আরবের আলেমরা কী সব যুগে সবার থেকে শ্রেষ্ঠ?

                                  আরবের আলেমরা কী সব যুগে সবার থেকে শ্রেষ্ঠ?
                                                               রেজাউল কারীম আবরার
আমাদের দেশে কিছু ভাই আরব থেকে পড়াশুনা করে আসেন৷ তাদের অনেকেই নিজেদের জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়ে নেন হানাফি মাজহাবের বিরোধিতা করা৷ রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম বিরোধী আইন হোক, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াওসাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি করা হোক, তাদের কিছু যায় আসে না! হানাফি মাজহাবের আকিদায় শিরক এবং নামাজে জাল হাদিস খুঁজে বের করতে পারলে মনে করেন, কেল্লা ফতেহ!
কথায় কথায় তারা মদিনার আলেমদের রেফারেন্স পেশ করেন৷ সৌদি আরবের অালেমদের তারা নিজেদের মাপকাঠি বানিয়ে নিয়েছেন৷ দলিলস্বরুপ একটি হাদিস পেশ করেন৷ প্রথমে হাদিসটি দেখুন৷
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رِوَايَةً: يُوشِكُ أَنْ يَضْرِبَ النَّاسُ أَكْبَادَ الإِبِلِ يَطْلُبُونَ العِلْمَ فَلاَ يَجِدُونَ أَحَدًا أَعْلَمَ مِنْ عَالِمِ الْمَدِينَةِ
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষ হন্য হয়ে ইলম অন্বেষণ করবে, কিন্তু মদিনার আলেমদের থেকে বড় আলেম পাবে না৷ (তিরমিজি: হাদিস নং, ২৬৮০)
এ হাদিস পেশ করে তারা বুঝাতে চান যে, মদিনার আলেমদের থেকে বড় আলেম আর কেউ নেই৷ সুতরাং বাংলাদেশি বা দেওবন্দি আলেমদের কথা শুনা যাবে না৷
আসুন আমরা প্রথমে এ হাদিস সম্পর্কে প্রসিদ্ধ লা মাজহাবি আলেম নাসির উদ্দিন আলবানি রাহি. এর বক্তব্য দেখে আসি৷ তিনি বলেন,
وقال الترمذي: “حديث حسن”! وقال الحاكم:”صحيح على شرط مسلم”! ووافقه الذهبي!
قلت: وهو كما قالا؛ لولا عنعنة ابن جريج وأبي الزبير؛ فإنهما مدلسان، لا سيما الأول منهما؛ فإنه سيىء التدليس كما هو مشروح في ترجمته وقد أعله أحمد بالوقف، فقد ذكر ابن قدامة في “المنتخب” عنه أنه قال: “وأوقفه سفيان مرة، فلم يجز به أبا هريرة”.
وأخرج له المقدسي شاهداً من حديث زهير بن محمد أبي منذر التميمي: حدثنا عبيد الله بن عمر عن سعيد بن أبي هند عن أبي موسى مرفوعاً. لكن زهير هذا – وهو الخراساني – كثير الغلط. والله أعلم
অর্থাৎ ইমাম তিরমিজি হাদিসকে হাসান বলেছেন৷ হাকেম নিশাপুরি সহিহ বলেছেন এবং ইমাম জাহাবি তা সমর্থন করেছন৷
এরপর আলবানি বলেন, যদি ইবনে জুরাইজ এবং আবু জুবায়ের “আন” সিগা দ্বারা রেওয়ায়াত না করতেন, তাহলে তাদের বক্তব্য সঠিক ছিল৷ এরা উভয় হলেন তাদলিসকারী, বিশেষকরে ইবনে জুরাইজ৷ তিনি মারাত্মক তাদলিসকারী, তার জীবনীতে বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট৷ এছাড়া ইমাম আহমদ এটাকে মাওকুফ বলেছেন৷ ইবনে কুদামা মাওকুফ হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷
মাকদেসি শাহিদ হিসেবে আরেকটি বর্ণনা মারফু হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷ উক্ত রেওয়ায়াতের বর্ণনাকারী জুহাইর অনেক বেশি ভুলকারী৷ (সিলসিলাতুল আহাদিসিস জয়িফা: ৪৮৩৩)
লা মাজহাবি ভাইরা তো জয়িফ হাদিস দেখলেই নাক সিটকান৷ আশা করি এ হাদিস দ্বারা আর কখনো দলিল দিবেন না৷
এবার আসুন, এ হাদিস দ্বারা কোন যুগ উদ্দেশ্য? প্রখ্যাত লা মাজহাবি আলেম মাওলানা আবদুর রহমান মুবারকপুরি রাহি. বলেন,
هَذَا فِي زَمَانِ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِينَ وَأَمَّا بَعْدَ ذَلِكَ فَقَدْ ظَهَرَتِ الْعُلَمَاءُ الْفُحُولُ فِي كُلِّ بَلْدَةٍ مِنْ بِلَادِ الْإِسْلَامِ أَكْثَرَ مَا كَانُوا بِالْمَدِينَةِ فَالْإِضَافَةُ لِلْجِنْسِ
এ হাদিসটি সাহাবা এবং তাবেয়িনদের যুগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য৷ পরবর্তি যুগে প্রত্যেক শহরে মদিনার থেকে বেশি বড় বড় আলেম জন্মগ্রহণ করেছেন৷ এখানে ইজাফত জিনসের জন্য৷ (তুহফাতুল আহওয়াজি: ৭/৩৭৩)
কেউ কেউ এ হাদিস দ্বারা কিয়ামতের আগের যুগের কথা বলেছেন৷ কিন্তু স্বয়ং আবুল হাসান মুবারকপুরি নাকোচ করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন,
وقد حمل بعضهم الحديث على آخر الزمان فقال: الظاهر أن النبي – صلى الله عليه وسلم – أراد به الإخبار عن حال آخر الزمان حين يأرز العلم والدين إلى المدينة كما يظهر من بعض الأحاديث. قال الشيخ عبد الحق الدهلوى: وهذا القول أقرب إلى الصواب. قلت: بل حمله على أول الأمر هو الأقرب كما فهمه أكثر علماء الأمة.
অর্থাৎ কারও কারও মতে এ হাদিস দ্বারা শেষ জামানা উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে৷ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবির মতটি অধিক গ্রহণযোগ্য৷
এরপর আবুল হাসান মুবারকপুরি বলেন, আমার মতে প্রথম মত তথা এ হাদিস দ্বারা সাহাবা এবং তাবেয়িনদের যুগ উদ্দেশ্য হওয়া অধিক বিশুদ্ধ৷ যেমনটা বলেছেন অধিকাংশ আলেম৷ (মিরআতুল মাফাতিহ: ১/৩৪০)
লা মাজহাবি স্কলারদের কাছে এ হাদিসটি সাহাবা এবং তাবেয়িনদের যুগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য৷ ইমাম তিরমিজিসহ আরও অনেকে সে যুগের অনেক ইমামের নাম উল্লেখ করেছেন৷ তাদের মতে এ হাদিস দ্বারা সে সকল ইমামগণ উদ্দেশ্য৷
বর্তমানের আরবের রাজ পরিবারের পদলেহনকারী আলেমদের আমি কোন ক্ষেত্রে দলিল মনে করি না৷ হকপন্থি যারা আছেন, অনেকেই কারাগারে আছেন৷ সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতির ফতোয়া দেখলে কষ্ট লাগে, আফসোস বাড়ে৷
উলামায়ে দেওবন্দ জুলুম অত্যাচারের কারণে কখনও হককথা বলা বন্ধ করেননি৷ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে উপমহাদেশে যখনই ইসলামের উপর কোন দূর্যোগ এসেছে, উলামায়ে দেওবন্দ বুকটান করে দাঁড়িয়েছেন, সর্বশেষ ১০০ বছরে উলামায়ে দেওবন্দ ইসলামের জন্য যে পরিমাণ রক্ত দিয়েছেন, আরবের আলেমগণ ততটুকু অশ্রুও দিতে পারেন নি৷

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *