কাদিয়ানি! সুন্দরী মুহাম্মাদী বেগমের কথা মনে পড়ে?
রেজাউল কারীম আবরার
আল্লাহর প্রেরিত নবীরা অনেক সময় ভবিষ্যতবাণী করেন। তাদের ভবিষ্যতবাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অসংখ্য ভবিষ্যতবাণী করেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছে। কয়সার কিসরা বিজয়ের কথাই ধরুন। খন্দকের কঠিন যুদ্ধের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য পরিখা খনন করছিলেন, তখন সে সময়কার পৃথিবীর পরাশক্তি রোম এবং পারস্য বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। মুনাফিকরা হাসাহাসি করতে থাকলো। কি পাগলামি কথা! খড়ের মাঝে শুয়ে রাজপ্রাসাদ নির্মাণের স্বপ্ন! নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য পেটে পাথর বেধে দিন রাত নির্বিরাম কাজ করছে! তারা আবার পৃথিবীর পরাশক্তি রোম এবং ইরান জয়ের স্বপ্নে দেখে! কিন্তু ইতিহাসে চোখ বুলান! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের বিশ বছরের মধ্যে মুসলমানরা পুরো রোম এবং ইরান কব্জা করে ফেলে। ইরান এবং রোমে পতপত করে উড়েছে হিলালি পতাকা।
এ ধরনের আরো অনেক ভবিষ্যতবাণীর কথা হাদীসের পাতায় পাতায় রয়েছে। আল্লাহর কসম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এমন একটি ভবিষ্যতবাণী নেই, যা বাস্তবায়ন হয়নি।
গোলাম আহমদ কাদিয়ানি নিজেকে নবী দাবী করেছে। সে কিছু ভবিষ্যতবাণী করেছিল। কিন্তু তার ভবিষ্যতবাণীগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে মানুষদের দেখিয়ে দিয়েছে যে, সে মিথ্যুক। নিকৃষ্ট কাফের। নবী হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এমন দুটি ভবিষ্যতবাণী নিয়ে এখানে আলোচনা করছি।
মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বলেছে যে, ‘‘আথম ৫ জুন ১৮৯৩ঈ. থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ঈ. পর্যন্ত অর্থাৎ পনেরো মাস সময়ের মধ্যে মারা যাবে।’’ তারপর পুনরায় ১৮৯৩ ঈ. সালের সেপ্টেম্বরে এ ঘোষণা দিয়েছে যে, ‘‘তার বেঁধে দেওয়া সময় সীমা অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবশ্যই মারা যাবে।’’
উল্লেখ্য যে, তখন আথমের বয়স ছিল সত্তরের কাছাকাছি। এসময় তার মারা যাওয়া বিচিত্র কিছু ছিল না। সে ভরসা করেই হয়ত মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি এরূপ উক্তি করার সাহস পেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলার মর্জি ছিল ভিন্ন রকম, মির্জা গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা, তাই সে বয়োবৃদ্ধ আবদুল্লাহ আথম গোলাম আহমদের বেঁধে দেওয়া সময় সীমার মধ্যে মারা যায়নি; বরং তার পরও প্রায় দু’বছর বেঁচে থেকে ২৭ জুলাই ১৮৯৬ঈ. মারা যায়। মির্জা গোলাম আহমদ যেহেতু উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীটিকে তার সত্য ও অসত্য হওয়ার মাপকাঠিরূপে পেশ করেছে, তাই তার বেঁধে দেওয়া সময় সীমার পরে আথম যতদিন জীবিত ছিল, তার প্রতিটি মুহূর্ত গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার সাক্ষ্য বহন করেছিল।
তার দাবি মতে তিনি নবী। আল্লাহ তায়ালা তাকে সত্য নবী হিসাবে কাদিয়ানে পাঠিয়েছেন। দশ লাখ মুজিযা দান করে তার নবুওতকে শক্তিশালি করেছেন। সামান্য একজন লোকের মৃত্যু নিয়ে তিনি ভবিষ্যত বাণী করলেন। বলে দিলেন তিনি যেহেতু আল্লাহর নবী, সুতরাং নবীর কথার উল্টো হতে পারে না। আথম তারে বেথেধ দেওয়া সময়ের মাঝেই মরে যাবে। আথম বৃদ্ধ হওয়ার কারণে তিনি অন্ধকারে ঢিল ছুড়েছিলেন। যদি লেগে যায়, তাহলে তো কেল্লা ফতেহ! কিন্তু আল্লাহ চাইলেন তার মিথ্যার আবরণে ঢাকা কুৎসিত চেহারা মানুষের কাছে উন্মোচন করতে। আথাম তার বেধে দেওয়া সময়ের মাঝে মরলো না। আহ! বেচারা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি তাকে আল্লাহ দশ লাখ মুজিযা দান করেছেন! তার দাবি মতে এত বড় নবী একজন সাধারণ লোকের মৃত্যুর ব্যাপারে ভবিষ্যত বাণী করলেন! কিন্তু আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিলেন না। কিয়মত পর্যন্ত আগত লোকদের কাছে তাকে অপমানিত করলেন। মিথ্যুক প্রমাণিত করলেন! মানুষ এত নিচু পর্যায়ের মিথ্যুক হতে পারে!
আর তার একটি ভবিষ্যদ্বাণী হল মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ সংক্রান্ত। এটি তার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী। এটাকে সে তার বইপত্রে নিজের সত্যতার মাপকাঠি হিসেবে পেশ করেছে। মির্জা গোলাম আহমদের এক আত্মীয় ছিল মির্জা আহমদ বেগ। ভারতের হুশিয়ারপুরের অধিবাসী। অনিন্দ্য সুন্দরী মোহাম্মাদী বেগম তারই কন্যা। মির্জা গোলাম আহমদের মনে তাকে বিয়ে করার আগ্রহ জাগে। একদিন সে কন্যার পিতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু আহমদ বেগ সম্মত হননি। মির্জা গোলাম আহমদ মির্জা আহমদ বেগকে প্রভাবিত করার জন্য জোরে শোরে দুটি কথা ঘোষণা করতে থাকে। একটি হল, মুহাম্মাদী বেগম তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে, এটা সে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী ও ইলহাম দ্বারা জানতে পেরেছে। দ্বিতীয়টি হল, কন্যার পরিবার যদি এতে অমত পোষণ করে তবে তারা নানা রকম বিপদ-আপদে আক্রান্ত হবে। মুহাম্মাদী বেগমের উপরও বিপদ আসবে।
মির্জা গোলাম আহমদ এসব কথা তার চিঠিপত্রে, বইপুস্তকে ও প্রচারপত্রে এত জোরে শোরে লিখতে শুরু করল যে, আহমদ বেগ যদি কোনো কাঁচা মানুষ হতেন তবে ভয়ে কন্যা দান করেই বসতেন। কিন্তু তিনি এসবে প্রভাবিত হননি; বরং তিনি নিজের অমতের উপর অবিচল থাকলেন। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যায়, আর মির্জা গোলাম আহমদ মুহাম্মাদী বেগমকে বিয়ে করার জন্য নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে থাকে।
এক পর্যায়ে লাহোরের অধিবাসী সুলতান মুহাম্মাদ নামক এক লোকের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ ঠিক হয়ে গেলে এতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য মির্জা গোলাম আহমদ অনেক আশ্চর্য রকমের চেষ্টা-তদবির শুরু করে। যখন তার সকল চেষ্টা-তদবির ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন সে তার পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী আল্লাহর ইলহামের বরাত দিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করে। তাতে সে বলে যে, যদি সুলতান মুহাম্মাদের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিয়ে হয় তবে বিয়ের পর আড়াই বছরের মধ্যে মুহাম্মাদী বেগমের পিতা মির্জা আহমদ বেগ মারা যাবে। আর মুহাম্মাদী বেগম বিধবা হয়ে তার বিবাহ বন্ধনে আসবে। আল্লাহর লীলা, সুলতান মুহাম্মাদের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ হয়ে যাওয়ারর পরও মির্জা গোলাম আহমদের পূর্ব ভবিষ্যদ্বাণী আরো জোরে চলতে থাকে। সে বলতে থাকে যে, এটা অদৃশ্যের অলঙ্ঘনীয় লেখা, কেউ এটাকে পরিবর্তন করতে পারবে না। সুলতান মুহাম্মাদ মারা যাওয়ারর পর অবশ্যই মুহাম্মাদী বেগম তার স্ত্রী হবে। যদি এটা না হয়, তবে সে মিথ্যাবাদী ও নিকৃষ্টতম জীব বলে সাব্যস্ত হবে।
কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার এসব ধোঁকাবাজিকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন এবং তার দম্ভ, অহঙ্কার ও দাবিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন। ফলে ১৯০৮ ঈ. সালে যখন মির্জা গোলাম আহমদ মারা যায়, তখনও সুলতান মুহাম্মদ ও তার স্ত্রী মুহাম্মাদী বেগম জীবিত থেকে অতি সুখে জীবন যাপন করছিলেন। এমনকি তার মৃত্যুর পর সুলতান মুহাম্মাদ প্রায় ৪০ বছর জীবিত ছিলেন। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ও প্রতিটি দিন মির্জা গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার সাক্ষ্য বহন করেছিল। সুলতান মুহাম্মাদ ১৯৪৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
একটু ভাবুন। গোলাম আহমদ কাদিয়ানির দাবি মতে আল্লাহ তাকে কাদিয়ানে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছেন। নবীদের কাজ কি থাকে? মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে টেনে আনার চেষ্টা করা। জাহান্নামের পথের পথিক থেকে জান্নাতের পথিক বানানোর চেষ্টা করা! গোলাম আহমদের আগে পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসূল এসেছেন? তারা কি এভাবে কোনো নারীর প্রেমে মজেছিলেন? বেহুদা অহেতুক ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন? এরপর ভবিষ্যত বাণী বাস্তবায়ন না হওয়ায় মুখে চুনি কালি মেখেছেন? কখনো না। এগুলো নবীর কাজ হতে পারে না। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যুকদের ব্যাপারে ভবিষ্যত বাণী করে গেছেন। দেখেন, কত নিপুণভাবে মিথ্যুকদের কুচকুচে কালো চেহারা আমাদের সামনে উন্মোচন করলেন!
তথ্য সূত্র. জাওয়াহিরুল ফিকহ, মাসিক আল কাউসার, তাজাল্লিয়াতে সাফদার