রবিউল আউয়াল কী রমজানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ?

বাংলাদেশ কাফের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর এম, ডি সাহেবকে দেখলাম ফতোয়া দিচ্ছেন যে, রমযান হলো শ্রেষ্ঠ, রবিউল আউয়াল হলো সর্বশ্রেষ্ঠ! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ! এরপর সেটার পক্ষে তিনি ঠুনকো কিছু যুক্তি পেশ করেছেন!
এ বক্তব্য দ্বারা তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর “কিতমানে ইলম” এর অভিযোগ করেছেন! বিস্তারিত আলোচনা করার আগে একটি হাদিস পড়ি। আবু যার রাযি. বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
ما بقي شيء يقرب من الجنة ويباعد من النار إلا وقد بين لكم
এমন কোন বিষয় বাকি নেই যা তোমাদের জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে নিয়ে যাবে, সেগুলো তোমাদের বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে। আল মু’যামুল কাবীর: ১৬৪৭।
সনদের দিক থেকে ইমাম হাইছামি এ বর্ণনাকে সহিহ বলেছেন।–মাযমাউয যাওয়াইদ: ১৩৯৭১।
আপনি একবার চিন্তা করুন যে, রবিউল আউয়াল রমজান থেকে শ্রেষ্ঠ ! রমজানের ফজিলতের ব্যাপারে আপনি শত শত হাদিস পাবেন! অথচ রমজানের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রবিউল আউয়াল ব্যাপারে তিনি আমাদের একটি কথাও বলে যান নি! রবিউল আউয়ালের ফজিলতের ব্যাপারে একটি নসও পাওয়া যায় না! তাহলে কী রমজানের চেয়েও শ্রেষ্ঠ মাস রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের থেকে গোপন করে গেলেন?
প্রিয় পাঠক, আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখুন। কোন দিন ঈদ , কোন দিন ঈদ না? এটা ইজতেহাদের বিষয় না। তাওক্বিফি বিষয়। এজন্য ইসলামের প্রথম ৭০০ বছরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত ঈদের বাহিরে উম্মাহ আর কোন দিনকে ঈদকে বানায় নি। শুধু রাফেজিরা আরেকটি ঈদ বানিয়েছিল, সেটা ছিল ঈদে গাদিরে খুম। এ ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম ইবনু দাকিকিল ঈদ রাহি. বলেন:
الثَّالِثُ : قَدْ مَنَعْنَا إحْدَاثَ مَا هُوَ شِعَارٌ فِي الدِّينِ .
وَمِثَالُهُ : مَا أَحْدَثَتْهُ الرَّوَافِضُ مِنْ عِيدٍ ثَالِثٍ ، سَمَّوْهُ عِيدَ الْغَدِيرِ
অর্থাৎ তৃতীয় মত হলো, নিজেদের পক্ষ থেকে ইসলামের কোন নিদর্শন আবিষ্কার করা যাবে না। উদাহরণস্বরুপ রাফেজিরা আরেকটি ঈদ আবিষ্কার করেছিল এবং নাম দিয়েছিল ‘ঈদে গাদির।’- ইহকামুল আহকাম, শারহু উমদাতিল আহকাম- ১/২৮১।
ইমাম ইবনে রাজাব রাহি. বলেন:
وأصل هذا: أنه لا يشرع أن يتخذ المسلمون عيدا إلا ما جاءت الشريعة باتخاذه عيدا وهويوم الفطر ويوم الأضحى وأيام التشريق وهي أعياد العام ويوم الجمعة وهوعيد الأسبوع وما عدا ذلك فاتخاذه عيدا وموسما بدعة لا أصل له في الشريعة
অর্থাৎ শরিয়তের মূলনীতি হলো, শরিয়ত যে কয়েকটি দিনকে ঈদ বানিয়েছে, সে দিনগুলোর বাহিরে কোন দিনকে ঈদ বানানো শরিয়তসম্মত নয়। সে দিনগুলো হলো, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, আইয়্যামে তাশরিক এবং জুমআর দিন। জুমআ হলো সপ্তাহিক ঈদ। এর বাহিরে কোন দিনকে ঈদ বানানো বেদআত। শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। -লাতায়িফুল মাআরিফ: ১২২।
ইবনে রাজাব হাম্বলি রাহি. এর বক্তব্যের বাস্তবতা ইসলামের প্রথম ৭০০ বছর দেখতে পাবেন। রাফেজিরা ছাড়া অন্য কেউ শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোন দিনকে বাদ দিয়ে কেউ অন্য কোন দিনকে ঈদ বানায় নি!
বাদশা মুজাফফার প্রথম ই’তেফাল এর সূচনা করেছেন। কয়েক শতাব্দি পর সেটা হয় ঈদ। এরপর সায়্যিদুল আইয়্যাদ! এখন তো রমজানের চেয়েও শ্রেষ্ঠ! প্রশ্ন হলো, রমজানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মাস সম্পর্কে কেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়ে যান নি? সায়্যিদুল আইয়াদ সম্পর্কে কেন তিনি আমাদের জানিয়ে জান নি? কেন তার জীবনে একবারও ১২ রবিউল আউয়াল সায়্যিদুল আইয়াদ পালন করেন নি?

Check Also

ইসতিশরাক তথা প্রাচ্যবিদ্যা: প্রাচ্যবিদ কারা?

ড. ফাতহুল্লাহ জিয়াদি এ ব্যাপারে তুলনামূলক তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন। তিনি ইসতিশরাক তথা প্রাচ্যবিদ্যার অনেকগুলো সংজ্ঞা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *