এক সাথে কুলুখ এবং পানি ব্যবহার, একটি পর্যালোচনা
রেজাউল কারীম আবরার
সম্প্রতি এ মাসআলা নিয়ে আমাদের দেশে বিতর্ক ছড়ানো হয়। যুগ যুগ থেকে চলে আসা একটি মাসআলার বিপরিত কিছু ভাই মূর্খতার কারণে ভিন্ন মতামত পেশ করে সাধারণ মানুষের মাঝে অস্থিরতা তৈরী করেছেন। তারা ফতোয়া দিচ্ছেন যে ইসতেঞ্জায় গিয়ে এক সাথে কুলুখ এবং পানি ব্যবহার করা জায়েজ নেই।
বাংলাদেশের লা মাজহাবি ধারার প্রসিদ্ধ আলেম আবদুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব ‘রাসূল সা. এর ছালাত বনাম প্রচলিত সালাত’ নামে একটি বই লিখেছেন। সেখানে তিনি লিখেন:
‘অতএব আগে ঢিলা বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করে, পরে পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করার এই নিয়ম শরীয়তে জায়েয নয়।’ রাসূল সা. এর ছালাত বনাম প্রচলিত ছালাত: ২৫।
আরেক লা মাজহাবি আলেম মুজাফফার বিন মুহসিন লিখেছেন:
‘পানি থাকা অবস্থায় কুলুখ নেওয়া শরীয়ত সম্মত নয়। পানি না পাওয়া গেলে কুলুখ নেওয়া যাবে। তবে পুনরায় পানি ব্যবহার করতে হবে না।’ জাল হাদীসের কবলে রাসূলুল্লাহ ছাঃ এর ছালাত: ৩৭।
এখানে আমরা লা মাজহাবিদের প্রসিদ্ধ দুইজন আলেমের বক্তব্য তুলে ধরলাম। তাদের একজনের মতে টিস্যু এবং পানি নিয়ে এক সাথে ইসতেঞ্জা করা জায়েজ নেই। আরেকজনের মতে শরিয়ত সম্মত নয়। এবার আমরা দেখব এ ব্যাপারে সৌদি আরবের সালাফি আলেমগণ কী বলেন?
সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ এবং লা মাজবাবিদের বরেণ্য আলেম শায়খ বিন বায রাহি. বলেন:
فالماء عند جميع أهل العلم يكفي عن الحجر، والنبي ﷺ ثبت عنه أنه كان يستنجي بالماء عليه الصلاة والسلام فدل ذلك على أنه يكفي، والحجر وحده يكفي، إذا استجمر بالحجر أو باللبن، أو بالمناديل الطيبة الطاهرة الخشنة حتى يزيل الأذى، وتمسح بها ثلاث مرات أو أكثر فإنه يجزي كما جاءت به السنة عن النبي عليه الصلاة والسلام، فإذا تمسح عن الأذى عن الغائط أو البول بالحجر أو باللبن أو بالخرق النظيفة الطاهرة ثلاث مرات أو أكثر حتى أنقى المحل إنقاء تاماً فإنه يجزئه عن الماء، وإن جمع بينهما فاستنجى بالحجر أو باللبن ثم استنجى بالماء مع ذلك، كان أكمل وأطهر،
অর্থাৎ ইসতেঞ্জায় পাথর ব্যবহার না করে শুধু পানিতে সীমবদ্ধ থাকা সবার মতে যাবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে, তিনি পানি দ্বারা ইসতেঞ্জা করেছেন। এমনভাবে এককভাবে শুধু পাথর দ্বারাও ইসতেঞ্জা করা যাবে। …
যদি উভয়টি একত্রিত করে, অর্থাৎ প্রথমে কুলুখ ব্যবহার করে এবং তারপর পানি ব্যবহার করে। তাহলে সেটা সবচেয়ে পরিপূর্ণ এবং পবিত্রতা অর্জনের সর্বোচ্চ পন্থা। ফতোয়া বিন বাজ: ফতোয়া নং ৩৪২৬।
শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ হাফি. বলেন:
لا مانع عند الاستنجاء -فيما نعلم- من استعمال الماء في أحد المخرجين، والاقتصار على الحجر أو ما في معناه في المخرج الآخر؛ فالواجب فيهما هو إنقاء المحل، حتى تزول النجاسة بالكلية، سواءكان ذلك بالماء أو بالحجر.
والأفضل للمسلم عند قضاء الحاجة أن يجمع في استنجائه بين الماء والحجر؛ لأن ذلك أبلغ في النظافة، ويجوز له أن يقتصر على أحدهما، وإن أمكن أن يكون الماء فهو أفضل
অর্থাৎ ইসতেঞ্জায় পানি ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই। এমনভাবে শুধুমাত্র কুলুখের মাঝেও সীমাবদ্ধ থাকা যাবে। এ ক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো, জায়গাকে এমনভাবে পবিত্র করা, যাতে পরিপূর্ণভাবে নাজাসত দূর হয়ে যায়। চাই সেটা পানি দ্বারা হোক বা অন্য কিছু দ্বারা হোক।
তবে মুসলমানদের জন্য প্রাকৃতিক প্রয়োজন করার পর সর্বোত্তম পন্থা হলো, কুলুখ এবং পানি দ্বারা ইসতেঞ্জা করা। কারণ, এটা পবিত্রতা অর্জনের সর্বোচ্চ পন্থা। তবে যে কোন একটির উপর সীমাবদ্ধ থাকা জায়েজ আছে। ইসলাম ইনফো: ৩৬০৯৪২।
আরবের কুয়েত সরকারের উদ্যোগে প্রকাশিত ‘আল মাওসুয়াহ’ তে এ মাসআলা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে:
إنّ غسل المحلّ بالماء أفضل من الاستجمار ، لأنّه أبلغ في الإنقاء ، ولإزالته عين النّجاسة وأثرها . وفي روايةٍ عن أحمد : الأحجار أفضل ، ذكرها صاحب الفروع . وإذا جمع بينهما بأن استجمر ثمّ غسل كان أفضل من الكلّ بالاتّفاق .
অর্থাৎ পানি দ্বারা ধৌত করা হলো পাথর দ্বারা ইসতেঞ্জা করার চেয়ে উত্তম। কারণ, এর মাধ্যমে নাপাক প্রভাবসহ দূর হয়ে যায়্ ইমাম আহমদ রাহি. এর এক বর্ণনা মতে পাথর দ্বারা ইসতেঞ্জা করা উত্তম। যদি উভয়টি একত্রিত করে, অর্থাৎ প্রথমে কুলুখ ব্যবহার করে পরে পানি ব্যবহার করেন, তাহলে সেটা সবার ঐক্যমতে সর্বোত্তম পন্থা। আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাতিল কুওয়াইতিয়্যাহ: ৪/১১৯।
এখানে আমি যাদের বক্তব্য উল্লেখ করেছি, তাদের কেউই হানাফি মাজহাবের স্কলার নয়। তারা পৃথিবীস্বীকৃত চার ফিকহের নির্দিষ্টভাবে কোন ফিকহের অনুসারী নয়। এবার তাদের বক্তব্যের সাথে আপনি আবদুর রাযযাক বিন ইউসুফ এবং মুজাফফার বিন মুহসিনের বক্তব্য মিলিয়ে দেখি, তাহলে আশা করি বাস্তবতা বুঝতে পারবেন।
এ মাসআলায় আমরা যারা পবিত্রতা অর্জনের জন্য আমরা যারা কুলুখের সাথে পানি ব্যবহার করি, তাদের অসংখ্য দলিল রয়েছে। আমরা দলিলের দিকে না গিয়ে শুধুমাত্র সালাফি ঘরণার বরেণ্য কয়েকজন আলেমের বক্তব্য আপানাদের সামনে পেশ করেছি। এর দ্বারা আশা করি আপনারা বাস্তবতা বুঝতে পেরেছেন।