রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী হওয়ার দলিল
শরীয়তে দলিল হল চারটি। কুরআন, সুন্নাহ , ইজমা এবং কিয়াস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শেষ নবী, একথা শরীয়তের চারটি দলিল দ্বারা প্রমাণিত।
প্রথমে এ সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত দেখুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيماً
অর্থ. মুহাম্মাদ তোমাদের কারো পিতা নয়। তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ তায়ালা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত।. সূরা আহযাব, আয়াত নং, ৪০
খতমে নবুওত সংক্রান্ত হাদীস
কুরআনে যেহেতু স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, সে মাসআলা হাদীসে পাওয়া না গেলেও কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু আমরা এ বিষয়টি এত অধিক সংখ্যক হাদীসে পাই, সব মিলিয়ে যেগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ে। এখানে শুধূমাত্র কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করছি।
বুখারী শরীফের কথা সকলেই শুনেছি। ইমাম বুখারী রহ. একটি অধ্যায়ের নামকরণ করেছেন এভাবে-
بَاب خَاتِمِ النَّبِيِّينَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী হওয়া সংক্রান্ত এ পরিচ্ছেদ।
সে পরিচ্ছেদে তিনি বেশ কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِنَّ مَثَلِي وَمَثَلَ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِي كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى بَيْتًا فَأَحْسَنَهُ وَأَجْمَلَهُ إِلَّا مَوْضِعَ لَبِنَةٍ مِنْ زَاوِيَةٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَطُوفُونَ بِهِ وَيَعْجَبُونَ لَهُ وَيَقُولُونَ هَلَّا وُضِعَتْ هَذِهِ اللَّبِنَةُ قَالَ فَأَنَا اللَّبِنَةُ وَأَنَا خَاتِمُ النَّبِيِّينَ
অর্থাৎ আমার এবং আমার পূর্ববর্তি নবীদের উপমা হল এমন লোকের ন্যায়, যে দৃষ্টিনন্দন সুরম্য একটি গৃহ নির্মাণ করেছে। তবে একটি ইটের জায়গা খালি রেখেছে। মানুষ ঘর দেখতে এসে আশ্চর্য হয়ে বলে, হায় যদি এ খালি ইটের জায়গা পূরণ করা হত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি হলাম সে ইট। আমি হলাম শেষ নবী। বুখারী, হাদীস নং ৩৫৩৫, শায়খ যুহাইর বিন নাসের তাহকীককৃত।
মুসলিম শরীফেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী হওয়া সংক্রান্ত একটি অধ্যায় রয়েছে। সেখানে প্রথমে আবু হুরায়রা রা. এর পূর্বোক্ত হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। তবে শব্দের কিছুটা তারতাম্য রয়েছে। মুসলিমের রেওয়ায়াত হল-
مثلي ومثل الأنبياء كمثل رجل بنى بنيانا فأحسنه وأجمله فجعل الناس يطيفون به يقولون ما رأينا بنيانا أحسن من هذا إلا هذه اللبنة فكنت أنا تلك اللبنة
অর্থাৎ আমার এবং আমার পূর্ববর্তি নবীদের উপমা হল এমন লোকের ন্যায়, যে দৃষ্টিনন্দন সুরম্য একটি গৃহ নির্মাণ করেছে। তবে একটি ইটের জায়গা খালি রেখেছে। মানুষ ঘর দেখতে এসে আশ্চর্য হয়ে বলে, আমরা এত সুন্দর ঘর জীবনে দেখি নি। তবে এ ইটটি থাকলে আরো ভালো হত। আমি হলাম সে ইট। মুসলিম, হাদীস নং ২২৮৬, শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত।
জাবের রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مثلي ومثل الأنبياء كمثل رجل بنى دارا فأتمها وأكملها إلا موضع لبنة فجعل الناس يدخلونها ويتعجبون منها ويقولون لولا موضع اللبنة قال رسول الله صلى الله عليه و سلم فأنا موضع اللبنة جئت فختمت الأنبياء
আমার এবং আমার পূর্ববর্তি নবীদের উপমা হল এমন লোকের ন্যায়, যে দৃষ্টিনন্দন সুরম্য একটি গৃহ নির্মাণ করেছে। তবে একটি ইটের জায়গা খালি রেখেছে। মানুষ ঘর দেখতে এসে আশ্চর্য হয়ে বলে, হায় যদি এ খালি ইটের জায়গা পূরণ করা হত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি সে হলাম সে ইট। আমি চলে এসছি। নবীদের ধারা খতম হয়ে গেছে। মুসলিম, হাদীস নং ২২৮৭, শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত।
আপনি একটি চিন্তা করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি চমৎকার উপমা দিয়ে আমাদেরকে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করেছেন।
একজন সুরম্য একটি ঘর বানিয়েছে। মনে করুন সম্প্রতি সিলেটে নির্মিত কাজি ক্যাসেল। মানুষ দলে দলে দৃষ্টিনন্দন সে ঘর দেখতে আসে। দেয়ালের দিকে চোখ পড়তেই তারা আশ্চর্য হয়। চমৎকার কারুকর্য রচিত দেয়ালে একটি ইটের জায়গা খালি। বাহিরের ফকফকে রোদ এসে ঢুকছে। পুরো ঘরের খুঁত বলতে এই একটি জায়গায়। মানুষ আফসোস করে বলে, একটি খুঁত মানুষের চোখে আটকে যায়। যদি ইটটি লাগিয়ে ফেলা হয়, তাহলে এত সুন্দর ঘরে আর কোনো খুঁত থাকবে না।
নবীদের উপমা হল সে ঘরের মত। নবীদের দ্বারা আল্লাহ একটি ঘর বানিয়েছেন। আদম আ. দ্বারা সে ঘর নির্মাণ শূরু হয়েছে। ঈসা আ. পর্যন্ত এসে রেস ঘর পূর্ণতা পেয়েছে। বাকী ছিলো একটি ইট। আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বারা সে ইট পূরণ করে দিয়েছেন। নবীদের গৃহে এখন নতুন ইট স্থাপনের কোনো জায়গা নেই। এখন যারা সে ঘরের ইট হওয়ার দাবি করবে, তারা রাসূলের ভাষায় মিথ্যুক এবং দাজ্জাল।
ছাওবান রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لا تقوم الساعة حتى تلحق قبائل من أمتي بالمشركين وحتى يعبدوا الأوثان وأنه سيكون في أمتي ثلاثون كذابون كلهم يزعم أنه نبي وأنا خاتم النبيين لا نبي بعدي
কিয়ামত ততক্ষণ সংঘঠিত হবে না যতক্ষণ আমার উম্মত মুশরিকদের সাথে মিলে মূর্তিপূজা করবে না। অতি শীঘ্রই আমার উম্মতে ত্রিশজন মিথ্যুক আত্মপ্রকাশ করবে, তাদের প্রত্যেকের ধারণা তারা নবী। আমি হলাম শেষ নবী। আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না । তিরমিযী, হাদীস নং ২২১৯, শায়খ আহমদ শাকের তাহকীককৃত।
ইমাম তিরমিযী রহ. হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন-
هذا حديث حسن صحيح
অর্থাৎ হাদীসটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহীহ।
সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রা. বর্ণনা করেন,
أن النبي صلى الله عليه و سلم قال لعلي أنت مني بمنزلة هرون من موسى إلاأنه لا نبي بعدي
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে উদ্দেশ্য করে বলেন হে আলী, মুসা আ. এর নিকট হারুনের অবস্থান যেমন, আমার নিকট তুমি তেমন। কিন্তু আমার পরে কোনো নবী নেই। তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭৩১, শায়খ আহমদ শাকের তাহকীককৃত।
একটি বিশেষ ঘটনার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে এ কথা বলেছিলেন। মুসার সহযোগি যেমন ছিলেন হারুন, তুমিও তেমন আমার সহযোগি। এখানে অনেকে সন্দেহ করে ফেলতে পারে যে, হারুন আ. যেহেতু নবী ছিলেন, এজন্য হতে পারে আলী রা. পরবর্তিতে নবী হবেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে সাথে সে সন্দেহ দূর করে দিলেন। অর্থাৎ আমার পরে যেহেতু আর কোনো নবী আসবেনা, এজন্য আলী রা. নবী হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। তিনি শুধু নবীর সহযোগি হিসাবেই থাকবেন।
এ হাদীসটি বর্ণনার পর ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন-
هذا حديث حسن صحيح
وقد روي من غير وجه عن سعد عن النبي صلى الله عليه و سلم ويستغرب هذا الحديث من حديث يحيى بن سعيد الأنصاري
অর্থাৎ হাদিসটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহীহ। এ সনদ ছাড়াও ভিন্ন সনদে হাদীসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে।
এ হাদীসটি সাদ বিন আবি ওয়াককাস ছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়তমা স্ত্রী উম্মে
সালামা রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বর্ণনা করেন,
أن النبي صلى الله عليه و سلم قال لعلي : ( أما ترضى أن تكون مني بمنزلة هارون من موسى غير أنه لا نبي بعدي )
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা. কে উদ্দেশ্য করে বলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নয় যে, তুমি আমার কাছে এমন পর্যায়ে থাকে যেমনভাবে হারুন আ. ছিলেন মুসা আ. এর নিকট। তবে আমার পর আর কোনো নবী আসবে না। সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৬৬৪৩, শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত।
আলী রা. এর ঘটনা বিস্তারিত এসেছে ‘মুসনাদে আবি ইয়ালা আল মাওসিলী’ তে। সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. বর্ণনা করেন-
لما غزا رسول الله صلى الله عليه و سلم غزوة تبوك خلف عليا بالمدينة فقال الناس : مله وكره صحبته فبلغ ذلك عليا فخرج حتى لحق بالنبي صلى الله عليه و سلم فقال : يا رسول الله خلفتني بالمدينة مع النساء والصبيان والذراري حتى قال الناس : مله وكره صحبته ؟ فقال : يا علي إنما خلفتك على أهلي أما ترضى أن تكون مني بمنزلة هارون من موسى غير أنه لا نبي بعدي
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাবুক যুদ্ধে রওয়ানা করার ইচ্ছা করলেন, তখন আলী রা. কে মদীনায় রেখে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন। কিছু মানুষ বলাবলি শুরু করল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে অপছন্দ করেন। আলী রা. এর কানে সে সংবাদ পৌঁছলে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্তিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে মদীনায় মহিলা এবং শিশুদের সাথে রেখে যাচ্ছেন? যার কারণে এ ধরণের কথা বলছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাতে পরিবারের কাছে রেখে যাচ্ছি। তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নয় যে, মুসা আ. এর নিকট হারুন আ. এর অবস্থান যেমন ছিল তোমার অবস্থান আমার নিকট তেমন। তবে আমার পরে কোনো নবী আসবে না। মুসনাদে আবি ইয়ালা আল মাওসিলী, হাদীস নং ৭৩৮, হুসাইন সালেম আসাদ তাহকীককৃত।
আবু হাযেম বর্ণনা করেন-
قَاعَدْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ خَمْسَ سِنِينَ فَسَمِعْتُهُ يُحَدِّثُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمْ الْأَنْبِيَاءُ كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ وَإِنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِي وَسَيَكُونُ خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُونَ قَالُوا فَمَا تَأْمُرُنَا قَالَ فُوا بِبَيْعَةِ الْأَوَّلِ فَالْأَوَّلِ أَعْطُوهُمْ حَقَّهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا اسْتَرْعَاهُمْ
অর্থাৎ আমি আবু হুরায়রা রা. এর নিকট পাঁচ বছর বসেছি। আমি তাকে বর্ণনা করতে শুনেছি তিনি বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
বনী ইসরাইলে নবীদের ধারাবাহিকতা ছিল। একজন নবী মারা গেলে পরে আরেকজন নবী আসতেন। তবে আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না। অনেক খলীফা হবে।
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমাদের উপর তাহলে কি নির্দেশ?
তিনি বললেন, তোমরা প্রত্যেক খলীফার হক আদায় কর। কেননা সে সম্পর্কে তোমরা আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হবে। বুখারী, হাদীস নং ৩৪৫৫, শায়খ যুহাইর বিন নাসের তাহকীককৃত। মুসলিম , হাদীস নং ১৮৪২, শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এবং বনী ইসরাইলের মধ্যকার পার্থক্য চমৎকারভাবে বুঝিয়েছেন। বনী ইসরাইলে একজন নবী মারা গেলে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা নিয়ে আরেকজন নবী আসতেন। এভাবে নবীদের ধারাবাহিকতা ছিল তাদের মাঝে। কিন্তু আমার পর হেদায়াতের আলোকবর্তিকা নিয়ে আর কোনো নবী আসবেন না। খলীফা হবেন অনেকেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শেষ নবী, তারপরে আর কোনো নবী আসবে না, বিদায় হজের ভাষণে তিনি উম্মতের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করে গেছেন। সাথে সাথে উপস্তিত সাহাবীদের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন অনুপস্তিত লোকদের কাছে সে সংবাদ পৌঁছে দিতে।
ইবনে উমর রা. এ থেকে বিদায় হজের ভাষণ সম্পর্কে দীর্ঘ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ভাষণের এক পর্যায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أيها الناس أي يوم هذا ؟
قالوا : يوم حرام . قال : ” فأي بلد هذا ؟ ” . قالوا : بلد حرام . قال : ” فأي شهر هذا ؟ ” . قالوا : شهر حرام . قال : ” فإن الله تبارك وتعالى حرم دماءكم وأموالكم وأعراضكم كحرمة هذا اليوم وهذا الشهر وهذا البلد ألا ليبلغ شاهدكم غائبكم : لا نبي بعدي ولا أمة بعدكم ” . ثم رفع يديه فقال : ” اللهم اشهد ”
অর্থাৎ হে লোক সকল, আজকে কোন দিন?
তারা বললেন, সম্মানিত দিন।
রাসূল বললেন, এটা কোন শহর?
তারা বললেন, সম্মানিত শহর।
তিনি বললেন, এটা কোন মাস?
তারা বললেন, সম্মানিত মাস।
রাসূল বললেন, আল্লাহ তায়ালা এই আজকের দিনের মত, এই শহরের মত, এই মাসের মত তোমাদের রক্ত এবং সম্পদকে অপরের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। তোমরা উপস্তিতরা অনুপস্তিতদের নিকট এ সংবাদ পৌঁছিয়ে দিবে। আমার পরে কোনো নবী আসবে না। তোমাদের পর আর কোনো উম্মত আসবে না। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশে হাত তোলে বলেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকেন মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ৬১৩৫, মাযমাউয যাওয়ায়িদ, হাদীস নং ৫৬২৩, দারুল ফিকর, বায়রুত।
বিদায় হজের ভাষণ সম্পর্কে আবু কাবীলা বর্ণনা করেন-
أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قام في الناس في حجة الوداع فقال :
لا نبي بعدي ولا أمة بعدكم فاعبدوا ربكم وأقيموا خمسكم وصوموا شهركم وأطيعوا ولاة أمركم ثم ادخلوا جنة ربكم
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের দিন দাড়িয়ে বললেন, আমার পরে কোনো নবী নেই। তোমাদের পরে কোনো উম্মত নেই। তোমরা তোমাদের প্রভূর ইবাদত কর। পাঁচ ওয়াক্ত নামায প্রতিষ্ঠা কর। রমযান মাসে রোযা রাখ। আমীরদের নির্দেশদের আনুগত্য কর। এরপর তোমরা তোমাদের প্রভূর জান্নাতে প্রবেশ কর। আল মু’যামুল কাবীর, তাবারানী, হাদীস নং, ৭৫৩৫, মাকতাবাতুল উলূমি ওয়াল হিকাম। মাযমাউয যাওয়ায়িদ, হাদীস নং
আবু উমামা বাহিলি রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে বলেন-
أيها الناس إنه لا نبي بعدي ولا أمة بعدكم
فذكر الحديث
অর্থাৎ হে লোক সকল, আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না। তোমাদের পরে কোনো উম্মত নেই। এরপর তিনি পূর্বের হাদীস উল্লেখ করেছেন। মাযমাউয যাওয়াইয়দ, হাদীস নং ১৩৯৬৭, দারুল ফিকর, বায়রুত।
জাবের রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أنا قائد المرسلين ولا فخر وأنا خاتم النبيين ولا فخر وأنا أول شافع ومشفع ولا فخر
অর্থাৎ আমি নবীদের নেতা। এতে অহংকারের কিছুই নেই। আমি হলাম শেষ নবী। এতে অহংকারের কিছুই নেই। আমি প্রথম সুপরিশকারি। এতে অহংকারের কিছুই নেই। আল মুযামুল আওসাত, তাবারানী, হাদীস নং ১৭০, দারুল হারামাইন, কাহেরা। মাযমাউয যাওয়ায়িদ, হাদীস নং ১৩৯২৪,
হুযায়ফা রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
فِي أُمَّتِي كَذَّابُونَ وَدَجَّالُونَ سَبْعَةٌ وَعِشْرُونَ مِنْهُمْ أَرْبَعُ نِسْوَةٍ وَإِنِّي خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي
অর্থাৎ আমার উম্মতে সাতাশজন মিথ্যুক এবং দাজ্জাল আসবে। এরমধ্যে চারজন হবে মহিলা। নিশ্চয় আমি হলাম শেষ নবী। আমার পরে কোনো নবী আসবে না। মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৩৩৫৮, শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত। আল মু’যামুল আওসাত, হাদীস নং ৫৪৫০, দারুল হারামাইন, কাহেরা।
পূর্বে পেয়েছিলাম ত্রিশজনের কথা। এ হাদীসে পেলাম সাতাশজনের কথা। সমস্যা নেই। এখানে সংখ্যা বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হল অনেকেই মিথ্যা নবী দাবি করবে, তাদের থেকে বেঁচে থাকা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতটা গুরুত্বের সাথে উম্মতকে সতর্ক করে গেছেন! মহিলাদের দ্বারা মানুষ সহজে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। এজন্য তিনি বলে গেলেন চারজন মহিলাও সে দলে যোগ দিবে। অর্থাৎ তারা নিজেদেরকে নবী বলে দাবি করবে। সুতরাং আমার প্রিয় উম্মত, তোমরা তাদের ভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাক।
ইরবায বিরা সারিয়া রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إني عبد الله و خاتم النبيين و أبي منجدل في طينته و سأخبركم عن ذلك أنا دعوة أبي إبراهيم و بشارة عيسى و رؤيا أمي آمنة التي رأت و كذلك أمهات النبيين يرين و أن أم رسول الله صلى الله عليه و سلم رأت حين وضعته له نورا أضاءت لها قصورالشام ثم تلا : { يا أيها النبي إنا أرسلناك شاهدا و مبشرا و نذيرا * و داعيا إلى الله بإذنه و سراجا منيرا }
অর্থাৎ আমি হলাম আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর প্রেরিত শেষ নবী। আমার পিতা………………..। আমি সে সম্পর্কে আপনাদেরকে বলছি। আমি হলাম আমার পিতা ইবরাহীমের দোয়ার ফসল। ঈসার সুসংবাদের এবং আমার মা আমিনার স্বপ্নের ফসল। এমনভাবে অন্যান্য নবীদের মা দেখেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে মাতা তাকে ভূমিষ্ট করার সময় দেখেন একটি দ্যূতি বের হয়েছে। সে দ্যূতির কারণে শামের প্রাসাদগুলো আলোকিত হয়ে গেছে। এরপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, “ হে নবী, আপনাকে আমি প্রেরণ করেছি সাক্ষীদাত, সুসংবাদদাতা এবং ভয় প্রদর্শনকারি হিসাবে। আল্লাহর অনুমতিক্রমে আপনি মানুষদের আলোর দিকে আহবান করবেন। আল মুসতাদরাক, হাদীস নং ৩৫৬৬, মুসতাফা আবদুল কাদির আতা তাহকীককৃত।
হাকেম নিশাপুরি রহ. হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেন-
هذا حديث صحيح الإسناد و لم يخرجاه
অর্থাৎ হাদিসটি সহীহ। যদিও ইমাম বুখারী এবং মুসলিম রহ. তাদের কিতাবে উল্লেখ করেন নি।
ইমাম যাহাবী রহ. হাকেম নিশাপুরির বক্তব্যকে সমর্থন করে হাদিসকে সহীহ বলেছেন।
চাইলে ভুরিভুরি হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে। গুঠিকয়েক উল্লেখ করলাম। যারা ইনসাফের চোখে পড়বেন, তারা বুঝতে পেরেছেন রাসূ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত গুরুত্বের সাথে উম্মতকে ভন্ড নবিদের থেকে সর্ত করেছেন। তাদেরকে মিথ্যুক এবং দাজ্জাল বলে অবিহিত করেছেন।