েম করা আসলেই মূর্খতা, ভ্রষ্টতার প্রমাণ! এ ধরণের একটি মাসআলা হল, ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা জায়েজ বলে তারা ফতোয়া চালাচালি করছেন! অথচ এ মতের পক্ষে না আছে কুরআনের আয়াত, না আছে সহিহ হাদিস, না আছে কোন দুর্বল হাদিস, এমনকি কোন সাহাবার কথাও এর স্বপক্ষে পাওয়া যায় না!
এ ক্ষেত্রে আকরামুজ্জাামান বিন আব্দুস সালাম এবং ড. সাইফুল্লাহর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা তাদের একাধিক লেকচারে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, কুরআন ওজু ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ আছে! তবে উত্তম হল, ওজু সহকারে স্পর্শ করা! উল্লেখ্য যে, তারা তাদের মতের পক্ষে কোন আয়াত বা হাদিস দ্বারা দলিল দিতে পারেননি! কিন্তু সারা দিন সহিহ হাদিস বলে গলাবাজি করেন!
আমরা মাসআলাটি সহিহ হাদিস, সাহাবাদের আছার এবং ইমামদের বক্তব্যের আলোকে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। প্রথমে এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিসগুলো উল্লেখ করা হচ্ছে।
• আবু বকর বিন হাজম রাঃ থেকে বর্ণিত,
إن في الكتاب الذي كتبه رسول الله صلى الله عليه و سلم لعمرو بن حزم : لا يمس القرآن إلا طاهر
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর বিন হাজম রা. এর নিকট যে চিঠি লিখেছিলেন, তাতে লেখা ছিল যে, কুরআন যেন ওজু ছাড়া স্পর্শ না করে। (মুয়াত্তা মালেক, ৬৮০. মা’রেফাতুস সুনানি ওয়াল আছার, ২০৯. মিশকাতুল মাসাবিহ, ৪৬৫. কানযুল উম্মাল, ২৮২৯.)
এ হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হাফেজ ইবনে আবদিল বার মালেক রহ. চমৎকার আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন-
وكتاب عمرو بن حزم هذا قد تلقاه العلماء بالقبول والعمل وهو عندهم أشهر وأظهر من الإسناد الواحد المتصل وأجمع فقهاء الأمصار الذين تدور عليهم الفتوى وعلى أصحابهم بأن المصحف لا يمسه إلا الطاهر
وهو قول مالك والشافعي وأبي حنيفة وأصحابهم والثوري والأوزاعي وأحمد بن حنبل وإسحاق بن راهويه وأبي ثور وأبي عبيد وهؤلاء أئمة الرأي والحديث في أعصارهم
وروى ذلك عن سعد بن أبي وقاص وعبد الله بن عمر وطاوس والحسن والشعبي والقاسم بن محمد وعطاء وهؤلاء من أئمة التابعين بالمدينة ومكة واليمن والكوفة والبصرة
আমর বিন হাজমকে উদ্দেশ্যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লিখিত চিঠি প্রত্যেক যুগের আলেমরা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। এ চিঠির উপর আমল করা সহিহ সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসের উপর আমল করা থেকে প্রস্দ্ধি এবং সুস্পষ্ট। প্রত্যেক শহরের ফকিহ এবং তাদের শিষ্যরা এ বিষয়ে একমত যে, ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। এমনটা হল ইমাম মালেক, শাফেয়ি, আবু হানিফা এবং তার শিষ্যরা, সুফিয়ান ছাওরি, আওজায়ি, আহমদ বিন হাম্বল, ইসহাক বিন রাহুয়াহ, আবু ছাওর, আবু উবায়দ এবং ফিকহ এবং হাদিসের ইমামদের মত।
আর এমনটি বর্ণিত হয়েছে সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস, আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা., তাউস, হাসান, শা’বি, কাসেম, এবং আতা রহ. থেকে।( আলইসতিযকার, ২/৪৭১. দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বায়রুত।)
ইবনে আবদিল বার মালেকি রহ. এর এ দীর্ঘ আলোচনার পর মনে হয় এ বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। কেননা যে বিষয়ে এতজন সাহাবি এবং ইমাম একমত, রয়েছে সর্বযুগে সমাদৃত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐতিহাসিক চিঠি, তাদের তুলনায় কোথাকার কোন নায়েক, আব্দুস সালাম এবং সাইফুল্লাহর কথা কে পাগলের প্রলাপ না বলে অন্য কিছু বলতে পারছি না।
• ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
عن سليمان بن موسى سمعت سالم بن عبد الله بن عمر يحدث عن أبيه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يمس القرآن إلا طاهر
অর্থাৎ, পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ করবে না। (আল মু’যামুল কাবীর, ১৩২১৭. আল মু’যামুস সাগীর, ১১৬২.)
হাদিসটি সম্পর্কে ইমাম হাইছামি রহ. বলেন-
رواه الطبراني في الكبير والصغير ورجاله موثقون
অর্থাৎ, হাদিসটি ইমাম তাবারানি ‘আল মু’যামুল কাবীর’ এবং ‘আল মু’যামুস সাগীর’এ বর্ণনা করেছেন। বর্ণণনাকারী সকলেই বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, হাদীস নং, ১৫১২)
হাফেজ বদরুদ্দীন আইনি রহ. বলেন-
ومنها ما رواه الدارقطني أيضا بسند صحيح من حديث سالم يحدث عن أبيه قال رسول الله لا يمس القرآن إلا طاهر
অর্থাৎ, ইবনে উমরের হাদিসটি ইমাম দারা কুতনি রহ. সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ কুরআন স্পর্শ করতে পারবে না।( উমদাতুল কারি, ৫/৩৭২. শামেলা।)
স্বয়ং লা মাযহাবীদের মাথার তাজ মরহুম নাসিরুদ্দীন আলবানি হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন। দেখুন, তার লিখিত ‘সহিহুল জামে’, হাদিস নং ৭৭৮০.
এবার বলবেন শায়খ মহাশয়রা! নিজেদের মতের পক্ষে গেলে আলবানি মাথার তাজ! আর মতের বিপক্ষের হাদিস আলবানি সাহেব সহিহ বললে কিসের আলবানি! এমন সুবিধাবাদি নীতি দিয়ে আর কত সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন! আমরা কোনভাবে বুঝতে পারিনা যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক সহিহ হাদিস শায়খদের দৃষ্টির আড়ালে থাকল! হয়ত তারা মূর্খ! অথবা জ্ঞানপাপী! দুইটার ভিতর তারা কোনটা? তার উত্তর আশা করি শায়খরা দিবেন??
সাহাবাদের মত
সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত ছিলেন যে, ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা জায়েজ নেই। এর বিপরিত মত কোন সাহাবি থেকে পাওয়া যায়নি। ইমাম নববি রহ. এ মাসআলা সংক্রান্ত আলোচনা করতে গিয়ে বলেন-
”وبأنه قول علي وسعد بن ابي وقاص وابن عمر ولم يعرف لهم مخالف في الصحابة”
অর্থাৎ, আলি, সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস, ইবনে উমর রা. এর মাজহাব হল ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। সাহাবাদের মাঝে তাদের সাথে দ্বিমত পোষণকারী কেউ নেই। (আল মাযমু’ শারহুল মুহাযযাব, ২/৮০.)
আরো অনেক সাহাবীর বক্তব্য ইবনে আবদিল বার মালেকি রহ. নকল করেছেন। যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এ মাসআলায় সাহাবাদের ইজমার কথা শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.ও নকল করেছেন। আগ্রহী পাঠকরা “মাজমূয়াতু ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া” ২১/২৬৬ দেখে নিতে পারেন।
যে মাসআলায় সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম ঐক্যমত, এমন একটি মাসআলায় কীভাবে শায়খরা সাহাবাদের ফতোয়ার বিরোধি ফতোয়া দেওয়ার সাহস করলেন! ইমামদের এমন স্পষ্ট বক্তব্য কি শায়খদের দৃষ্টিগোচর হয় নাই!
লা মাযহাবীদের নিকট গ্রহণযোগ্য দুইজন আলেমের বক্তব্য, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. তথাকথিত আহলে হাদিসদের নিকট বরণীয় ব্যক্তিত্ব। যদি তার কথা পুরো উম্মতের আমলে মুতাওয়ারিছের খেলাফ হয় এবং তাদের বিচ্যূত মতের পক্ষে হয়, তখন ইবনে তাইমিয়া বহুত বড় ইসলামিক স্কলার! কিন্তু ইবনে তাইমিয়া যখন বলেন, তারাবীহ বিশ রাকাত, তখন ইবনে তাইমিয়ার দিকে ভ্রক্ষেপ করেন না! নিজেদের মতের পক্ষে হলে ইবনে তাইমিয়া শায়খুল ইসলাম! বিপক্ষে হলে কিসের শায়খুল ইসলাম! চরম দ্বিমূখি নীতি! শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য।
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন-
هل يجوز مس المصحف بغير وضوء أم لا
فأجاب مذهب الأئمة الأربعة أنه لا يمس المصحف إلا طاهر كما قال في الكتاب الذي كتبه رسول الله لعمرو بن حزم أن لا يمس القرآن إلا طاهر
অর্থাৎ, ইবনে তাইমিয়াকে জিজ্ঞসা করা হয়েছিল যে, ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে কিনা? তিনি উত্তর দিলেন যে, চার ইমামের মাজহাব হল, ওজু ছাড়া কুরআনকে স্পর্শ করা যাবে না। যেমনটা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর বিন হাজম রা. কে চিঠিতে লিখেছিলেন যে, ওযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করবে না।( মাযমূয়াতু ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া, ২১/২৬৬.)
অন্য জায়গায় ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন-
أعلم أن القرآن الذي في اللوح المحفوظ هو القرآن الذي في المصحف كما أن الذي في هذا المصحف هو الذي في هذا المصحف بعينة سواء كان المحل ورقا أو أديما أو حجرا أو لحافا فإذا كان من حكم الكتاب الذي في السماء أن لا يمسه إلا المطهرون وجب أن يكون الكتاب الذي في الأرض كذلك لأن حرمته كحرمته
অর্থাৎ, লাউহে মাহফূযে যে কুরআন রয়েছে, সেটা ঐ কুরআন, যা আমাদের মুসহাফে রয়েছে। চাই সেটা পাতায়, হাড্ডি, চামড়া বা পাথরে লেখা হোক। যখন আমাদের নিকট যে কুরআন রয়েছে, তা আসমানের কুরআনের মত, আর আসমানের কুরআনের পবিত্রতা ছাড়া স্পর্শ করা যায় না, এজন্য ওয়াজিব হল, জমিনে যে কুরআন রয়েছে, তার সম্মানও আসমানের কুরআনের মত করতে হবে।( শরহুল উমদা, ১/৩৮৪. শায়খ সউদ সালেহ তাহকিককৃত। )
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ এর এ বক্তব্য থেকে বুঝা গেল যে, লাউহে মাহফূযের কুরআন এবং পৃথিবীর কুরআনের মধ্যে সামান্যতম ব্যবধান নেই। আর লাউহে মাহফূযের কুরআন স্পর্শ করতে হলে পবিত্রতা শর্ত, এজন্য পৃথিবীর কুরআন স্পর্শ করতে হলেও পবিত্রতা শর্ত।
এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল যে, ‘সূরা ওয়াকিয়া’তে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: لا يمسه إلا المطهرون “কুরআনকে পবিত্র সত্মা ছাড়া কেউ স্পর্শ করবে না” এর ব্যাখ্যায় আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ বলেছেন: এখানে পবিত্রসত্মা দ্বারা উদ্দেশ্য হল ফিরিশতারা। আর কুরআন দ্বারা উদ্দেশ্য হল লাওহে মাহফূযের কুরআন। সুতরাং দুনিয়ার কুরআন ওজু ছাড়া স্পর্শ করা যাবে!
এর জবাব মূলত শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বক্তব্যে চলে গেছে। কেননা তিনি বলেছেন, উভয়টি একই কুরআন। সূতরাং উভয়টির জন্য তাহারাত শর্ত। এখানে ইমাম বুখারি রহ. এর উস্তাদ ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ এর বক্তব্য তুলে ধরছি। তিনি বলেন:
قال إسحاق بن راهويه لا يقرأ أحد في المصحف إلا وهو متوضئ وليس ذلك لقول الله عز و جل ( لا يمسه إلا المطهرون ) الواقعة ৭৯
ولكن لقول رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يمس القرآن إلا طاهر
অর্থাৎ, ওজু ছাড়া কেউ কুরআন পড়তে পারবে না এ হুকুম আমরা সূরায়ে ওয়াকিয়ার পূর্বোল্লিখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণ করি না। বরং প্রমান করি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওই হাদিস দ্বারা, যেখানে তিনি বলেছেন, ওজু ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করতে পারবে না।( আলইসতিযকার, ২/৪৭১. দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বায়রুত। )
ইসহাক ইবনে রাহুয়ার মত জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিসের স্পষ্ট বক্তব্যের পর আয়াতের ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। কেননা ওযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না, এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একাধিক সহিহ হাদিস রয়েছে।
শায়খ উসাইমিন রহ. এর বক্তব্য।
শায়খ উসাইমিন রহ.। লা মাজহাবিদের বরণীয় ব্যক্তি। সৌদি আরবের খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন। ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ কর যাবে কি না? এ বিষয়ে তার ফতোয়া নিম্নে উল্লেখ করা হল। তিনি বলেন-
فإن القرآن لا تحل قراءته للجنب وأما من بحدثٍ أصغر فيجوز أن يقرأ القرآن لكن لا يمس المصحف لأن المصحف لا يمسه إلا طاهر لقوله صلى الله عليه وسلم في الكتاب الذي كتبه إلى عمرو بن حزم أن لا يمس القرآن إلا طاهر والمراد بالطاهر الطاهر من الحدثين الأصغر والأكبر
অর্থাৎ, জুনুবি ব্যক্তির জন্য কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েয আছে। কিন্তু ওজুহিন ব্যক্তির জন্য তেলাওয়াত করা জায়েজ আছে। কিন্তু স্পর্শ করতে পারবে না। কেননা মুসহাফ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর বিন হাজম রা. এর নিকট চিটি লিখেছিলেন যে, ওযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করবে না। পবিত্র দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ছোট, বড় উভয় নাপাক থেকে পবিত্র হওয়া।( ফতোয়া শায়খ উসাইমীন, বাব নং, ২০৩.)
শায়খ উসাইমিন রহ. অন্য জায়গায় বলেন-
ومن النصيحة لكتاب الله عزّ وجل أن يقوم الإنسان باحترام هذا القرآن العظيم، فمن ذلك أن لا يمس القرآن إلا وهو طاهر من الحدثين: الأصغر والأكبر، لقول النبي صلى الله عليه وسلم :” لا يمسّ القرآن إلا طاهر”[২৬৭] أو من وراء حائل؛
অর্থাৎ আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে নসিহত হল, মানুষ তার যথাযথ সম্মান করবে। তন্মধ্যে হল ছোট, বড় নাপাক থেকে পবিত্র হওয়া ব্যতিত কুরআন স্পর্শ করবে না। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ কুরআন স্পর্শ করবেনা। (শরহু রিয়াযিস সালেহীন। ২/৩২১. মাকতাবাতুশ শামেলা।)
এ মাসআলা নিয়ে আলোচনা আর দীর্ঘ করছি না। তথাকথিত লা মাজহাবীদের মাথার তাজ এবং বরণীয় দুইজন ব্যক্তি যখন ফতোয়া দিয়েছেন যে, ওযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না, তাদের ফতোয়া বাদ দিয়ে আকরামুযযাম বিন আব্দুস সালামরা এমন বক্তব্য পেশ করতে পারলেন? বিশেষত যে বিষয়ে একাধিক সহিহ হাদিস রয়েছে। যে বিষয়ে সকল সাহাবা, তাবেয়ি, মুহাদ্দিস এবং ফুকাহারা একমত, তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে কুরআন , হাদীস বিবর্জিত মনগড়া একটি মত প্রতিষ্ঠা করা! আবার সেটার পক্ষে জনসমক্ষে গলাবাজি করা! আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।