হিজবুত তাওহীদ, ঈমান বিধ্বংসী একটি দলের নাম (১)

বায়েযীদ খান পন্নী। হিজবুত তাওহীদের প্রতিষ্ঠাতা। তার দাবি অনুযায়ী তিনি এ যুগের মুজাদ্দিদ। সাহাবাদের পরে দীর্ঘকাল থেকে ইসলাম ধর্ম বিকৃতভাবে পালন হয়ে আসছিলো। আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরে ইলহাম করেছেন! তিনি আবার হারানো ইসলামকে উদ্ধার করেছেন! তার লিখিত বেশ কিছু বই বাজারে আছে। ‘এসলামের প্রকৃত রুপরেখা’ নামে তিনি একটি বই লিখেছেন। সে বইতে মোট চারটি প্রবন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় প্রবন্ধ হলো ‘এসলামের প্রকৃত আকীদা’ নামে। সে প্রবন্ধ সহ আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় তিনি জোরেশোরে বক্তব্য দিয়েছেন যে, ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো সংগ্রাম করা। যারা অস্ত্র নিয়ে সংগ্রাম করবে না, তাদের নামায, রোযাসহ অন্যান্য ইবাদতের কোনো দাম নেই! প্রথমে দেখুন পন্নী সাহেবের বক্তব্য। তিনি লিখেন-

“নামায ওই জেহাদের জন্য চরিত্র সৃষ্টির অনুশীলন। সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে এই জীবন-বিধানকে প্রতিষ্ঠা করতে যে অসাধারণ চরিত্রের মানুষের প্রয়োজন, সেই অসাধারণ মানুষের শারীরিক, চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক গঠনের জন্য প্রশিক্ষণ হলো নামায। কিন্তু উদ্দেশ্য হোল সেই সংগ্রাম। এরপর লিখেন: ছাদ না থাকলে যেমন থামের কোনো দাম নেই, প্রয়োজন নেই, তেমনি জিহাদ, সংগ্রাম না থাকলে নামাযেরও কোনো দাম নেই”। (ইসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃষ্ঠা নং ২৯, তাওহিদ প্রকাশন, বাংলাবাজার, ঢাকা)

সামনে অগ্রসর হয়ে তিনি লিখেন-
“আল্লাহ যে কাজের দায়িত্ব দিয়ে তার রাসূলকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ও যে কাজ তিনি তাঁর গঠিত জাতির উপর অর্পণ কোরে চোলে গেছেন, যে বা যারা সে কাজ চালিয়ে যাবে শুধূ তারাই উম্মতে মুহাম্মদী। যারা সেই কাজ অর্থাৎ জিহাদ চালিয়ে যাবে না তারা যত বড় মুসল্লিই হন, যত বড় মুত্তাকি আলেম ,দরবেশ, পীর, মাশায়েখ হোন না কেন, উম্মতে মুহাম্মদি নন। হাশরের দিন তাঁর উম্মত হিসাবে রসুলের শাফায়াতের উপর তাদের কোনো দাবি থাকবে না”। (ইসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃষ্ঠা নং ৩৮)

লা হাওলা ওয়া কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ। বায়েযীদ খান পন্নী একেবারে ধর্মকে পাল্টিয়ে দিয়েছেন। কুরআন, হাদীসের কোথাও এমন কথা নেই যে, জিহাদ বা সংগ্রাম না করলে নামাযেরও কোনো দাম নেই! এটা সম্পূর্ণ শিরকি কথা। কেউ বিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে সবচেয়ে বেশি নামাযের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। এমনকি ইন্তেকালের সশয়ও তিনি ‘নামায, নামায’ বলেছেন। হাদীসের কিতাবাদির কোনো একটির কিতাবুল ঈমান খুললে দেখা যায় যে, গ্রাম থেকে সাহাবায়ে কেরাম এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে এমন কিছু আমলের কথা বলে দিন, যেগুলো করলে আমরা বেহেশতে প্রবেশ করব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলকে প্রথমেই বলেছেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কথা। কোথাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের সাথে সংগ্রামের কথা যুক্ত করে বলেননি যে, সংগ্রাম করলে নামায আদায় হবে। অন্যথায় ওই নামাযের কোনো দাম নেই!

আল্লাহ তায়ালা কুরআনের অসংখ্য জায়গায় নামায প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেছেন। কিন্তু কোথাও নামাযের সাথে সংগ্রামকে যুক্ত করেননি। এটা বায়েযীদ খান পন্নীর সম্পূর্ণ মনগড়া ঈমানবিধ্বংসী কথা! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার বলেছেন, ইসলামের মূলভিত্তি হলো পাঁচটি বস্তুর উপর। কালেমার পরই হলো নামায। মূলভিত্তি পাঁচটির মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংগ্রামের কথা বলেননি। .
সংগ্রাম না করলে যদি উম্মতে মুহাম্মদী থেকে বের হয়ে যায়, তাহলে সবার আগে উম্মতে মুহাম্মদী থেকে বের হয়েছে বায়যীদ খান পন্নী! কারণ সে তার জীবনে কোথাও সংগ্রাম বা জিহাদ করেনি! বর্তমানে তার অনুসারীরাও জিহাদ করছে না! পন্নী তো সংগ্রাম করেছে জঙ্গলে! ‘বাঘ-বন- বন্দুক’ নামে সে একটি বই লিখেছে! সেখানে সে জঙ্গলে প্রাণী শিকারের গল্প লিখেছে! কিন্তু জিহাদ বা সংগ্রামের তার কোনো ইতিহাস আমাদের জানা নেই!

বর্তমানের হিজবুত তাওহীদের ভাইদের কাছে মোটা দাগের প্রশ্ন হলো, আপনাদের এমামের ফতোয়া অনুসারে তিনি কাফের নাকি মুসলমান? আপনারাতো জিহাদ করছেন না। যদিও সাথে রড রাখেন! তাহলে আপনারা মুসলমান নাকি কাফের??

Check Also

জানাজার নামাজের পর সম্মিলিত মোনাজাত, কিছু কথা

একজন মুসলমান মারা যাওয়ার পর তাঁর সাথে সর্বোচ্চ ভালো আচরণ হলো তার জন্য দোয়া করা। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *