ইকামতের বাক্যাবলি দুইবার করে বলবে

ইকামতের বাক্যাবলি দুইবার করে বলবে

একামতের বাক্যাবলি একবার করেও বলা যায়। দুইবার করেও বলা যায়। উভয়টি সুন্নাহসম্মত আমল। আমাদের দেশে বর্তমানে কিছু ভাই আত্মপ্রকাশ করেছেন, যারা দুই বার করে ইকামতের বাক্য বলাকে সরাসরি ভুল এবং সহিহ হাদিস বিরোধী বলে প্রচার করছেন! আমরা আজ এ সংক্রান্ত কিছু বর্ণনা তুলে ধরব।
*আবদুর রহমান বিন আবি লায়লা বর্ণনা করেন:
أَخْبَرَنِي أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، { أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ زَيْدٍ الْأَنْصَارِيَّ رَأَى فِي الْمَنَامِ الْأَذَانَ فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ : عَلِّمْهُ بِلَالًا فَأَذَّنَ مَثْنًى مَثْنًى ، وَأَقَامَ مَثْنًى مَثْنًى
অর্থাৎ আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ বর্ণনা করেছেন : আবদুল্লাহ বিন জায়দ আল আনসারি স্বপ্নে আজান দেখেন। এরপর তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাকে সে সম্পর্কে অবগত করেন। তিনি বললেন, তুমি বিলাল রাযি. কে সেটা শিক্ষা দাও। বিলাল রাযি. তখন দুইবার দুইবার করে আজান দিলেন এবং দুইবার দুইবার করে ইকামতও দিলেন। তাহাবি: ১/১০১, সহিহ ইবনে খুজাইমা: ৩৮০।

এ হাদিস সম্পর্কে ইবনে হাজম রাহি. বলেন:
وهذا إسناد في غاية الصحة
অর্থাৎ এ সনদটি চূড়ান্ত পর্যায়ের সহিহ। আল মুহাল্লা: ৬/৩২১।

আবু মাহজুরা রাযি. বর্ণনা করেন:
أَن النَّبِي [ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم َ ] علمه الْأَذَان تسع عشرَة كلمة ، وَالْإِقَامَة سبع عشرَة كلمة
অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আজানের বাক্য শিখিয়েছেন ১৯ টি এবং ইকামতের বাক্য শিখিয়েছেন ১৭ টি। তিরমিজি: ১৯২, নাসাঈ: ৬৩০।
এ হাদিসটি বর্ণনা করার পর ইমাম তিরমিজি রাহি. বলেন:
هَذَا حَدِيث حسن صَحِيح
অর্থাৎ হাদিসটি হাসান এবং সহিহ।

ইবনে আবি লায়লা বর্ণনা করেন:
حَدَّثَنَا أَصْحَابُنَا ؛ أَنَّ رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ جَاءَ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ ، إِنِّي لَمَّا رَجَعْتُ الْبَارِحَةَ وَرَأَيْتُ مِنَ اهْتِمَامِكَ ، رَأَيْتُ كَأَنَّ رَجُلاً قَائِمًا عَلَى الْمَسْجِدِ عَلَيْهِ ثَوْبَانِ أَخْضَرَانِ فَأَذَّنَ ، ثُمَّ قَعَدَ قَعْدَةً ، ثُمَّ قَامَ فَقَالَ مِثْلَهَا ، غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ : قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ ،
অর্থাৎ আমাকে আমার শিক্ষকগণ তথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ বর্ণনা করেছেন যে, আনসার গোত্রের একজন ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! গতকাল আপনার পেরেশানি দেখে যখন আমি ফিরে গিয়েছিলাম, তখন স্বপ্নে দেখলাম এক ব্যক্তি যেন মসজিদে দাঁড়িয়ে আছে। তার পরণে ছিল সবুজ রঙয়ের দুটি কাপড়। সে আজান ছিল। এরপর কিছুক্ষণ বসল। এরপর দাঁড়িয়ে আবার আজানের মতো বলল। তবে এবার মাঝে ক্বাদ ক্বামাতিস সালাত’ বৃদ্ধি করল। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২১৩৭, আবু দাউদ: ৫০৬।

আবু মাহজুরা রাযি. বর্ণনা করেন:
عَلَّمَنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الأَذَانَ تِسْعَ عَشْرَةَ كَلِمَةً وَالإِقَامَةَ سَبْعَ عَشْرَةَ كَلِمَةً ، الأَذَانُ : اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ ، حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ ، حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ ، حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ.
وَالإِقَامَةُ : اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ ، حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ ، حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ ، حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ ، قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ ، قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
অর্থাৎ আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৯ বাক্যে আজান এবং ১৭ বাক্যে ইকামত শিখিয়েছেন। আজান হলো:
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ
হাইয়া আলাস সালাহ হাইয়া আলাস সালাহ
হাইয়া আলাল ফালাহ হাইয়া আলাল ফালাহ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
আর আমাকে ইকামত শিখিয়েছেন এভাবে:
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ
হাইয়া আলাস সালাহ হাইয়া আলাস সালাহ
হাইয়া আলাল ফালাহ হাইয়া আলাল ফালাহ
ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২১৩২, আবু দাউদ: ৫০২।

এ হাদিসে আজানের বাক্যের কথা ১৯ টি বলা হয়েছে। অর্থাৎ আশহাদু আল্লা ইলাহ এবং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ প্রথম দুইবার আস্তে বলে পরে দুইবার জোরে বলার কথা বলা হয়েছে। পরিভাষায় এটাকে তারজি বলে। মূলত একবার সফরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুয়াজ্জিন আজান দিচ্ছিলেন। আবু মাহজুরা রাযি. সেটাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে ডেকে নিয়ে বললেন, কীভাবে আজান দিচ্ছিলে? এখানে দাও। তিনি যেহেতু কাফের ছিলেন, এজন্য আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ প্রথমে আস্তে বলেছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, আবার বলো। তিনি আবার বলেছিলেন। এ হিসেবে আজানের বাক্য ১৯ টি হয়ে যায়।

আবদুল্লাহ বিন জায়দ রাযি. বর্ণনা করেন:
كَانَ أَذَان رَسُول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم َ شفعا شفعا فِي الْأَذَان وَالْإِقَامَة ”
অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আজান এবং ইকামত ছিল জোড়া জোড়া শব্দে। তিরমিজি: ১৯৪।
এ হাদিস বর্ণনা করার পর ইমাম তিরমিজি রাহি. বলেন:
حديث عبد الله بن زيد رواه وكيع عن الأعمش عن عمرو بن مرة عن عبد الرحمن بن أبي ليلى [ قال حدثنا أصحاب محمد صلى الله عليه و سلم ] أن عبد الله بن زيد رأي الأذان في المنام وقال شعبة عن عمرو بن مرة عن عبد الرحمن بن أبي ليى أن عبد الله بن زيد رأى الأذان في المنام وهذا أصح من حديث ابن أبي ليلى و عبد الرحمن بن أبي ليلى لم يسمع من عبد الله بن زيد وقال بعض أهل العلم الأذان مثنى مثنى والإقامة مثنى مثنى وبه يقول سفيان [ الثوري ] و ابن المبارك وأهل الكوفة [ قال أبو عيسى ابن أبي ليلى هو محمد بن عبد الرحمن بن أبي ليلى كان قاضي الكوفة ولم يسمع من أبيه شيئا إلا أنه يروى عن رجل عن أبيه
অর্থাৎ আবদুল্লাহ বিন জায়দ এর হাদিস ওয়াকী বর্ণনা করেছেন আ’মাশ থেকে, তিনি আমর বিন মুররা থেকে, তিনি আবদুর রহমান বিন আবি লায়লা থেকে, তিনি সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ বিন জায়দ রাযি. স্বপ্নে আজান দেখেন। এটি ইবনে আবি লায়লার বর্ণনা থেকে অধিকতর বিশুদ্ধ। আবদুর রহমান বিন আবি লায়লা আবদুল্লাহ বিন জায়দ থেকে শুনেন নি। এক দল আলেমের মতে আজান এবং একামত জোড়া জোড়া শব্দে হবে। সুফিয়ান সাওরি রাহি. এবং কুফাবাসী এমন মত পোষণ করেছেন।
ইমাম তিরমিজি বলেন: ইবনে আবি লায়লা হলেন মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান বিন আবি লায়লা। তিনি কুফার বিচারক ছিলেন। তিনি তার পিতা থেকে কোন হাদিস শুনেন নি। তবে একজন বর্ণনাকারী সূত্রে তিনি তার পিতা থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।

আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ বর্ণনা করেন:
عن بلال أنه كان يثني الأذان ويثني الإقامة
অর্থাৎ বিলাল রাযি. আজানের বাক্যগুলো দুইবার করে এবং ইকামতের বাক্যগুলো দুইবার করে বলতেন। তাহাবি: ১/১০২, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ১/৪৬২।
এ হাদিস সম্পর্কে ইবনুত তুরকুমানি রাহি. বলেন:
هذا إسناد جيد
অর্থাৎ এটি একটি উত্তম সনদ।. আল জাওহারুন নাকী: ১/৪২৪।

খানে আমরা ইকামতের বাক্য দুইবার করে বলার পক্ষে অসংখ্য সহিহ হাদিস উল্লেখ করলাম। এছাড়াও আরও অসংখ্য সাহাবি এবং তাবিয়ির আমল ইমাম আবু বকর ইবনে শায়বা রাহি. ‘আল মুসান্নাফ’ এ, ইমাম তাহাবি রাহি. ‘শারহু মাআনিল আছার’ এ উল্লেখ করেছেন। এজন্য আমাদের আমল হাদিসের আলোকে অত্যন্ত সুসংহত। এটা নিয়ে সমাজে যারা ফিতনা করে বেড়াচ্ছেন, আমরা তাদের হেদায়াতের দোয়া করি।

 

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *