খতমে নবুওত নিয়ে কাদিয়ানিদের ছলচাতুরি

                              খতমে নবুওত নিয়ে কাদিয়ানিদের ছলচাতুরি

রেজাউল কারীম আবরার

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে পরিষ্কার বলেছেন মিথ্যা নবী দাবিদারদের প্রধান হাতিয়ার হবে মিথ্যাচার। এ ক্ষেত্রে কাদিয়ানিরাও পিছিয়ে নেই। তারাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছল চাতুরী এবং মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করেছে। উদাহরণস্বরুপ একটি উপমা আপনাদের সামনে পেশ করছি।

তাদের প্রকাশিত বইপত্র এবং বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, তারা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা করে। এমনকি তকে ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ বলেও অবিহিত করে। তাদের এ ধরণের বক্তব্য দেখুন-
“আমাদের ধর্ম বিশ্বাসের সারাংশ ও সারমর্ম হলো : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। এ পার্থিব জীবনে আমরা যা বিশ্বাস করি এবং আল্লাহ তা’লার কৃপায় ও তাঁরই প্রদত্ত তৌফিকে যা নিয়ে আমরা এ নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করবো তা হলো, আমাদের সম্মানিত নেতা হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হলেন, ‘খাতামান নাবীঈন’ ও ‘খায়রুল মুরসালীন’-যাঁর মাধ্যমে ধর্ম পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং যে নেয়ামত দ্বারা সত্যপথ অবলম্বন করে মানুষ আল্লাহ তা’লা পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে তা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বাস রাখি, কুরআন শরীফ শেষ ঐশীগ্রন্থ এবং এর শিক্ষা, বিধান, আদেশ ও নিষেধের মাঝে এক বিন্দু বা কণা পরিমাণ সংযোজনও হতে পারে না বিয়োজনও হতে পারে না। এখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কোনো ওহী বা ইলহাম হতে পারে না-যা কুরআন শরীফের আদেশাবলীকে সংশোধন বা রহিত কিংবা কোন একটি আদেশকেও পরিবর্তন করতে পারে। কেউ যদি এমন মনে করে তবে আমাদের মতে সে ব্যক্তি বিশ্বাসীদের জামা’ত বহির্ভূত, ধর্মত্যাগী ও কাফির। আমরা আরও বিশ্বাস করি, সিরাতে মুস্তাকীমের উচ্চমার্গে উপনীত হওয়া তো দূরের কথা, কোনো মানুষ আমাদের নবী (সা.)-এর অনুসরণ ছাড়া এর সামান্য পরিমাণও অর্জন করতে পারে না। আমরা আমাদের নবী (সা.)-এর সত্যিকার ও পূর্ণ অনুসরণ ছাড়া কোনো ধরনের আধ্যাত্মিক সম্মান ও উৎকর্ষ কিংবা মর্যাদা ও নৈকট্য লাভ করতে পারি না।’’ ইযালায়ে আওহাম, ১/১৩৭

উস্তাদে মুহতারাম মাওলানা জাকারিয়া আবদুল্লাহ সাহেব গোলাম আহমদ কাদিয়ানির বক্তব্যের ব্যাপারে চমৎকার পর্যালোচনা করেছেন। এখানে তার পর্যালোচনাটি তুলে ধরছি-
“মির্যা কাদিয়ানির রচনাবলি পড়া না থাকলে এবং কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নিজস্ব পরিভাষা সম্পর্কে অবগত না থাকলে এই উদ্ধৃতি থেকে কারো মনে হতে পারে, মির্জা তো আল্লাাহর রাসূলকে মানে, এমনকি তাকে ‘খাতামুন্নাবিয়ীন’ বলেও স্বীকার করে, কুরআনকে শেষ আসমানী গ্রন্থ মানে এবং তাতে কোনো ধরনের সংযোজন-বিয়োজন-পরিবর্তন ও রহিতকরণ হতে পারে না বলেও বিশ্বাস করে, এমনকি এর বিপরীত আকীদা পোষণকারীদের কাফিরও মনে করে। এ-ই যদি হয় তাদের ধর্মবিশ্বাস তাহলে মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের সাথে তাদের কী পার্থক্য?
আল্লামা ইকবাল সরলপ্রাণ মুসলিমের জন্যই বলেছিলেন- ‘আমাদের সমাজের সারল্যও দেখ আর শত্রুর নির্লজ্জতাও দেখ।’
মির্জার উপরোক্ত বক্তব্য এবং এ জাতীয় অন্যান্য বক্তব্যের ব্যাখ্যা তার নিজের মুখেই শুনুন।

১. খাতামুননাবিয়ীন অর্থ
এ প্রসঙ্গে মির্জা কাদিয়ানীর বক্তব্য :
‘…আল্লাাহ জাল্লা শানুহু হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘খাতাম ওয়াালা’ বানিয়েছেন, অর্থাৎ গুণ ও বৈশিষ্ট্য প্রবাহিত করার জন্য তাঁকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাাম একটি মোহর দেওয়া হয়েছে, যা আর কোনো নবীকে কখনোই দেওয়া হয়নি। একারণেই তার নাম খাতামুন নাবিয়ীন স্থির হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর অনুসরণ নবুওতের গুণসমূহ দান করে আর তার রূহানী তাওয়াজজুহ নবী সৃষ্টি করে। এই পবিত্র শক্তি আর কোনো নবী লাভ করেননি।-হাকীকাতুল ওহী, টীকা : পৃ. ৯৭/১০০; রূহানী খাযাইন : ২২

একজন সাধারণ বোধসম্পন্ন পাঠকও বুঝতে পারছেন, এ হচ্ছে পরম ভক্তির আবরণে ‘খাতামুন নাবিয়ীন’-এর অর্থকেই সম্পূর্ণ বিকৃত করে দেও এবং নতুন নবুওত দাবির পথ থেকে বাধা সরানো। মির্জা কাদিয়াানীর কাছে ‘খাতামুন নাবিয়ীন’ অর্থ, যিনি রূহানী তাওয়াজজুহের মাধ্যমে অন্যকে নবী বানান। অতএব খাতামুন নাবিয়্যীনের পরেও নবী হতে পারে বরং হতেই হবে। (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লাাম পরিষ্কার ভাষায় ‘খাতামুন নাবিয়ীন’-এর ব্যাখ্যা করে গেছেন যে, ‘আমার পরে কোনো নবী নেই।’

মির্জা বশীরুদ্দীন মাহমুদের বক্তব্য শুনুন-
‘‘যদি আমার গর্দানের দুই পাশে তলোয়ারও ধরা হয় এবং আমাকে বলা হয় যে, বল, আ ঁহযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লাামের পরে কোনো নবী আসবে না তাহলে আমি বলব, তুমি মিথ্যাবাদী; চরম মিথ্যাবাদী, তাঁর পরে নবী আসতে পারে এবং অবশ্যই আসতে পারে।’’-আনওয়াারে খিলাফত পৃ. ৬৫-কাদিয়াানী ফিৎনা আওর মিল্লাতে ইসলামিয়্যাাহ কা মাওকিফ, শায়খুল ইসলাম মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী পৃ. ৫৩
পাঠক এবার আপনিই বলুন, তারা কি আসলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী মানে? নাকি ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ এর ভিন্ন ব্যাখ্যা করে উম্মতকে বিভ্রান্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে!
গোলাম আহমদকে না মানলে কাফের?
তারা মানুষদের মাঝে প্রচার করে যে, তারা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে নবী মানে না, তাহলে প্রশ্ন হল গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে কেউ নবী না মানলে সে কাফের হবে কেন? দেখুন এ বিষয়ে স্বয়ং গোলাম আহমদ কাদিয়ানির বক্তব্য-
“আল্লাহ আমার ওহী, তালীম, বায়আতকে নূহ আ. এর কিশতীর মতো। সমস্ত মানুষের মুক্তির মাধ্যম এটাকে বানানো হয়েছে। যে ব্যক্তি মুসাকে মানল, কিন্তু ঈসাকে মানল না, অথবা ঈসাকে মানল, কিন্তু মুহাম্মাদকে মানল না, অথবা মুহাম্মাদকে মানল, কিন্তু প্রতিশ্রুত মাসীহকে মানল না, তাহলে শুধু কাফের নয়, বরং পাকা কাফের। সে ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। কালামায়ে ফাসল, কাদিয়ানির ছেলের লেখা, ১৪ নং খন্ড।

“আমাদের জন্য ফরয হল আমরা যেন যারা আহমদিয়া না, তাদেরকে কাফের মনে করি। তাদের পিছনে যেন নামায আদায় না করি। আমাদের নিকট তারা খোদা তায়ালার একজন নবীকে অস্বীকার করেছে। এটা দ্বীনের বিষয়। এখানে কারো কোনো অধিকার নেই। আনওয়ারে খেলাফত, পৃষ্ঠা নং ৯০

“ যেমনভাবে খ্রীস্টানদের জানাযার নামায পড়া হবে না, তেমনভাবে যারা আহমদিয়া মুসলিম জামাতের অনুসারি না, তাদের জানাযার নামায পড়া হবে না।. হযরত মুসলেহ কাদিয়ানির ডায়েরি, ১০/৩২

এবার আপনি তাদের ছলচাতুরি ভালো করে অনুধাবন করুন। প্রচার করে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানে। কিন্তু গোলাম আহমদকে না মানলে কাফের! তাদের জানাযার নামায পড়া যাবে না! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন তারা মিথ্যুক হবে। গোলাম আহমদ কাদিয়ানি এবং তার অনুসারিদের বেলায় সেটা কড়ায় গন্ডায় মিলেছে। আল্লাহ তাদের খপ্পড় থেকে সকল মুসলমানকে হেফাজত করুন।

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *