ইয়াহুদি খ্রিস্টান সভ্যতাকে দাজ্জাল প্রমাণিত করতে গিয়ে বায়েযীদ খান পন্নীর জালিয়াতি (১)

          ইয়াহুদি খ্রিস্টান সভ্যতাকে দাজ্জাল প্রমাণিত করতে গিয়ে বায়েযীদ খান পন্নীর জালিয়াতি (১)
                                                                          রেজাউল কারীম আবরার
তার বই নিয়ে বলার মতো কিছুই নেই। পন্নী সাহেবের বই মানেই বিনোদন! দাজ্জাল সম্পর্কিত বইয়েরও একই অবস্থা! দাজ্জাল সম্পর্কে তিনি সতেরটা হাদীস উল্লেখ করেছেন। পরে সেগুলোর মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন! আসলে হাদীস সতেরোটা না। দাজ্জাল সম্পর্কে বর্ণিত আবু উমামা বাহিলী, নাওয়াস বিন সামআন এবং ফাতেমা বিনতে কায়স রা. এর দীর্ঘ হাদীসের সতেরটি টুকরোকে তিনি সতেরটি হাদীস বানিয়ে ফেলেছেন! হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি অনেক বানোয়াট এবং উদ্ভট কথা লিখেছেন! সেগুলো নিয়ে সামনে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো তিনি নিজের পক্ষে আনার জন্য একেবারে হাদীসকেই পাল্টিয়ে দিয়েছেন! হাদীসে এসেছে এক কথা! কিন্তু তিনি সুক্ষ্মভাবে সেটিকে পাল্টে দিয়েছেন। তার এ ধরণের একটি জালিয়াতি দেখুন। তিনি লিখেন-
“ “আল্লাহর রসুল বলেছেন, দাজ্জালের গতি হবে অতি দ্রুত। সে বায়ুতাড়িত মেঘের মত আকাশ দিয়ে উড়ে চলবে। নাওয়াস বিন সা’মান থেকে মোসলেম, তিরমিযী।
এই হাদীসের বেশি ব্যাখ্যার প্রয়োজন করে না। দাজ্জাল অর্থাৎ পাশ্চাত্য যান্ত্রিক সভ্যতার তৈরী এরোপ্লেন যখন আকাশ দিয়ে উড়ে যায় তখন সেটাকে বায়ূতাড়িত অর্থাৎ জোর বাতাসে চালিত মেঘের টুকরোর মত দেখায় তা কেউ অস্বীকার কোরতে পারবেন কি?
(দাজ্জাল, ইয়াহৃদি খ্রিস্টান সভ্যতা, ৮৪
)
বায়েযীদ খান পন্নী হাদীসের মূল ইবারত উল্লেখ করেননি। কিন্তু অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি জালিয়াতি করেছেন। সুক্ষ্মভাবে একটি শব্দ যোগ করে দিয়েছেন। নাওয়াস বিন সামআন রা. এর হাদীসটি হলো দীর্ঘ। সে হাদীসের একটি অংশ হলো-
قلنا يا رسول الله وما إسراعه في الأرض ؟ قال كالغيث استدبرته الريح
অর্থাৎ হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম , হে আল্লাহর রাসূল, পৃথিবীতে সে কত দ্রুতগতিতে চলবে?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বায়ুচালিত মেঘের মতো। (মুসলিম, হাদীস নং ২৯৩৭, শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত। তিরমিযী, হাদীস নং ২২৪, শায়খ আহমদ শাকের তাহকীককৃত। আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩২১, শায়খ মুহি উদ্দিন আবদুল হামীদ তাহকীককৃত। মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭৬২৯, শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত।)
দেখুন পন্নী সাহেব কত সুক্ষ্মভাবে হাদীস পরিবর্তন করে দিলেন। তিনি লিখেছেন সে বায়ুতাড়িত মেঘের মত আকাশ দিয়ে উড়ে চলবে। অথচ হাদীসে পরিষ্কারভাবে ‘আরয’ তথা জমীনের কথা রয়েছে। তিনি সেটাকে বিকৃত করে আকাশ বানিয়ে ফেলেছেন! আল্লাহ এমন জালিয়াতি এবং হাদীস চুরি থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
এবার হাদীসের পরের অংশ একটু দেখুন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে, আসলে এটা দ্বারা কি বিমান উদ্দেশ্য নাকি অন্য কিছু?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরে বলেন-
فيأتي على القوم فيدعوهم فيؤمنون به ويستجيبون له فيأمر السماء فتمطر والأرض فتنبت فتروح عليهم سارحتهم أطول ما كانت ذرا وأسبغه ضروعا وأمده خواصر ثم يأتي القوم فيدعوهم فيردون عليه قوله فينصرف عنهم فيصبحون ممحلين ليس بأيديهم شيء من أموالهم ويمر بالخربة فيقول لها أخرجي كنوزك فتتبعه كنوزها كيعاسيب النحل ثم يدعو رجلا ممتلئا شبابا فيضربه بالسيف فيقطعه جزلتين رمية الغرض ثم يدعوه فيقبل ويتهلل وجهه يضحك
এতঃপর দাজ্জাল কোনো একটি গোত্রের নিকট এসে সে তাদেরকে তার দলে ডাকবে। তারা তার ডাকে সাড়া দিয়ে তার উপর ঈমান আনবে। এরপর সে আসমানকে বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দিবে। তার নির্দেশ অনুযায়ী বৃষ্টি হবে। এরপর সে জমীনকে ফসল উৎপাদনের নির্দেশ দিবে। জমীন তার নির্দেশ অনুযায়ী ফসল উৎপাদন করবে। এতঃপর বিকালে তাদের পশুগুলো উচুঁ কুঁজবিশিষ্ট, মাংশল নিতম্ববিশিষ্ট এবং দুগ্ধবিশিষ্ট স্তন নিয়ে বাড়ী ফিরবে।
এরপর সে আরেকটি গোত্রের নিকট এসে তাদেরকে তার দলে ডাকবে। তারা তার দলে যোগ দিবে না। ফলে সে তাদের নিকট থেকে চলে যাবে। পরদিন সকালে তারা নিজেদেরকে নিঃস্ব অবস্থায় পাবে এবং তাদের হাতে কিছুই থাকবে না। এতপর সে একটি নির্জন পতিত ভূমিতে গিয়ে বলবে, তোর ভিতরের ভান্ডার বের করে দেয়। এরপর সে যেখান থেকে ফিরবে সে জায়গার ভান্ডার অনুসরণ করবে। যেমনভাবে মৌমাছিরা রাণী মৌমাছির অনুসরণ করে।
এরপর সে একজন তাগড়া যুবককে তার দিকে ডাকবে। তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে দ্বিখন্ডিত করবে এবং তার দেহের প্রতিটি টুকরা দুই ধনুকের ব্যবধানে গিয়ে পড়বে।
এই হলো বায়েযীদ খান পন্নীর অবস্থা। সে মেঘের মতো দ্রুতগতিতে পৃথিবীতে কি করবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটার বিবরণ হাদীসে পরিষ্কার দিয়েছেন। কিন্তু পন্নী সাহেব হাদীসের আগের অংশ দেখলেন! কিন্তু পরের অংশ কীভাবে তার চোখ এড়িয়ে গেলো, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। পন্নী সাহেবের কাছে আমাদের মোটা দাগের প্রশ্ন হলো,
* প্লেন কি কখনো কোনো সম্প্রদায়কে তার আদর্শের দিকে দাওয়াত দিতে পারবে?
* প্লেনের আদেশে কি কখনো বৃষ্টি বর্ষণ হবে?
* প্লেনের নির্দেশে কি কখনো ফসল উৎপাদন হবে?
* প্লেনের নির্দেশে কি কখনো জমীন তার সম্পদ বের করে দিবে?
* প্লেন কি কখনো কোনো যুবককে হত্যা করে জীবিত করতে পারবে?
* প্লেনের কি কথা বলার যোগ্যতা আছে?
এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর কিয়ামত পর্যন্ত বায়েযীদ খান পন্নীর পক্ষে দেয়া সম্ভব না। এখানে আরেকটা প্রশ্ন করতে চাই। প্লেনতো একটি বাহন। প্লেন আবিষ্কার করেছে দুই সহোদর। তারা হলেন উরবিললি (জন্ম, ১৯ আগষ্ট ১৮৭১, মৃত্যু, ৩০ জানুয়ারী, ১৯৪৮) এবং উইলবার (জন্ম ১৬ এপ্রিল ১৮৬৭, মৃত্যু ৩০ মে, ১৯১২ ইং)। দুইজন ছিলো আমেরিকান। নাওয়াস ইবনে সামআন রা. এর হাদীস দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয় বর্তমানের প্লেন, তাহলেতো প্লেনের জনক কে আপনি কি বলবেন? দাজ্জালের নিদর্শনের জনক! তাহলে মূল দাজ্জালতো তারা দুইজন! কারণ তারা নিদর্শন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে! হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝাতে চাইলেন কি? আর সেটাকে কোথায় নিয়ে গেলেন বায়েযীদ খান পন্নী! অন্ধরাতো হাতি দেখে হাতির একটি অংশ চিনতে পেরেছে! কিন্তু বায়েযীদ খান পন্নীকে আপনি কি বলবেন! তিনি তো বাস্তবতা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে চলে গেছেন! আল্লাহ আমাদেরকে এ ধরণের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন।

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *