কাদিয়ানির কুফরি কিছু দাবি
রেজাউল কারীম আবরার
মুফতী শফী রহ. এ বিষয়ে স্বতন্ত্র রিসালা লিখেছেন। সেখানে তিনি গোলাম আহমদ কাদিয়ানির ভ্রান্ত দাবিগুলো উল্লেখ করেছেন। “মির্যার দাবি সমূহ” শিরোনামে ‘জাওয়াহিরুল ফিকহ’ এর মাঝে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রায় বারো পৃষ্ঠার সে রিসালার অনুবাদ এখানে যোগ করে দেওয়া হল।
নিজেকে মুবাল্লিগ এবং মুসলিহ দাবি করা
গোলাম আহমদ লিখে-
“ এ অক্ষম লেখক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছে যে, আমি যেন অত্যান্ত বিনয়ের সাথে মানুষের ইসলাহ তথা সংশোধনের চেষ্টা করি”। মুকাদ্দিমায়ে বারাহিনে আহমদিয়্যাহ, পৃষ্ঠা নং ৮১
মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি করা
গোলাম আহমদ কাদিয়ানি লিখে-
“আপনি বলুন যদি এ অক্ষম বান্দা হকের উপর না হয়, তাহলে সে কে চৌদ্দ শতাব্দিতে মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি করেছে , যেমনটা দাবি করেছে এ অক্ষম বান্দা”। ইযালায়ে আওহাম, পৃষ্ঠা নং ১৫৪
মুহাদ্দিস হওয়ার দাবি করা
গোলাম আহমদ কাদিয়ানি লিখে-
“এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ অক্ষম বান্দা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুহাদ্দিস হয়ে এসেছে। আর মুহাদ্দিস এক অর্থে নবী হোন। যদিও পরিপূর্ণভাবে নবী নয়, তারপরও আমি অংশবিশেষ নবী”। তাওযিহুল মারাম, পৃষ্ঠা নং ৯, ইযালায়ে আওহামপৃষ্ঠা নং ৪২
যুগের ইমাম হওয়ার দাবি করা
গোলাম আহমদ কাদিয়ানি লিখে-
“আল্লাহ বলেন, আমি তোমাকে লোকদের জন্য ইমাম বানিয়েছি। তুমি তাদের রাহবর”। হাকিকাতুল ওহী পৃষ্ঠা নং ৭৯. জরুরাতুল ইমামপৃষ্ঠা নং ২৪
খোদার জানিশীন হওয়ার দাবি
গোলাম আহমদ কাদিয়ানি লিখে-
“আল্লাহ আমাকে বলেছেন, আমি তোমাকে আমার জানিশীর বানানোর ইচ্ছে করেছি। এজন্য আমি আদম তথা তোমাকে সৃষ্টি করেছি”। কিতাবুল বারিয়্যাহ পৃষ্ঠা নং ৭২
ইমাম মাহদি হওয়ার দাবি
মিয়ারুল আখইয়ার নামক লিফলেট এবং আরো বিভিন্ন জায়গায় তিনি ইমাম মাহদি হওয়ার এত বেশি দাবি করেছেন, যেটার জন্য দলিল দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ইমাম মাহদির সাহায্যকারি হারিছ হওয়ার দাবি করা
গোলাম আহমদ কাদিয়ানি লিখেন-
“আবু দাউদ শরীফে সহীহ হাদীসে যে কথা বর্ণনা হয়েছে যে, সমরকন্দের দিক থেকে হারিছ নামের এক ব্যক্তি বের হবে। যে রাসূলের পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করবে। যার সাহায্য করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয। আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে যে, ওই ব্যক্তির নিদর্শন এবং প্রতিশ্রুত মাসীহের নিদর্শন এই অক্ষম বান্দার মাঝে প্রকাশিত হয়েছে”। ইনালাহ পৃষ্ঠা নং ৭৯
ছায়া নবী হওয়ার দাবি
গোলাম আহমদ কাদিয়ানি লিখে-
“আর মুহাম্মাদ পূর্ব থেকে প্রকৃত নবী, তার নবুওতের রঙ আমাকে দান করা হয়েছে”। হাকিকাতুল ওহী, পৃষ্ঠা নং ২৬৮, রুহানী খাযায়িন ১৮/২১০
নবুওত, রেসালত এবং ওহীর দাবি
গোলাম আহমদ লিখে-
“সত্য খোদা তিনি যিনি কাদিয়ানে নিজের রাসূল প্রেরণ করেছেন”।
অন্য জায়গায় লিখে-
“সত্য কথা হল, সত্য খোদা আমার ওহী উপর অবতীর্ণ করেছেন”।
আরেক জায়গায় লিখে-
“ইতিমধ্যে আমি যখন প্রায় দেড়শ ভবিষ্যদ্বাণি খোদার নিকট থেকে পেয়ে তা স্বচক্ষে বাস্ববায়িত হতে দেখলাম তখন নিজের সম্পর্কে নবী-রাসূল নাম কীভাবে অস্বীকার করতে পারি। আর যখন খোদা তায়ালা আমার এই নাম রেখেছেন তখন কীভাবে আমি তা অস্বীকার করি কিংবা তিনি ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করি”।দাফিউল বালা, পৃষ্ঠা নং ১১, নুযুলুল মাসীহ, পৃষ্ঠা নং ৯৯
তার উপর ওহী অবতীর্ণ হওয়ার কথা হাজার জায়গায় লিখেছেন। তার যে লিখিত যে কোনো কিতাবে চোখ বুলালে আপনি তার উপরে ওহী অবতীর্ণ হওয়ার কথা পেয়ে যাবেন।
নিজের উপর অবতীর্ণ হওয়া ওহীকে কুরআনের মত অকাট্য মনে করা
গোলাম আহমদ কাদিয়ানি লিখে-
“আমি খোদার পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে আসা খোদার ওহীকে কীভাবে আটকাবো? আমি এ সমস্ত ওহীর উপর এমনভাবে ঈমান আনি যেমনভাবে আমার পূর্বের ওহীর উপর ঈমান আনি”। হাকিকাতুল ওহী, পৃষ্ঠা নং ১৫০
পুরো পৃথিবীর জন্য তাকে মুক্তির মাধ্যম হওয়ার দাবি করা
সে লিখে-
“পুরো পৃথিবীর মুসলমান কাফের এবং জাহান্নামি। কুফর দুই প্রকারের। এক প্রকারের কুফর হল সে ইসলামকে অস্বীকার করেছে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসাবে মানে না। দ্বিতীয় প্রকারের কুফর হল সে প্রতিশ্রুত মাসীহ না মানা। প্রতিশ্রুত মাসীহকে মানতে স্বয়ং আল্লাহ এবং তার রাসূল গুরুত্ব দিয়েছেন। আগেরকার নবীদের কিতাবে প্রতিশ্রুত মাসীহের অনুসরণের নির্দেশ রয়েছে। উভয় দল কাফের। কারণ তারা আল্লাহ এবং রাসূলের ফরমানকে অস্বীকার করেছে। আপনি ভালো করে চিন্তা করলে দেখতে পারবেন যে, উভয় প্রকারের কুফরের এক ধরণের। হাকিকাতুল ওহী, পৃষ্ঠা নং ১৭৯,
আরেক জায়গায় লিখে-
“আজ থেকে নয় বছর পূর্ব থেকে আমি দিল্লীতে যাই। নযীর আহমদ সহ অন্যান্য গায়রে মুকাল্লিদদের ইসলামের দাওয়াত দেই”।
অন্য জায়গায় লিখে-
“ তোমরা দেখো, আল্লাহ তায়ালা আমার ওহী, শিক্ষা এবং বাইয়াতকে নূহ আ. কিশতি বানিয়েছেন। আমার ওহীর মাঝে রয়েছে সকল মানুষের মুক্তির পথ”। আরবাইন, নাম্বার ৪. পৃষ্ঠা নং ৬
স্বতন্ত্র শরীয়ত বিশিষ্ট নবী দাবি করা
সে লিখেছে-
“ সে নবীর হাদীসের বিচারক। যেটাকে ইচ্ছা গ্রহণ করবে, যেটাকে ইচ্ছা ছেড়ে দিবে।
আমাকে বলা হয়েছে তোমার খবর কুরআন এবং হাদীসে রয়েছে। তুমি হলে কুরআনের এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য।
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
অর্থ. আল্লাহ তার রাসূলকে পাঠিয়েছেন হেদায়াত এবং সত্য ধর্ম দ্বারা। যাতে তিনি অন্য সকল ধর্মের উপর বিজয়ি হয়। মুশরিকরা যদিও অপছন্দ করে। এযাজে আহমদি, পৃষ্ঠা নং ১৭
এখানে তিনি শুধু স্বতন্ত্র শরীয়ত বিশিষ্ট নবী হওয়ার দাবি করে নি, বরং তার সাথে সাথে এ আয়াত দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্দেশ্য না হয়ে সে নিজে উদ্দেশ্য হওয়ার দাবি করেছে। নাউযুবিল্লাহ।
সে অন্য জায়গায় লিখেছে-
“আমি বাস্তবে নবী। আমার ওহী কুরআনের মত অকাট্য”। এরপর লিখে, আমার ওহীতে নির্দেশ এবং নিষেধ রয়েছে। শরীয়তের জরুরি বিধানাবলিও রয়েছে। আমি কসম করে বলি, আমার এ দাবির বুনিয়াদ হাদীস নয়। বরং কুরআন এবং ওহী। যে ওহী আমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে। তবে হাদীস দ্বারাও সেটি শক্তিশালি হয়। আমি সে হাদীস দলীল স্বরুপ পেশ করব, যেগুলো ওহীর মুতাবেক হবে। যেগুলো আমার উপর আসা ওহীর বিপরিত হবে, আমি সেগুলো দেয়ালে ছুড়ে ফেলব”। এযাজে আহমদি, পৃষ্ঠা নং ৩০,৩১,
নিজের জন্য দশ লাখ মুজিযা দাবি করা
সে লিখে-
“মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুযিজার সংখ্যাও এত নয়। আমি সে খোদার কসম করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ, তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন, তিনি আমাকে নবী বলে নামকরণ করেছেন। তিনি আমাকে প্রতিশ্রুত মাসীহ বলে ডেকেছেন। তিনি আমার সত্যায়নের জন্য বড় বড় নিদর্শন প্রকাশ করেছেন। সে সমস্ত নির্দশনের সংখ্যায় প্রায় তিন লাখ। আর ‘বারাহিনে আহমদিয়্যাহ’ তে দশ লাখ নিদর্শনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে”। হাকিকাতুল ওহী, পৃষ্ঠা নং ৬৮, ১৩৬, ১৩৭, বারাহিনে আহমদিয়্যাহ ৫/১৫৬
পূর্বের সকল নবীদের থেকে শ্রেষ্ট দাবি করা
সে লিখে-
“সত্য কথা হল আল্লাহ এত মুজিযা দান করেছেন যে, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্যান্য সকল নবীদের বেলায় এত অধিক সংখ্যক মুজিযার প্রকাশ অসম্ভব। আল্লাহ তার দলিল পূর্ণ করে দিয়েছেন। তুমি চাইলে কবুল কর। না করলে নেই”। হাকিকাতুল ওহী, পৃষ্ঠা নং ১৩৬
আদম আ. দাবি করা
সে লিখে-
“আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে তাকে আদম সাব্যস্থ করেছেন। আল্লাহর বানী ‘ হে আদম তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর’ দ্বারা উদ্দেশ্য সে”। নুযুলুল মাসীহ, পৃষ্ঠা নং ৯৯
ইবরাহীম আ. হওয়া দাবি করা
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى
অর্থ. তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের জায়গা হিসাবে গ্রহণ কর।
কাদিয়ানি বলে, আল্লাহ তায়ালা উক্ত আয়াত দ্বারা ইশারা করেছেন যখন উম্মাতে মুহাম্মাদিতে বিভিন্ন প্রকারের ফিরকা আত্মপ্রকাশ করবে, তখন শেষ যুগে একজন ইবরাহীম আ. আত্মপ্রকাশ করবেন, সকল ফিরকা থেকে শুধুমাত্র তার ফিরকা মুক্তিপ্রাপ্ত হবে। ” আরবাইন, নাম্বার ৩, পৃষ্ঠা ৫০,
নূহ আ. থেকে উত্তম হওয়ার দাবি করা
সে লিখে-
“আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য এত অধিক নির্দশন দেখিয়েছেন, যদি তা নূহ আ. এর যামানায় দেখানো হত, তাহলে এত লোক ডুবে মরত না”। হাকিকাতুল ওহী, পৃষ্ঠা নং ১২৭
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান হওয়ার দাবি করা
সে লিখে-
“মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এ দৃষ্টিভঙ্গি রেখে যে তার নাম মুহম্মাদ, আমার নাম আহমদ। এজন্য আমিও নবী এবং রাসূল”।
কুরআনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সমস্ত গুনাবলি বর্ণিত হয়েছে, অধিকাংশ সময় সেগুলো সে নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছে। তার কিতাবাদিতে এ ধরণের উদাহরণ রয়েছে অসংখ্য।দেখুন, হাকিকাতুল ওহী, পৃষ্ঠা নং ২৬৫, ৮৫, ৮৬, ১৮১,
মুফতী শফী রহ. তার উনপঞ্চাশটি কুফরি দাবি উল্লেখ করেছেন। যেগুলোর একটি কেউ বিশ^াস করলে কাফের হয়ে যাবে। এরমাঝে কিছু আছে রীতিমত হাস্যকর। যেমন নিজেকে মিকাইল আ. দাবি করা, আল্লাহর মত হওয়ার দাবি করা, আল্লাহর পুত্র হওয়ার দাবি করা, নিজে গর্ভবতি হওয়ার দাবি করা, হজের আসওযাদ হওয়ার দাবি করা, বায়তুল্লাহ হওয়ার দাবি করা সহ আরো বিভিন্ন ধরণের হাস্যকর কথা বার্তা।
নবী হওয়ার দাবি ছাড়া সে বিভিন্ন জায়গায় আরেকটি দাবি বেশ জোরেশোরে করেছে। হাদীসে রয়েছে কিয়মাতের আগে ঈসা আ. আসমান থেকে পূণরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। সে দাবি করেছে সেই হল ঈসা তথা প্রতিশ্রুত মাসীহ। এ বিষয়ে সামনে বিস্তারিত আলোচনা আসছে ইনশাআল্লাহ।