রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী আমৃত্যু রফয়ে ঈদাইন করেছেন?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী আমৃত্যু রফয়ে ঈদাইন করেছেন?

আমাদের দেশে যারা রফয়ে ঈদাইন করেন, তারা দাবি করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত রফয়ে ঈদাইন করেছেন।
আমরা আগেই বলেছি যে রফয়ে ঈদাইন করা না করা নিয়ে সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে মতভিন্নতা রয়েছে। এক দল করেছেন, আরেকদল করেন নি। এজন্য কেউ করলে যেমন তার নামাজকে জাল বলা যাবে না, তেমনভাবে কেউ না করলেও তার নামাজকে জাল বলা যাবে না।
ইসলামের শুরুর দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের অনেক জায়গায়ই রফফে ঈদাইন করতেন। মোট ৭ টি জায়গায় রফয়ে ঈদাইন এর কথা হাদীসে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরুপ কয়েকটি হাদীস আপনাদের সামনে পেশ করছি।

সিজদা থেকে দাঁড়িয়ে রফয়ে ঈদাইন করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা থেকে মাথা তুলতেন, তখন রফয়ে ঈদাইন করার কথা আবু দাউদ শরীফের হাদীসে পাওয়া যায়। ওয়াইল বিন হুজর রাযি. বর্ণনা করেন:
صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَكَانَ إِذَا كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ – قَالَ – ثُمَّ الْتَحَفَ ثُمَّ أَخَذَ شِمَالَهُ بِيَمِينِهِ وَأَدْخَلَ يَدَيْهِ فِى ثَوْبِهِ قَالَ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ أَخْرَجَ يَدَيْهِ ثُمَّ رَفَعَهُمَا وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ رَفَعَ يَدَيْهِ ثُمَّ سَجَدَ وَوَضَعَ وَجْهَهُ بَيْنَ كَفَّيْهِ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ أَيْضًا رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى فَرَغَ مِنْ صَلاَتِهِ.
অর্থাৎ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে নামাজ পড়লাম। তিনি যখন তাকবিরে তাহরিমা দিলেন, হাত তুললেন।…. এমনভাবে যখন রুকু করার ইচ্ছে করলেন, তখন হাত বের করে হাত তুললেন। এমনভাবে যখন রুকু থেকে মাথা তুললেন, তখনও তিনি হাত তুললেন। এরপর তিনি সিজদা করলেন। সিজদার সময় দুই হাতের তালুর মধ্যখানে মাথা রাখলেন। এরপর যখন তিনি সিজদা থেকে মাথা তুললেন, তখনও এমনভাবে হাত তুললেন। এভাবে তিনি নামাজ শেষ করলেন। আবু দাউদ: ৭২৩।
সালাফীদের বরণীয় শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রাহি. এ হাদীসকে সহিহ বলেছেন।. সহিহ আবি দাউদ: ৬৬৪।

এ হাদীসে আমরা পেলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদা শেষ করে মাথা তুলে যখন নতুন রাকআত শুরু করতেন, তখন রফয়ে ঈদাইন করতেন। অথচ যারা বর্তমানে সহিহ হাদীসের শ্লোগান দেয়, তারা কিন্তু এ সহিহ হাদীসের উপর আমল করে না। তারাও বলে যে, এ হাদীসের বিধান রহিত হয়ে গেছে।

দুই সিজদার মাঝে বসে রফয়ে ঈদাইন করা
এমনভাবে আরেক হাদীসে পাওয়া যায় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রথম সিজদা শেষ করে মাথা তুলে বসতেন, তিনি রফয়ে ঈদাইন করতেন। ইমাম নাসাঈ রাহি. নাসাঈ শরীফ এ একটি পরিচ্ছেদের নামকরণ করেছেন এভাবে:
باب رفع اليدين عند الرفع من السجدة الأولى
অর্থাৎ প্রথম সিজদা থেকে মাথা তুলে রফয়ে ঈদাইন করা সংক্রান্ত অধ্যায়।
সে অধ্যায়ে তিনি মালিক বিন হুওয়াইরিছ রাযি. এর বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। তিনি বর্ণনা করেন:
أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ فَذَكَرَ نَحْوَهُ وَزَادَ فِيهِ وَإِذَا رَكَعَ فَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنْ الرُّكُوعِ فَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنْ السُّجُودِ فَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজে প্রবেশ করতেন, তখন রফয়ে ঈদাইন করতেন। এমনভাবে যখন তিনি রুকু করতেন, তখনও রফয়ে ঈদাইন করতেন। এমনভাবে যখন রুকু থেকে মাথা তুলতেন, তখনও রফয়ে ঈদাইন করতেন। এমনভাবে যখন তিনি সিজদা থেকে মাথা তুলতেন, তখনও রফয়ে ঈদাইন করতেন। নাসাঈ: ১১৪৩. শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহি. তাহকিককৃত।

এ হাদীসকেও সালাফীদের বরণীয় শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রাহি. সহিহ বলেছেন।. সহিহ ও জয়িফ সুনানে নাসাঈ: ১০৮৭।

এ হাদীসে আমরা পেলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম সিজদা শেষ করে মাথা তুলে যখন বসতেন, তখন তিনি রাফয়ে ঈদাইন করতেন। সনদের দিক থেকে সহিহ হলেও এ হাদীসের উপর লা মাজহাবি ভাইরা আমল করেন না। তারা মনে করেন এ হাদীসের বিধান রহিত হয়ে গেছে।

তৃতীয় রাকআতের শুরুতে রফয়ে ঈদাইন করা
কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্বিতীয় রাকআত শেষ করে তৃতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়াতেন, তখন রফয়ে ঈদাইন করতেন। নাফে বর্ণনা করেন:
أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا قَامَ مِنْ الرَّكْعَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ وَرَفَعَ ذَلِكَ ابْنُ عُمَرَ إِلَى نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থাৎ ইবনে উমর রাযি. যখন নামাজ শুরু করতেন, তখন তাকবির বলে হাত তুলতেন। যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন, তখন হাত তুলতেন। এমনভাবে যখন দ্বিতীয় রাকআত থেকে দাঁড়াতেন, তখনও হাত তুলতেন। ইবনে উমর রাযি. বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। বুখারী: ৭৩৯।

আবু হুমায়দ আস সায়ীদী রাযি. এর লম্বা হাদীস আবু দাউদ এবং তিরমিযি শরীফ এ এসেছে। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পুরো নামাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ يُكَبِّرُ حَتَّى يَقِرَّ كُلُّ عَظْمٍ فِى مَوْضِعِهِ مُعْتَدِلاً ثُمَّ يَقْرَأُ ثُمَّ يُكَبِّرُ فَيَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ يَرْكَعُ وَيَضَعُ رَاحَتَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ ثُمَّ يَعْتَدِلُ فَلاَ يَصُبُّ رَأْسَهُ وَلاَ يُقْنِعُ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ فَيَقُولُ ্র سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ গ্ধ. ثُمَّ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ مُعْتَدِلاً ثُمَّ يَقُولُ ্র اللَّهُ أَكْبَرُ গ্ধ. ثُمَّ يَهْوِى إِلَى الأَرْضِ فَيُجَافِى يَدَيْهِ عَنْ جَنْبَيْهِ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ وَيَثْنِى رِجْلَهُ الْيُسْرَى فَيَقْعُدُ عَلَيْهَا وَيَفْتَحُ أَصَابِعَ رِجْلَيْهِ إِذَا سَجَدَ وَيَسْجُدُ ثُمَّ يَقُولُ ্র اللَّهُ أَكْبَرُ গ্ধ. وَيَرْفَعُ رَأْسَهُ وَيَثْنِى رِجْلَهُ الْيُسْرَى فَيَقْعُدُ عَلَيْهَا حَتَّى يَرْجِعَ كُلُّ عَظْمٍ إِلَى مَوْضِعِهِ ثُمَّ يَصْنَعُ فِى الأُخْرَى مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ إِذَا قَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ كَمَا كَبَّرَ عِنْدَ افْتِتَاحِ الصَّلاَةِ ثُمَّ يَصْنَعُ ذَلِكَ فِى بَقِيَّةِ صَلاَتِهِ حَتَّى إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ الَّتِى فِيهَا التَّسْلِيمُ أَخَّرَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ مُتَوَرِّكًا عَلَى شِقِّهِ الأَيْسَرِ. قَالُوا صَدَقْتَ هَكَذَا كَانَ يُصَلِّى -صلى الله عليه وسلم-.
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজে দাঁড়াতেন, তখন কাঁধ বরাবর হাত তুলতেন।
এরপর তিনি নামাজের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিয়ে এক পর্যায়ে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্বিতীয় রাকআত শেষ করে দাঁড়াতেন, তখন তাকবির বলতেন এবং হাত তুলতেন কাধ বরাবর। যেমনভাবে তিনি হাত তুলতেন নামাজের শুরুতে। আবু দাউদ: ৭৩০।

এ দুই হাদীসে আমরা পেলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় রাকআত শেষ করে যখন দাঁড়াতেন, তখন তাকবির বলতেন। সনদের দিক থেকে এ হাদীসগুলো সহিহ হলেও বর্তমানের সালাফিরা এ হাদীসের উপর আমল করে না। তারাও মনে করে যে., তৃতীয় রাকআতের শুরুতে হাত তুলার বিধান রহিত হয়ে গেছে।

প্রত্যেক উঠা বসায় রফয়ে ঈদাইন
কিছু হাদীসে পাওয়া যায় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক উঠা বসায় হাত তুলতেন। উমায়ের বিন হাবিব রাযি. বর্ণনা করেন:
كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يرفع يديه مع كل تكبيرة في الصلاة المكتوبة
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরজ নামাজের প্রত্যেক তাকবিরে হাত তুলতেন। সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৬১।
এ হাদীসকেও লা মাজহাবিদের বরণীয় শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানি রাহি. সহিহ বলেছেন। সহিহ ইবনে মাজাহ: ৭০১।

এ সহিহ হাদীসে আমরা পেলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক উঠাবসায় হাত তুলতেন। কিন্তু এ হাদীসের উপরও লা মাজহাবী ভাইয়েরা আমল করেন না। তারা মনে করেন এ হাদীসের বিধানও রহিত হয়ে গেছে। শুধুমাত্র তাকবিরে তাহরিমা, রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা তুলে রফয়ে ঈদাইন করতে হবে।

এখানে প্রথম কথা হলো, তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত তুলা নিয়ে কারও মাঝে কোন মতভিন্নতা নেই। আমাদের মতে পূর্বোক্ত হাদীসগুলোর কারণে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠে হাত তুলার আর কোন বিধান নেই। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমৃত্যু রফয়ে ঈদাইন করেছেন মর্মে কোন হাদীস পাওয়া যায় না।
মজার কথা হলো, এ ব্যাপারে আমাদের লা মাজহাবি ভাইয়েরা জাল হাদীসের আশ্রয় নিয়ে নেন। একটি জাল হাদীস পেশ করে তারা প্রমাণ করতে চান যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা তুলে রফয়ে ঈদাইন করেছেন। আমরা সে জাল হাদীস নিয়ে পর্যালোচনা করছি।
নাফে রাহি. ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণনা করেন:
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا افتتح الصلاة رفع يديه وإذا ركع وإذا رفع رأسه من الركوع وكان لا يفعل ذلك في السجود فما زالت تلك صلاته حتى لقي الله تعالى
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাহ শুরু করতেন, তখন হাত তুলতেন। এমনভাবে যখন রুকু করতেন এবং রুকু থেকে মাথা তুলতেন, তখনও হাত তুলতেন। সিজদায় তিনি এমনটি করতেন না। মৃত্যু পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে নামাজ পড়েছেন। আল খিলাফিয়্যাত: ১৫৭৫, বায়হাকী।

এ বর্ণনা পেশ করে তারা দাবী করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা তুলে রফয়ে ঈদাইন করেছেন।
এ বর্ণনাটি জাল। এটি কোনভাবে দলিলযোগ্য বর্ণনা নয়। জাল হওয়ার কারণ বুঝতে হলে আগে আমাদের হাদীসের পুরো সনদ দেখতে হবে। বায়হাকী রাহি. বর্ণিত পুরো হাদীসের সনদ হলো:
أخبرنا أبو عبد الله الحافط ثنا جعفر بن محمد بن نصير بن القاسم الخواص ثنا عبد الرحمن بن قريش بن خزيمة الهروي ثنا عبد الله بن احمد الدحيمي ثنا الحسين بن عبد الله بن حمران ثنا عصمة بن محمد الأنصاري ثنا موسى بن عقبة عن نافع عن ابن عمر
অর্থাৎ ইমাম বায়হাকী রাহি. এ হাদীস বর্ণনা করেছেন হাফিজ আবু আবদুল্লাহ থেকে, তিনি এ হাদীস বর্ণনা করেছেন জাফর বিন মুহাম্মাদ বিন নুসায়র বিন কাসিম আল খাওয়াস থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন আবদুর রহমান বিন কুরাইশ বিন বিন খুযাইমা আল হারাওয়ী থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন আবদুল্লাহ বিন আহমদ আদ দুহাইমি থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন হুসাইন বিন আবদুল্লাহ বিন হুমরান থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন ঈসমা বিন মুহাম্মাদ আল আনসারী থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন মুসা বিন উকবা থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন নাফে থেকে, তিনি ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণনা করেছেন।
এ বর্ণনা জাল হওয়ার কারণে হলো, এ বর্ণনায় দুইজন মিথ্যাবাদী বর্ণনাকারী রয়েছে। আমরা সেই দুইজন বর্ণনাকারী নিয়ে পর্যালোচনা করছি।
এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হলেন আবদুর রহমান বিন কুরাইশ বিন খুযাইমা। তার ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম যাহাবী রাহি. লিখেন:
عبدالرحمن بن قريش بن خزيمة ، هروى . سكن بغداد . اتهمه السليمانى بوضع الحديث
অর্থাৎ আবদুর রহমান বিন কুরাইশ বিন খুজাইমা হারাওয়ী। তিনি বাগদাদে অবস্থান করতেন। সুলাইমানি তাকে হাদীস জাল করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। মিজানুল এ’তেদাল: ৩/৪৯৮, জীবনী নং ৪৯৪৮।

এ বর্ণনার আরেকজন বর্ণনাকারী হলেন ঈসমা বিন মুহাম্মাদ আল আনসারী। তার ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম যাহাবী রাহি. লিখেন:
قال أبو حاتم : ليس بقوى . وقال يحيى : كذاب ، يضع الحديث . وقال العقيلى : حدث بالبواطيل عن الثقات . وقال الدارقطني وغيره : متروك
قال ابن عدى : عصمة بن محمد بن فضالة بن عبيد الانصاري مدنى ، كل حديثه غير محفوظ
অর্থাৎ ইমাম আবু হাতিম বলেন, তিনি শক্তিশালী বর্ণনাকারী নয়।
ইমাম ইয়াহইয়া বিন মায়ীন বলেন, তিনি মিথ্যুক, হাদীস জাল করতেন।
ইমাম উকায়লী বলেন, তিনি বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী থেকে বাতিল হাদীস বর্ণনা করতেন।
ইমাম দারা কুতনী এবং আরও কেউ কেউ বলেন, তিনি পরিত্যাজ্য বর্ণনাকারী।
ইমাম ইবনে আদী বলেন, তার কোন বর্ণনা সংরক্ষিত নয়। মিজানুল এতেদাল: ৫/৫৭, জীবনী নং ৫৬৩১।

এ দুইজন বর্ণনাকারী থাকার কারণে শাস্ত্রীয় মানদ-ে এ বর্ণনাটি জাল। এ হাদীস দিয়ে কখনো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমৃত্যু রফয়ে ঈদাইন করেছেন বলে দলিল দেওয়া যাবে না। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

 

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *