গাদিরে খুম তথা জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখের রোজার ফজিলত: একটি পর্যালোচনা

বাংলাদেশে শীয়াবাদ ইদানিং ভালভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। চট্রগ্রামের বিভিন্ন দরবার কেন্দ্রিক শীয়ারা তাদের খারাপ আকিদা ভালভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইদানিং বাংলাদেশে দেখলাম ঈদে গাদিরে খুম পালন হচ্ছে! অথচ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ঐক্যমত হলো, এটি শীয়াদের উৎসব।

গাদিরে খুম হলো জিলহজ মাসের ১৮ তারিখ। ওই দিন বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণিমতের মাল ভাগ করাকে কেন্দ্র করে আলী রাযি. এর সিদ্ধান্তের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে আপত্তি করলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, “মান কুনতু মাওলাহু ফা আলীউন মাওলা”,অর্থাৎ আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা।

এটাকে কেন্দ্র করে শীয়া রায়েজিরা ১৮ তারিখকে ঈদে গাদিরে খুম বানিয়ে ফেলেছে! এ ব্যাপারে ইমাম ইবনু দাকিকিল ঈদ রাহি. বলেন:
“قد منعنا إحداث ما هو شعار في الدين، ومثاله: ما أحدثته الروافض من عيد ثالث، سموه عيد الغدير،
অর্থাৎ ইসলামের নিদর্শন জাতীয় কোন কিছু নতুন আবিষ্কার করা আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। উদাহরণস্বরুপ রাফেজিরা ঈদে গাদির নামক তৃতীয় আরেকটি ঈদ বানিয়ে ফেলেছে।-ইহকামুল আহকাম শারহু উমদাতিল আহকাম: ১/২০০।

বর্তমানে ঈদে গাদিরে খুমের দিন তথা জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখ রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কেউ একটি হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করে থাকেন। আজকে আমরা দলিলটি নিয়ে পর্যালোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
আলি রাযি. বর্ণনা করেন:
لما أخذ رسول الله صلى الله عليه و سلم بيد علي قال من كنت مولاه فعلي مولاه فأنزل الله عز و جل اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي قال أبو هريرة وهو يوم غدير خم من صام يوم ثمان عشرة من ذي الحجة كتب له صيام ستين شهرا
অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাযি. এর হাত ধরে বললেন, আমি যার মাওলা, আলী তার মাওলা। আল্লাহ তাআলা তখন আয়াত অবতীর্ণ করলেন, “আজ আমি দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছি, তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছি। আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, সেটা ছিল গাদিরে খুম এর দিনে। যে ব্যক্তি জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখ রোজা রাখবে, আল্লাহ তার আমলনামায় ৬০ বছর ইবাদাতের নেকি দান করবেন।

এ বর্ণনা দিয়ে শীয়ারা গাদিরে খুমের দিনের রোজার ফজিলতের কথা বর্ণন করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইাহি ওয়াসাল্লাম গাদিরে খুমে আলী রাযি. এর হাত ধরে বলেছেন আমি যার অভিভাবক, আলীও তার অভিভাবক, এটা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু গাদিরে খুমের দিন দ্বীন পরিপূর্ণ হওয়ার আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, এটি ভিত্তিহীন কথা। বুখারির বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে যে, এ আয়াত আরাফার মাঠে অবতীর্ণ হয়েছে।

গাদিরে খুমের দিন রোজা রাখা সংক্রান্ত যে বর্ণনা পেশ করা হয়েছে, এটি একটি বানোয়াট বর্ণনা। এ বর্ণনা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম ইবনে কাছির রাহি. লিখেন:
فانه حديث منكر جدا بل كذب لمخالفته لما ثبت في الصحيحين عن أمير المؤمنين عمر بن الخطاب أن هذه الآيه نزلت في يوم الجمعة يوم عرفة ورسول الله صلى الله عليه و سلم واقف بها كما قدمنا وكذا قوله إن صيام يوم الثامن عشر من ذي الحجة وهو يوم غدير خم يعدل صيام ستين شهرا لا يصح لأنه قد ثبت ما معناه في الصحيح أن صيام شهر رمضان بعشرة اشهر فكيف يكون صيام يوم واحد يعدل ستين شهرا هذا باطل وقد قال شيخنا الحافظ ابو عبد الله الذهبي بعد إيراده هذا الحديث هذا حديث منكر جدا
অর্থাৎ’ হাদিসটি চরম আপত্তিকর, বরং মিথ্যা। কারণ বর্ণনাটি সহিহ বর্ণনার বিপরিত। কারণ, বুখারি, মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে যে, দ্বীন পরিপূর্ণ হওয়ার ঘোষণা সংক্রান্ত আয়াত আরাফার দিনে জুমার দিনে অবতীর্ণ হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আরাফার মাঠে ছিলেন। এমনভাবে গাদিরে খুমের দিন রোজা রাখলে ৬০ মাসের সমান নেকি হওয়ার বর্ণনা সহিহ হয়। কারণ, সহিহ বর্ণনায় এসেছে রমযানে রোজা রাখলে ১০ মাসের সমপরিমাণ নেকি হয়, তাহলে একদিনের রোজা ৬০ মাসের সমান হয় কীভাবে? এটি বাতিল বর্ণনা। আমাদের শায়খ হাফিজ আবু আবদুল্লাহ যাহাবি এ হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন: এ হাদিসটি চরম আপত্তিকর।- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৫/২১৪।

জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখ কোন ঈদ নেই। ওই দিন কোনও রোজাও নেই। এগুলো শীয়াদের আবিষ্কার করেছে। শীয়াদের ফিতনা থেকে আল্লাহ সবাইকে বাঁচিয়ে রাখুন।

 

Check Also

ইসতিশরাক তথা প্রাচ্যবিদ্যা: প্রাচ্যবিদ কারা?

ড. ফাতহুল্লাহ জিয়াদি এ ব্যাপারে তুলনামূলক তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন। তিনি ইসতিশরাক তথা প্রাচ্যবিদ্যার অনেকগুলো সংজ্ঞা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *