আলবানি রাহি. এর ব্যাপারে আবদুল মালেক সাহেবের পর্যালোচনা এবং লা মাজহাবিদের আপত্তির বাস্তবতা (১)
কয়েকদিন আগে আহাফি আবদুল্লাহ বিন আবদুর রাযযাক বলেছিলেন আবদুল মালেক সাহেবের মতো আলেম সৌদির গ্রামে গ্রামে পাওয়া যায়! মনে করেছিলাম হয়তো তিনিও তার পিতার মতো মানুষকে নির্মল বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করছেন! এজন্য তাকে উৎসর্গ করে একটি লেখা লিখেছিলাম। আজকেতো মাশাআল্লাহ সরাসরি আবদুল মালেক সাহেবের প্রতি খেয়ানতের অভিযোগ করে ফেললেন! মাসিক আল কাউসারে আবদুল মালেক সাহেব দা.বা. মাওলানা নাসিরুদ্দীন আলবানি রহ. এর ‘সিলসিলাতুস আহাদিসিস যায়িফাহ’ নিয়ে একটি পর্যালোচনা লিখেছিলেন । ওই লেখার মধ্যে আমাদের ভাই আটটি খেয়ানত খুঁজে বের করেছেন!
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আটটি খেয়ানত ধরতে গিয়ে তিনি নিজেই খেয়ানত করেছেন! প্রথমে সাত নাম্বার খেয়ানত সম্পর্কে আলোচনা একটু খেয়াল করি। তিনি লিখেন:
“মাওলানা: আলবানীর কাছে জঈফ ও জাল হাদীস একই ছিল, পার্থক্য করতেন না।”
খেয়ানত:
আলবানী জঈফ+জঈফ মিলে হাসান লিগাইরিহি মানতেন। জাল ও জঈফ একই হলে একাজ করতেন না। তিনি ফাজায়েলে আমলের ক্ষেত্রে আসকালানীর তিন শর্তের আলোকে কেউ আমল করতে চায়লে ছাড় দিতেন। বিস্তারিত জানতে দেখুন তামামুল মিন্নাহ ও সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীবের ভূমিকা। আরও প্রমাণ হচ্ছে তিনি কিতাবের নাম রেখেছেন সিলসিলাতুল আহাদীসিজ জঈফাহ ওয়াল মাওজূ’আহ। তিনি একই মনে করলে এ নাম রাখতেন না।”
মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের বক্তব্য উল্লেখ করতে গিয়ে আমাদের ওই ভাই আমানত রক্ষা করেননি। আসুন প্রথমে আমরা হুজুরের বক্তব্য দেখি। তিনি বলেন-
“শায়খ আলবানী রহ. যয়ীফ হাদীসকে সম্পূর্ণ বেফায়দা মনে করেন। তাঁর মতে যয়ীফের কোন প্রকার কোন ক্ষেত্রেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি যয়ীফ ও মওযু দুটোকেই একই শ্রেণীভুক্ত করেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন যে, যয়ীফ সর্বক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য। এটা না ফাযায়েলের ক্ষেত্রে গ্রহষযোগ্য, না মুস্তাহাব বিষয়াদির ক্ষেত্রে, না অন্য কোথাও।
(নির্বাচিত প্রবন্ধ, পৃষ্ঠা নং ২৫৩, মারকাযুদ দাওয়াহ থেকে প্রকাশিত)
আবদুল মালেক সাহেব বুঝাতে চেয়েছেন যে, আলবানি সাহেবের নিকট জাল এবং যয়ীফ হুকুমের দিক দিয়ে এক। কোনো ক্ষেত্রে জাল এবং যয়ীফের উপর আমল করা যাবে না। এবার আসুন সে সম্পর্কে আলবানি মরহুমের কয়েকটি বক্তব্য দেখি। এক জায়গায় তিনি বলেন-
“وهذا الذي أدين الله به وأدعو الناس إليه أن الحديث الضعيف لا يعمل به مطلقا. لا في الفضائل والمستحبات ولا في غيرهماّ
অর্থাৎ যে বিষয়ের প্রতি আমি মানুষদের আহবান করি সেটা হলো, কোনোভাবে যয়ীফ হাদিসের উপর আমল করা যাবে না। চাই সেটা ফাযায়েলের ক্ষেত্রে হোক, অথবা মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে হোক বা ভিন্ন কোনো ক্ষেত্রে হোক। ( মুকাদ্দিমাতুল সহিহিল জামি, পৃষ্ঠা নং ৪৫)
আচ্ছা, আলবানি মরহুম বক্তব্য আবদুল মালেক সাহেব নকল করলেন শুধুমাত্র। এখানে আপনি খেয়ানতের কি পেলেন মুহতারাম?
আরেক জায়গায় আলবানি রাহি. বলেন-
. ولا يرد هنا ما اشتهر من القول بالعمل بالحديث الضعيف في فضائل الأعمال ، فإن هذا محله فيما ثبت مشروعيته بالكتاب أو السنة الصحيحة ، أما ما ليس كذلك فلا يجوز العمل فيه بالحديث الضعيف ، لأنه تشريع ولا يجوز ذلك بالحديث الضعيف ، لأنه لا يفيد إلا الظن المرجوح اتفاقا فكيف يجوز العمل بمثله ؟! فليتنبه لهذا من أراد السلامة في دينه ، فإن الكثيرين عنه غافلون . نسأل الله تعالى الهداية والتوفيق .
অর্থাৎ ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদিস গ্রহণযোগ্য, একথা এখানে প্রযোজ্য হবে না। কেননা ফাযায়েলও প্রমাণিত হতে হবে কুরআন এবং সহিহ হাদিস দ্বারা। কেননা ফাযায়েলও শরিয়ত। এর শরিয়তের কোনো বিষয় যয়ীফ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত করা জায়েজ নেই। শেষে লিখেন, যে নিরাপদে দ্বীনের উপর আমল করতে চান, তারা বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন। যদিও অধিকাংশ সে সম্পর্কে গাফেল। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস জায়ীফাহ, ২/৬৫ হাদিস নং ৫৯৯)
আরেক জায়গায় আলবানি রাহি. লিখেন-
“وجملة القول أننا إخواننا المسلمين في مشارق الأرض ومغاربها أن يدعوا العمل باالأحاديث الضعيفة مطلقا”
অর্থাৎ আমি পুরো পৃথিবীর মুসলমানদের নসিহত করি যে, প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের সকলেই যেন সর্বক্ষেত্রে যয়ীফ হাদিসের উপর আমল ছেড়ে দেয়! (মুকাদ্দিমাতু সহিহিল জামি, পৃষ্ঠা নং ৫১)
এবার আপনি বলুন, মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব এখানে কি খেয়ানত করলেন? আলবানি মরহুমের বক্তব্য তিনি হুবহু তুলে দিলেন! আমি মাত্র তিনটি বক্তব্য উল্লেখ করেছি। তার এ ধরণের বক্তব্য আরো বহু জায়গায় আছে।
বাকি থাকলো আলবানি মরহুমের বক্তব্যের সত্যতা সম্পর্কে। এ ব্যাপারে আমি আপনাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ জানালাম। কিয়মাত পর্যন্ত সময় দিলাম। আসুন আলবানি মরহুমের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করুন।
.
তিনি আবদুল মালেক সাহেবের বিরুদ্ধে আরেকটি খেয়ানতের অভিযোগ তুলেছেন। প্রথমে তার ওই ভাইয়ের বক্তব্য দেখুন-
“মাওলানা: আলবানীর মতের বিরুদ্ধে ইসমাঈল আনসারী وصول التهاني باثبات سنية السبحة والرد علي الالباني কিতাব লিখেছেন।
খেয়ানত: ইসমাঈল আনসারী সালাফী আলেম হওয়াই উক্ত কিতাব তাঁর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। অথচ সে কিতাব সালাফী বিদ্বেষী আলেম মাহমূদ সাঈদ মামদূহ এর।
আমি অবাক হয়েছি। একজনের ব্যাপারে খেয়ানতের অভিযোগ তুলতে গিয়ে মানুষ এত হাস্যকর কাজ করতে পারে! তিনি হুজুরের পুরো লেখা না পড়েই খেয়ানতের অপবাদ দিয়ে দিয়েছেন। কোনটা খেয়ানত? আর কোনটা মুদ্রণ প্রমাদ সেটা পার্থক্য করতে পারলেন না আপনি! আলবানি মরহুমের উপর হুজুরের লেখা প্রবন্ধটি আপনি ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ প্রথম খন্ড থেকে পড়ুন। ২৫৬ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
“আলবানি সাহেবের এমতটির খ-নে শায়খ মাহমূদ সাঈদ মামদূহ রচিত وصول التهاني باثبات سنية السبحة والرد علي الالباني কিতাবটি পড়া যেতে পারে।”
২৫৭ নং পৃষ্ঠায় শিরোনাম দেওয়া হয়েছে শায়খ আলবানির ভ্রান্তিসমূহের খণ্ডনে নির্ভরযোগ্য আলেমগণের কিছু কিতাব। সাত নাম্বারে লেখা হয়েছে وصول التهاني باثبات سنية السبحة والرد علي الالباني মাহমুদ সাঈদ মামদূহ, মিসর।
আল কাউসারে ভুলে দুই জায়গার এক জায়গায় ঈসমাইল আনসারীর নাম চলে এসেছিলো। যা পরে সংশোধন করা হয়েছে! সেটাকে আপনি খেয়ানত বানিয়ে ফেললেন! আচ্ছা, ঈসমাইল আনসারী কি আলবানির ভ্রান্ততা প্রমাণ করতে গিয়ে কিতাব লিখেননি? ‘তাসহিহু সালাতিত তারবীহ ইশরিনা রাকআতান ওয়ার রাদ্দু আলাশ শায়খ আলবানি ফি তাযয়িফিহি’ কার লেখা?
.
ওই ভাই আরেকটি খেয়ানতের অভিযোগ করেছেন এভাবে-
“ মাওলানা:ইরওয়াউল গালীলে’র ১/১৫৮ পৃষ্ঠায় অপবিত্র ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ করতে না পারার হাদীসকে আলবানী জঈফ বলেছেন।যা ইজমা’ বিরোধী। ইজমা দেখতে ইবনু আব্দিল বারএর আল-ইস্তিযকার ১৮/১০ দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।
খেয়ানত:আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে জঈফ বলেননি, সহীহ বলেছেন। ইবনু আব্দিল বারও ইজমার দাবি করেননি। বলেছেন জমহুর বা অধিকাংশের মত।”
প্রথম কথা হলো, আলবানি রাহি. নিয়ে আবদুল মালেক সাহেবের লেখা প্রবন্ধটি ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ এর ২৪১-২৬৬ পর্যন্ত। সেখানে এ ধরণের কোনো বক্তব্য নেই। তিনি কোথা থেকে এ বক্তব্য নকল করলেন, সেটাও উল্লেখ করেননি। এছাড়া তিনি এখানে ইবনে আবদিল বার মালেকির নামে মিথ্যাচার করেছেন। কারণ ইবনে আবদিল বার মালেকি ঈজমার কথা বলেছেন। দেখুন তাঁর বক্তব্য-
وأجمع فقهاء الأمصار الذين تدور عليهم الفتوى وعلى أصحابهم بأن المصحف لا يمسه إلا الطاهر
وهو قول مالك والشافعي وأبي حنيفة وأصحابهم والثوري والأوزاعي وأحمد بن حنبل وإسحاق بن راهويه وأبي ثور وأبي عبيد وهؤلاء أئمة الرأي والحديث في أعصارهم
وروى ذلك عن سعد بن أبي وقاص وعبد الله بن عمر وطاوس والحسن والشعبي والقاسم بن محمد وعطاء وهؤلاء من أئمة التابعين بالمدينة ومكة واليمن والكوفة والبصرة
প্রত্যেক শহরের ফকীহ এবং তাদের শিষ্যরা এ বিষয়ে ঈজমা তথা একমত যে, ওযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবেনা। এমনটা হল ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আবু হানীফা এবং তার শিষ্যরা, সুফিয়ন ছাওরী, আওযায়ী, আহমদ বিন হাম্বল, ইসহাক বিন রাহুয়াহ, আবু ছাওর,এবংআবু উবায়দ এর ফিকহ এবং হাদীসের ইমামদের মত।
আর এমনটি বর্ণিত হয়েছে সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস, আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ, তাউস, হাসান, শা’বী, কাসেম, এবং আতা রহঃ থেকে। (আলইসতিযকার, ২/৪৭১. দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বায়রুত।)
কারও বক্তব্য ভুল ধরার আগে সেটা ভালো করে পড়ুন।। আমরা আবারো দোয়া করছি আপনি আপনার বাবার মত বেফাঁস কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকুন।