১৪ শত বছরের ইমামদের মতে কুরআনের আয়াত কিংবা হাদিস দ্বারা তাবিজ দেওয়ার বিধান

১৪ শত বছরের ইমামদের মতে কুরআনের আয়াত কিংবা হাদিস দ্বারা তাবিজ দেওয়ার বিধান
রেজাউল কারীম আবরার

কুরআনের আয়াত কিংবা দোয়া লিখে তাবিজ দিলে সেটা কখনও তামিমা নয়। শিরকও নয়। বরং সেটা জায়েজ আছে। এ ব্যাপারে আমরা ১৪ শত বছরের ইমামদের মতামত আপনাদের সামনে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরছি।

১.সম্প্রতি কুয়েত সরকারের তত্তাবধানে প্রকাশিত ‘আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুওয়াইতিয়্যাহ” তে বলা হয়েছে:
لا خلاف بين الفقهاء في عدم جواز التميمة إذا كان فيها اسم لا يعرف معناه؛ لأن ما لا يفهم لا يؤمن أن يكون فيه شيء من الشرك، ولأنه لا دافع إلا الله، ولا يطلب دفع المؤذيات إلا بالله، وبأسمائه. أما إذا كانت التميمة، لا تشتمل إلا على شيء من القرآن، وأسماء الله تعالى وصفاته، فقد اختلفت الآراء فيها على النحو التالي: ذهب الحنفية، والمالكية، والشافعية، وأحمد في رواية إلى جواز ذلك، وهو ظاهر ما روي عن عائشة، وهو قول عبد الله بن عمرو بن العاص، وحملوا حديث: إن الرقى، والتمائم، والتولة شرك. على التمائم التي فيها شرك.
অর্থাৎ এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের মাঝে কোন মতনৈক্য নেই যে, অর্থ বুঝা যায় না এমন কোন কিছু লিখে লটকালে সেটা জায়েজ নেই। কারণ, যার অর্থ বুঝা যায় না সেটার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে শিরক আছে কিনা? কারণ, রোগ নিরাময়কারী আল্লাহ ছাড়া আর কেই নয়। এজন্য আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কোন কিছু দিয়ে রোগ থেকে মুক্তি চাওয়া যাবে না। যদি কেউ কুরআনের কোন আয়াত, আল্লাহর নাম কিংবা গুণাবলি লিখে লটকায় সেটা জায়েজ কিনা? সে ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী এবং এক বর্ণনামতে ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের মতে জায়েজ আছে। আয়েশা রাযি. থেকেও এমনটি বর্ণিত হয়েছে। এমনটি হলো প্রসিদ্ধ সাহাবী আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাযি. এর মত। যে হাদীসে ‘তামিমা’ কে শিরক বলা হয়েছে, তাদের মতে সে হাদীস দ্বারা এমন তামিমা উদ্দেশ্য, যার মাঝে শিরক রয়েছে। আল মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুওয়াইতিয়্যাহ: ৬/৪১৯

তাবিজ সংক্রান্ত ইমামদের মতামত উল্লেখ করতে গিয়ে প্রসিদ্ধ সালাফি আলেম সায়্যিদ মুহাম্মাদ সাবিক বলেন:
هل يجوز تعليق الادعية الواردة في الكتاب والسنة؟ روى عمر بن شعيب عن أبيه عن جده عبد الله بن عمرو بن العاص ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: ” إذا فزع أحدكم في النوم فليقل: اعوذ بكلمات الله التامة من غضبه وعقابه وشر عباده، من همزات الشياطين وأن يحضرون فانها لن تضره ” وكان عبد الله بن عمرو يعلمهن من عقل من بنيه، ومن لم يعقل كتبها في صك ثم علقها في عنقه.رواه أبو داود والنسائي والترمذي، وقال: حسن غريب، والحاكم وقال: صحيح الاسناد. وإلى هذا ذهبت عائشة ومالك وأكثر الشافعية ورواية عن أحمد.
অর্থাৎ কুরআন, মুন্নাহতে বর্ণিত দোয়া লিখে তাবিজ লটকানো জায়েজ আছে কিনা? এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: তোমাদের কেউ ঘুমে খারাপ কিছু দেখলে এ দোয়া পড়বে:
اعوذ بكلمات الله التامة من غضبه وعقابه وشر عباده، من همزات الشياطين وأن يحضرون فانها لن تضره ”
আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাযি. তার সন্তানদের মাঝে যারা এ দোয়া মুখস্থ করতে পারত, তাদের মুখস্থ করাতেন। যারা পারত না, তাদের জন্য কাগজে লিখে গলায় লটকিয়ে দিতেন। এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযি, নাসাঈ এবং আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযি হাদিসকে হাসান গারীব বলেছেন। সনদকে হাকিম নিশাপুরি সহিহ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী কুরআনের আয়াত কিংবা দোয়া লিখে তাবিজ লটকানো জায়েজ হওয়ার মতামত দিয়েছেন আয়েশা রাযি., ইমাম মালিক, অধিকাংশ শাফেয়ী ইমামগণ এবং এক বর্ণনানুযায়ী ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহি.। ফিকহুস সুন্নাহ: ১/৪৯৫।

মালেকি মাজহাবের কিতাবাদি থেকে দলিল
১. ইমাম মালেক বলেন:
قيل : فيكتب للمحموم القرآن؟ قال: لابأس به، ولابأس أن يرقى بالكلام الطيب، ولا بأس بالمعاذة تعلق، وفيها القرآن وذكر الله إذا أحرز عليها أدم
অর্থাৎ ইমাম মালিককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, জরাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কুরআন লিখে দেওয়া যাবে কিনা? তিনি বলেন, কোন সমস্যা নেই। এমনভাবে পবিত্র কথা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে কোন সমস্যা নেই। এমনভাবে কুরআনের আয়াত কিংবা আল্লাহর জিকির লিখে তাবিজ লটকাতে কোন সমস্যা নেই। যদি সেটা চামড়াতে না হয়। কিতাবুল জামে: আবু জায়দ কায়রুয়ানি ২৩৭।

২. মালেকি মাজহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব আশ শারহুস সাগির” বলা হয়েছে:
(وَ) تَجُوزُ (التَّمِيمَةُ) أَيْ الْوَرَقَةُ الْمَشْمُولَةُ (بِشَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ) الْمَذْكُورِ مِنْ أَسْمَائِهِ تَعَالَى وَالْقُرْآنِ لِمَرِيضٍ وَصَحِيحٍ وَحَائِضٍ وَنُفَسَاءَ وَبَهِيمَةٍ بَعْدَ جَعْلِهَا فِيمَا يَقِيهَا، وَلَا يُرْقَى بِالْأَسْمَاءِ الَّتِي لَمْ يُعْرَفْ مَعْنَاهَا قَالَ مَالِكٌ مَا يُدْرِيك لَعَلَّهَا كُفْرٌ،
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নাম, কুরআনের আয়াত লিখে যদি কোন অসুস্থ, সুস্থ কিংবা হায়েজগ্রস্থ কোন মহিলাকে লটকানো হয়, তাহলে সেটা জায়েজ আছে। তবে অর্থ বুঝা যায় না এমন অস্পষ্ট কথা লিখে লটকানো যাবে ন। ইমাম মালিক বলেন, হতে পারে অস্পষ্ট কথায় কোন কুফরি কথা আছে। হাশিয়াতুস সাওয়ি আলাশ শারহিস সাগির: ৪/৭৬৯।

 

৩. মালেকি মাজহাবের প্রখ্যাত ইমাম ইবনে রুশদ কুরতুবি (৫২০) রাহি. বলেন:
وفي جواز تعليق هذه الأحراز والتمائم على أعناق الصبيان والمرضى والحبالى والخيل والبهائم إذا كانت بكتاب الله تعالى وما هو معروف من ذكره وأسمائه، للاستشفاء بها من المرض، أو في حال الصحة لدفع ما يتوقع من العين والمرض- بين أهل العلم اختلاف، فظاهر قول مالك في هذه الرواية إجازة ذلك، وروي عنه أنه قال: لا بأس بذلك للمرضى، وكرهه مخافة العين وما يتقى من المرض للأصحاء. وأما التمائم بغير ذكر الله تعالى وبالكتاب العبراني وما لا يعرف ما هو فلا يجيزه بحال، لا لمريض ولا صحيح؛ لما جاء في الحديث من أن ্রمن تعلق شيئا وكل إليهগ্ধ ، ্রومن علق تميمة فلا أتم الله له، ومن علق ودعة فلا ودع الله لهগ্ধ ؛
অর্থাৎ কোন বাচ্চা, অসুস্থ মানুষ কিংবা গর্ভবতি মহিলার গলায়, এমনভাবে ঘোড়া বা চতুষ্পদ প্রাণীর গলায় কোন কিছু লটকানো, যখন সেটা আল্লাহর কুরআন, তার নাম দিয়ে হবে, সেটা জায়েজ কিনা? এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভিন্নতা আছে। ইমাম মালিক রাহি. এর মতে সেটা জায়েজ আছে। তবে সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে অপছন্দ করতেন। তবে যদি আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কোন কিছু লিখে লটকায়, অথবা অস্পষ্ট কোন কিছু লটকায়, তাহলে সুস্থ অসুস্থ কোন ব্যক্তির জন্য সেটা জায়েজ নেই। কারণ, হাদীসে এসেছে, যে কোন কিছু লটকালো, তার উপর সেটা ন্যস্ত করে দেওয়া হয়। আল বায়ানু ওয়াত তাহসিল: ১/৪৩৯।

 

৪. মালেকি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম আদাওয়ি রাহি. বলেন:
(وَلَا بَأْسَ بِالْمُعَاذَةِ) وَهِيَ التَّمَائِمُ وَالتَّمَائِمُ الْحُرُوزُ الَّتِي (تُعَلَّقُ) فِي الْعُنُقِ (وَفِيهَا الْقُرْآنُ) وَسَوَاءٌ فِي ذَلِكَ الْمَرِيضُ وَالصَّحِيحُ وَالْجُنُبُ وَالْحَائِضُ وَالنُّفَسَاءُ
অর্থাৎ কুরআন লিখে যদি সুস্থ অসুস্থ, জুনুবি, হায়েজ কিংবা নেফাসগ্রস্থ মহিলার গলায় লটকানো হয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই। হাশিয়াতুল আদাওয়ি আলা কিফায়াতিত তালিবির রাব্বানি: ২/৪৯২, দারুল ফিকর বায়রুত।

 

৫. মালেকি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম ক্বারাফী রাহি. বলেন:
وَأَجَازَ مَرَّةً تَعْلِيقَ التَّمَائِمِ من الْقُرْآن وَكَرِهَهَا مَرَّةً فِي الصِّحَّةِ مَخَافَةَ الْعَيْنِ أَوْ لِمَا يُتَّقَى مِنَ الْمَرَضِ وَأَجَازَهَا مَرَّةً بِكُلِّ حَالٍ
অর্থাৎ ইমাম মালিক রাহি. অসুস্থ ব্যক্তির জন্য কুরআন লিখে লটকানোর অনুমতি দিয়েছেন। তবে সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে কখনও তিনি মাকরুহ বলেছেন। এরপর সবার জন্য ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। আয যাখীরা: ১৩/৩১১, দারুল গারবিল ইসলামি, বায়রুত থেকে প্রকাশিত।

৬. আবুল ওয়ালিদ কুরতুবি রাহি. বলেন:
وإنما اختلف أهل العلم في جواز تعليق الأحراز والتمائم على أعناق الصبيان والمرضى والحبالى والخيل والبهائم إذا كانت بكتاب الله عز وجل، وما هو معروف من ذكره وأسمائه؛ للاستشفاء من المرض، أو في حال الصحة؛ لدفع ما يتوقع من المرض والعين، فظاهر قول مالك من رواية أشهب من كتاب الصلاة إجازة ذلك، وروي عنه أنه قال: لا بأس بذلك للمرضى وكرهه للأصحاء مخافة العين وما يتقى من المرض. وأما التمائم بغير ذكر الله وهي بالكتاب العبراني وما لا يعرف ما هو فلا يجيزه بحال لمريض ولا صحيح؛ لما جاء في الحديث:
অর্থাৎ যদি আল্লাহর কিতাব, তার নাম কিংবা গুণাবলি লিখে অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থতার জন্য লটকায়, তাহলে সেটা জায়েজ আছে কিনা? এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতানৈক্য আছে। ইমাম মালিক রাহি. এটার অনুমতি দিয়েছেন। ইমাম মালেক বলেন, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য অনুমতি আছে। তবে সুস্থ ব্যক্তির জন্য মাকরুহ। তবে যদি আল্লাহর নাম ব্যতিত অন্য কোন অস্পষ্ট কথা লিখে লটকায়, তাহল সেটা সুস্থ অসুস্থ কোন ব্যক্তির জন্য জায়েজ নেই।. আল মুকাদ্দিমাত আল মুমহিদাত: ৩/৪৬৫, দারুল গারবিল ইসলামি, বায়রুত।

৭. ইবনে আবদিল বার মালেকি রাহি.
وَقَدْ قَالَ مَالِكٌ رَحِمَهُ اللَّهُ لَا بَأْسَ بِتَعْلِيقِ الْكُتُبِ الَّتِي فِيهَا أَسْمَاءُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى أَعْنَاقِ الْمَرْضَى عَلَى وَجْهِ التَّبَرُّكِ بِهَا إِذَا لَمْ يُرِدْ مُعَلِّقُهَا بِتَعْلِيقِهَا مُدَافَعَةَ الْعَيْنِ وَهَذَا مَعْنَاهُ قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ بِهِ شَيْءٌ مِنَ الْعَيْنِ وَلَوْ نَزَلَ بِهِ شَيْءٌ مِنَ الْعَيْنِ جَازَ الرَّقْيُ عِنْدَ مَالِكٍ وَتَعْلِيقُ الْكُتُبِ
অর্থাৎ ইমাম মালিক রাহি. বলেন, বরকত লাভের জন্য আল্লাহর নাম লিখে অসুস্থ ব্যক্তির গলায় লটকাতে কোন সমস্যা নেই। যদি লটকানোর দ্বারা এটা উদ্দেশ্য না হয় যে লটকানো বস্তুই তাকে সুস্থ করবে। আত তামহীদ ১৭/১৬১।

 শাফেয়ি মাজহাবের দলিল
১.ইমাম বায়হাকি রাহি. তার প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ “আস সুনানুল কুবরা” তে ‘বাবুত তামাইম” এর ১৯৬০৫ নাম্বারে উকবা বিন আমের আল জুহানি রাহি. এর হাদীস উল্লেখ করে বলেন:
وَقَدْ يُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ وَمَا أَشْبَهَهُ مِنَ النَّهْيِ وَالْكَرَاهِيَةِ فِيمَنْ تَعَلَّقَهَا وَهُوَ يَرَى تَمَامَ الْعَافِيَةِ وَزَوَالَ الْعِلَّةِ مِنْهَا عَلَى مَا كَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ يَصْنَعُونَ , فَأَمَّا مَنْ تَعَلَّقَهَا مُتَبَرِّكًا بِذِكْرِ اللهِ تَعَالَى فِيهَا وَهُوَ يَعْلَمُ أَنْ لَا كَاشِفَ إِلَّا اللهُ وَلَا دَافِعَ عَنْهُ سِوَاهُ فَلَا بَأْسَ بِهَا إِنْ شَاءَ اللهُ
অর্থাৎ যে সমস্ত হাদীসে লটকাতে নিষেধ করা হয়েছে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জাহেলি যুগের লোকদের মতো যখন সে মনে করবে এই বস্তুই তাকে সুস্থ করবে। তবে যদি কেউ বরকতলাভের জন্য আল্লাহর নাম লিখে লটকায়, তার জানা আছে যে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ রোগ নিরাময়কারী নেই, তাহলে তবিজ লটকাতে কোন সমস্যা নেই। আস সুনানুল কুবরা: ১৯৬০৫।

২. ইমাম নববী বলেন:
إنَّ التَّمِيمَةَ خَرَزَةٌ كَانُوا يُعَلِّقُونَهَا يَرَوْنَ أَنَّهَا تَدْفَعُ عَنْهُمْ الْآفَاتِ وَيُقَالُ قِلَادَةٌ يُعَلَّقُ فِيهَا الْعُودُ وَعَنْ عُتْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ (سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَلَا أَتَمَّ اللَّهُ لَهُ وَمَنْ عَلَّقَ وَدَعَةً فَلَا وَدَعَ اللَّهُ لَهُ) رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ وَقَالَ هُوَ أَيْضًا رَاجِعٌ إلَى مَعْنَى مَا قَالَ أَبُو عُبَيْدَةَ قَالَ وَيَحْتَمِلُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ وما اشبه مِنْ النَّهْيِ وَالْكَرَاهَةِ فِيمَنْ يُعَلِّقُهَا وَهُوَ يَرَى تَمَامَ الْعَافِيَةِ وَزَوَالَ الْعِلَّةِ بِهَا عَلَى مَا كَانَتْ عَلَيْهِ الْجَاهِلِيَّةُ وَأَمَّا مَنْ يُعَلِّقُهَا مُتَبَرِّكًا بِذِكْرِ اللَّهِ تَعَالَى فِيهَا وَهُوَ يَعْلَمُ أَنْ لَا كَاشِفَ لَهُ إلَّا اللَّهُ وَلَا دَافِعَ عَنْهُ سِوَاهُ فَلَا بَأْسَ بِهَا إنْ شَاءَ الله تعالى
অর্থাৎ তামিমা বলা হয় ছোট ছোট পাথরকে , লোকেরা মনে করত যে এ পাথরই তাদের অনিষ্ট দূর করবে। আবার কারও মতে তামিমা বলা হয় মালাকে, সেখানে তারা বিভিন্ন কনা লটকাতো। উতবা বিন আমির রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে এ ধরণের ছোট ছোট পাথর লটকাবে, আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ না করেন। এ হাদীসটি বায়হাকী রাহি. বর্ণনা করেছেন। যে সমস্ত হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে, এ সমস্ত হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যারা এটা মনে করবে যে লটকানো বস্তুই তাকে সুস্থ করবে। যেমনটি ধারণা লালন করত জাহেলি যুগের লোকজন। তবে যদি কেউ বরকতলাভের জন্য আল্লাহর নাম লিখে লটকায়, যে এটা জানে যে রোগ নিরাময়কারী আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। আল মাজমু শারহুল মুহাযযাব: ৯/৬৬,

৩. ইবনে হাজার আসকালানি রাহি. বলেন:
هَذَا كُلُّهُ فِي تَعْلِيقِ التَّمَائِمِ وَغَيْرِهَا مِمَّا لَيْسَ فِيهِ قُرْآنٌ وَنَحْوُهُ فَأَمَّا مَا فِيهِ ذِكْرُ اللَّهِ فَلَا نَهْيَ فِيهِ فَإِنَّهُ إِنَّمَا يُجْعَلُ لِلتَّبَرُّكِ بِهِ وَالتَّعَوُّذِ بِأَسْمَائِهِ وَذِكْرِهِ وَكَذَلِكَ لَا نَهْيَ عَمَّا يُعَلَّقُ لِأَجْلِ الزِّينَةِ مَا لَمْ يَبْلُغِ الْخُيَلَاءَ أَوِ السَّرَفَ
অর্থাৎ যে সমস্ত হাদীসে ‘তামিমা’ লটকাতে নিষেধ করা হয়েছে, সে হাদীসগুলোতে ‘তামিমা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যার মধ্যে কুরআন বা আল্লাহর নাম জাতীয় কোন কিছু লেখা নেই। যদি আল্লাহর নাম লেখা থাকে, তাহলে লটকাতে সমস্যা নেই। কারণ, এটা স লটকায় বরকতলাভের জন্য। এমনভাবে কেউ যদি অহংকার এবং অপচয় এড়িয়ে সৌন্দর্যের জন্য লটকায়, তাহলে সমস্যা নেই। ফাতহুল বারি: ৬/১৪২।

৪. ইমাম খাত্তাবি বলেন:
والتميمة يقال إنها خرزة كانوا يتعلقونها يرون أنها تدفع عنهم الآفات. واعتقاد هذا الرأي جهل وضلال إذ لا مانع ولا دافع غير الله سبحانه ولا يدخل في هذا التعوذ بالقرآن والتبرك والاستشفاء به لأنه كلام الله سبحانه والاستعاذة به ترجع إلى الاستعاذة بالله سبحانه
অর্থাৎ ‘তামিমা’ বলা হয় ছোট ছোট পাথরকে, জাহেলি যুগের লোকেরা এ বিশ্বাস রেখে লটকাতো যে, পাথরই তাদের আপদ দূর করবে। এ ধরণের বিশ্বাস মূর্খতা এবং ভ্রষ্টতা। কারণ, আল্লাহ ছাড়া রোগ আপদ দূরকারী আর কেউ নেই। তবে বরকতলাভের জন্য কুরআনের আয়াত লিখে লটকানো এ বিধানের অন্তর্ভূক্ত নয়।. মাআলিমুস সুনান: ৪/২১১।

৫. ইমাম ইবনে বাত্তাল রাহি. (৪৪৯ হি.) বলেন:
ولا بأس بتعليق التمائم والخرز التى فيها الدعاء والرقى بكتاب الله عند جميع العلماء؛ لأن ذلك من التعوذ بأسماء الله،
অর্থাৎ দোয়া লিখে তাবিজ লটকানো এবং কুরআন দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে সকল আলেমদের মতে কোন অসুবিধা নেই। কারণ, এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়। শারহে সাহিহিল বুখারি লি ইবনে বাত্তাল:৫/১৫৯।

৬. ইমাম যুরকানি রাহি. বলেন:
هَذَا كُلُّهُ فِي تَعْلِيقِ تَمَائِمَ وَغَيْرِهَا لَا قُرْآنَ فِيهَا وَنَحْوَهُ. فَأَمَّا مَا فِيهِ ذِكْرُ اللَّهِ، فَلَا يُنْهَى عَنْهُ لِأَنَّهُ إِنَّمَا يُجْعَلُ لِلْبَرَكَةِ بِهِ، وَالتَّعَوُّذِ بِأَسْمَائِهِ وَذِكْرِهِ
অর্থাৎ যে হাদীসগুলো ‘তামিমা’ কে শিরক বলা হয়েছে, সে হাদীসগুলোতে ‘তামিমা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যেখানে কুরআন বা এ জাতীয় কোন কিছু লেখা নেই।তবে যদি আল্লাহর নাম লেখা থাকে, তাহলে কোন সমস্যা নেই। কারণ, এটা করা হয়ে থাকে বরকতলাভের জন্য। এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়। শারহুস যুরকানী আলা মুওয়াত্তা: ৪/৫০৩।

৭. ইমাম কুরতুবি রাহি.
القول الأول أصح في الأثر والنظر إن شاء الله تعالى. وما روي عن ابن مسعود يجوز أن يريد بما كره تعليقه غير القرآن أشياء مأخوذة عن العراقيين والكهان، إذ الاستشفاء بالقرآن معلقا وغير معلق لا يكون شركا، وقوله عليه السلام: من علق شيئا وكل إليه، فمن علق القرآن ينبغي أن يتولاه الله ولا يكله إلى غيره، لأنه تعالى هو المرغوب إليه والمتوكل عليه في الاستشفاء بالقرآن
অর্থাৎ এ ব্যাপারে প্রথম মতটি অধিক বিশুদ্ধ। ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে যে মত বর্ণিত হয়েছে, হয়ত তার এ মত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কুরআন ছাড়া অন্য কোন কিছু লটকানো। কারণ, কুরআন লটকিয়ে বা না লটকিয়ে চিকিৎসাগ্রহণ শিরক নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কোন কিছু লটকালো, তার উপর সেটা ন্যস্ত করা হয়। যদি কুরআন লটকায়, সেতো ব্যাপারটি আল্লাহর উপর ন্যস্ত করে দিয়েছে। অন্য কারও উপর ন্যস্ত করে নি। বরং সে আল্লাহকেই তার অভিভাবক বানিয়েছে। আহকামুল কুরআন: ১০/২৬৬।

হাম্বলি মাজহাবের কিতাবাদি থেকে দলিল
১.ইমাম আহমদের পুত্র আবদুল্লাহ বর্ণনা করেন:
رأيت أبي يكتب التعويذ للذي يفزع، وللحمى.
আমার পিতা ইমাম আহমদকে দেখেিেছ তিনি চিন্তাগ্রস্থ এবং জ্বরাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য তাবিজ লিখে দিচ্ছেন। যাদুল মাআদ ৪/৩২৬।

২. মায়মুনি এবং আবু দাউদ রাহি. বলেন:
قال الميموني: سمعت من سأل أبا عبد الله عن التمائم تعلق بعد نزول البلاء؟ قال: أرجو أن لا يكون به بأس.ونقل أبو داود في مسائله: ৩৪৯ قال: رأيت على ابن أحمد وهو صغير تميمة في رقبته في أديم.
وفعله الإمام أحمد بنفسه كما في مسائل عبد الله: ৩/১৩৪৫، ومناقب الإمام أحمد: ২৪২ لابن الجوزي، وبدائع الفوائد: ১৬৫. قال الخلال: قد كتب هو – أي الإمام أحمد – من الحمى بعد نزول البلاء، والكراهة من تعليق ذلك، قبل وقوع البلاء
অর্থাৎ মাইমুনি বলেন, আমি শুনেছি বিপদ আসার পর তাবিজ লটকানোর ব্যাপারে ইমাম আহমদ বিন হাম্বলকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আশা করি কোন সমস্যা নেই। ইমাম আবু দাউদ তার মাসায়েল এ নকল করেছেন, তিনি বলেন, আমি আলি বিন আহমদকে ছোটকালে দেখেছি তার হাতে চামড়ার তাবিজ লটকানো।
ইমাম আহমদ নিজেই তাবিজ লিখেছেন। আবু বকর খাল্লাল রাহি. বলেন, জ্বারাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ইমাম আহমদ বিন হাম্বল তাবিজ লিখে দিতেন। তবে বিপদ আসার আগে তাবিজ লটকানোকে তিনি মাকরুহ মনে করতেন। মাসায়িলুল ইমাম আহমদ ওয়া ইসহাক বিন রাহুয়াহ: ৯/৭১২। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগ থেকে প্রকাশিত।

৩. ইবনে মুফলিহ আল হাম্বলি: ৭৬৩ হি.
وَيُكْرَهُ تَعْلِيقُ التَّمَائِمِ وَنَحْوِهَا، وَيُبَاحُ تَعْلِيقُ قِلَادَةٍ فِيهَا قُرْآنٌ أَوْ ذِكْرٌ غَيْرُهُ، نَصَّ عَلَيْهِ، وَكَذَا التعاويذ، وَيَجُوزُ أَنْ يُكْتَبَ الْقُرْآنُ أَوْ ذِكْرٌ غَيْرُهُ بالعربية، ويعلق على مريض،……وَلَا بَأْسَ بِالْقِلَادَةِ يُعَلِّقُهَا فِيهَا الْقُرْآنُ، وَكَذَا التَّعَاوِيذُ،
অর্থাৎ তামিমা এবং এ জাতীয় কোন কিছু লটকানো মাকরুহ। তবে কুরআন বা জিকির লিখে লটকাতে পারেন। এমনভাবে কুরআন বা আরবিতে জিকির লিখে অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে লটকানো জায়েজ আছে। কিতাবুল ফুরু: ৩/২৪৮,

৪. মুসতাফা বিন সাদ আল হাম্বলি বলেন:
(وَ) تَحْرُمُ (تَمِيمَةٌ، وَهِيَ: خَرَزَةٌ أَوْ خَيْطٌ وَنَحْوُهُ) ، كَعُوذَةٍ (يَتَعَلَّقُهَا) ، فَنَهَى الشَّارِعُ عَنْهُ، وَدَعَا عَلَى فَاعِلِهِ، وَقَالَ ্রلَا يَزِيدُكَ إلَّا وَهْنًا، انْبِذْهَا عَنْكَ، لَوْ مِتَّ وَهِيَ عَلَيْكَ، مَا أَفْلَحْتَ أَبَدًاগ্ধ رَوَى ذَلِكَ أَحْمَدُ وَغَيْرُهُ، وَالْإِسْنَادُ حَسَنٌ. يَجُوزُ حَمْلُ الْأَخْبَارِ عَلَى حَالَيْنِ: فَنَهْيٌ، إذَا كَانَ يَعْتَقِدُ أَنَّهَا النَّافِعَةُ لَهُ، وَالدَّافِعَةُ عَنْهُ، وَهَذَا لَا يَجُوزُ؛ لِأَنَّ النَّافِعَ هُوَ اللَّهُ.
وَالْمَوْضِعُ الَّذِي أَجَازَهُ: إذَا اعْتَقَدَ أَنَّ اللَّهَ هُوَ النَّافِعُ الدَّافِعُ، وَلَعَلَّ هَذَا خَرَجَ عَلَى عَادَةِ الْجَاهِلِيَّةِ،
অর্থাৎ তামিমা লটকানো হারাম। তামিমা বলা হয় ছোঠ ছোট পাথর কিংবা তাগা লটকানোকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে লটকাতে নিষেধ করেছেন। যে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে, সেটার দুই অবস্থা। প্রথমত নিষেধ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যদি সে এ বিশ্বাস রাখে যে লটকানো বস্তুই তার উপকার করবে। এটা জায়েজ নেই। কার, উপকারকারী হলেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা। যদি সে আকিদা রাখে যে, উপকার এবং রোগ নিরাময়কারী একমাত্র আল্লাহ তাআলা, তাহলে সেটা জায়েজ আছে। কারণ, সেটা জাহেলি যুগের রীতের সাথে মিলে নি। মাতালিবু উলান নাহয়ি ফি শারহি গায়াতিল মুনতাহি: ১/৮৩৪।
৫. ইমাম আবুন নাজা মাকদেসি (৯৬৮ হি.) বলেন:
وتحرم التميمة: وهو عوذة أو خرزة أو خيط ونحوه يتعلقها ولا بأس بكتب قرآن
অর্থাৎ তামিমা হলো হারাম। তামিমা বলা হয় ছোট ছোট পাথর কিংবা তাগা বা এ জাতীয় কোন কিছু লটকানো। তবে কুরআনে লিখতে কোন সমস্যা নেই। আল ইকনা’ ফি ফিকহিল ইমাম আহমদ: ১/২১০।

৬. ইবনে কুতাইবা রাহি. ২৭৬ হি. বলেন:
ألتميمة خرزة كَانَت الْجَاهِلِيَّة تعلقهَا فِي الْعُنُق وَفِي الْعَضُد تتوقى بهَا وتظن أَنَّهَا تدفع عَن الْمَرْء العاهات وَكَانَ بَعضهم يظنّ أَنَّهَا تدفع الْمنية ….قَالَ أَبُو زيد التميمة خرزة رقطاء روى عقبَة بن عَامر أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ من تعلق تَمِيمَة فقد أشرك وَبَعض النَّاس يتَوَهَّم أَن المعاذات هِيَ التمائم وَيَقُول فِي قَول عبد الله إِن التمائم والرقى والتولة من الشّرك والرقى الْمَكْرُوهَة مَا كَانَ بِغَيْر لِسَان الْعَرَبيَّة وَلَيْسَ كَذَلِك إِنَّمَا التميمة الخرز وَلَا بَأْس بالمعاذات إِذا كتب فِيهَا الْقُرْآن وَأَسْمَاء الله عز وَجل
অর্থাৎ তামিমা বলা হয় ছোট ছোট পাথরকে, জাহেলি যুগে লোকেরা গলায় এবং বাহুতে লটকিয়ে রাখত। তারা মনে করত পাথর তাদের থেকে বিপদ দূর রাখবে। কেউ কেউ মনে করত এটা তাদের থেকে মৃত্যুকে দূরে রাখবে। উকবা বিন আমির রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে তামিমা লটকালো সে শিরক করল। কেউ কেউ তাবিজকে তামিমা মনে করেন। তারা ইবনে মাসউদ রাযি. এর হাদীসের কারণে এটাকে হারাম বলেন। অথচ বাস্তবতা এমন নয়। তামিমা বলা হয় ছোট ছোট পাথরকে। কুরআন বা আল্লাহর নাম লিখে তাবিজ লটকাতে কোন সমস্যা নেই। গারিবুল হাদিস: ১/৪৫০,
সালাফিদের বরণীয় আলেমদের মতামত
১.মুনাবি রাহি. বলেন:
المراد من علق تميمة من تمائم الجاهلية يظن أنها تدفع أو تنفع فإن ذلك حرام والحرام لا دواء فيه وكذا لو جهل معناها وإن تجرد عن الاعتقاد المذكور فإن من علق شيئا من أسماء الله الصريحة فهو جائز بل مطلوب محبوب فإن من وكل إلى أسماء الله أخذ الله بيده
অর্থৎ যে তামিমা লটকালো সে শিরক করল, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জাহেলি যুগের তামিমা। তারা মনে করত যে ছোট ছোট পাথর তাদের উপকার করবে এবং বিপদ দূর করবে। এটা হারাম। আর হারাম দ্বারা কোন চিকিৎসা নেই। এমনভাবে অর্থ জানা না থাকলে সেটা লটকানো জায়েজ নেই। যদি উপরোক্ত আকিদা থেকে মুক্ত হয়, স্পষ্টভাবে আল্লাহর নাম লিখে লটকায় তাহলে সেটা জায়েজ। বরং সেটা উদ্দিষ্ট এবং প্রশংসিত। কারণ, যে তার সমস্যা আল্লার নামের হাওয়ালা করে দিবে, আল্লাহ তাকে নিজ হাতে ধরবেন। ফায়যুল কাদীর: ৬/১০৭।

২. আবুল হাসান মুবারকপুরি
اعلم أن العلماء من الصحابة والتابعين فمن بعدهم اختلفوا في جواز تعليق التمائم التي من القرآن وأسماء الله تعالى وصفاته فقالت طائفة: يجوز ذلك وهو قول عبد الله بن عمرو بن العاص وهو ظاهر ما روى عن عائشة، وبه قال أبو جعفر الباقر وأحمد في رواية وحملوا الحديث، (يعني حديث ابن مسعود قال: سمعت رسول الله – صلى الله عليه وسلم – يقول: إن الرقى والتولة والتمائم شرك. رواه أبو داود، وابن ماجة، وابن حبان، والحاكم، وقال صحيح وأقره الذهبي) على التمائم التي فيها شرك (والقرينة على هذا الحمل اقتران التمائم بالرقى، ومن المعلوم أن المراد من الرقى ها هنا هي التي فيها شرك)
আল্লাহ নাম কিংবা গুণাবলি লিখে তাবিজ লটকানো জায়েজ আছে কিনা? এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। এক দলের মতে জায়েজ আছে। এমনটি হলো আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাযি. এর মত। আয়েশা রাযি. থেকেও এমনটি বর্ণিত হয়েছে। আবু জাফর বাকির এবং ইমাম আহমদ এমনটি বলেছেন। তারা ইবনে মাসউদ রাযি. এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, এ হাদীসে শিরকযুক্ত তামিমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্দেশ্য নিয়েছেন। মিরআতুল মাফাতিহ: ৮/২৩৯।
৩. ইবনে তাইমিয়া বলেন:
وَيَجُوزُ أَنْ يَكْتُبَ لِلْمُصَابِ وَغَيْرِهِ مِنْ الْمَرْضَى شَيْئًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ وَذِكْرُهُ بِالْمِدَادِ الْمُبَاحِ وَيُغْسَلُ وَيُسْقَى كَمَا نَصَّ عَلَى ذَلِكَ أَحْمَد وَغَيْرُهُ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَحْمَد: قَرَأْت عَلَى أَبِي ثَنَا يَعْلَى بْنُ عُبَيْدٍ؛ ثَنَا سُفْيَانُ؛ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي لَيْلَى عَنْ الْحَكَمِ؛ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ؛ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إذَا عَسِرَ عَلَى الْمَرْأَةِ وِلَادَتُهَا فَلْيَكْتُبْ: بِسْمِ اللَّهِ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ {كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إلَّا عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا} {كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوعَدُونَ لَمْ يَلْبَثُوا إلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ بَلَاغٌ فَهَلْ يُهْلَكُ إلَّا الْقَوْمُ الْفَاسِقُونَ} . قَالَ أَبِي: ثَنَا أَسْوَدُ بْنُ عَامِرٍ بِإِسْنَادِهِ بِمَعْنَاهُ وَقَالَ: يُكْتَبُ فِي إنَاءٍ نَظِيفٍ فَيُسْقَى قَالَ أَبِي: وَزَادَ فِيهِ وَكِيعٌ فَتُسْقَى وَيُنْضَحُ مَا دُونَ سُرَّتِهَا قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: رَأَيْت أَبِي يَكْتُبُ لِلْمَرْأَةِ فِي جَامٍ أَوْ شَيْءٍ نَظِيفٍ. وَقَالَ أَبُو عَمْرٍو مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَد بْنِ حَمْدَانَ الحيري: أَنَا الْحَسَنُ بْنُ سُفْيَانَ النسوي؛ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَحْمَد بْنِ شبوية؛ ثنَا عَلِيُّ بْنُ لْحَسَنِ بْنِ شَقِيقٍ؛ ثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ؛ عَنْ سُفْيَانَ؛ عَنْ ابْنِ أَبِي لَيْلَى؛ عَنْ الْحَكَمِ؛ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ؛ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إذَا عَسِرَ عَلَى الْمَرْأَةِ وِلَادُهَا فَلْيَكْتُبْ: بِسْمِ اللَّهِ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ؛ سُبْحَانَ اللَّهِ وَتَعَالَى رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ؛ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ {كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إلَّا عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا} {كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوعَدُونَ لَمْ يَلْبَثُوا إلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ بَلَاغٌ فَهَلْ يُهْلَكُ إلَّا الْقَوْمُ الْفَاسِقُونَ} . قَالَ عَلِيٌّ: يُكْتَبُ فِي كاغدة فَيُعَلَّقُ عَلَى عَضُدِ الْمَرْأَةِ قَالَ عَلِيٌّ: وَقَدْ جَرَّبْنَاهُ فَلَمْ نَرَ شَيْئًا أَعْجَبَ مِنْهُ فَإِذَا وَضَعَتْ تُحِلُّهُ سَرِيعًا ثُمَّ تَجْعَلُهُ فِي خِرْقَةٍ أَوْ تُحْرِقُهُ.
অসুস্থ রোগাক্রান্ত ইত্যাদি ব্যক্তির জন্য পবিত্র কালি দ্বারা কুরআনের আয়াত বা আল্লাহর যিকির লেখা এবং তা দিয়ে রোগীকে গোসল করানো ও পান করানো জায়েয আছে। ইমাম আহমাদ রাহ.-সহ আরো অন্যান্য ইমামগণ একথা স্পষ্টভাবে বলেছেন । যেমন, ইমাম আহমাদ রাহ. হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, যদি কোনো মহিলার প্রসব কঠিন হয় তাহলে যেন নিম্নোক্ত বাক্যগুলো লিখে দেওয়া হয়-

بسم الله، لا إله إلا الله الحليم الكريم، سبحان الله وتعالى، رب العرش العظيم، والحمد لله رب العالمين. كأنهم يوم يرونها. لم يلبثوا إلا عشية أو ضحاها. كأنهم يوم يرون ما يوعدون. لم يلبثوا إلا ساعة من نهار بلاغ، فهل يهلك إلا القوم الفاسقون.

(অন্য সূত্রে এসেছে) ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এই দুআটি একটি পরিষ্কার পাত্রে লিখে তাকে পান করানো হবে এবং নাভির নিচে পানি ছিটানো হবে।
আব্দুল্লাহ বলেন, আমি আমার পিতা (ইমাম আহমাদ রাহ.)-কে দেখেছি, তিনি এ বাক্যগুলো এ ধরনের নারীদের জন্য পরিষ্কার পাত্রে লিখতেন।
অন্য বর্ণনায় হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে উক্ত দুআটি একটু ভিন্ন শব্দে বর্ণিত-

بسم الله، لا إله إلا الله العلي العظيم، لا إله إلا الله الحكيم الكريم…إلخ

আলী ইবনে হাসান রাহ. বলেন, এই দুআটি কাগজে লিখে উক্ত মহিলার বাহুতে বেঁধে দিবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এটি পরীক্ষা করে দেখেছি এবং এর চেয়ে অধিক কার্যকরী কোনো কিছু পাইনি। প্রসব হওয়ার সাথে সাথে তা খুলে ফেলবে এবং ঐ কাগজটি কোনো কাপড়ের টুকরায় রেখে দিবে বা জ্বালিয়ে দিবে। মাজমুউল ফতোয়া: ১৯/৬৪, ৬৫।

ইবনে তাইমিয়ার মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তার ছাত্র ইবনে কাসির বলেন:
إِنَّ الْخَيْطَ الَّذِي كَانَ فِيهِ الزِّئْبَقُ الَّذِي كَانَ فِي عُنُقِهِ بِسَبَبِ الْقَمْلِ، دُفِعَ فِيهِ مِائَةٌ وَخَمْسُونَ دِرْهَمًا،
অর্থাৎ ইবনে তাইমিয়ার গলায় তাগার মধ্যে যি’বাক তথা পারদের পাথর ছিল, যা তিনি উকুনের কারণে ব্যবহার করেছেন। ১৫০ দিরহামে সেটা বিক্রি করা হয়। আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া: ১৪/১৩৬।

৪. ইবনুল কায়্যিম বলেন:
وكل ما تقدم من الرقى فإن كتابته نافعة
পূর্বে যেসব দুআ দিয়ে ঝাড়ফুঁকের কথা বলা হয়েছে সেগুলো লিখে দিলেও উপকার হয়।

রেফারেন্স দিলে আরও বহু কিতাবের দেওয়া যাবে। আমরা ১৪ শত বছরের গ্রহণযোগ্য অনেক ইমামের মতামত আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। এর দ্বারা আশা করি সত্যান্বেষী পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তামিমা এবং তাবিজ কখনও এক নয়। উম্মাহর হাজার বছরের ইমামগণ সকলেই একমত ছিলেন যে, কুরআনের আয়াত, হাদীস, আল্লাহর নাম বা অর্থবোধক কোন কথা লিখে তাবিজ লটকানো জায়েজ আছে। যারা শিরক শিরক জিকির করেন, তারা ১৪ শত বছরের এমন একজন ইমামেরও বক্তব্য দেখাতে পারবে না যে, যিনি কুরআনের আয়াত লিখে বা দোয়া লিখে তাবিজ লটকানোকে শিরক বলেছেন। এরপরও যদি কেউ অপপ্রচার করে, তাহলে আমরা তার হেদায়াতের দোয়া করি।

 

Check Also

সদকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করার দলিল নেই?

শায়খ কাজি ইবরাহিম সাহেবের ফতোয়া দেখলাম। তার বক্তব্য অনুসারে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের কথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *