মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করার কথা কী হাদীসে নেই?
ওজুতে কতটুকু পরিমাণ মাথা মাসেহ করা ফরজ? এ ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে। হানাফি মাজহাবে মাথার চারভাগের এক ভাগ মাসেহ করা ফরজ। বর্তমানে জনসমক্ষে অপপ্রচার করা হচ্ছে যে, এ মতটি ভিত্তিহীন। অথচ এ মতের পক্ষে অনেকগুলো দলিল রয়েছে। আমরা কয়েকটি দলিল পাঠকের সামনে পেশ করছি।
আনাস বিন মালিক রাযি. বর্ণনা করেন:
رَأَيْتُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- يَتَوَضَّأُ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ قِطْرِيَّةٌ ، فَأَدْخَلَ يَدَيْهِ مِنْ تَحْتِ الْعِمَامَةِ فَمَسَحَ مُقَدَّمَ رَأْسِهِ ، وَلَمْ يَنْقُضِ الْعِمَامَةَ
অর্থাৎ আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওজু করা অবস্থায় দেখলাম,এমতাবস্থায় তার মাথায় কাতারি কাপড়ের পাগড়ি ছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাগড়ির নিচ দিয়ে হাত প্রবেশ করালেন এবং মাথার সামনের অংশ মাসেহ করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাগড়ি খুলেন নি। আবু দাউদ: ১৪৭, ইবনে মাজাহ: ৫৬৪, আল মুসতাদরাক: ৬০৩।
এ হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধুমাত্র মাথার সামনের অংশ মাসেহ করেছিলেন। আর সামনের অংশ হিসাব করলে মাথার চার ভাগের এক ভাগ হয়।
মুগিরা বিন শুবা রাযি. বর্ণনা করেন:
تَخَلَّفَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَتَخَلَّفْتُ مَعَهُ فَلَمَّا قَضَى حَاجَتَهُ قَالَ ্র أَمَعَكَ مَاءٌ গ্ধ. فَأَتَيْتُهُ بِمَطْهَرَةٍ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ وَوَجْهَهُ ثُمَّ ذَهَبَ يَحْسِرُ عَنْ ذِرَاعَيْهِ فَضَاقَ كُمُّ الْجُبَّةِ فَأَخْرَجَ يَدَهُ مِنْ تَحْتِ الْجُبَّةِ وَأَلْقَى الْجُبَّةَ عَلَى مَنْكِبَيْهِ وَغَسَلَ ذِرَاعَيْهِ وَمَسَحَ بِنَاصِيَتِهِ وَعَلَى الْعِمَامَةِ
অর্থাৎ আমি একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে ছিলাম। তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন শেষ করে আমাকে বললেন, তোমার সাথে পানি আছে?
আমি তখন একটি পানির পাত্র নিয়ে আসলাম। তিনি প্রথমে হাতের তালু এবং মুখ ধৌত করলেন। এরপর হাত হাত বের করার জন্য কাপড় গোছাতে চাইলে জুব্বা সংকীর্ণ হয়ে গেল। তখন জুব্বার নিচ দিয়ে হাত বের করলেন এবং জুব্বাকে কাধে ফেলে রাখলেন। এরপর হাত ধৌত করলেন এবং মাথার সম্মুখ অংশ মাসেহ করলেন। বাকি অংশ পাগড়ির উপর মাসেহ করলেন।. মুসলিম: ৬৫৬।
এ হাদিসে আমরা দেখতে পেলাম যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূল মাথা মাসেহ করেছিলেন শুধু সামনের অংশ। বুঝা গেল সামনের অংশ মাসেহ করলে ফরজ আদায় হয়ে যায়। আর সামনের অংশ হিসাব করলে চার ভাগের এক ভাগ হয়। বাকি অংশ যেহেতু ফরজ নয়, এজন্য ঐচ্ছিক হিসেবে তিনি পাগড়ির উপর মাসেহ করে নেন।
আতা রাহি. বলেন:
أَنَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ فَحَسَرَ الْعِمَامَةَ وَمَسَحَ مُقَدَّمَ رَأْسِهِ ، أَوْ قَالَ نَاصِيَتَهُ }
অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওজু করলেন। পাগড়ি খুললেন এবং মাথার অগ্রভাগ মাসেহ করলেন। আস সুনানুল কুবরা: ২৬৫।
সনদের দিক থেকে এ বর্ণনাটি মুরসাল।
জুহরি রাহি. সালিম এর সূত্রে বর্ণনা করেন:
أنه كان يمسح بمقدم رأسه إذا توضأ
অর্থাৎ ইবনে উমর রাযি. যখন যখন ওজু করতেন, তখন মাথার সামনের অংশ মাসেহ করতেন। শারহু মাআনিল আছার: ১/৩২।
আশা করি এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, হানাফি মাজহাবে যে চারভাগের এক ভাগ মাসেহকে ফরজ বলা হয়েছে, সেটা দলিলের আলোকে অনেক সুসংহত। এটাকে ভিত্তিহীন বলে মূলত সাধারণ মানুষের মাঝে ফিতনা সৃষ্টি করা হচ্ছে।