ওজুতে ঘাড় মাসেহ করা বেদআত?

ঘাড় মাসেহ করা কী বেদআত?

এ মাসআলা নিয়ে বর্তমানে আমাদের দেশে বিতর্ক তৈরী করা হচ্ছে। অনেকে না বুঝে এক কথায় ঘাড় মাসেহ করাকে বেদআত বলে দেন। ওজুতে কেউ ঘাড় মাসেহ না করলেও ওজু হবে। কিন্তু কেউ মাসেহ করলে সে বেদআত করছে, এমনটা বলার সুযোগ নেই।

মিকদাম বিন মা’দিকারাব রাযি. বর্ণনা করেন:
رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَوَضَّأَ فَلَمَّا بَلَغَ مَسْحَ رَأْسِهِ وَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى مُقَدَّمِ رَأْسِهِ فَأَمَرَّهُمَا حَتَّى بَلَغَ الْقَفَا ثُمَّ رَدَّهُمَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ
অর্থাৎ আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওজু করতে দেখেছি। ওজু করতে করতে যখন মাথা মাসেহ্ পর্যন্ত পৌছান, তখন তিনি এভাবে মাথা মাসেহ্ করেন যে, উভয় হাতের তালু মাথার সামনের অংশে স্থাপন করে তা ক্রমান্বয়ে মাথায় পশ্চাদভাগ ( ঘাড়ের সংযোগস্থান)
পর্যন্ত নেন। অতঃপর তিনি পেছনের দিক হতে সামনের দিকে তা শুরুর স্থানে ফিরিয়ে আনেন। আবু দাউদ: ১২২।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু মাথা মাসেহের সময় ঘাড় পর্যন্ত আসতেন, তাহলে এমনিতে ঘাড় মাসেহ হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ঢালাওভাবে সেটাকে বেদআত বলার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া কিছু বর্ণনায় স্পষ্টভাবে ঘাড় মাসেহ করার কথা বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত কয়েকটি বর্ণনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম আজলুনি রাহি. বলেন:
وأما أثر ابن عمر من توضأ ومسح عنقه وقى الغل يوم القيامة فغير معروف،
وقال القاري لكن روى أبو عبيد عن موسى بن طلحة أنه قال من مسح قفاه مع رأسه وقي من الغل . وهو موقوف لكنه في حكم المرفوع إذ لا يقال بالرأي .
ويقويه ما رواه في مسند الفردوس عن ابن عمر مرفوعا بسند ضعيف بلفظ من توضأ ومسح يديه على عنقه أمن من الغل يوم القيامة، ولذا قال أئمتنا مسح الرقبة مستحب أو سنة انتهى .
অর্থাৎ ঘাড় মাসেহ করা সংক্রান্ত ইবনে উমর রাযি. এর বর্ণনা হলো, যে ব্যক্তি ওজু করবে এবং ঘাড় মাসেহ করবে, কিয়ামতের দিন সে জাহান্নামের বেড়ি থেকে মুক্তি পাবে। এটি অপ্রসিদ্ধ বর্ণনা। মোল্লা আলী কারী রাহি. বলেন, আবু উবায়েদ মুসা বিন তালহা এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মাথার সাথে ঘাড় মাসেহ করবে, তাকে বেড়ি পরানো থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। এটি মাওকুফ বর্ণনা। কিন্তু মারফু’ এর বিধানের অন্তর্ভূক্ত হবে। কারণ, এ বিষয়ে তিনি যুক্তি দিয়ে কিছু বলতে পারেন না।
এ বর্ণনাকে শক্তিশালী করে ‘মুসনাদুল ফিরদাউস’ এর আরেকটি মারফু’ বর্ণনা। সেখানে জয়িফ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে ব্যক্তি ওজু করবে এবং ঘাড় মাসেহ করবে, কিয়ামতের দিন জাহান্নামের বেড়ি থেকে নিরাপদ থাকবে। এজন্য আমাদের ইমামগণ বলেন, ঘাড় মাসেহ করা মুস্তাহাব কিংবা সুন্নাত। কাশফুল খাফা: ২/৮৮।

যে দুটি বর্ণনার কথা আজলুনি রাহি. উল্লেখ করেছেন, সে দুটি বর্ণনার স্বপক্ষে আরও অনেকগুলি বর্ণনা পাওয়া যায়। ভিন্ন ভিন্নভাবে সেগুলো নিয়ে কথা থাকলেও একটি অপরটির প্রামাণিকতাকে শক্তিশালী করে। এজন্য আমরা দেখি ইমামগণও ওজুতে ঘাড় মাসেহের কথা বলে গেছেন।

ইমাম আহমদ রাহি. এর ছেলে আবদুল্লাহ বিন আহমদ বর্ণনা করেন:
رأيته إذا مسح برأسه وأذنيه مسح قفاه
অর্থাৎ আমি আমার পিতা আহমদ বিন হাম্বলকে দেখেছি যে, যখন তিনি মাথা এবং উভয় কান মাসেহ করতেন, তখন ঘাড়ও মাসেহ করতেন। আল মুগনি: ১/৮৮।

হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত কিতাব ‘ফতোয়া শামী’ তে বলা হয়েছে:
ﻗﻮﻟﻪ (ﻭﻣﺴﺢ اﻟﺮﻗﺒﺔ) ﻫﻮ اﻟﺼﺤﻴﺢ ﻭﻗﻴﻞ ﺇﻧﻪ ﺳﻨﺔ ﻛﻤﺎ ﻓﻲ اﻟﺒﺤﺮ ﻭﻏﻴﺮﻩ
অর্থাৎ বিশুদ্ধ মতানুসারে ঘাড় মাসেহ করা হলো মুস্তাহাব। তবে ‘বাহরুর রায়েক’ সহ কোন কোন কিতাবে সেটাকে সুন্নাত বলা হয়েছে। ফতোয়া শামী: ১/১২৪।

শাফেয়ি মাজহাবের ইমাম গাজালি রাহি. লিখেন:
الثانية عشرة مسح الرقبة
অর্থাৎ ওজুর ১২ নং সুন্নাত হলো ঘাড় মাসেহ করা।আল ওয়াসীত: ১/২৮৮।

এখানে চাইলে আরও অনেক রেফারেন্স উল্লেখ করা যাবে। আলোচনা সংক্ষেপ করার জন্য আমরা কয়েকটি দলিল তুলে ধরলাম। এর থেকে আশা করি পাঠক বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, ঘাড় মাসেহ করাকে যারা বেদআত বলে প্রচার করছেন, আসলে তাদের বক্তব্য সঠিক নয়। দ্বীনের ক্ষেত্রে তারা বাড়াবাড়ির স্বীকার হয়েছেন।

 

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *